২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামের একটি পর্যটনকেন্দ্রে হামলায় ২৬ জন নিহত হন৷ আকস্মিক এই হামলার এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে৷ হামলার ঘটনার পর ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামের একটি জঙ্গি গোষ্ঠী এর দায় স্বীকার করে৷ ভারতের অভিযোগ, ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের’ সাথে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার যোগ রয়েছে৷

ভারত মনে করে, সীমান্তের ওপাড় থেকে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমকে মদত দিচ্ছে পাকিস্তান৷ এ অভিযোগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন চুক্তি বাতিলসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় তারা৷

হামলার ঘটনার পর দেশটির সেনেটে পাশ হওয়া এক রেজ্যুলেশনে সব ধরনের সন্ত্রাবাদী কার্যক্রমের নিন্দা জানায় পাকিস্তান৷ হামলার সাথে পাকিস্তানের যোগ রয়েছে- ভারতের এমন অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে এই বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায় দেশটি৷ ভারতের পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তানও বেশ কিছু পালটা পদক্ষেপ নেয়৷

হামলার পর এক বিবৃতিতে এর নিন্দা জানায় জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের মহাসচিবের পক্ষ থেকে তার মুখপাত্র বলেন, ‘‘জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হাতহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন৷’’ কোনো পরিস্থিতিতেই সাধারণ মানুষের উপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয়- জাতিসংঘের মহাসচিব তা মনে করেন বলেও তার মুখপাত্র জানান৷

কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে ঘটনার নিন্দা ও সমবেদনা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, ভারতের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে৷’’ তিনি বলেন, ''তারা কোনো না কোনোভাবে একটি পথ খুঁজে নেবে৷’’ দুই দেশের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বানও জানায় হোয়াইট হাউস৷

হামলার ঘটনার পর এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়া জিয়াকুন বলেন, ‘‘চীন সব ধরনের সন্ত্রসবাদের বিরোধী৷’’ পাকিস্তানের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবির প্রতিও সমর্থন জানিয়েছে চীন৷ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইসাক দারের সাথে ফোন কলে বলেন, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার সুরক্ষায় চীনের সমর্থন রয়েছে৷ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই কথা বলা হয়৷

হামলার ঘটনার পর জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘আমরা পহেলগামে পযটকদের উপর বর্বর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই৷’’ বার্তায় শলৎস ভারতের জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেন৷

পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে ইরান৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ফোন কলে হামলার নিন্দা জানান ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেসকিয়ান৷ এদিকে ভারত-পাকিস্তানের সাথে শতাব্দী প্রাচীন সভ্যতার যোগসূত্রের উল্লেখ করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্ততার প্রস্তাব দেন৷

পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক৷ প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান বলেন, ‘‘কাশ্মীর বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা খারাপ পরিস্থিতির দিকে মোড় নেওয়ার আগেই তা দ্রুত প্রশমিত হওয়া উচিত৷’’ এদিকে ভারতের বেশ কিছু গণমাধ্যমে তুরস্ক থেকে পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানো হয়েছে- এমন প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়ে তুরস্ক সরকার জানায়, জ্বালানির নিতে একটি কার্গো বিমান পাকিস্তানে অবতরণ করেছিল৷

হামলার ঘটনার দিনে সৌদি আরব সফরে ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত দেশে ফেরেন তিনি৷ অন্যান্য দেশের মধ্যে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইসরায়েল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশও পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানায়৷