পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে গণনা চলছে৷ সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ভোটগ্রহণ৷ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কোয়েটাতে একটি থানার সামনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন আরও ৩৫ জন৷
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘হামলাকারী থানার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিল, পুলিশ যখন তাকে বাধা দিতে যায়, সেসময় নিজের শরীরে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় সে৷''
স্থানীয় হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে পাঁচ জন পুলিশ সদস্য এবং দুই শিশু রয়েছে৷ আহতদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করছেন তিনি৷ এখনো পর্যন্ত কেউ হামলার দায় স্বীকার করেনি৷
সাধারণ নির্বাচন
জাতীয় পরিষদের ২৭০টি আসনে এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৫৭৭টি আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে৷ দেশজুড়ে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৫ হাজার ৩০৭টি৷ প্রার্থী ১১ হাজারেরও বেশি৷ পার্লামেন্টের দুটি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৬টি আসনে সহিংসতার কারণে ভোট স্থগিত করা হয়েছে৷ পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, নারী, অমুসলিম-সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে৷ সরকার গঠন করতে হলে কোনো দলকে ১৩৭টি আসনে জয়ী হতে হবে৷
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস পরিস্থিতি বিরাজ করছে পাকিস্তানে৷ চলতি মাসে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় ১৭০ জন নিহত হয়েছে৷ এদের মধ্যে তিনজন প্রার্থীও ছিলেন৷
পুলিশ জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রাম সাওয়াবিতে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে একজন নিহত ও দুইজন আহত হয়েছে৷
পাকিস্তানে নির্বাচন: কী ঘটছে?
সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে পাকিস্তানে চলছে নানা হিসেব-নিকেষ৷ রাজপথ যেমন হয়ে উঠছে সহিংস, তেমনি রাজনীতির মাঠেও চলছে যোগ-বিয়োগের খেলা৷ সেনাবাহিনী যেমন হয়ে উঠছে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ধর্মও৷
ছবি: Reuters/F. Mahmood
নির্বাচনের বছর, সহিংসতারও
নির্বাচনকে ঘিরে এ পর্যন্ত ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে৷ বিশেষ করে নির্বাচনের মাস জুলাইয়ে বেশ কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ ১০ জুলাই আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৪ জনের মৃত্যু ঘটে৷ ১২ জুলাই এক সাবেক সংসদ সদস্যকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়৷ ১৩ জুলাই দু’টি বোমা হামলায় ১৫৩ জনের মৃত্যু হয়৷
ছবি: picture-alliance/AA/M. Asad
ভাগ্য নির্ধারিত হবে যেদিন
আগামী পাঁচ বছরের জন্য পাকিস্তানের মজলিশ-ই-সূরা বা সংসদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে আগামী ২৫ জুলাই৷ সেদিন জাতীয় সংসদ ও চারটি প্রদেশের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করবেন পাকিস্তানের জনগণ৷
ছবি: Reuters/F. Mahmood
নির্বাচনি প্রক্রিয়া
জাতীয় সংসদের ৩৪২টি আসনের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করতে দু’টি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়৷ ২৭২ জন জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন৷ বাকি ৭০টি আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের জন্য ও ১০টি অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের জন্য সংরক্ষিত৷ এছাড়া প্রাদেশিক সভার আরো একশ’ জন সদস্য নির্বাচিত করা হয়৷
ছবি: AP
নতুন সীমা নির্ধারণ
২০১৮ সালের মার্চে নতুন করে আসন বিন্যাস করা হয়েছে৷ সে অনুযায়ী, ইসলামাবাদ ক্যাপিটাল টেরিটরিতে তিনটি, পাঞ্জাবে ১৪১টি, সিন্ধ-এ ৬১টি, খাইবার পাখতুনখোয়াতে ৩৯টি, বালোচিস্তানে ১৬টি ও কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত উপজাতীয় এলাকাগুলোতে ১২টি আসনে নির্বাচন হবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Qureshi
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা
পাকিস্তান সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে কমপক্ষে ৩৪২টির মধ্যে কমপক্ষে ১৭২টি আসন জিততে হবে৷ প্রশ্ন হলো, কেউ কি পাবে তা? এবারের নির্বাচনে যে দু’টি দলের মধ্যে লড়াই হবার কথা সেগুলো হলো পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল)৷ পাকিস্তানের বিখ্যাত সিকিউরিটি ফার্ম একেডির করা এক জরিপ বলছে, পিটিআই এবার ৯৯টি ও পিএমএল ৭২টি আসন জিতবে৷ সে হিসেবে জোট সরকার ছাড়া গতি নেই৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
জোট করতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠদেরই?
