স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে আত্মঘাতী হামলায় ১৬ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানি তালেবানের একটি অংশ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সহিংসতা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে (ফাইল ছবি)ছবি: Hussain Ali/ZUMA PRESS/picture alliance
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে এই হামলায় আরো ২৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১০ জন সেনা সদস্য এবং ১৯ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, "একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বিস্ফোরকবোঝাই গাড়ি নিয়ে একটি সামরিক কনভয়ে ঢুকে পড়ে।"
এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ফলে দুটি বাড়ির ছাদও ধসে পড়েছে। এর ফলে ছয় শিশু আহত হয়েছে।
এএফপি জানিয়েছে, সশস্ত্র গোষ্ঠী হাফিজ গুল বাহাদুরের আত্মঘাতী হামলাকারী শাখা এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই গোষ্ঠীটি পাকিস্তানি তালেবানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
পাকিস্তানে বসবাসরত আফগান শরণার্থীদের অনেকেই একসময় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেছেন৷ এ কারণে তালেবান শাসনামলে স্বদেশে ফেরা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন তারা৷ তবুও কেন তাদেরকে দেশে পাঠাতে মরিয়া পাকিস্তান?
ছবি: FAROOQ NAEEM/AFP/Getty Images
পাকিস্তানে এক আফগান নারীর জীবন
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তান ছাড়েন ফাতিমা (ছদ্মনাম)৷ আফগানিস্তানে তিনি একটি মার্কিন বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন৷ পাকিস্তানে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন৷ এরইমাঝে ইসলামাবাদের যেই ভবনে থাকেন, সেখানে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ৷ ফাতিমা বাসায় না থাকায় পুলিশ তাকে পায়নি, তবে তার ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে৷ ভিসার মেয়াদ না পারলে ফিরে যেতে হবে দেশে৷ গেলে কী হবে ফাতিমা তা জানেন না৷
ছবি: DW
শরণার্থীদের বিষয়ে আবারো কঠোর পাকিস্তান
২০২৩ সালে আফগানিস্তানের শরণার্থীদের বিষয়ে কঠোর হয়ে উঠেছিল পাকিস্তান সরকার৷ সেই সময় হাজার হাজার আফগানকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়৷ চলতি বছরের শুরু থেকে আফগান শরণার্থীদের বিষয়ে আবার কঠোর হয়ে ওঠে পাকিস্তান সরকার৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
৩১ মার্চ ডেডলাইন
অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ ত্যাগের নির্দেশনা দিয়েছে পাকিস্তান সরকার৷ এদিকে লাগাতার অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ৷ ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিণ্ডিতে বসবাসরত আফগান শরণার্থীদেরকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশ ত্যাগের মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী ওমর গিলানি৷
ছবি: Fatima Nazish/DW
ইসলামাবাদে ১ হাজার আটক
ওমর গিলানি জানান, ইসলামাবাদে চলতি বছর এখন পর্যন্ত এক হাজার আফগানক শরণার্থীকে আটক করা হয়েছে৷ এদিকে ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিণ্ডি থেকে ১৮ হাজার আফগানকে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Abdul Majeed/AFP/Getty Images
শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার প্রত্যাশায় থাকা আফগানরা
আফগান শরণার্থী আমিন শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার জন্য পাকিস্তান অপেক্ষারত৷ কয়েকদিনের মধ্যেই তার যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে মার্কিন সরকারের রিফিউজি সেটেলমেন্ট প্রোগ্রাম বাতিল করে দেয়৷ প্রায় ২০ হাজার আফগান শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রের এই কর্মসূচির আওতায় দেশটিতে পাড়ি জমানোর লক্ষ্যে পাকিস্তানে অপেক্ষমান৷ তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তায়৷
ছবি: DW
কেন কঠোর হচ্ছে পাকিস্তান?
পাকিস্তানে বছরের পর বছর ধরে অফগান শরণার্থীরা বসবাস করছেন৷ কিন্তু তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এই শরণার্থীদের বিষয়ে কঠোর হয় পাকিস্তান সরকার৷ বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেহরিক-ই-তালেবানসহ বেশ কিছু সংগঠনের তৎপরতা থামাতে আফগানিস্তান ব্যর্থ বলে মনে করে পাকিস্তান৷ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের নিরাপত্তারক্ষীদের উপর বেশ কয়েকবার হামলাও চালিয়েছে৷
ছবি: MOHSEN KARIMI/AFP
‘আফগানিস্তানের উপর চাপ তৈরি করতে চায় পাকিস্তান’
আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী গিলানির মতে, আফগান শরণার্থীদের ‘জিম্মি’ হিসেবে ব্যবহার করছে পাকিস্তান সরকার৷ এর মাধ্যমে আফগান সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখতে চায় পাকিস্তান৷ অর্থাৎ, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হলে পাকিস্তান সরকার শরণার্থীদের বিষয়টিকে সামনে আনে৷