পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের কুমব শহরের হিন্দু মন্দিরে হামলার ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান৷ এক টুইটার বার্তায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে এ নির্দেশ দেন৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার রাতে ইমরান খান টুইটে লেখেন, ‘‘সিন্ধু প্রদেশের প্রশাসন এই হামলার বিষয়ে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেবে এমনটাই আশা করছি৷'' তিনি হামলাকারীদের খুঁজে বের করার কথাও উল্লেখ করেন৷ বলেন, ‘‘ভিন্নধর্মীদের ওপর এই হামলা কোরআনের শিক্ষাবিরোধী আচরণ৷''
এদিকে, স্থানীয় পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে৷ বুধবার পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি৷
ইমরানের বিশেষ উপদেষ্টা এমএনএ রমেশ কুমার ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ সে সময় তাঁর সঙ্গে স্থানীয় কমিশনার ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি তাদেরকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের নির্দেশ দেন৷ সে সময় তিনি স্থানীয় হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রধানদের সঙ্গে দেখা করেন এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জেনে নেন৷
সাম্প্রদায়িকতা কীভাবে দূর করা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের আট নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কথা৷
ছবি: AFP/Getty Images
সাদেকা হালিম, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সমাজ এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে৷ শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে৷ এছাড়া দেশের প্রতিটি মানুষকে যার যার অবস্থান থেকে একসঙ্গে কাজ করলে অসাম্প্রদায়িক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব৷ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা আছে৷ আরেকটি বিষয় হলো, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সকল ধর্মের সবাই মিলে যার যার অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করতে হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
গোলাম কুদ্দুস, সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট
কোনো ধর্মই মানুষের অকল্যাণের কথা বলে না৷ পৃথিবীর সব ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলে৷ তাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে কেউ যাতে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে তাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে৷ দেশের প্রতিটি মানুষকে যদি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায় তাহলেও দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
আইনুন নাহার সিদ্দিকা, আইনজীবী
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সব রকমের রাজনৈতিক উস্কানি বন্ধ করতে হবে৷ আমরা যেন এক ধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের পেছনে কখনো না লাগি৷ সবাই সবার ধর্মকে সম্মান করি৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
শেখ শাফায়াতুর রহমান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কখনো শক্তি আর অস্ত্র দিয়ে লড়াই করা যাবে না৷ আমাদেরকে আমাদের বুদ্ধি আর মেধা দিয়ে লড়াই করতে হবে৷ গ্রামে-গঞ্জে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
রেখা শাহা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে দেশের সর্বত্র সকল ধর্মের উৎসব নির্বিঘ্নে পালন করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ সবাই যেন সবার ধর্মীয় উৎসবগুলোতে অংশ নিতে পারেন, সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে৷ এছাড়া সবাই মিলে একটি দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারলে সাম্প্রদায়িকতাও দেশ থেকে দূর হবে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
খরাজ মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা, পশ্চিমবঙ্গ
আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ৮৫ শতাংশ মেকআপ আর্টিস্টই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের৷ কই, আমাদের তো সমস্যা হয় না! আমরা মন থেকে কোনও বিভেদে বিশ্বাস রাখি না৷ তাই নিজেদের মধ্যেও বিভেদ জন্মায় না৷ মনের অন্ধকার দূর করাটাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বড় হাতিয়ার৷
সত্যিকারের জ্ঞান মনের সংকীর্ণতা দূর করে৷ তাই শুধু ডিগ্রি দিয়ে লাভ নেই৷ জ্ঞানের আলো জ্বালাতে প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃত শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে৷ সেটাই হবে আদর্শ জ্ঞাননির্ভর সমাজ৷ সেই সমাজ এমন মানুষ তৈরি করবে, যার মধ্যে উগ্রতা থাকবে না৷
ছবি: DW/P. Samanta
পতিতপাবন রায়, পিয়ারলেস, পশ্চিমবঙ্গ
ব্যক্তিগতস্তরে ধর্মীয় অনুশাসন মানতে অসুবিধে নেই৷ কিন্তু সমষ্টিগতস্তরে মানতে হবে রাষ্ট্রীয় অনুশাসন৷ দেওয়ানি বিধির অধীনে সবাইকে রাখতে হবে৷ রাজনীতির অনুপ্রবেশ রুখে সবার জন্য সমান আইন প্রণয়ন দরকার৷ তবেই রাস্তা আটকে নামাজ পড়া বা মণ্ডপ তৈরি নিয়ে দাঙ্গা হবে না বা রক্তও ঝরবে না৷
ছবি: DW/P. Samanta
8 ছবি1 | 8
এদিকে, সিন্ধু প্রদেশের গভর্নর মন্দিরের পবিত্রতা বিনষ্টকারীদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘এই হামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে৷ আমাদের ঐতিহ্যবাহী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের উদ্দেশ্যেই একটি অসাধু মহল এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করেছে৷''
উল্লেখ্য, গত সোমবার কুমব শহরের একটি মন্দিরে দেবদেবীর মূর্তি ভাঙচুর করে একদল দুর্বৃত্ত৷ সে সময় মন্দিরে আগুনও দেয় তারা৷ মন্দিরে হামলার ঘটনাটি হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সমালোচিত হয়েছে৷ গণমাধ্যমের সংবাদে উল্লেখ করা হয়, এ ধরনের হামলার ঘটনা পাকিস্তানে বেশ বিরল৷
পাকিস্তানে হিন্দুরা একেবারেই সংখ্যালঘু৷ দেশটির ন্যাশনাল ইকোনমিক সার্ভের দেওয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে পাওয়া যায় ২২ কোটি জনগণের পাকিস্তানে মাত্র ২ শতাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠী৷ অর্থাৎ মাত্র ৪৪ লাখ হিন্দু জনগণ রয়েছে পাকিস্তানে৷