দুর্নীতি বিরোধী জমায়েত
১৫ জানুয়ারি ২০১৩গুলশান ইরশাদ৷ কোনো রাজনৈতিক দলের নেত্রী নন, পেশাগত কারণেও খুব বিখ্যাত নন ২৫ বছর বয়সি এই তরুণী৷ তিনি স্কুল শিক্ষিকা৷ তবে আর দশজনের চেয়ে একটু আলাদা৷ শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় নির্দিষ্ট নিয়মে পড়িয়েই সমাজ গড়ায় ভূমিকা রাখেন না, তিনি সমাজ গড়ার জন্য লড়তেও জানেন৷ লড়ছেন গত দু'বছর ধরে৷ বেতন নিতে গেলে সরকারি কর্মকর্তা ঘুস দাবি করেন৷ গুলশান ঘুস দেবেন না৷ কর্মকর্তারাও ঘুস ছাড়া একটি পয়সা দেবেন না পাকিস্তানের গুজরানওয়ালার প্রতিবাদি শিক্ষিকাকে৷ দুর্নীতিতে ছেয়ে যাওয়া সমাজের দুর্নীতিপরায়ণরা তো জানেন আজ না হয় কাল বিপদ যাঁর, তাঁকে মাথা নত করে আসতেই হবে৷ ভুল ভেবেছিলেন তারা৷ গুলশান ইরশাদ দু'বছর ধরে স্কুলে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন কোনো বেতন ছাড়া, তবু দুর্নীতিপরায়ণদের কাছে মাথা নত করেননি!
পাকিস্তানের মতো দেশ যেখানে দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ অতীতের জন্য খোদ প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিরই অন্য নাম ‘মিস্টার টেন পারসেন্ট', সেখানে গুলশান ইরশাদের দুর্নীতিবিরোধী এমন লড়াইয়ের কথা সবার যে অজানা থাকবে – এটাই হয়ত স্বাভাবিক৷ কেউ কেউ জানলেও খবরটা খুব একটা গুরুত্ব পাবে না এটাও অস্বাভাবিক নয়৷ তবে গত কয়েকদিন ধরে গুলশানের কথা সবাই জানছেন, শুনছেন এবং তাঁর সঙ্গে দু'বছর ধরে যে অন্যায় হচ্ছে তার বিচারও চাইছেন৷ পাকিস্তানে কি তাহলে পরিবর্তনের মৃদু হাওয়া লেগেছে?
খুব বড় পরিবর্তন না এলেও পরিবর্তনের একটা চেষ্টা শুরু হয়েছে৷ এর নেতৃত্বে আছেন সুফি ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ তাহিরুল কাদরি৷ পাকিস্তানের গণমাধ্যমে এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় তারকা তিনি৷ ক্যানাডা থেকে এসেছেন কিছুদিন হলো৷ এসেই দিয়েছেন জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে সবার আগে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার এবং সমাজ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করার ডাক৷ সোমবার তাঁর ডাকে ইসলামাবাদে জড়ো হয় হাজার হাজার মানুষ৷ সবার দাবি, সরকারি অফিস-আদালতের যাবতীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে অতি সত্ত্বর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ গুলশানের মতো পাকিস্তানের প্রায় সব সাধারণ মানুষের মনের কথাটাই উঠে এসেছে যেন মুহাম্মদ তাহিরুল কাদরির দাবিতে৷ তাই রাস্তায় নেমেছে জনস্রোত৷
জনস্রোতে অনেকে যোগ দিয়েছেন প্রয়োজনে দু-তিন দিনও রাস্তায় থাকার প্রস্তুতি নিয়ে৷ মিয়ানওয়ালি থেকে আসা ৩০ বছর বয়সি কামার গাজী বলছিলেন, ‘‘প্রতিবাদ কর্মসূচি দুই থেকে তিনদিন চললেও যাতে থাকতে পারি সেই কথা ভেবে আমি সঙ্গে করে কম্বল আর খাবার নিয়ে এসেছি৷''
পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো দুর্নীতিও খুব বড় সমস্যা৷ দুর্নীতি দেখতে দেখতে, দুর্নীতির শিকার হতে হতে অতিষ্ঠ বহু লোক সুফি নেতা মুহাম্মদ তাহিরুল কাদরির ডাকে সাড়া দিলেও, এ আন্দোলনের সমালোচনাও করছেন অনেকে৷ কারো কারো আশঙ্কা, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক – সামরিক বাহিনী এটা চায়না বলেই ক্যানাডা থেকে কাদরিকে এনে নামিয়ে দিয়েছে নির্বাচন পেছানোর আন্দোলনে৷ তাঁদের মতে, নির্বাচন পেছালে দুর্নীতি দূর হবে না, তাতে শুধু সামরিক বাহিনীরই লাভ হবে৷ কোনো কোনো টিভি চ্যানেলের টক শো-তে কাদরির ব্যাপক প্রচারণা এবং প্রতিবাদ মিছিলে বাসের বিশাল বহরের পেছনে যে বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ হয়েছে, তার উৎস জানতে চাওয়া হয়৷ কাদরি জানিয়েছেন, টাকাটা এসেছে জনগণের চাঁদা থেকে!
এসিবি/ডিজি (রয়টার্স)