রোববার থেকে বিক্ষোভ চলছে পাকিস্তানে৷ শুক্রবার ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল থেকেও উঠেছে একই দাবি— প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পদত্যাগ করতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৮ সালের আগস্টে নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের তেহরিক-ই ইনসাফ দল৷ বিরোধী দলগুলো নির্বাচন নিয়ে তখন থেকেই প্রশ্ন তুলে আসছে৷ তারা মনে করে, সেনাবাহিনীর সহায়তায় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করে ক্ষমতায় এসেছেন ইমরান৷
দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করবেন, ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে টেনে তুলবেন— মূলত এই দুটো অঙ্গীকার করেই ভোট চেয়েছিলেন পাকিস্তানকে ১৯৯২-এর বিশ্বকাপ জেতানো সাবেক অলরাউন্ডার৷ কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময়ে কোনো ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি৷ তাই সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী দলগুলো বিক্ষোভ শুরু করে৷ বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছেন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ধর্মভিত্তিক দল জমিয়াত উলেমায়ে ইসলামের নেতা মওলানা ফজলুর রহমান৷ প্রধান দুই বিরোধী দল নওয়াজ শরিফের মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) আর আসিফ আলী জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ অন্যান্য দলেরও সমর্থন রয়েছে এই বিক্ষোভে৷
ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ
ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে এসেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা৷ এমন ঘটনা নতুন নয় দক্ষিণ এশিয়ায়৷ এর আগেও ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের রাজনীতির ময়দানে দেখা গেছে৷ ছবিঘরে তেমন কয়েকজনকে দেখে নিই চলুন৷
ছবি: bdnews24.com
ইমরান খান
ক্রিকেটারদের মধ্যে রাজনীতিতে সবচেয়ে সফল ইমরান খান৷ ১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতা পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ইমরান খান৷ ১৯৯৬ সালে যোগ দেন রাজনীতিতে৷ গঠন করেন রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ৷ ২০১৮-র সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়৷ তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Yam G-Jun
অর্জুনা রানাতুঙ্কা
শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা৷ অবসর গ্রহণের পর তিনি লঙ্কান বোর্ডের নানা দায়িত্ব পালন করেন৷ ২০০১ সালে রাজনীতিতে আসেন শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টিতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে৷ সে বছর কলম্বো থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন৷ পরে শিল্প, পর্যটন ও বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ এখন তিনি বন্দর ও নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী৷
ছবি: AFP/Getty Images
সনত জয়াসুরিয়া
সনত জয়াসুরিয়া সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারদের একজন৷ মাশরাফির আগে তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন৷ ২০১০ সালে তিনি মাতারা’র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন৷ মাহিন্দা রাজাপাকশে’র মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন৷
ছবি: AP
কীর্তি আজাদ
কীর্তি ভগবত ঝা আজাদ ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন৷ ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলেও ছিলেন বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভগমত ঝা আজাদের পুত্র কীর্তি৷ তৃতীয়বারের মতো তিনি এখন লোকসভার নির্বাচিত সদস্য৷
ছবি: imago/Hindustan Times
নভজোত সিং সিধু
সিধু’র ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৮৩ সালে৷ ২০০৪ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন৷ বিজেপির হয়ে অমৃতসর থেকে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন৷ জিতেও যান৷ ২০১৬ সালে তিনি দল থেকে রাজ্যসভার জন্য মনোনীত হলেও বিজেপি ত্যাগ করেন৷ ২০১৭ সালে যোগ দেন কংগ্রেসে৷ পূর্ব অমৃতসর থেকে নির্বাচনও জেতেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
ভারতের এই সাবেক অধিনায়কের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৮৪ সালে৷ ২০০৯ সালে তিনি ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেসে যোগ দেন৷ উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ নানা কারণে ভারতের আলোচিত ক্রিকেটারদের একজন তিনি৷
ছবি: AP
বিনোদ কাম্বলি
শচীন টেন্ডুলকারের স্কুলের বন্ধু বিনোদ কাম্বলি৷ নিজে ভারত দলে খেলতেন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে৷ বলিউডে অভিনয়ও করেছেন৷ পরে লোক ভারতী পার্টিতে যোগ দেন৷ ২০০৯ সালের নির্বাচনে মুম্বাইয়ের ভিখরোলি থেকে অংশ নিয়ে হেরে যান৷
ছবি: Imago/Hindustan Times
মনসুর আলী খান পতৌদি
পতৌদিকে বলা হয় ভারতের সেরা অধিনায়কদের একজন৷ তাঁর সময়ে মাঠের সেরা ফিল্ডারও ছিলেন তিনি৷ ১৯৯১ সালে ভোপাল থেকে কংগ্রেসের হয়ে জাতীয় নির্বাচনেও লড়েন তিনি৷ তবে হেরে যান৷
ছবি: dapd
নাঈমুর রহমান দুর্জয়
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়৷ তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷
ছবি: Naimur Rahman Durjoy
মাশরাফি বিন মর্তুজা
জয়সুরিয়ার পর মাশরাফিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি খেলা অবস্থাতেই প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন৷ তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে ২০১৮ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন৷ নড়াইল-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল এই অধিনায়ক৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karanikos
10 ছবি1 | 10
বিরোধীরা মিছিলের নাম দিয়েছেন, আজাদি মার্চ', অর্থাৎ ‘স্বাধীনতার মিছিল'৷ গত রবিবার পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর করাচি থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন শহর ঘুরে বৃহস্পতিবার মিছিলটি রাজধানী ইসলামাবাদে এসে পৌঁছায়৷ শুক্রবার মিছিলে অংশ নেয়া তরুণ হাবিবুর রহমান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মানুষ এখন তিন বেলার আহার জোটাতেও হিমশিম খাচ্ছে৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশে অঘোষিত সামরিক শাসন চলছে৷'' ইমরান খানের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তিনি নতুন আসছেন আর তাকে আন্তরিক মনে হয়েছিল বলে আমার পরিবার তাকে ভোট দিয়েছিল৷কিন্তু তিনি আমাদের হতাশ করেছেন৷''
তার পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ চললেও ইমরান জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না৷ এর আগে সেনাবাহিনীর বিশেষ সহায়তা নিয়ে কারচুপি করে নির্বাচিত হওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি৷