1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ধর্ষকদের শাস্তি হয় না’

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪

পাকিস্তানে প্রতি বছর বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা৷ সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, নারীদের মত প্রকাশের অধিকার না থাকা এবং যর্থার্থ বিচার না হওয়ায় নারীর ওপর এই সহিংসতা বেড়েই চলেছে বলে মনে করছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন৷

Menschenhandel Gewalt Frau Pakistan
ফাইল ফটোছবি: DW

খুব বেশি দিন নয়, ২৪ জানুয়ারির ঘটনা৷ পাকিস্তানের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত রাদিওয়ালি গ্রামে পঞ্চায়েতের নির্দেশে গণধর্ষিতা হন ফজলান বিবি৷ ৩৫ বছর বয়সি ফজলান বিবির কোনো অপরাধ ছিল না৷ অপরাধী তাঁর ভাই, যিনি একজন বিবাহিত নারীর সাথে প্রেম করেছিলেন৷ এর শাস্তি হিসেবে পঞ্চায়েতে ফজলান বিবিকে গণধর্ষণের নির্দেশ দেন উপজাতীয় নেতারা৷

তবে এক্ষেত্রে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে৷ সমাজ কর্মীদের অভিযোগ, ভাইয়ের প্রেমিকার আত্মীয়দের দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছেন ফজলান বিবি৷ পুলিশ অবশ্য এ দাবির সঙ্গে একমত নয়৷ স্থানীয় পুলিশ প্রধান শহীদ রমজান জানান, ‘‘পঞ্চায়েতের নির্দেশের পর বিবিকে একটি মাটির ঘরে নিয়ে নগ্ন করা হয়েছিল, কিন্তু এরপর আর কিছু ঘটেনি৷ ঘটনার তদন্ত করে যাচ্ছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয়নি৷ এমনকি বিবিও ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছেন৷''

পাকিস্তানের নারী আন্দোলনের অন্যতম পুরধা মুখতারান মাইছবি: Fabrice Coffrini/AFP/Getty Images

অন্যদিকে, পাকিস্তানের নারী আন্দোলনের অন্যতম পুরধা মুখতারান মাই জানান, তিনি নানা মানুষের কাছ থেকে শুনেছেন যে ফজলান বিবির শ্লীলতাহানি হয়েছে৷ গত সপ্তাহে ফজলান বিবির সাথে দেখা করতে যান তিনি৷ বাড়ির কাছে পৌঁছানোর পর ৩০ জন ব্যক্তি তাঁকে জোর করে ফিরে যেতে বাধ্য করে৷

পাকিস্তানের নির্যাতিত নারীর প্রতীক মুখতারান মাই ২০০২ সালে গণধর্ষণের শিকার হন৷ তিনিও একই কারণে ধর্ষিতা হয়েছিলেন৷ তাঁর গণধর্ষণ মামলার রায়ে ছয় আসামীর মধ্যে পাঁচজনকে খালাস করে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট৷ বর্তমানে মাই সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার পাকিস্তানের নারীদের সহায়তার জন্য একটি সংস্থা পরিচালনা করেন৷ কিন্তু উপজাতীয় নেতাদের রোষের মুখে বহুবার পড়েছেন তিনি৷

এই দুটি ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয় পাকিস্তানে প্রথাগত বিধি-বিধান, পুলিশের আচরণ ও বিচার ব্যবস্থা নারীদের ওপর কতটা জুলুম করছে৷ ঘটনার পর ফজলান বিবি বা তাঁর কোনো আত্মীয় আইনের আশ্রয় নেননি৷ ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি এবং বিভিন্ন মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠনের প্রতিবাদে এক সপ্তাহ পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে৷

নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, এ সব গ্রামের নারীদের অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সামাজিক নানা প্রথার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে তাঁরা সহিংসতা ও নির্যাতনকে নিজেদের জীবনের একটা অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছেন, এমনকি ধর্ষিত হলেও তা মেনে নিচ্ছেন তাঁরা৷ কেননা যাঁরাই আইন আদালতের আশ্রয় নেন, সুবিচারের আশায় তাঁদের বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়৷

গত বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বালিঘুর রেহমান পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে এ ধরনের একটি বিষয় উপস্থাপন করেন৷ যেখানে বলা হয় রাজধানী ইসলামাবাদে গত পাঁচ বছরে ১০৩টি ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে, কিন্তু এতে একজনকেও শাস্তি দেয়া হয়নি৷ এসময় বিরোধী দলের সেনেটররা প্রতিবাদ জানিয়ে ‘ওয়াক আউট' করেন৷ কিন্তু তিনি এই শাস্তি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করলেও এরপর এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে শোনা যায়নি৷

‘সাহিল' নামে একটি নারী নির্যাতন বিরোধী সংগঠনের প্রোগ্রাম অফিসার আতা মহীউদ্দীন বললেন, এ সব সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নারীদের ধর্ষণ, নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ তাদের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের চেয়ে বর্তমানে ধর্ষণের হার বেড়েছে ৭.৬ ভাগ৷ অপর এক সংগঠন ‘আওরাত' ফাউন্ডেশন বলছে, ২০১২ সালে পাকিস্তানে ধর্ষণ ও গণ ধর্ষণের ৮২২টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে৷

নারী অধিকার কর্মী সারাহ জামান জানান, পুলিশ ও আদালতের জিজ্ঞাসাবাদের ভয়ে ৭০ ভাগ ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয় না৷ কেননা ধর্ষণের ঘটনায় দণ্ড প্রদানের ঘটনা বিরল, মাত্র ২ শতাংশ৷ মুখতারান বাই বলেন, ‘‘ধর্ষণ এমন একটি ঘটনা যার বেদনা সারা জীবন বয়ে চলতে হয়, কিন্তু তারপরও যদি ধর্ষকদের শাস্তি হয়, তবে কিছুটা হলেও শান্তি পাওয়া যায়৷''

এপিবি/ডিজি (এপি, ডিপিএ)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