ইমরান খানের দল পিটিআই, শেহবাজ শরিফের পিএমএলের বাইরে তৃতীয় বড় দল হলো পাকিস্তান পিপলস পার্টি, যার প্রধান প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভূট্টো ও আসিফ আলি জার্দারির বড় সন্তান বিলাওয়াল জার্দারি৷ নির্বাচন পূর্ববর্তী বিভিন্ন জরিপ বলছে, এই তিন দলকেই জোট সরকার গঠন করতে হবে৷
ছবি: DW/T. Shahzad
কে হবেন প্রধানমন্ত্রী?
পাকিস্তানের প্রধাননমন্ত্রী হবার ক্ষেত্রে বিতর্কিত রাজনীতিক, এক সময়ের জনপ্রিয় ক্রিকেটার ইমরান খান এগিয়ে আছেন৷ তিনি ও তাঁর দল শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট বলে কথিত আছে৷ শুধু তাই নয়, নির্বাচনের আগেই বিচার বিভাগ, সেনা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভোটের ফল পিটিআইয়ের পক্ষে আনতে কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে৷ এমনকি উগ্র ডানপন্থিদেরও কাছে টানতে নানারকম চেষ্টা চালাচ্ছেন ইমরান৷
ছবি: DW/R. Saeed
সেনাবাহিনীর প্রভাব
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব কতটা তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ সম্প্রতি দেশটির জনপ্রিয় পত্রিকা ডনের করা এক জরিপে দেখা যায়, পাকিস্তানের ৮৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন আসছে নির্বাচনে সেনা প্রভাব থাকবেই৷ ৩৫ শতাংশ মনে করেন, সেনারাই ফলাফল নির্ধারণ করে দেবে৷ গেল মেয়াদে নেওয়াজ শরিফের জনপ্রিয়তা কমতে থাকলে এবং তালেবানদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে তাদের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
ধর্মও বড় বিষয়
পাকিস্তানের রাজনীতিতে ধর্মও অনেক বড় বিষয়৷ এইতো ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী হতে মরিয়া ইমরান খান উগ্র ডানপন্থিদের সমর্থন পেতে ব্লাসফেমি আইনের প্রতি তাঁর জোর সমর্থন দিলেন৷ এমনকি জঙ্গি সংযোগের অভিযোগ অভিযুক্ত অনেক ‘ইসলামিক’ নেতাও লড়ছেন নির্বাচনে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
নাড়িয়ে দিয়েছেন শরিফ-মরিয়ম
গত ৬ জুলাই পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন)-এর নেতা নওয়াজ তাঁর মেয়ে মরিয়মের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করে পাকিস্তানের আদালত৷ দুর্নীতির দায়ে নওয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৮৯ লাখ পাউন্ড জরিমানা এবং মরিয়মকে আট বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লক্ষ পাউন্ড জরিমানার আদেশ দেয়া হয়৷ এরপরই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে ফেরেন মরিয়ম ও নওয়াজ৷ গ্রেফতার হন৷ তাদের এই ফিরে আসায় ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে৷ নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে বলে মত অনেকেরই৷
ছবি: Reuters/H. McKay
অপূর্ণতার অভিশাপ
জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি৷ সবশেষ নওয়াজ শরিফের সামনে সে সুযোগ থাকলেও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে তাঁকে সরে দাঁড়াতে হয়৷ প্রশ্ন হলো, আগামী মেয়াদে যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি কি পারবেন?