ফেব্রুয়ারিতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আত্মঘাতী হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জঙ্গি গোষ্ঠীর ৪৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পাকিস্তান৷ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
বিজ্ঞাপন
আটককৃতদের মধ্যে জৈশ-ই-মোহাম্মদের শীর্ষ নেতারা রয়েছেন৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেহরিয়ার আফ্রিদি জানান, জৈশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান মওলানা মাসুদ আজহারের ভাই এবং এক আত্মীয় রয়েছেন আটককৃতদের মধ্যে৷ এদিকে, মঙ্গলবার সকালে পাকিস্তানের নৌবাহিনী জানিয়েছিল, ভারতের একটি সাবমেরিন পাকিস্তানের জলসীমায় প্রবেশ করেছে৷
এর আগে, সোমবার জাতিসংঘের নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে এমন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সম্পদ জব্দ করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান সরকার৷ ইসলামি জঙ্গি দলগুলোর ক্ষমতা কমানোর অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী জৈশ-ই-মোহাম্মদের ভারতে হামলার পর বিশ্বনেতাদের চাপের মুখে রয়েছে পাকিস্তান৷ ভারতে হামলার জের ধরে দু'দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল৷ পাকিস্তান ভারতীয় পাইলটকে শুক্রবার ফেরত দেয়ার পর দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনার কিছুটা অবসান হয়েছে৷ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে মদদ দেয়ার অভিযোগ বরাবরই করে আসছে ভারত৷
সোমবার রাতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি নতুন নির্দেশ জারি করেন, যেখানে জাতিসংঘের নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা জঙ্গি গোষ্ঠী ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পুরনো আইনকে হালনাগাদ করা হয়েছে৷ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ ফয়সাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘মন্ত্রিসভায় এই আইন পাস হয়েছে৷''
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ঐ তালিকায় যেসব ব্যক্তির নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়বা'র হাফিজ সাঈদ অন্যতম৷ ভারতে ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার পেছনে লস্কর-ই-তৈয়বার হাত রয়েছে৷
কাশ্মীরে বহুদিনের সংঘাত, বহুদিনের ক্ষত
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে যেন গলার ফাঁস হয়ে রয়েছে কাশ্মীর৷ তাই কাশ্মীর সংক্রান্ত ঘটনাবলী আজ নিজেরাই ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bhat
১৯৪৭
বলা হয় দেশবিভাগের পর পাকিস্তান থেকে আগত উপজাতিক যোদ্ধারা কাশ্মীর আক্রমণ করে৷ তখন কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সাথে সংযোজনের চুক্তি করেন, যা থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়৷
ছবি: dapd
১৯৪৮
ভারত জাতিসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে পর, ৪৭ ক্রমিক সংখ্যক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়৷ ঐ প্রস্তাব অনুযায়ী গোটা কাশ্মীরে গণভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
১৯৪৮
কিন্তু পাকিস্তান প্রস্তাব অনুযায়ী, কাশ্মীর থেকে সৈন্যাপসারণ করতে অস্বীকার করে৷ অতঃপর কাশ্মীরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়৷
ছবি: Getty Images
১৯৫১
ভারতীয় কাশ্মীরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে সমর্থন করা হয়৷ অতঃপর ভারত বলে, আর গণভোট অনুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই৷ জাতিসংঘ ও পাকিস্তানের মতে, গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৫৩
কাশ্মীরের ‘প্রধানমন্ত্রী’ শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটের সমর্থক ছিলেন ও ভারতের সঙ্গে সংযোজনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেন৷ ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ জম্মু-কাশ্মীরের নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের সংযোজনকে পাকা করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Khan
১৯৬২-৬৩
১৯৬২ সালের যুদ্ধে চীন আকসাই দখল করে৷ তার আগের বছর পাকিস্তান কাশ্মীরের ট্রান্স কারাকোরাম ট্র্যাক্ট এলাকাটি চীনকে প্রদান করে৷
ছবি: Getty Images
১৯৬৫
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়৷ কিন্তু যুদ্ধশেষে উভয় দেশের সেনা তাদের পুরোনো অবস্থানে ফিরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
১৯৭১-৭২
আবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ৷ যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সিমলা চুক্তি সম্পাদিত হয় ১৯৭২ সালে৷ যুদ্ধবিরতি রেখাকে লাইন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ রেখায় পরিণত করা হয় ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ সমাধান সম্পর্কে ঐকমত্য অর্জিত হয়৷
ছবি: AP
১৯৮৪
ভারত সিয়াচেন হিমবাহ নিজ নিয়ন্ত্রণে আনার পর পাকিস্তান তা একাধিকবার দখল করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হতে পারেনি৷
ছবি: AP
১৯৮৭
জম্মু-কাশ্মীরে বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়৷ ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থাকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করে, কিন্তু পাকিস্তান সে দোষারোপ চিরকাল অস্বীকার করে এসেছে৷
ছবি: AP
১৯৯০
গওকাদল সেতুর কাছে ভারতীয় সিআরপি রক্ষীবাহিনী কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালালে পর শতাধিক আন্দোলনকারী নিহত হন৷ প্রায় সমস্ত হিন্দু কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যান৷ জম্মু-কাশ্মীরে সেনাবাহিনীকে আফসা বা আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Tauseef Mustafa
১৯৯৯
কাশ্মীর ভ্যালিতে গোটা নব্বই-এর দশক ধরে অশান্তি চলে৷ ১৯৯৯ সালে আবার ভারত-পাকিস্তানের লড়াই হয়, এবার কারগিলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
২০০১-২০০৮
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলাপ-আলোচনার যাবতীয় প্রচেষ্টা প্রথমে নতুন দিল্লির সংসদ ভবন ও পরে মুম্বই হামলার ফলে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/F. Khan
২০১০
ভারতীয় সেনার গুলি লেগে এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর পর কাশ্মীর ভ্যালি উত্তেজনায় ফেটে পড়ে৷ বিক্ষোভ চলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে, প্রাণ হারান অন্তত ১০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/U. Asif
২০১৩
সংসদ ভবনের উপর হামলার মুখ্য অপরাধী আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়৷ এর পর যে বিক্ষোভ চলে, তা-তে দু’জন প্রাণ হারায়৷ এই বছরই ভারত আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় মিলিত হয়ে উত্তেজনা উপশমের কথা বলেন৷
ছবি: Reuters
২০১৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ উপস্থিত থাকেন৷ কিন্তু এর পর নতুন দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনার কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ায় ভারত আলাপ-আলোচনা স্থগিত রাখে৷
ছবি: Reuters
২০১৬
আজাদ কাশ্মীর ভিত্তিক হিজবুল মুজাহিদীন-এর অধিনায়ক বুরহান ওয়ানি-র মৃত্যুর পর কাশ্মীরে স্বাধীনতা সমর্থকরা আবার পথে নেমেছেন৷ এই আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে ও বিক্ষোভ অব্যাহত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.S.Hussain
২০১৯
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামা সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর গাড়িবহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ এতে ৪২ জওয়ান নিহত হন৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/P. Kumar Verma
২০১৯
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের কাছে কিছু বিশেষ অধিকার ছিল। ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারাটি অবসানের দাবি তোলেন৷ বিল পাস হয়। একই দিনে তাতে সই করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷ ফলে, কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা' বাতিল হয়। তাছাড়া মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা হারায়। জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখ নামে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়।
ছবি: Reuters
19 ছবি1 | 19
সোমবার পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘‘জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে পাকিস্তান নতুন কৌশল তৈরি করছে৷ এর ফলে নিষিদ্ধ গোষ্ঠীগুলো কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে ব্যর্থ হবে৷''
কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়তে নতুন একটি বিশেষ সেল গঠনের পরিকল্পনা করছে সরকার৷ এই সেল অর্থ মন্ত্রণালয়, কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক এবং অর্থনীতি পর্যবেক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত হবে৷ এই সেল জঙ্গি দলগুলোর সম্পদ ও তাদের আয়ের উৎস পর্যবেক্ষণ করবে৷''
সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চারটি প্রদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসে৷ সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রুখতে পদক্ষেপ বাড়ানোর ব্যাপারে সবাই একমত হন৷