পাকিস্তানে থাকা প্রায় ১৭ লাখ আফগানকে নিজ দেশে ফেরত যেতে বলেছে পাকিস্তান সরকার৷ ১ অক্টোবর তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
পুলিশের হাতে আটক হয়ে দেশে ফেরত যাওয়ার হুমকিতে পাকিস্তানে অবস্থানরত প্রায় ১৭ লাখ আফগান৷ এই আফগানদেরকে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার জন্য ১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছির পাকিস্তান সরকার৷ সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় পর পাকিস্তান পুলিশের হাতে আটকের হুমকিতে তারা৷ ধারণা করা হচ্ছে, আটক করে জোসরপূর্বক এসকল আফগানকে দেশে পেরত পাঠানো হতে পারে৷
পাকিস্তান সরকারের দাবি, দেশটির সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ধরে রাখতে এই আফগানদের দেশে ফেরত পাঠানো জরুরি৷ দেশটিতে সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা বাড়ছে৷ পাকিস্তানের দাবি, আফগানিস্তান থেকে সন্ত্রাসীরা এমন হামলা পরিচালনা করছে৷
আর পাকিস্তান সরকারের এমন কার্যক্রমের নিন্দা জানিয়েছে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় থাকা তালেবান৷
এদিকে পাকিস্তান সরকার বলছে, এই পদক্ষেপ মূলত দেশটিতে থাকা নথিবিহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে৷ তবে এর প্রভাব পড়ছে মূলত দেশটিতে থাকা আফগানদের উপর৷
সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বুধবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা শুরু করে পাকিস্তান সরকার৷ ধারণা করা হচ্ছে, আফগানদের আটকের পর দেশে ফেরত পাঠানোর আগে এসকল আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হতে পারে৷
অক্টোবর মাসের শুরুতে আফগানদের দেশে ফেরত যেতে বলা হয়৷ পাকিস্তান সরকারের এমন নির্দেশনার পর এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজার আফগান পাকিস্তান ত্যাগ করেছে৷
সামাজিকমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে পাকিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফ্রাজ বুগতি বলেন, ‘‘আজ আমরা ৬৪ জন আফগানকে বিদায় জনিয়েছি৷''
এটি হলো নথিবিহীন অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে পাকিস্তান সরকারের যে উদ্যোগ তার উদাহরণ, জানান তিনি৷
সময় চাইছে তালেবান
আফগানিস্তানের তালেবান সরকার পাকিস্তান সরকারের এভাবে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছে৷ বিষযটিকে ‘নিষ্ঠুর ও বর্বর' বলে মন্তব্য তাদের৷
তাছাড়া পাকিস্তান সরকারকে আফগানদের দেশে ফেরত যেতে আরো সময় দেওয়ার আহ্বান জানায় তালেবান৷
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি, আফগানদের দেশে ফেরত পাঠাতে হুমকি, নির্যাতন এবং আটক করছে পাকিস্তান সরকার৷
আরআর/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
খাইবার-পাখতুনখোয়: যেখানে পুলিশ জঙ্গিদের নিশানা
পাকিস্তানের আফগান সীমান্তে ইসলামী জঙ্গিদের প্রধান নিশানা পুলিশ সদস্যরা৷ তাদের হত্যা করতে মসজিদে হামলা চালাতেও কার্পণ্য করছে না জঙ্গিরা৷ তাদের থামাতে কী প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
তরুণ অফিসারদের প্রস্তুতি
পাকিস্তানের নওশেরার এলিট পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণের সময় একদল পুলিশ সদস্যকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷ জঙ্গিদের মোকাবিলায় তরুণ পুলিশ অফিসারদের এখানে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
স্নাইপার হামলা
সারবন্দ ও এর আটটি ফাঁড়ি সাম্প্রতিক মাসগুলিতে চারটি বড় হামলার শিকার হয়েছে৷ এমনকি স্নাইপার ব্যবহার করেও নজিরবিহীন হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা৷ ছবিতে পেশোয়ারের উপকণ্ঠে, সরবন্দ থানার ছাদে মেশিনগান নিয়ে সতর্ক অবস্থানে এক পুলিশ সদস্যকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
