পাক-আফগান সীমান্তের কাছে দুইটি জঙ্গি হামলায় চারজন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সীমান্ত চেক পোস্টের কাছে। সেখানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে তিনজন সেনার মৃত্যু হয়।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আত্মঘতী বোমারুর লক্ষ্য ছিল চেক পোস্টে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো। সেটা করতে পারলে হতাহতের সংখ্যা অনেক বাড়ত। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আগে তিনজন সেনা তাকে থামায়। তারপরই ওই জঙ্গি নিজেকে উড়িয়ে দেয়। তিনজন সেনাও মারা যায়।
বৃহস্পতিবারই আফগান সীমান্তের কাছে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে একজন পাকিস্তানি সেনা অফিসারের মৃত্যু হয়েছে।
খাইবার-পাখতুনখোয়: যেখানে পুলিশ জঙ্গিদের নিশানা
পাকিস্তানের আফগান সীমান্তে ইসলামী জঙ্গিদের প্রধান নিশানা পুলিশ সদস্যরা৷ তাদের হত্যা করতে মসজিদে হামলা চালাতেও কার্পণ্য করছে না জঙ্গিরা৷ তাদের থামাতে কী প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
তরুণ অফিসারদের প্রস্তুতি
পাকিস্তানের নওশেরার এলিট পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণের সময় একদল পুলিশ সদস্যকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷ জঙ্গিদের মোকাবিলায় তরুণ পুলিশ অফিসারদের এখানে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
স্নাইপার হামলা
সারবন্দ ও এর আটটি ফাঁড়ি সাম্প্রতিক মাসগুলিতে চারটি বড় হামলার শিকার হয়েছে৷ এমনকি স্নাইপার ব্যবহার করেও নজিরবিহীন হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা৷ ছবিতে পেশোয়ারের উপকণ্ঠে, সরবন্দ থানার ছাদে মেশিনগান নিয়ে সতর্ক অবস্থানে এক পুলিশ সদস্যকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
অত্যাধুনিক অস্ত্র
খাইবার-পাখতুনখোয়া পুলিশ প্রধান মোয়াজ্জেম আনসারি রয়টারর্সকে জানান, জঙ্গিদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম ফোর রাইফেলস থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র রয়েছে৷ আফগানিস্তানে পশ্চিমা বাহিনীর ফেলে আসা অস্ত্র কিনেছে তারা৷ তিনি বলেন, জঙ্গিরা আরো মারনঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে৷ ছবিতে প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে এক পুলিশ সদস্যকে ভবনের উপর থেকে ঝাপ দিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
টিটিপির ঘাঁটি
আফগানিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন এই অঞ্চল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর জঙ্গিদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷ এখানে পুলিশে ফাঁড়িগুলোতে অতর্কিত হামলা চালায় বিভিন্ন আস্তানায় লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা৷ পেশোয়ারের উপকণ্ঠে আচিনি ফাঁড়ির ফটকের ছিদ্র দিয়ে বাইরে সতর্ক দৃষ্টি এক পুলিশ সদস্যের৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
মুখোমুখি
সারবন্দ থানায় সহকর্মীদের সঙ্গে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করছেন সহকারী উপ-পরিদর্শক জামিল শাহ৷ সরবন্দ থানা ও এর আশেপাশের আটটি ঘাঁটির জন্য মোট জনবল ৫৫ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম৷ একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘কর্মী ঘাটতি সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ এই এলাকাটি (জঙ্গিদের) হামলার নিশানা, আমরা তাদের মুখোমুখি৷’’
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
নিহতদের স্মরণ
গত জানুয়ারিতে পেশোয়ারে পুলিশ লাইনসে একটি মসজিদে হামলা চালায় জঙ্গিরা৷ এতে মারা যান ৮০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য৷ এই হামলার দায় স্বীকার করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের পেশোয়ারে পুলিশ লাইন্স এলাকায় একটি বিলবোর্ডে নিহত পুলিশ সদস্যদের ছবি৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
সহকর্মীদের প্রার্থনা
৯ ফেব্রুয়ারি নিহতদের জন্য প্রার্থনার আয়োজন করেন সহকর্মীরা৷ ৩৫ বছরের পুলিশ সদস্য ইমাম নুর উল আমীন অশ্রুশিক্ত চোখে মোনাজাত করছেন৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
বাড়ছে মৃত্যু
সারবন্দ পুলিশ স্টেশনের দেয়ালে জঙ্গিদের ছোঁড়া গুলির চিহ্ন দেখাচ্ছেন সহকারি পুলিশ পরিদর্শক জামিল শাহ৷ গত বছর খাইবার-পাখতুনখোয়ায় জঙ্গিদের হাতে মোট ১১৯ পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন৷ ২০২১ সালে ৫৪ জন আর ২০২০ সালে মারা যান ২১ জন৷ চলতি বছর এরইমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১০২ পুলিশ সদস্য, যাদের বেশিরভাগ মারা যান মসজিদে হামলার ঘটনায়৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
টিটিপির ভাষ্য
ছবিতে জানুয়ারিতে হামলা বিধ্বস্ত মসজিদের ধ্বংসাবশেষের উপর নিহতদের স্মরণে রাখা পুষ্পস্তবক দেখা যাচ্ছে৷ টিটিপি মুখপাত্র মুহাম্মদ খুরাসানির ভাষ্যে, ‘‘আমাদের বাধা না দিতে পুলিশকে বার বার সতর্ক করা হয়েছে৷ কিন্তু তারা এতে কর্ণপাত না করে আমাদের যোদ্ধাদের শহিদ করতে শুরু করেছে, এ কারণেই আমরা তাদের নিশানা করছি৷’’
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
জঙ্গিবিরোধী লড়াই
২০০১ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মোট ২১০০ পুলিশ সদস্য জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন সাত হাজার৷ জঙ্গিদের বিস্তার থামাতে পুলিশ এখন আগের চেয়ে আরো বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছে বলে দাবি জামিল শাহর৷ ‘‘আমরা পেশোয়ারেই তাদের গতি থামিয়ে দিয়েছি’, বলেন তিনি৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
10 ছবি1 | 10
৩৩ বছর বয়সি ওই অফিসারের নেতৃত্বে সেনা জওয়ানরা খাইবার এলাকায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিল। সেই সময় জঙ্গিদের গুলিতে অফিসারের মৃত্যু হয়।
পরে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের গুলিতেই সেনা অফিসার মারা গেছেন। তবে প্রথম ঘটনার দায় কেউ এখনো স্বীকার করেনি।
একটি সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পাকিস্তানে ২৭১টি জঙ্গি হামলা হয়েছে। তাতে ৩৮৯ জন মারা গেছেন। এই সময়ে জঙ্গি হামলার পরিমাণ ৭৯ শতাংশ বেড়েছে।