পাকিস্তানে এখন দ্রুত গতিতে বাড়ছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ৷ উগ্র ধর্মীয় বিশ্বাস, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, সেইসঙ্গে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এবং অব্যস্থাপনাকে এই জন্য দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা৷
বিজ্ঞাপন
২৩ জুন পর্যন্ত পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৮৭ হাজার, প্রাণ হারিয়েছেন তিন হাজার ৭০০৷ এই পরিস্থিতিতে চলতি মাসের শেষ নাগাদ সংক্রমণ পৌঁছাতে পারে তিন লাখে৷ জুলাই-আগস্ট নাগাদ রোগীর সংখ্যা হতে পারে ১০ লাখ৷
জুনের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পাকিস্তানকে পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্কবার্তা দেয়৷ সেসময় গড় সংক্রমণের হার বেড়ে ২২.৬ শতাংশে পৌঁছায়৷ প্রতিদিন এখন গড়ে ছয় হাজার জন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন সেখানে, যা একমাস আগেও ছিল এক হাজার৷
এই হিসাব দেশটির সরকারের৷ তবে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা এর চেয়ে তিন থেকে দশগুণ বেশি৷ অথচ সংক্রমণ বেড়ে চলার এই পরিস্থিতিতেই দেশটির সরকার লকডাউন শিথিল করেছে, এমনকি পর্যটন খাতও খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
মার্চে সংক্রমণের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান করোনা ভাইরাসকে সাধারণ ফ্লু এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন৷ দাবি করেন ৯৭ ভাগ আক্রান্ত রোগীরই কোনো ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না৷ পরবর্তীতে টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, এক চতুর্থাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা জনগোষ্ঠীর দেশ পাকিস্তানের পক্ষে দেশজুড়ে লকডাউন আরোপ সম্ভব নয়৷ করোনা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি সত্ত্বেও তার সরকার এখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের যুক্তিতে সব ক্ষেত্রে বিধিনিষেধগুলো তুলে দিয়েছে৷
কিন্তু এর ফলে পাকিস্তান আরো মারাত্মক স্বাস্থ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
করোনা ভাইরাস নিয়ে ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়৷ কিন্তু এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়া তথ্য, মিথ্যা সংবাদ৷ ডয়চে ভেলে চেষ্টা করছে বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে আপনাদের সঠিক তথ্য জানানোর৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Xiao Yijiu
শিশুদের আশঙ্কা কি বেশি?
শিশুদের নিয়ে আলাদা করে কোনো আশঙ্কা নাই৷ যে কোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন৷ আক্রান্তদের পাঁচ জনের চারজনের ওপর এই ভাইরাস সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের মতোই প্রভাব ফেলবে৷ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া রোগীদের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শিশু ও তরুণ বয়সিরা স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পারেন৷ মধ্যবয়সিরা এতে আক্রান্ত হলেও পর্যাপ্ত সেবা ও চিকিৎসায় তাদেরও সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ৷
ছবি: Reuters/A. Jalal
কী খেলে ঠেকানো যাবে করোনা?
কোনো কিছু খেয়েই করোনা ঠেকানো যাবে না৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য সুষম খাবার এমনিতেই প্রয়োজন৷ অনলাইনে গুজব ছড়াচ্ছে৷ কেউ রসুন খাওয়ার কথা বলছেন, কেউ ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক দ্রব্যের কথা বলছেন৷ রসুনে নানা উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য ভালো৷ রসুন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে তা ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক শরীরে গেলে তা করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে৷
ছবি: AFP/C. De Souza
গরম বা ঠান্ডা পানি পান করা উচিত?
নিয়মিত পানি পান করলে শরীরের জন্য ভালো৷ কিন্তু ১৫ মিনিট পর পর গরম পানি পান করলে ভাইরাস মারা যাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷ মুখে বা শরীরে একবার ভাইরাস প্রবেশ করলে কোনো খাবার বা পানীয় দিয়েই তা আটকানো যাবে না৷ শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম৷
ছবি: Colourbox/Haivoronska_Y
অ্যান্টিবায়োটিক বা কোনো ওষুধে কাজ হবে?
