২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচিতে চলবে গোবর-নির্ভর বাস৷ বিস্ময়ের কিছু নেই, গোবর ব্যবহার করে উৎপাদিত বায়োগ্যাস দিয়ে বাস চালানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে করাচি প্রশাসন৷
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের অর্থ সহায়তায় বাস ব়্যাপিড ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক, তথা বিআরটি প্রকল্পের আওতায় এর কাজ শুরু হয়েছে৷ প্রকল্পের আওতায় ২০০ বাস চলবে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় এই শহরে৷
বিআরটি প্রসঙ্গে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা মালিক আমিন আসলাম বলেন, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের অনুমোদনকৃত এটিই প্রথম প্রকল্প৷ এতে পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক লাভের সুযোগ রয়েছে৷ এই খাতে কোনো ভর্তুকিও দিতে হবে না বলে জানান তিনি৷
এই প্রকল্প চালু হলে প্রতিদিন ৩ লাখ ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াতের সুযোগ পাবে৷ এবং ৩০ বছরের মধ্যে ২৬ লাখ টন কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন রোধ করা যাবে বলে জানান তিনি৷
বিআরটির সীমানায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে৷ এই পথে ১৫ লাখ অধিবাসী রয়েছে৷ এই পথে ২৫টি নতুন বাস স্টেশন যুক্ত করা হবে৷ একই সঙ্গে সড়কের পাশে ফুটপাত উন্নয়ন, সাইকেল লেন, ও বাইক লেনের ব্যবস্থা করা হবে৷
স্থানীয়রা এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন৷ তাঁরা মনে করেছেন এমনটি সম্ভব পর হলে করাচির বায়ু ও শব্দ দূষণ কমবে৷
করাচির বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সি আফজাল আহমেদ বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এই শহরে গণ পরিবহন বলে কোনো সেবা নেই৷ একেবারেই বিধ্বস্ত এই খাত৷ চীন থেকে আমদানী করা কিছু বাস প্রাকৃতিক গ্যাসে চলেছিল বেশ কয়েকদিন৷ এরপর সেগুলো নষ্ট হওয়ার পর আর নতুন কোনো বাস যুক্ত হয়নি গত দুই দশক৷ এখানকার বাসিন্দাদের ভরসা ট্যাক্সি, অটো রিকশা৷''
হারিয়ে যাচ্ছে করাচির ঔপনিবেশিক স্থাপত্য
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা বিদায় নেবার পর তাদের সৃষ্ট বা প্রভাবিত স্থাপত্যের দিকে নজর দেবার মতো প্রবৃত্তি বা মনোবৃত্তি পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের বাসিন্দাদের ছিল না – এবং আজও হয়েছে কিনা সন্দেহ৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
হতশ্রী, কিন্তু কুশ্রী নয়
করাচিতে এমনই একটি ব্রিটিশ আমলের বাড়ি৷ অবক্ষয়ের চিহ্ন আজ সর্বত্র, সেই সঙ্গে এককালের নান্দনিক স্থাপত্যের নিদর্শনগুলি মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে ডেভেলপারদের তাণ্ডব – যা করাচিকে একটি মেগাসিটিতে পরিণত করছে৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
অলিন্দ
ব্রিটিশ আমলের একটি ভবনের অলিন্দ৷ এ ধরনের অনেক বাড়ির মালিক – যেমন মুসলমান, তেমনই হিন্দু – স্বাধীনতা পরবর্তী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালান৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
অলিন্দের নিজস্বতা
১৯৪৭ সালে করাচির জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক চার লাখ, আজ তা দাঁড়িয়েছে এক কোটি সত্তর লাখে৷ কাজেই শহরের প্রতিটি ইঞ্চি জমি আজ ডেভেলপারদের কাছে লোভনীয় বস্তু৷ নতুন হাইরাইজগুলির বারান্দার নন্দনতত্ত্ব নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো সময় স্বভাবতই স্থপতি বা বাসিন্দা, কারোরই নেই৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
অলিন্দ ও নারী
করাচির আরেক অবয়ব, যদিও তা হারাতে বসেছে৷ খোলা বারান্দার ছাদে একটি রিলিফ বা উদ্গত শিল্পকর্ম রাজপথ থেকেও দেখা যাচ্ছে – হংস সহ এক নারীর মূর্তি৷ করাচির পুরনো এলাকাগুলিতে বহুতল আবাস গজিয়ে উঠছে ব্যাঙের ছাতার মতো৷ শিল্পকর্মের সঙ্গে সে স্থাপত্যের বিশেষ লেনদেন নেই৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
অতীত ঢাকা পড়ছে বর্তমানে
জাহাঙ্গির কোঠারি প্যারেড ভবনটি আজ ঢেকে গেছে একাধিক ওভারপাস ও পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বাড়ির ছায়ায়৷ তবুও বলতে হয়, যে ইম্পিরিয়াল কাস্টমস হাউসের মতো এই প্রমেনেডটি তার অতীত গৌরবের কিছুটা অন্তত ধরে রাখতে পেরেছে৷
লেডি ডাফরিন হাসপাতালের পালিশ করা কাঠের সিঁড়ি আর বাহারে মোজেক যেন কোন সুদূর অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, যার ভালোমন্দ বিচার করার সময় ঠিক এই মুহূর্তে নয়...৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
প্রবেশপথ
করাচিতে পাকিস্তান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে ঢোকার প্রবেশপথ: বাহারে রেলিং আর চৌকা কাটা মোজেক৷ ১৯৯৪ সালের সিন্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ আইন ঔপনিবেশিক সহ যাবতীয় ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে আইনগত সুরক্ষা দেবার চেষ্টা করেছে বটে, কিন্তু ডেভেলপারদের দৌরাত্ম্য থেকে কতোটা বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে৷