পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের সিবি জেলায় পুলিশের একটি ট্রাকে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত দশ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার স্থানীয় সময় সকালের এই হামলায় অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন৷
পুলিশের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানায়, একটি মোটারসাইকেলে চড়ে পুলিশের ট্রাকটির উপর হামলা চালানো হয়৷ হতাহতদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
এখনো কেউ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি৷ তবে বেলুচিস্তানের স্থানীয় ‘জঙ্গিগোষ্ঠী' হামলার সাথে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ নোতেনাজি জানান, সিবি জেলার একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা দিতে ট্রাকে করে পুলিশের এই দলটি টহল দিচ্ছিল৷ এ সময় ট্রাকটি একটি ব্রিজের কাছে পৌঁছালে এক মোটরসাইকেল আরোহী আত্মঘাতী হামলা চালায়৷
গুরুতর আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি৷
কয়েকশ বছর ধরে চলে আসা এই সাংস্কৃতিক অনষ্ঠানটি মূলত গ্রীষ্মকালের আগমন উপলক্ষে আয়োজন করে থাকে স্থানীয়রা৷
গত বছর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি এই অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিতে গেলে তার নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস৷
এদিকে সোমবারের হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেন, পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতেই এমন হামলা চালানো হয়েছে৷ সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে তার সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলেও জানান তিনি৷
আরআর/এসিবি (এপিই)
খাইবার-পাখতুনখোয়: যেখানে পুলিশ জঙ্গিদের নিশানা
পাকিস্তানের আফগান সীমান্তে ইসলামী জঙ্গিদের প্রধান নিশানা পুলিশ সদস্যরা৷ তাদের হত্যা করতে মসজিদে হামলা চালাতেও কার্পণ্য করছে না জঙ্গিরা৷ তাদের থামাতে কী প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
তরুণ অফিসারদের প্রস্তুতি
পাকিস্তানের নওশেরার এলিট পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণের সময় একদল পুলিশ সদস্যকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷ জঙ্গিদের মোকাবিলায় তরুণ পুলিশ অফিসারদের এখানে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
স্নাইপার হামলা
সারবন্দ ও এর আটটি ফাঁড়ি সাম্প্রতিক মাসগুলিতে চারটি বড় হামলার শিকার হয়েছে৷ এমনকি স্নাইপার ব্যবহার করেও নজিরবিহীন হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা৷ ছবিতে পেশোয়ারের উপকণ্ঠে, সরবন্দ থানার ছাদে মেশিনগান নিয়ে সতর্ক অবস্থানে এক পুলিশ সদস্যকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
অত্যাধুনিক অস্ত্র
খাইবার-পাখতুনখোয়া পুলিশ প্রধান মোয়াজ্জেম আনসারি রয়টারর্সকে জানান, জঙ্গিদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম ফোর রাইফেলস থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র রয়েছে৷ আফগানিস্তানে পশ্চিমা বাহিনীর ফেলে আসা অস্ত্র কিনেছে তারা৷ তিনি বলেন, জঙ্গিরা আরো মারনঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে৷ ছবিতে প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে এক পুলিশ সদস্যকে ভবনের উপর থেকে ঝাপ দিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
টিটিপির ঘাঁটি
আফগানিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন এই অঞ্চল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর জঙ্গিদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷ এখানে পুলিশে ফাঁড়িগুলোতে অতর্কিত হামলা চালায় বিভিন্ন আস্তানায় লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা৷ পেশোয়ারের উপকণ্ঠে আচিনি ফাঁড়ির ফটকের ছিদ্র দিয়ে বাইরে সতর্ক দৃষ্টি এক পুলিশ সদস্যের৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
মুখোমুখি
সারবন্দ থানায় সহকর্মীদের সঙ্গে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করছেন সহকারী উপ-পরিদর্শক জামিল শাহ৷ সরবন্দ থানা ও এর আশেপাশের আটটি ঘাঁটির জন্য মোট জনবল ৫৫ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম৷ একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘কর্মী ঘাটতি সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ এই এলাকাটি (জঙ্গিদের) হামলার নিশানা, আমরা তাদের মুখোমুখি৷’’
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
নিহতদের স্মরণ
গত জানুয়ারিতে পেশোয়ারে পুলিশ লাইনসে একটি মসজিদে হামলা চালায় জঙ্গিরা৷ এতে মারা যান ৮০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য৷ এই হামলার দায় স্বীকার করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের পেশোয়ারে পুলিশ লাইন্স এলাকায় একটি বিলবোর্ডে নিহত পুলিশ সদস্যদের ছবি৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
সহকর্মীদের প্রার্থনা
৯ ফেব্রুয়ারি নিহতদের জন্য প্রার্থনার আয়োজন করেন সহকর্মীরা৷ ৩৫ বছরের পুলিশ সদস্য ইমাম নুর উল আমীন অশ্রুশিক্ত চোখে মোনাজাত করছেন৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
বাড়ছে মৃত্যু
সারবন্দ পুলিশ স্টেশনের দেয়ালে জঙ্গিদের ছোঁড়া গুলির চিহ্ন দেখাচ্ছেন সহকারি পুলিশ পরিদর্শক জামিল শাহ৷ গত বছর খাইবার-পাখতুনখোয়ায় জঙ্গিদের হাতে মোট ১১৯ পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন৷ ২০২১ সালে ৫৪ জন আর ২০২০ সালে মারা যান ২১ জন৷ চলতি বছর এরইমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১০২ পুলিশ সদস্য, যাদের বেশিরভাগ মারা যান মসজিদে হামলার ঘটনায়৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
টিটিপির ভাষ্য
ছবিতে জানুয়ারিতে হামলা বিধ্বস্ত মসজিদের ধ্বংসাবশেষের উপর নিহতদের স্মরণে রাখা পুষ্পস্তবক দেখা যাচ্ছে৷ টিটিপি মুখপাত্র মুহাম্মদ খুরাসানির ভাষ্যে, ‘‘আমাদের বাধা না দিতে পুলিশকে বার বার সতর্ক করা হয়েছে৷ কিন্তু তারা এতে কর্ণপাত না করে আমাদের যোদ্ধাদের শহিদ করতে শুরু করেছে, এ কারণেই আমরা তাদের নিশানা করছি৷’’
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
জঙ্গিবিরোধী লড়াই
২০০১ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মোট ২১০০ পুলিশ সদস্য জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন সাত হাজার৷ জঙ্গিদের বিস্তার থামাতে পুলিশ এখন আগের চেয়ে আরো বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছে বলে দাবি জামিল শাহর৷ ‘‘আমরা পেশোয়ারেই তাদের গতি থামিয়ে দিয়েছি’, বলেন তিনি৷