পাকিস্তানে মন্দির রক্ষায় ব্যর্থ ১২ পুলিশ চাকরিচ্যুত
Sanjiv Burman১৫ জানুয়ারি ২০২১
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমের খাইবার পাখতুনখোয়া রাজ্যের কারাক জেলায় মন্দিরে হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় স্থানীয় পুলিশ প্রধানসহ ১২ পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে৷ গত ৩০ ডিসেম্বর এই হামলা হয়৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার এক বিবৃতিতে পুলিশ জানিয়েছে, হামলার সময় কয়েকজন পুলিশ পালিয়ে গিয়েছিলেন৷ একে ‘কাপুরুষের কাজ‘ ও ‘দায়িত্বে অবহেলা' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে৷ আরও ৪৮ জন পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন শাস্তি দেয়া হয়েছে৷
মন্দিরে হামলার ঘটনায় প্রায় ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এদের মধ্যে মৌলবাদী জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম দলের সমর্থকরাও আছেন৷
পেশোয়ার থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত কারাক জেলায় ১৯ শতকের শুরুতে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়৷ ১৯৯৭ সালে সেটি একবার ভাঙচুর করা হয়৷ পরে ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট এটি পুনর্নিমাণের নির্দেশ দেন৷
পাকিস্তানের প্রায় ৮০ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় চারটিধর্মীয় স্থানের মধ্যে এই মন্দির একটি বলে হামলার পর জানিয়েছিলেন পাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিলের প্রধান ও সরকারি দলের সাংসদ রমেশ কুমার ভাঙকওয়ানি৷
পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আগে পুনরায় মন্দিরটি গড়ে তোলার নিশ্চয়তা দিয়েছে সরকার৷
জেডএইচ/আরআর (এপি)
ঢাকার দশটি প্রাচীন মন্দির
রাজধানী ঢাকায় ছড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু পুরনো মন্দির৷ সেন শাসনামলের রাজা বল্লাল সেনের হাত ধরেই প্রথম ঢাকায় মন্দির স্থাপিত হয়৷ এরপরে বিভিন্ন শাসনামলে স্থাপিত হয় আরো কিছু মন্দির৷ ঢাকার এরকম প্রাচীন দশটি মন্দির দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকেশ্বরী মন্দির
ঢাকার সবচেয়ে পুরনো মন্দির৷ কিংবদন্তি আছে রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ের জঙ্গলে দেবী দুর্গার একটি মূর্তি পান৷ মূর্তিটি স্থাপন করে তিনি সেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করেন৷ মূর্তিটি জঙ্গলে ঢাকা অবস্থায় ছিল বলে দেবীর নাম হয় ‘ঢাকেশ্বরী’ (‘ঢাকা+ঈশ্বরী’)৷ আর মন্দিরটিও পরিচিতি পায় ঢাকেশ্বরী নামে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকেশ্বরী থেকে ঢাকা
অনেক ঐতিহাসিকের মতে, ঢাকেশ্বরী থেকেই ঢাকা নামের উৎপত্তি৷ বর্তমানে এখানে চারটি শিবমন্দির আছে৷ এর নির্মাণশৈলী অনেকটা বৌদ্ধ মন্দিরের মতো৷ এগুলো তৈরি করেছিলেন সেনাপতি মান সিংহ৷ কিংবদন্তি আছে, ষোড়শ শতকে তিনি এখানে চারটি শিবলিঙ্গ স্থাপন করে মন্দির চারটি নির্মাণ করেন৷ রাজধানীর সবচেয়ে বড় দুর্গোৎসব বসে ঢাকার প্রাচীনতম এ মন্দিরে৷
ছবি: DW/M. Mamun
রমনা কালী মন্দির
রমনা রেসকোর্স বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ প্রান্তে রমনা কালী মন্দির৷ বেশ পুরনো এ মন্দিরটি ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী ধ্বংস করে ফেলে৷ এর পরে এখানে আর বড় কোনো স্থায়ী মন্দির নির্মাণ করা না হলেও দুর্গা পূজার সময় নির্মাণ করা হয় বড় আকারের অস্থায়ী মন্দির৷ বাঁশের তৈরি এ মন্দিরকে ঢেকে দেয়া হয় রঙিন কাপড়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
শ্রী শ্রী বুড়া শিবধাম
ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উত্তর দিকে প্রাচীন, সুন্দর এ মন্দিরটির অবস্থান৷ জনশ্রুতি আছে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে তৈরি হয় মন্দিরটি৷ তবে বর্তমান কাঠামোটি নির্মাণ করেন বর্ধমানের রাজা স্যার বিজয় চাঁদ৷ ১৯৭১ সালে এ মন্দিরের সেবায়েতসহ বেশ কয়েকজন সাধুকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী৷
ছবি: DW/M. Mamun
রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও মন্দির
এটি রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন সড়কে অবস্থিত৷ ১৯১৬ সালে জমিদার জোগেশ চন্দ্র দাসের দান করা সাত বিঘা জমির উপর রাম কৃষ্ণ মঠ ও রামকষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এখানে মিশনের ভেতরে আছে সুরম্য একটি মন্দির৷
ছবি: DW/M. Mamun
সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
ঢাকার সিদ্ধেশ্বরীতে বিক্রমপুরের অধিপতি চাঁদ রায় আনুমানিক ১৫৮০ সালে নির্মাণ করেন এ মন্দির৷ এক সময় বিশাল পুকুর আর অরণ্যঘেরা এ মন্দিরটি এখন খুঁজে পেতেই কষ্ট হয়৷ কথিত আছে মা আনন্দময়ী, সেবাইত সৌম্যবরণ গোস্বামী প্রমুখ এ মন্দিরে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন৷ ধারণা করা হয় এ মন্দির থেকেই এলাকাটির নামকরণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির
স্থানীয়ভাবে এটি ‘রাজারবাগ কালী মন্দির’ নামে পরিচিত৷ জনশ্রুতি আছে ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে সম্রাট আকবরের সেনাপতি বাংলা বিজয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকার পূর্ব প্রান্তে এসে তাঁবু ফেলেন৷ তিনি সেখানে গঙ্গাসাগর নামে একটি দিঘি খনন করেন৷ ঈশা খাঁ-কে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে বর চেয়ে দীঘির পূর্ব পাশে একটি কালী মন্দির নির্মাণ করেন৷ এরপর থেকে এর নাম হয় বরদেশ্বরী কালী মন্দির৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্বামীবাগ লোকনাথ আশ্রম
ঢাকার স্বামীবাগে শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির৷ শক্তি ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মথুরামোহন মুখোপাধ্যায় ১৯০৫ সালে এটি নির্মাণ করেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্বামীবাগ ইসকন মন্দির
ঢাকার স্বামীবাগে ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসকন মন্দির৷ এটি হিন্দু বৈষ্ণব সাধক সম্প্রদায়ের প্রার্থনালয় এটি৷ এখানে ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ (১৮৯৬-১৯৭৭) সংক্ষেপে শ্রীল প্রভুপাদ’র মূর্তি আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
জয়কালী মন্দির
প্রায় তিনশত বছরের পুরনো ঢাকার বহুল পরিচিত মন্দির৷ প্রাচীন এ মন্দিরটিতে শুরুতে দুটি চূড়া ছিল৷ এখন শুধু শিব মন্দিরের উপর নির্মিত চূড়াটি আছে৷ মন্দিরের চূড়ার আকর্ষণীয় অলঙ্করণও বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের কারণে নষ্ট হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
গৌড়ীয় মাধব মঠ
পুরনো ঢাকার নারিন্দায় অবস্থিত শ্রী শ্রী গৌড়ীয় মাধব মঠ৷ শ্রী সিদ্ধান্ত স্বরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ ১৯২১ সালে এ মঠের প্রতিষ্ঠা করেন৷ এখানে আছে একটি কৃষ্ণ মন্দির, নাটমণ্ডপ ও যাত্রীনিবাস৷
ছবি: DW/M. Mamun
শ্যামবাজার শিব মন্দির
বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে প্রাচীন এ মন্দিরটি অবস্থিত৷ অতীতে এ মন্দিরে একটি উঁচু চূড়া ছিল৷ চার্লস ডয়েলির আঁকা ছবিতে ঢাকার নর্থব্রুক হলের সঙ্গে এ মন্দিরটিও দেখা যায়৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা এ চূড়াটি গুড়িয়ে দেয়৷