পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে রোববার দিবাগত রাতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কয়েকটি হামলায় ৩৯ জন নিহত হয়েছেন বলে সোমবার এএফপিকে জানিয়েছেন প্রদেশ সরকারের মুখপাত্র শহিদ রিন্দ৷
বিজ্ঞাপন
বেলুচ লিবারেশন আর্মি বিএলএ এসব হামলা করেছে বলেও জানান তিনি৷
বেলুচিস্তান প্রদেশের মুসাখেইল জেলার মহাসড়কে কয়েকটি গাড়ি থামিয়ে ২৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷ এছাড়া পুলিশের এক থানায় হামলায় ১০ জন নিহত হন৷
পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে সংযোগকারী একটি রেললাইন ও একটি রেল সেতুতেও বিস্ফোরক দিয়ে হামলা করা হয়েছে৷
বেলুচ লিবারেশন আর্মি, বিএলএ সাংবাদিকদের কাছে ইমেল করে হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ বেলুচিস্তানের সবচেয়ে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বিএলএ৷
বেলুচিস্তান প্রদেশের মুসাখেইল জেলার সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাজিবুল্লাহ কাকার এএফপিকে বলেন, বেলুচিস্তান ও পাঞ্জাবের মধ্যে সংযোগকারী মহাসড়কে ২২টি বাস, ভ্যান, ট্রাক থামিয়েছিল বন্দুকধারীরা৷ এরপর সেগুলো থেকে যাত্রীদের নামিয়ে পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে আসা মানুষদের খোঁজ করে গুলি করা হয়৷
এভাবে ২২ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান কাকার৷ নিহতদের বেশিরভাগই পাঞ্জাবের শ্রমিক৷ এছাড়া দুজন আধা-সামরিক সেনা ছিলেন৷ রয়টার্সের প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা ২৩ বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷
বিএলএর দাবি, যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা সাদা পোশাক পরিহিত সেনাসদস্য ছিলেন৷ তবে তাদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি বিএলএ৷
এদিকে, কালাত জেলার এক থানায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা দোস্তেইন খান দাস্তি৷ নিহতদের মধ্যে ছয়জন পুলিশ সদস্য৷
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে গরিব প্রদেশ বেলুচিস্তান৷ তবে সেখানে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে৷
বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সম্প্রতি তাদের এলাকায় কর্মরত পাঞ্জাবি ও সিন্ধিদের উপর হামলা বাড়িয়েছে৷ এছাড়া, ঐ এলাকায় কাজ করা বিদেশি জ্বালানি কোম্পানিগুলোর উপরও হামলা হয়েছে৷
বেলুচিস্তানের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী দমনে নিয়োজিত সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশিরভাগই পাঞ্জাবি বলে মনে করা হয়৷
পাকিস্তানের আফগান সীমান্তে ইসলামী জঙ্গিদের প্রধান নিশানা পুলিশ সদস্যরা৷ তাদের হত্যা করতে মসজিদে হামলা চালাতেও কার্পণ্য করছে না জঙ্গিরা৷ তাদের থামাতে কী প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
তরুণ অফিসারদের প্রস্তুতি
পাকিস্তানের নওশেরার এলিট পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণের সময় একদল পুলিশ সদস্যকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷ জঙ্গিদের মোকাবিলায় তরুণ পুলিশ অফিসারদের এখানে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
স্নাইপার হামলা
সারবন্দ ও এর আটটি ফাঁড়ি সাম্প্রতিক মাসগুলিতে চারটি বড় হামলার শিকার হয়েছে৷ এমনকি স্নাইপার ব্যবহার করেও নজিরবিহীন হামলা চালানো হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা৷ ছবিতে পেশোয়ারের উপকণ্ঠে, সরবন্দ থানার ছাদে মেশিনগান নিয়ে সতর্ক অবস্থানে এক পুলিশ সদস্যকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
অত্যাধুনিক অস্ত্র