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য কার্যকর, ভাইরাসের জন্য নয়৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসুস্থ শরীরে ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও হতে পারে৷ সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন৷ এখনো নভেল করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি৷ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ শিগগিরই হয়তো আসবে সুখবর৷
ছবি: imago/Science Photo Library
আবহাওয়া ও তাপমাত্রার কোনো প্রভাব রয়েছে?
এ বিষয়ে এখনো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ পরীক্ষাগারে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাস মারা যায়৷ কিন্তু এত উচ্চ তাপমাত্রা কোনো দেশেই থাকে না৷ অনেকে মনে করছেন গরম পানি দিয়ে স্নান করলে ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সবসময় জরুরি৷ কিন্তু প্রচণ্ড গরম পানি দিয়ে স্নান করলেই তা করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Lipinski
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে কি করোনা ভাইরাস শনাক্ত সম্ভব?
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরে তাপমাত্রা বোঝা সম্ভব, ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চত করা সম্ভব না৷ সেক্ষেত্রে কারো শরীরে জ্বর বা অন্য উপসর্গ দেখা দেয়ার আগ পর্যন্ত তার শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি বোঝা যাবে না৷ সাধারণত ভাইরাস শরীরে ঢোকার ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫ দিনের মধ্যেই তা টের পাওয়া যায়৷ তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৪ দিনের পরও ভাইরাস শরীরে কর্মক্ষম থাকতে পারে৷
ছবি: Reuters/P. Mikheyev
টাকার মাধ্যমে কী করোনা ছড়ায়?
শরীরের বাইরে করোনা ভাইরাস কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে৷ ফলে আমদানি করা কোনো পণ্য বা চিঠির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা নেই বললেই চলে৷ ময়লা টাকা থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷ ফলে টাকা লেনদেনের পর ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়া উচিত৷ যত বেশি সম্ভব হাত-মুখ-নাক-কানে হাত নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷
ছবি: DW
মশা বা অন্য পশুর মাধ্যমে ছড়াতে পারে?
সার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল এক ধরনের বেড়াল থেকে৷ মার্স ছড়িয়েছিল উট থেকে৷ নভেল করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ালো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ ধারণা করা হচ্ছে, বাদুড় থেকে অন্য কোনো মাধ্যম হয়ে মানুষের মধ্যে এটি ছড়িয়েছে৷ তবে মশা বা অন্য কোনো প্রাণীর মাধ্যমে এটি আপনার মধ্যে ছড়াবে না৷ সতর্কতা হিসেবে মাছ-মাংস খাওয়ার আগে ভালোভাবে রান্না করতে হবে৷ অর্ধেক সিদ্ধ মাছ-মাংস বা পোচ করা ডিম থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/A. Rose
কিভাবে থাকবো নিরাপদ?
সবচেয়ে জরুরি হাত পরিষ্কার রাখা৷ সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ২০ সেকেন্ড পরিষ্কার করতে হবে৷ যদি সাবান না থাকে, ব্যবহার করতে পারেন অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করে তা ডাস্টবিনে ফেলুন, হাত ধুয়ে নিন৷ অথবা হাতের কনুইয়ে মুখ ঢাকুন৷ হাতের তালুতে হাঁচি-কাশি দিলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে আক্রান্ত হতে পারেন অন্য়রা৷ হ্যান্ডশেক বা হাত মেলানো ও কোলাকুলি থেকেও বিরত থাকুন৷
ছবি: AFP/N. Almeida
আমি কী মারা যাবো?
