কোয়েটার কাছে বালুচিস্তান পুলিশ কলেজে জঙ্গি হামলায় কমপক্ষে ৫৯ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে৷ নিহতদের অধিকাংশই পুলিশ ক্যাডেট৷ হামলায় লশকর-ই-জংভি জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বিস্ফোরক বেল্ট পরা বন্দুকধারীরা প্রথমে পুলিশ কলেজের ওয়াচ টাওয়ারের প্রহরীর দিকে গুলি চালায়৷ গুলিবিনিময়ে সেন্ট্রি নিহত হবার পর তারা অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে বলে বালুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন৷
নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে একজন আক্রমণকারী নিহত হয় এবং বাকি দু'জন তাদের শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় বলেও বুগতি জানান৷ পরে একজন ক্যাডেটও তিনজন কালাশনিকভ ধারী আততায়ীর কথা বলেন, যদিও কর্তৃপক্ষ ইতিপূর্বে চার থেকে ছ'জন আক্রমণকারীর কথা জানিয়েছিল৷ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আসার পরে ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে আক্রমণের অন্ত ঘটে বলে জানিয়েছেন বালুচিস্তানে নিয়োজিত আধাসামরিক ফ্রন্টিয়ার কোরের প্রধান মেজর জেনারেল শের আফগান৷
পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা
এক বছর আগে শিশুদের রক্তে ভেসেছিল পেশাওয়ারের একটি স্কুল৷ স্কুলের শিক্ষার্থীসহ দেড়শ’রও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল তালেবান৷ এবার পেশাওয়ারের কাছেরই এক বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে তালেবান৷ পাকিস্তানে রক্তবন্যা চলছেই৷
ছবি: Reuters/F. Aziz
ভয়াবহ সেই দিন
গত ডিসেম্বরেই পেশাওয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বর্ষপূর্তি হলো৷ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ শোকাবহ সেই দিনকে স্মরণ করতে গিয়ে শুধু নিহত ১৫০ জনেরও বেশি মানুষের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাই জানাননি, পাকিস্তানকে জঙ্গিবাদমুক্ত করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছিলেন৷ওপরের ছবিতে ২০১৪ সালে পেশাওয়ারের স্কুলে তালেবান হামলায় আহত এক শিক্ষার্থী৷
ছবি: Reuters
আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান!
২০১৪ সালে স্কুলের শিশুদের ওপর চালানো সেই হামলার বর্ষপূর্তির এক মাস পেরোতেই পেশাওয়ারের কাছের বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিল জঙ্গিরা৷ পেশোয়ার থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের চারসাড্ডা এলাকার এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলার সময় হাজার খানেক শিক্ষার্থী ছিল৷ হামলার পর দ্রুতই সেখানে সেনাসদস্যরা চলে আসে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Majeed
‘হামলাকারীদের কোনো ধর্ম নেই, ধর্ম বিশ্বাস নেই’
বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি হামলার খবরে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে হামলাকারীদের ধর্মবিশ্বাস নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ৷ একজন ধর্মবিশ্বাসী কখনো অকারণে হত্যা বা নিরীহ মানুষ হত্যা করতে পারে না – এমন যুক্তিতে তিনি বলেন, ‘‘এই হামলাকারীদের কোনো ধর্ম বা ধর্মবিশ্বাস নেই৷’’ শরিফ জানান, তাঁর সরকার পাকিস্তানকে সন্ত্রাসমুক্ত করার সংগ্রাম আরো দৃঢ়ভাবে চালাবে৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
আরো ব্যাপক হতে পারত ক্ষয়ক্ষতি
হামলায় এ পর্যন্ত ২১ জন নিহত এবং ৭০ জানের মতো আহত হয়েছে বলে জানা গেছে৷ তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্রুত অভিযান শুরু না করলে রক্তক্ষয় ও প্রাণহানি আরো ব্যাপক হতে পারতো৷ ওপরের ছবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়াদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Majeed
কেন এই হামলা?
ইতিমধ্যে হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে তালেবান৷ জঙ্গি সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে তাদের সঙ্গীদের হত্যা করেছে তার প্রতিশোধ হিসেবেই চালানো হয়েছে এই হামলা৷ওপরের ছবিতে দুই তালেবান জঙ্গি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Majeed
5 ছবি1 | 5
মেজর জেনারেল শের আফগান আরো জানান, আততায়ীদের ‘ইন্টারসেপ্ট' করা মেসেজ থেকে জানা গেছে যে, তারা লশকর-ই-জংভি (এলইজে) জঙ্গি গোষ্ঠীর আল-আলিমি শাখার সদস্য৷ এলইজে জঙ্গি গোষ্ঠী পাকিস্তানি তালেবানের সঙ্গে যুক্ত৷ আততায়ীরা আফগানিস্তানে তাদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগে ছিল বলে আফগান জানান৷ কোয়েটাকে বহুদিন ধরেই আফগান তালেবানের একটি ঘাঁটি বলে গণ্য করা হয়ে থাকে৷ আফগান তালেবানের নেতৃবর্গ নিয়মিতভাবে এখানে মিলিত হয়েছেন৷ অপরদিকে ইসলামিক স্টেটও কোয়েটার এ আক্রমণের দায় স্বীকার করেছে৷
সোমবারের আক্রমণের সময় পুলিশ অ্যাকাডেমিতে প্রায় ৭০০ ক্যাডেট ছিলেন৷ নিরাপত্তা বাহিনী পাল্টা অভিযান শুরু করার সময় এলাকাটা নিষ্প্রদীপ ছিল৷ নিরাপত্তা বাহিনী একটি কর্ডন সৃষ্টি করে, অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া চলতে থাকে৷ মাথার উপর মিলিটারি হেলিকপ্টার চক্কর দিতে থাকে৷
অ্যাকাডেমির সামনে এখন কড়া নিরাপত্তা৷নিহত-আহতদের ক্রন্দনরত আত্মীয়স্বজনেরা অ্যাকাডেমিতে পৌঁছালে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে৷ নিরাপত্তা বাহিনী তল্লাসি চালিয়ে যাচ্ছে৷ মিডিয়াকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না৷