পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমের খাইবার পাখতুনখোয়া রাজ্যের কারাক জেলায় বুধবার হিন্দুদের এক মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলার অভিযোগে ২৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ কর্মকর্তা রহমতুল্লাহ ওয়াজির রয়টার্সকে জানিয়েছেন, কারাকের মুসলমান নেতারা মন্দির সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করবেন বলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভের সময় নেতারা 'উসকানিমূলক বক্তব্য' দেয়া শুরু করেন বলে জানান তিনি। এরপর মন্দিরে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া হামলার ভিডিও ফুটেজে হাতুড়ি দিয়ে মন্দিরেরদেয়াল ভাঙতে দেখা গেছে।
আরেক পুলিশ কর্মকর্তা ফজল এএফপিকে জানান, হামলার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ২৬ জনকে আটক করা হয়েছে। আরও ৫০ জনের খোঁজ চলছে। ভিডিও দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।
পাকিস্তানের বিখ্যাত সংখ্যালঘুদের কথা
কেউ দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে গড়েছেন দারুণ সব রেকর্ড, কেউ অভিনয়ে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার, আবার কেউ আইন পেশায়, মডেলিংয়ে বা লেখালেখিতে পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য৷ পাকিস্তানের এমন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কথা জানুন ছবিঘরে...
ছবি: Tanvir Shahzad
বাপসি সিদ্ধা
হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়, রাইস বিশ্ববিদ্যালয়, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মাউন্ট হোলিওক কলেজ এবং ব্র্য়ান্ডাইস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করলেও সারা বিশ্বে লেখিকা হিসেবেই বেশি পরিচিত বাপসি সিদ্ধা৷ লেখেন ইংরেজিতে৷ তার উপন্যাস আইস ক্যান্ডি ম্যান এবং ওয়াটার বহুল পঠিত৷
দানিশ প্রভা শংকর কানেরিয়া
লেগ স্পিনার হিসেবে পাকিস্তানের হয়ে মোট ৬১টি টেস্ট এবং ১৮টি ওয়ানডে খেলেছেন দানিশ কানেরিয়া৷ টেস্টে উইকেট পেয়েছেন ২৬১টি৷ এত উইকেট পাকিস্তানের আর কোনো স্পিনার পাননি৷ স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে নিষিদ্ধ না হলে আরো বহু দূর যেতে পারতেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী এই ক্রিকেটার৷
ছবি: AP
জুলিয়াস সালিক
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী জুলিয়াস সালিক পাকিস্তানের প্রখ্যাত মানবাধিকারকর্মী৷ সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ওয়ার্ল্ড মাইনরিটি অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি৷
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
রানা ভগবান দাস
অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী রানা ভগবান দাস (ওপরের ছবিতে একেবারে ডানে) অল্প সময়ের জন্য পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিও হয়েছিলেন৷
ছবি: AP
ঝর্ণা বসাক
ঝর্ণা বসাকের জন্ম ঢাকায়, ১৯৪০ সালে৷ শবনম নামে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বহু ছবিতে অভিনয় করেছেন, সু-অভিনয়ের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন দু দেশেই৷ উর্দু ছবিতে অভিনয় করা সবচেয়ে সফল বাঙালি অভিনেত্রী শবনমের বাবা ননি বসাক ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত ফুটবল রেফারি৷
ছবি: DW
অনিল দলপত ও ইউসুফ ইয়োহানা
পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলা প্রথম হিন্দু ক্রিকেটার অনিল দলপত৷ ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে পাকিস্তানের হয়ে ৯টি টেস্ট আর ১৫টি ওয়ানডে খেলেছেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান অনিল৷ পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা প্রথম খ্রিস্টান ক্রিকেটার ইউসুফ ইয়োহানা৷ পাকিস্তানের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মোহাম্মদ ইউসুফ (ছবিতে ডানে) হয়ে যান৷
ছবি: AP
দীপক পেরোয়ানি
হিন্দু পরিবারে জন্ম নেয়া দীপক পেরোয়ানি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ডিজাইনার৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় কুর্তা বানানোর জন্য গিনেস বুকেও নাম উঠেছে তার৷ ওপরের ছবিতে তার ডিজাইন করা পোশাক পরেছেন ভারতের অভিনেত্রী পূজা ভাট৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Tabassum
জো ভিচ্চাজি
এক সময়ের পেইন্টার জো ভিচ্চাজি এখন পপ গায়িকা হিসেবে ভীষণ জনপ্রিয়৷
ছবি: Coke Studio
সর্দার রমেশ সিং অরোরা
সর্দার রমেশ সিং অরোরা ২০১৩ সালে পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রথম শিখ হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন) থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Tanvir Shahzad
কৃষ্ণা কুমারী কোহলি
পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রথম হিন্দু দলিত মহিলা সেনেটর কৃষ্ণা কুমারী কোহলি। সিন্ধু প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা কৃষ্ণা পাকিস্তান পিপলস পার্টির রাজনীতিবিদ৷
ছবি: DW/A.W. Achakzai
জামশিদ কায়কোবাদ আর্দেশির মার্কার
সবচেয়ে বেশি দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করায় গিনেস বুকে নাম উঠেছে তার৷ তিন দশকেরও বেশি সময় কূটনীতিক হিসেবে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি৷
ছবি: T. Bhatti/Embassy of Pakistan Berlin
সফল আরো কয়েকজন
এছাড়া সেবামূলক কাজের জন্য বহুল প্রশংসিত সিস্টার গের্ট্রুড, মডেল সুনিতা মার্শাল, শিল্পী শাল্লুম অ্যাশার জেভিয়ার, গায়িকা দুই বোন বেঞ্জামিন সিস্টার্স এবং করাচির সবচেয়ে বিখ্যাত ফরাসি রেস্তোরাঁর শেফ ফ্লোরেন্স ভিলার্সকেও রাখতে হবে পাকিস্তানের বিখ্যাত সংখ্যালঘুদের তালিকায়৷
ছবি: Shamil Shams
12 ছবি1 | 12
পাকিস্তানের ধর্মমন্ত্রী নুরুল হক কাদরি হামলাকে 'ধর্মীয় সম্প্রীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র' বলে মন্তব্য করেছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রার্থনাস্থলে হামলা ইসলাম সমর্থন করেনা। 'সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা আমাদের ধর্মীয়, সাংবিধানিক, নৈতিক ও জাতীয় দায়িত্ব' বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
পেশোয়ার থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত কারাক জেলায় ১৯ শতকের শুরুতে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে সেটি একবার ভাঙচুর করা হয়। পরে ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট এটি পুনর্নিমাণের নির্দেশ দেন।
পাকিস্তানের প্রায় ৮০ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় চারটি ধর্মীয় স্থানের মধ্যে এই মন্দির একটি বলে জানিয়েছেন পাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিলের প্রধান ও সরকারি দলের সাংসদ রমেশ কুমার ভাঙকওয়ানি।
এর আগে গত জুলাই মাসে রাজধানী ইসলামাবাদে প্রথম হিন্দু মন্দির নির্মাণের জায়গায় হামলা হয়েছিল।