করোনায় আক্রান্ত হলেই আপনি মারা যাবেন, এমন আশঙ্কা একেবারেই কম৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন৷ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন৷ অনলাইনে যা দেখবেন, সব বিশ্বাস না করে নির্ভরযোগ্য তথ্যের সন্ধান করুন৷ সাবান, স্যানিটাইজার নিজে কিনে জমিয়ে রাখবেন না৷ আপনি নিরাপদ থাকলেও আপনার আশেপাশের মানুষ নিরাপদ না থাকলে সহজেই তার কাছ থেকে ছড়াবে ভাইরাস৷ ফলে নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যদেরও থাকার সুযোগ দিন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Moore
10 ছবি1 | 10
যেভাবে ছড়িয়েছে
পাকিস্তানে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি৷ এক এপ্রিল থেকে সীমিত লকডাউন আরোপ করে সরকার, যা ৯ মে পর্যন্ত কার্যকর ছিল৷
মার্চের শুরুর দিকে করোনার প্রকোপ যখন ততটা ছিল না সেসময় ফেডারেল সরকার কোয়ারান্টিনের যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়েই শিয়া তীর্থযাত্রীদের ইরান থেকে পাকিস্তানে আসার অনুমতি দেয়৷ অন্যদিকে পাঞ্জাব প্রদেশে সুন্নিদের তাবলিগ জামাতও চলেছে সমানতালে৷ এমন গণজমায়েত থেকে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে৷ মার্চে মানুষকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে ঈদ উদযাপনে কড়াকড়ি তুলে নেন ইমরান খান৷ পরবর্তীতে সেই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন৷
পাকিস্তানের রাজনীতি ও ধর্ম
ইসলামাবাদ ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে, করোনাকে ভয়াবহ মনে করেন না পাকিস্তানের ৫৫ ভাগ মানুষ৷ অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইপসোসের জরিপে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস বিষয়ে সম্যক ধারণা রয়েছে দেশটির মাত্র তিনভাগ মানুষের৷
দেশটির মানুষের এই ভুল ধারণা পোষণের জন্য সরকারকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ তারা মনে করেন কর্তৃপক্ষ গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে পদক্ষেপ না নেয়ায় ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিস্তার ঘটেছে মানুষের মধ্যে৷ যেমন, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাংবাদিক ওয়াহিদ তৌহিদের মতে পাকিস্তানের রাজনীতি এবং ধর্মীয় উগ্রতাই এই পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে৷ তিনি জানান মানুষ বিশ্বাস করেছে যে রোগটি পূর্বের দেশগুলো চেয়ে পশ্চিমে বেশি ক্ষতি করে৷ সাদা মানুষেরাই মূলত আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন৷ পাকিস্তানের মানুষ সেভাবে আক্রান্ত হবেন না কিংবা মারাও যাবেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানের মানুষ বরাবরই ষড়যন্ত্র তত্ত্বে আস্থা রাখেন৷ সেভাবেই চলেন এবং যতক্ষণ না বাস্তবতা তাদের মুখে চপোটাঘাত করে ততক্ষণ অন্য কিছু মানেন না৷’’
করোনা ভাইরাস ইশ্বরের শাস্তি
এমন পরিস্থিতি কেন তৈরি হয়েছে? সমাজবিজ্ঞানী মোহাম্মদ জাকারিয়া জাকার মনে করেন বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা এবং শিক্ষার অভাব এর পেছনে ভূমিকা রাখছে৷ ‘‘আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিজ্ঞান এবং যুক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করিনি,’’ বলেন তিনি৷
রক্ষণশীলরা যেকোন রোগের বিস্তারকেই ইশ্বরের শাস্তি হিসেবে দেখেন৷ যার কারণে ধর্মীয় গুরুদের দেয়া বিধিবিধানই তারা এসময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন৷ চিকিৎসা ব্যবস্থার বদলে নির্ভর করেন ঝাড়-ফুঁকের উপর৷ জাকার বলেন, ‘‘কারো যদি কোভিড-১৯ ধরা পড়ে তাহলে তার উপর অপবাদ দেয়া হবে যে তিনি কোনো পাপ করেছেন যার কারণে ইশ্বরের রোষাণলে পড়েছেন৷’’
রাজনৈতিক নেতাকর্মী, চিকিৎসক এবং ধর্মীয় গুরুদের নানা ধরনের বক্তব্যের মধ্য দিয়েই প্রতিনিয়ত সেখানে ভুল ধারণা, গুজব ছড়িয়েছে৷ যেমন এপ্রিলে তারিক জামিল নামের জনপ্রিয় একজন ধর্মীয় বক্তা দাবি করেন, নারীদের নির্লজ্জ নাচ ও পোশাকের কারণেই শাস্তি হিসেবে সৃষ্টিকর্তা করোনা ভাইরাস দিয়েছেন৷
ভয়াবহ সংকটের মুখে
সংক্রমণের গতি রোধ করতে পাকিস্তানকে দুই সপ্তাহর মধ্যবর্তী লকডাউন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ যদিও বিরোধী দলসহ, ডাক্তাররা সম্পূর্ণ লকডাউন পক্ষে মত দিয়েছেন৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী জানিয়েছেন, এই ধরনের পরামর্শ তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়৷ সরকার অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য দুই দিকই বিবেচনায় নিচ্ছে৷
বর্তমানে ফেডারেল সরকার করোনার বেশি সংক্রমণ এলাকাগুলোকে ‘হটস্পট’ হিসেবে নির্ধারণ করে সেসব স্থানে লকডাউন আরোপ করেছে৷ মহামারিতে দেশটিতে চাকরি হারানোর মুখে কয়েক লাখ মানুষ৷ ‘‘সামনের দিনে পাকিস্তান সম্ভবত তার সবচেয়ে ভয়াবহ সংকটে পড়তে যাচ্ছে,’’ বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষ তৌহিদ৷
আসিম সালিম/এফএস
মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...
