পাকিস্তানে বন্যা পরিস্থিতি আরো সংকটজনক। উদ্ধারকাজে নেমেছে নৌসেনা।
বিজ্ঞাপন
ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তান। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা খাইবার পাখতুনখোয়া এবং সিন্ধ অঞ্চলে। লাখ লাখ মানুষ ঘরছাড়া। মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। উদ্ধার কাজে সেনার পাশাপাশি নেমেছে নৌসেনা।
পাকিস্তানের জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শেরি রহমান জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ চেহারা দেখছে পাকিস্তান। রোববার কেবলমাত্র একদিনে একশ-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। বন্যাকবলিত এলাকা কার্যত সমুদ্রের মতো দেখতে লাগছে। সে কারণেই নৌসেনার সাহায্য চাওয়া হয়েছে। তারা উদ্ধারকাজও শুরু করেছে।
খাইবার পাখতুনখোয়ায় কয়েক লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। একই পরিস্থিতি সিন্ধ অঞ্চলেও। গ্রামের পর গ্রাম কার্যত ভেসে গেছে। কোনো চিহ্নমাত্র নেই। বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে বইছে সিন্ধু নদী।
পাকিস্তানে বিশ্বের উষ্ণতম শহর এবং অন্তঃসত্ত্বাদের দুর্ভোগ
বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ শহর পাকিস্তানের জ্যাকবাবাদ৷ গত মাসে জানা যায় বিষয়টি৷ তারপর থেকে অবশ্য সেখানকার খেটে খাওয়া মানুষ, বিশেষ করে সন্তান-সম্ভবা কর্মজীবী নারীদের জন্য দুশ্চিন্তা অনেক বেড়েছে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Akhtar Soomro/REUTERS
গরমে মুরগির গোসল
গত ১৫ মে জ্যাকবাবাদে তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিল৷ সেদিন বিশ্বের আর কোনো শহরে এত গরম পড়েনি, আর কোনো শহরের প্রাণিকুল গরমে এত কষ্টও পায়নি৷ ওপরের ছবিতে জ্যাকবাবাদের এক সবজিবিক্রেতা মুখে পানি নিয়ে সেই পানি ছিটিয়ে মুরগিকে গোসল করাচ্ছেন৷ গরমে মুরগিটিরও তখন বেঁচে থাকা দায়!
ছবি: Akhtar Soomro/REUTERS
এসি চালিয়ে জুতা সেলাই
তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে ফ্যান বা এসি ছাড়া বাঁচবেন কী করে! ফজল মাহমুদ তাই খুব সংকীর্ণ জায়গাতেই একটা এয়ার কুলার লাগিয়ে নিয়েছেন৷ এয়ার কুলারের ঠান্ডা বাতাস গরমটা বেশ সহনীয় করে তোলে, কাজ করতে সুবিধা হয় তার৷
ছবি: Akhtar Soomro/REUTERS
শিশুদের দুরবস্থা
দাবদাহে জ্যাকবাবাদের দরিদ্র পরিবারের শিশুদের প্রাণ ওষ্ঠাগত৷ ছবিতে টিউবওয়েলের পানিতে গোসল করে শরীর জুড়াচ্ছে এক শিশু৷টিউবওয়েল চেপে এখন যে বন্ধুকে গোসল করাচ্ছে, একটু পরে শুরু হবে তার শরীর জুড়ানো৷ তখন স্নানরত বন্ধুটি টিউবওয়েল চেপে গোসল করাবে তাকে৷
ছবি: Akhtar Soomro/REUTERS
খোলা আকাশের নীচে ঘুম
লোডশেডিং লেগেই থাকে জ্যাকবাবাদে৷ তাই ঘরে ফ্যান, এসি থাকলেও অনেক সময় ঘরে টেকা দায় হয়ে পড়ে৷ তখন এভাবে ছাদে দড়ির বিছানায় রাত কাটায় জ্যাকবাবাদের অনেক মানুষ৷
ছবি: Akhtar Soomro/REUTERS
কর্মজীবী দরিদ্র নারীদের অবর্ণনীয় কষ্ট
সম্প্রতি ৭০টি সমীক্ষা বিশ্লেষণ করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, তাপমাত্রা খুব বেশি হলে জীবন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয় বাইরে কাজ করতে যেতে হয় এমন দরিদ্র নারীদের৷ জ্যাকবাবাদের এই নারীকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপ সহ্য করেই দূরের এক টিউব ওয়েল থেকে পানি আনতে যেতে হয় ৷
ছবি: Akhtar Soomro/REUTERS
বেশি কষ্ট অন্তঃসত্ত্বা নারীদের
১৯৯০-এর দশক থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের নানা প্রান্তে হওয়া ৭০টি সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে গবেষকরা জেনেছেন, দাবদাহে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়, জীবন বেশি ঝুঁকিতে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের৷ ছবির এই নারীর নাম ওয়াদারি৷ কৃষিজীবী ওয়াদারি এক মাসের সন্তানকে শুইয়ে রেখে কাজ করেন৷ সন্তান কেঁদে উঠলে ছুটে যেতে হয় তার কাছে৷
ছবি: Akhtar Soomro/REUTERS
কাঠফাটা রোদে, তরমুজ ক্ষেতে
তরমুজ ক্ষেতে দীর্ঘক্ষণ কাজ করে ছবির এই নারী-শিশুরা ভীষণ ক্লান্ত৷ গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থায় তাই সবাই মিলে হাজির এক টিউবওয়েলের সামনে৷ পালাক্রমে চলছে হাত-মুখ ধোয়া৷
ছবি: Akhtar Soomro/REUTERS
7 ছবি1 | 7
মন্ত্রীর বক্তব্য, শীতকাল থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখতে শুরু করেছে পাকিস্তান। রেকর্ড পরিমাণ তুষারপাত হয়েছে। গরমে তাপমাত্রা কোনো কোনো এলাকায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাপিয়ে গেছে। তীব্র দাবানল দেখা গেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এবার বন্যা। এমন বন্যা পাকিস্তান কখনো দেখেনি বলে তার দাবি।
রহমান জানিয়ছেন, জাতিসংঘ দাবি করেছিল, পরিকাঠামোর অভাবেই পাকিস্তানে এমন বন্যা হচ্ছে। কিন্তু এখন তারাও বুঝতে পারছে, এর সঙ্গে পরিকাঠামোর সম্পর্ক নেই। টানা আট সপ্তাহ ধরে নিরন্তর বৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় ৭০০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পরিকাঠামোর প্রশ্ন তোলা অর্থহীন।
সিন্ধুনদীতে জলের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন। সিন্ধু নদীর উপর তৈরি বাঁধ সুকুর ব্যারেজের উপর দিয়ে বইছে নদী। ব্যারেজ থেকে নদীর জল বিভিন্ন দিকে পাঠানোর জন্য যে খালগুলি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলিও ভেসে গেছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ জানিয়েছেন, সারা জীবনে এমন বন্যা তিনি কখনো দেখেননি।
দেশবিদেশ থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকে। চীন, জাতিসংঘ, আরব আমিরাত, অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য সকলেই পাকিস্তানকে সাহায্য করার কথা বলেছে। তবে এখনো দেশে সাহায্যে গিয়ে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছে প্রশাসন। পরিস্থিতি যা, এই ক্ষতি ঠিক করতে বহু বছর সময় লেগে যাবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।