খাইবার-পাখতুনখোয়া পুলিশ প্রধান মোয়াজ্জেম আনসারি রয়টারর্সকে জানান, জঙ্গিদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম ফোর রাইফেলস থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র রয়েছে৷ আফগানিস্তানে পশ্চিমা বাহিনীর ফেলে আসা অস্ত্র কিনেছে তারা৷ তিনি বলেন, জঙ্গিরা আরো মারনঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে৷ ছবিতে প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে এক পুলিশ সদস্যকে ভবনের উপর থেকে ঝাপ দিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
টিটিপির ঘাঁটি
আফগানিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন এই অঞ্চল তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর জঙ্গিদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷ এখানে পুলিশে ফাঁড়িগুলোতে অতর্কিত হামলা চালায় বিভিন্ন আস্তানায় লুকিয়ে থাকা জঙ্গিরা৷ পেশোয়ারের উপকণ্ঠে আচিনি ফাঁড়ির ফটকের ছিদ্র দিয়ে বাইরে সতর্ক দৃষ্টি এক পুলিশ সদস্যের৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
মুখোমুখি
সারবন্দ থানায় সহকর্মীদের সঙ্গে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করছেন সহকারী উপ-পরিদর্শক জামিল শাহ৷ সরবন্দ থানা ও এর আশেপাশের আটটি ঘাঁটির জন্য মোট জনবল ৫৫ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম৷ একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘কর্মী ঘাটতি সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ এই এলাকাটি (জঙ্গিদের) হামলার নিশানা, আমরা তাদের মুখোমুখি৷’’
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
নিহতদের স্মরণ
গত জানুয়ারিতে পেশোয়ারে পুলিশ লাইনসে একটি মসজিদে হামলা চালায় জঙ্গিরা৷ এতে মারা যান ৮০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য৷ এই হামলার দায় স্বীকার করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের পেশোয়ারে পুলিশ লাইন্স এলাকায় একটি বিলবোর্ডে নিহত পুলিশ সদস্যদের ছবি৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
সহকর্মীদের প্রার্থনা
৯ ফেব্রুয়ারি নিহতদের জন্য প্রার্থনার আয়োজন করেন সহকর্মীরা৷ ৩৫ বছরের পুলিশ সদস্য ইমাম নুর উল আমীন অশ্রুশিক্ত চোখে মোনাজাত করছেন৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
বাড়ছে মৃত্যু
সারবন্দ পুলিশ স্টেশনের দেয়ালে জঙ্গিদের ছোঁড়া গুলির চিহ্ন দেখাচ্ছেন সহকারি পুলিশ পরিদর্শক জামিল শাহ৷ গত বছর খাইবার-পাখতুনখোয়ায় জঙ্গিদের হাতে মোট ১১৯ পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন৷ ২০২১ সালে ৫৪ জন আর ২০২০ সালে মারা যান ২১ জন৷ চলতি বছর এরইমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১০২ পুলিশ সদস্য, যাদের বেশিরভাগ মারা যান মসজিদে হামলার ঘটনায়৷
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
টিটিপির ভাষ্য
ছবিতে জানুয়ারিতে হামলা বিধ্বস্ত মসজিদের ধ্বংসাবশেষের উপর নিহতদের স্মরণে রাখা পুষ্পস্তবক দেখা যাচ্ছে৷ টিটিপি মুখপাত্র মুহাম্মদ খুরাসানির ভাষ্যে, ‘‘আমাদের বাধা না দিতে পুলিশকে বার বার সতর্ক করা হয়েছে৷ কিন্তু তারা এতে কর্ণপাত না করে আমাদের যোদ্ধাদের শহিদ করতে শুরু করেছে, এ কারণেই আমরা তাদের নিশানা করছি৷’’
ছবি: Fayaz Aziz/REUTERS
জঙ্গিবিরোধী লড়াই
২০০১ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মোট ২১০০ পুলিশ সদস্য জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন সাত হাজার৷ জঙ্গিদের বিস্তার থামাতে পুলিশ এখন আগের চেয়ে আরো বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছে বলে দাবি জামিল শাহর৷ ‘‘আমরা পেশোয়ারেই তাদের গতি থামিয়ে দিয়েছি’, বলেন তিনি৷