অত্যাধুনিক অস্ত্র
খাইবার-পাখতুনখোয়া পুলিশ প্রধান মোয়াজ্জেম আনসারি রয়টারর্সকে জানান, জঙ্গিদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম ফোর রাইফেলস থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র রয়েছে৷ আফগানিস্তানে পশ্চিমা বাহিনীর ফেলে আসা অস্ত্র কিনেছে তারা৷ তিনি বলেন, জঙ্গিরা আরো মারনঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে৷ ছবিতে প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে এক পুলিশ সদস্যকে ভবনের উপর থেকে ঝাপ দিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
টিটিপির ঘাঁটি
আফগানিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন এই অঞ্চল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর জঙ্গিদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷ এখানে পুলিশে ফাঁড়িগুলোতে অতর্কিত হামলা চালায় বিভিন্ন আস্তানায় লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা৷ পেশোয়ারের উপকণ্ঠে আচিনি ফাঁড়ির ফটকের ছিদ্র দিয়ে বাইরে সতর্ক দৃষ্টি এক পুলিশ সদস্যের৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
মুখোমুখি
সারবন্দ থানায় সহকর্মীদের সঙ্গে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করছেন সহকারী উপ-পরিদর্শক জামিল শাহ৷ সরবন্দ থানা ও এর আশেপাশের আটটি ঘাঁটির জন্য মোট জনবল ৫৫ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম৷ একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘কর্মী ঘাটতি সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ এই এলাকাটি (জঙ্গিদের) হামলার নিশানা, আমরা তাদের মুখোমুখি৷’’
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
নিহতদের স্মরণ
গত জানুয়ারিতে পেশোয়ারে পুলিশ লাইনসে একটি মসজিদে হামলা চালায় জঙ্গিরা৷ এতে মারা যান ৮০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য৷ এই হামলার দায় স্বীকার করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের পেশোয়ারে পুলিশ লাইন্স এলাকায় একটি বিলবোর্ডে নিহত পুলিশ সদস্যদের ছবি৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
সহকর্মীদের প্রার্থনা
৯ ফেব্রুয়ারি নিহতদের জন্য প্রার্থনার আয়োজন করেন সহকর্মীরা৷ ৩৫ বছরের পুলিশ সদস্য ইমাম নুর উল আমীন অশ্রুশিক্ত চোখে মোনাজাত করছেন৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
বাড়ছে মৃত্যু
সারবন্দ পুলিশ স্টেশনের দেয়ালে জঙ্গিদের ছোঁড়া গুলির চিহ্ন দেখাচ্ছেন সহকারি পুলিশ পরিদর্শক জামিল শাহ৷ গত বছর খাইবার-পাখতুনখোয়ায় জঙ্গিদের হাতে মোট ১১৯ পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন৷ ২০২১ সালে ৫৪ জন আর ২০২০ সালে মারা যান ২১ জন৷ চলতি বছর এরইমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১০২ পুলিশ সদস্য, যাদের বেশিরভাগ মারা যান মসজিদে হামলার ঘটনায়৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
টিটিপির ভাষ্য
ছবিতে জানুয়ারিতে হামলা বিধ্বস্ত মসজিদের ধ্বংসাবশেষের উপর নিহতদের স্মরণে রাখা পুষ্পস্তবক দেখা যাচ্ছে৷ টিটিপি মুখপাত্র মুহাম্মদ খুরাসানির ভাষ্যে, ‘‘আমাদের বাধা না দিতে পুলিশকে বার বার সতর্ক করা হয়েছে৷ কিন্তু তারা এতে কর্ণপাত না করে আমাদের যোদ্ধাদের শহিদ করতে শুরু করেছে, এ কারণেই আমরা তাদের নিশানা করছি৷’’
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
জঙ্গিবিরোধী লড়াই
২০০১ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মোট ২১০০ পুলিশ সদস্য জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন সাত হাজার৷ জঙ্গিদের বিস্তার থামাতে পুলিশ এখন আগের চেয়ে আরো বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছে বলে দাবি জামিল শাহর৷ ‘‘আমরা পেশোয়ারেই তাদের গতি থামিয়ে দিয়েছি’, বলেন তিনি৷