করোনার সঙ্কটে নিম্নবিত্তদের ত্রাণ দিতে এগিয়ে এসেছে সরকার এবং নানা সংস্থা৷ অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগেও চালাচ্ছেন সহায়তা কার্যক্রম৷ কিন্তু পাকিস্তানে অভিযোগ উঠেছে সংখ্যালঘুদের জোর করে ধর্মান্তরিত করার৷
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা কেএনএ জানিয়েছে করোনা সংকটের সময় ত্রাণ নিতে যাওয়া খ্রিস্টান ও হিন্দুদের জোর করে ধর্মান্তিরত করার চেষ্টা করছে দাওয়াত-এ-ইসলামি নামের একটি সংগঠন৷
ক্যাথলিক টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান আঞ্জুম জেমস পল ইউসিএনিউজকে জানিয়েছেন, ‘‘যারা নিজের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের কথা চিন্তা না করে অন্যদের সাহায্য করে, তাদের আমরা স্বাগত জানাই৷ কিন্তু যাদের সাহায্য দরকার তাদের ধর্ম নিয়ে টানাহেঁচড়া না করাই ভালো৷''
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি সংগঠনের প্রতিনিধি চমন লাল ইউসিএনিউজকে জানান, ‘‘আমাদের যেসব ভাই-বোনদের সাহায্য দরকার, তাদের ব্রেইনওয়াশ করার চেষ্টা চলছে৷'' সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দাওয়াত-এ-ইসলামির একটি ভিডিওতে দেখা যায় যারা খাদ্য সহায়তার বিনিময়ে ইসলাম গ্রহণ করছেন, তাদের স্বাগত জানাচ্ছে সংগঠনটি৷ এমন ভিডিও প্রচারেরও সমালোচনা করেন হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতারা৷
পাকিস্তানে করোনা সংকটের মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের এটিই একমাত্র উদাহরণ নয়৷ গত কয়েক সপ্তাহে করাচি ও অন্যান্য অনেক শহরে কেবল মুসলিমদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি সংগঠনের বিরুদ্ধে৷ দাওয়াত-এ-ইসলামি পাকিস্তানভিত্তিক হলেও জার্মানিসহ বিশ্বের নানা দেশে এর কার্যক্রম রয়েছে৷ জার্মানির অফেনবাখ শহরে মসজিদ ও কমিউনিটি সেন্টারও পরিচালনা করে সংগঠনটি৷
ধর্মবিশ্বাস, ধর্মান্তর এবং ধর্মের স্বাধীনতা
ডেভিড স্ট্যাং খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হয়েছেন৷ তবে তিনি সালাফিস্টদের উগ্রতা এড়িয়ে চলেন৷ জার্মানিতে অনেকেই মনে করেন, মানবাধিকারগুলোর মধ্যে ধর্মের স্বাধীনতাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷এসব নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কৌতূহল
ডেভিড স্ট্যাংয়ের কৈশোর থেকেই ধর্মের প্রতি বেশ অনুরাগ৷ নিয়মিত গির্জায় যেতেন, বাইবেল পড়তেন৷ তখন সবকিছু বুঝতে পারতেন না৷ অনেক প্রশ্ন জাগতো৷ কিন্তু উত্তর জানা হতো না৷ এখনো মনে আছে, দম্পতিদের নিয়ে একটা প্রশ্ন জেগেছিল, কিন্তু গির্জার পাদ্রী সে প্রশ্নের উত্তর তাঁকে বলেননি৷
ছবি: DW/K. Dahmann
হতাশা এবং মুসলমান হওয়া
একসময় ক্যাথলিক চার্চ, অর্থাৎ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের গির্জা সম্পর্কে কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়লেন ডেভিড স্ট্যাং৷ অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা শুরু করলেন৷ এক মুসলিম আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় হলো৷ তিনি বললেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো৷’’ তাঁর কথা মেনে একসময় সত্যিই মুসলমান হয়েছেন এবং সেই সুবাদে সবকিছুর নতুন মানেও খুঁজে পেয়েছেন স্ট্যাং৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্ম চর্চার দীর্ঘ প্রক্রিয়া
ডেভিড স্ট্যাং মনে করেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মানে হলো, নতুন করে অনেক কিছু শেখা৷ তিনি জানতেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে মদ্যপান করা এবং শূকরের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ রাখতে হবে দাড়ি৷ যিনি তাঁকে মুসলমান হতে বলেছিলেন, তিনি এ-ও বলেছিলেন যে, মুসলিম হওয়ার অনুভূতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রক্রিয়াটাও অত্যন্ত দীর্ঘ৷
ছবি: DW/K. Dahmann
বিশ্বাসে আপোশ
কাজের সূত্রে ডেভিড স্ট্যাংকে প্রতিদিন হানোফার-বন যাওয়া-আসা করতে হতো৷ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সব সময় হয়ে উঠতো না৷ তাই সকাল আর সন্ধ্যার নামাজের সময়টা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন৷ তিনি মনে করেন, জীবনের সঙ্গে বিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটানোটাই আসল৷
ছবি: DW/K. Dahmann
উগ্রতা পরিহার
২০১২ সালে উগ্র সালাফিস্টদের সহিংসতা দেখেছেন ডেভিড৷ তারা যেভাবে সন্ত্রাসবাদের পক্ষে যুক্ত দেখায়, তা মানতে পারেননি তিনি৷ সন্ত্রাসবাদীদের মতো ভয় দেখাতে তারা গলার কাছে বোমাও ঠেকায়৷ সালাফিস্ট সম্পর্কে তাঁর একটাই কথা, ‘‘আমি এমন কিছুর সঙ্গে থাকতে চাইনা৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যাথলিক চার্চ ছাড়লেন উটে
উটে লাস-এর জন্ম ক্যাথলিক পরিবারে৷ ধর্মতত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী ছিলেন৷ কিন্তু ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে কিছু সমস্যাও যে হবে তা তিনি বুঝতেন৷ উটে বুঝতেন, ‘‘ক্যাথলিক থাকলে ধর্মতাত্ত্বিক হয়েও তেমন কিছু করতে পারবো না৷’’ এ সব ভেবে চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন উটে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
অন্তর্দ্বন্দ্ব...
