উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে হাইওয়ের উপর এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের দাবি ঘটনায় বেশ কিছু পুলিশকর্মীরও মৃত্যু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের প্রশাসন জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের হাইওয়ে দিয়ে শিয়া মুসলিমদের একটি কনভয় যাচ্ছিল। সে সময় তার উপর এলোপাথাড়ি গুলি ছোঁড়া হয়। ঘটনায় অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২০ জন। অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ''যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা মানবতার শত্রু। অশান্তি সৃষ্টিকারী এই আক্রমণকারীদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।'' প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, যাদের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছে, তারা সাধারণ শান্তিপ্রিয় জনতা।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং দ্রুত দোষাীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
মসজিদে বিস্ফোরণ নিয়ে পাকিস্তান-তালেবান তরজা
পেশোয়ারে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবানদের মধ্যে বিরোধ সামনে এসেছে।
ছবি: MAAZ ALI/AFP/Getty Images
বিস্ফোরণের দায়
তেহরিক-ই-তালেবান এই আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করে। পরে তারা জানায়, এই বিস্ফোরণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সন্দেহ করা হচ্ছে, স্থানীয় কিছু বেআইনি গোষ্ঠী এর পিছনে। কিন্তু পাকিস্তানের কিছু মন্ত্রী তেহরিক-ই-তালেবানকেই দায়ী করে আফগানিস্তানের তালেবানদের দায়িত্ব পালন করতে বলেন।
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
তালেবানের জবাব
টোলো নিউজ জানাচ্ছে, আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বলেছেন, পাকিস্তান যেন পেশোয়ার বিস্ফোরণের জন্য কাবুলকে দায়ী না করে। আফগানিস্তানে কোনো জঙ্গি ঘাঁটি নেই। আফগানিস্তানের মাটি থেকে কোনো জঙ্গি সংগঠনকে কাজ করতে দেয়া হয় না।
ছবি: ABDUL MAJEED/AFP/Getty Images
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে
মুত্তাকির বক্তব্য, পাকিস্তান যেন নিজের ছাদের বরফ অন্যদের ছাদে না ফেলে। এটা পাকিস্তানের নিজের সমস্যা। ওরা যেন, পেশোয়ার বিস্ফোরণের তদন্ত ভালো করে করে।
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
পাকিস্তানের জবাব
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মমতাজ জাহরা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে পাকিস্তান প্রত্যাশা করে, আফগানিস্তান তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার প্রত্যাশা পূরণ করবে। তিনি বলেছেন, ''আমরা নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুকে খুবই গুরুত্ব দিই। প্রত্যাশা করি, আমাদের প্রতিবেশী দেশও তাই করবে।''
ছবি: Abdul Majeed/AFP/Getty Images
অভিযোগ নয়, সহযোগিতা
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, তারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলায় বিশ্বাস করেন না। তারা চান, আফগানিস্তান যেন পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কার্ষকলাপের জন্য জঙ্গিদের তাদের দেশের জমি ব্যবহার করতে না দেয়। তাদেরকে এই লক্ষ্যে কাজ করে দেখাতে হবে।
ছবি: MAAZ ALI/AFP/Getty Images
পুলিশের বিক্ষোভ
পোশেয়ারের মসজিদে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। আত্মঘাতী জঙ্গি পুলিশের পোশাক পরে এসেছিল। বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় পুলিশ কর্মীই মারা গেছেন। এরপরই পুলিশ কর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
ছবি: Faridullah Khan/DW
পুলিশের দাবি
বিক্ষোভরত পুলিশ কর্মীদের দাবি ছিল, তাদের হাত বেঁধে পশুর সামনে ফেলে দিচ্ছে সরকার। যদি পুলিশ নিজের প্রাণ বাঁচাতে না পারে, তাহলে তারা কী করে সাধারণ মানুষের প্রাণরক্ষা করবে। ৪২ বছরের ইনায়েত উল্লার বন্ধু বিস্ফোরণে মারা গেছেন। তিনি বলেছেন, সকালে যখন বাড়ি থেকে বেরোই, তখনও জানি না, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে পারব কি না।
ছবি: ABDUL MAJEED/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর আগেও এভাবে গুলি চলার ঘটনা ঘটেছে সেখানে। ফলে ওই রাস্তায় সাধারণ মানুষের গাড়ির সামনে পুলিশের পাইলট দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এদিনও ওই শিয়া মুসলিমদের গাড়ির সঙ্গে পুলিশের পাইলট গাড়ি ছিল। আচমকাই রাস্তার দুইদিক থেকে মুশলধারে গুলিবৃষ্টি শুরু হয়। প্রায় মিনিটখানেক গুলি চালানো হয়। কনভয়ের গাড়িগুলি কার্যত ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলেও স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন।
খাইবার পাখতুনখোয়ার কুররামে এই ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েকমাসে শিয়া এবং সুন্নিদের মধ্যে সংঘর্ষে এখানে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাকিস্তানে সুন্নি মুসলিমদের সংখ্যা বেশি। তবে কুররামে শিয়া মুসলিম সুন্নির চেয়ে বেশি। এই অঞ্চলের পাশেই আফগানিস্তান। যেখানে সুন্নি তালেবানরা সরকার চালাচ্ছে। ফলে খাইবার পাখতুনখোয়ায় তেহেরিক-ই-তালেবান এবং ইসলামিক স্টেটের দাপট আছে। তারা মনে করে সুন্নি মুসলিমরাই ইসলামের ধারক-বাহক। এনিয়েই শিয়াদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ।
গত মাসে এই রাস্তার উপরেই এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। তাতেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যার জেরে দীর্ঘদিন ওই হাইওয়ে বন্ধ করে রাখা হয়। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়, পুলিশের পাইলট গাড়ি নিয়ে ওই এলাকা দিয়ে গাড়ির কনভয় যেতে পারবে। কিন্তু তাতেও রক্ষা হলো না। আবার গুলি চলল। প্রাণ গেল নিরাপরাধ সাধারণ মানুষের।