প্লেগ থেকে করোনা: রোগের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
করোনা ভাইরাস প্রাকৃতিকভাবে নয়, তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের গবেষণাগারে, এমন গুজব হরহামেশাই ছড়াচ্ছে৷ শুধু করোনা নয়, যুগে যুগে বিশ্বব্যাপী ছড়ানো সব মরণব্যাধী নিয়েই এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বিস্তার লাভ করেছে৷
ছবি: zecken.de
প্লেগের কারণ ইহুদিরা
১৪ শতকে ইউরোপে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে৷ কারো জানা ছিল না কোথা থেকে এর উৎপত্তি৷ একটা সময়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে ইহুদিরা পরিকল্পিতভাবে এই রোগ ছড়িয়েছে৷ প্লেগের পেছনে আছে ইহুদিরাই; এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন জায়গায় তাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়৷ জোরপূর্বক উচ্ছেদও করা হয় অনেককে৷
ছবি: picture-alliance/National Museum of Health and Medicine
স্প্যানিশ ফ্লু জার্মানির অস্ত্র
১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লু প্রায় আড়াই কোটি থেকে পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷ ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এই ভাইরাসের উদ্ভব রহস্য হয়ে ছিল৷ অনেকে মনে করতেন জার্মান সেনাবাহিনী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য এই জীবাণু আবিষ্কার করে৷
ছবি: picture-alliance / akg
এইডস ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
১৯৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে এইডস ছড়িয়ে পড়ে৷ পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এ নিয়ে গুজব ছড়াতে শুরু করে সোভিয়েত গোয়েন্দা বাহিনী কেজিবি৷ বলা হয় ফোর্ট ড্রেট্রিক-এ জীবাণু অস্ত্র হিসেবে মার্কিনিরা এইচআইভি উদ্ভাবন করেছিল, যা পরবর্তীতে প্রয়োগ করা হয় বন্দী, সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায় এবং সমকামীদের উপর৷ এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি আজও জনপ্রিয়৷
ছবি: Imago Images/ZUMA Press/D. Oliveira
ইবোলার দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের
নব্বইর দশকে এইডস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করে৷ কিন্তু এ সময় আফ্রিকায় নতুন করে ইবোলা ছড়িয়ে পড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্র এইডস ছড়িয়েছে এমন ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকরা এবার দাবি করল ইবোলার জন্যও তারাই দায়ী৷ সঙ্গে অবশ্য ব্রিটেনকেও জড়ানো হল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেন্টাগনের এঁটেল পোকা প্রকল্প
২০১৯ সালে রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্রিস স্মিথ দাবি করেন পেন্টাগন এঁটেল পোকাসহ বিভিন্ন কীটের মাধ্যমে জীবাণু অস্ত্র তৈরির প্রকল্প চালিয়েছে৷ এই গবেষণা চলেছে ১৯৫০ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে৷ স্মিথ সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বইও লিখেছেন৷
ছবি: zecken.de
কোভিড-১৯ কৃত্রিমভাবে ছড়ানো
ডিজিটাল যুগে যেকোন ভুল তথ্য আগের চেয়েও দ্রুত ছড়ায়৷ বিভিন্ন রোগের কারণ হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের গোপন জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির কথা বারবার সামনে আসে৷ একইভাবে এবার ষড়যন্ত্র তত্ত্বপ্রেমীদের দাবি নভেল করোনা ভাইরাস চীনের কোন গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা হয়েছে৷ সেখান থেকেই তা পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে৷ কেউ কেউ দাবি করছেন যুক্তরাষ্ট্রই জীবাণুটি তৈরি করে চীনে পাঠিয়েছে৷ যদিও এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই৷