উটের স্বামী প্রটেস্ট্যান্ট হলেন৷ ফলে এবার প্রটেস্ট্যান্টদের গির্জায় যাওয়ার সুযোগ পেলেন উটে৷ তাঁর ছেলেটা সমবয়সিদের সঙ্গে খেলতো৷ ওরও চার্চে যাওয়ার ইচ্ছা৷ কয়্যারে যোগ দিতে চায় সে৷ এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পাঁচ বছর সময় নিয়েছিলেন উটে৷ নারী যাজক আনেগ্রেট কোহেন (বাঁ দিকে) এবং নিনা গুটমান (মাঝে) উটের এ সব অন্তর্দ্বন্দ্ব সমাধানে সহায়তা করেছিলেন৷
ছবি: DW/K. Dahmann
সহনশীলতা
ব্যাপারটিকে উটের বন্ধুরাও খুব ভালোভাবেই নিয়েছিলেন৷ বন্ধুদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে দীক্ষা নিয়ে চার্চে যাওয়া শুরু করলেন উটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গির্জায় ভিড় কমছে
কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে লোকজনের গির্জায় যাওয়ার প্রবণতা কমছে৷ গির্জার সদস্য বাড়াতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ৷ বন শহরের ক্যাথলিক তথ্যকেন্দ্র ফিডেস-এ ধর্মের বিষয়ে সবাইকে আগ্রহী করে তোলার কাজটি করেন যাজক টোমাস ব্যার্নার্ড (ডানে)৷
ছবি: DW/K. Dahmann
কারণ কেলেঙ্কারি?
গির্জায় আর আগের মতো বেশি মানুষ আসছে না কেন? অনেকে মনে করেন, সাম্প্রতিক কালে পাদ্রিদের যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর খবর এক্ষেত্রে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে৷ যাজক টোমাস ব্যার্নার্ডও এ সম্পর্কে কিছুটা একমত৷ তিনি মনে করেন, এসব খবর বেশি প্রচার করে মিডিয়া বেশ ক্ষতি করেছে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্মের স্বাধীনতা
ধর্মান্তরিত হয়েছেন, এমন অনেকেই মিউনিখ শহরের একটা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন৷ প্রদর্শনীতে মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের স্বাধীনতার কথাও প্রচার করা হয়৷
ছবি: Jüdisches Museum München 2013
11 ছবি1 | 11
ইউএস ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম কমিশন- ইউএসআইআরএফ করোনা সংকটের মধ্যেও এমন ধর্মীয় বৈষম্যের নিন্দা জানিয়েছে৷ সংস্থাটির কমিশনার অনুরিমা ভার্গব বলেন, ‘‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিন্দনীয়৷ কোভিড-১৯ যখন ছড়িয়ে পড়ছে, পাকিস্তানের কিছু মানুষ নিজেদের পরিবারের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার পাশাপাশি ক্ষুধার বিরুদ্ধেও লড়াই করছে৷ কারো ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে সাহায্য করা উচিত নয়৷ আমরা পাকিস্তান সরকারকে আহ্বান জানাই যাতে সব ধর্মের মানুষের জন্য খাবার ও অন্যান্য সহায়তা সমানভাবে নিশ্চিত করা হয়৷''
ইউএসআইআরএফ জানিয়েছে, করাচিতে সায়লানি ওয়েলফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাস্ট নামে একটি এনজিও গৃহহীন ও শ্রমিকদের মধ্য়ে ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে৷ কিন্তু এই কার্যক্রমের আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে অমুসলিমদের৷ যুক্তি হিসেবে সংগঠনটি বলছে, এ ত্রাণ কেবল মুসলিমদের জন্যই আনা হয়েছে৷
ইউএসআইআরএফ এর কমিশনার জনি মুর বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলেছেন তার সরকারকে একই সঙ্গে কোভিড-১৯ এবং ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে৷ এখন ইমরান খানের সরকারের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার সময়৷ যদি এ লড়াইয়ে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষদের বাদ দেয়া হয় তাহলে চলমান সংকটে যোগ হবে ধর্মীয় বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতাও৷''
২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ইউএসআইআরএফ জানিয়েছে পাকিস্তানে হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়মিত নিরাপত্তা হুমকিতে ভোগেন৷ সামাজিক নির্যাতন ও বিভিন্ন সুযোগসুবিধা থেকে প্রায়ই বাদ দেয়া হয়ে অমুসলিমদের৷