ঐতিহাসিক রায় দিলো পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট। ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ডেপুটি স্পিকার খারিজ করে দিয়েছিলেন বিদেশি চক্রান্তের প্রসঙ্গ তুলে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়, ডেপুটি স্পিকারের রুলিং অসাংবিধানিক। ইমরানের সুপারিশ মেনে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সেই নির্দেশও অসাংবিধানিক। তারা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিকে পুনরুজ্জীবীত করেছে। সংক্ষিপ্ত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, শনিবার সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন ডাকতে হবে। অনাস্থা ভোটপর্ব নিয়ে বেশি দেরি করা চলবে না। আর অনাস্থা ভোটের ফলাফল ঘোষণা না করে অধিবেশন শেষ করা যাবে না।
ইমরানের রাজনৈতিক ধাক্কা
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে রাজনৈতিক ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্রিকেটার থাকার সময় অনেক হারা ম্যাচ জিতিয়েছেন ইমরান। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে যেভাবে তিনি বিরোধীদের আনা অনাস্থার মোকাবিলা করতে চাইছিলেন, তা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে বানচাল হয়ে গেল। প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, এটা ইমরানের রাজনৈতিক জীবনে বড় ধাক্কা হয়ে থাকবে।
ইমরান শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে পারেন। ইমরান আবার জানিয়েছেন, তিনি শেষ বল পর্যন্ত লড়বেন।
ইমরান খান: জানা-অজানা কিছু তথ্য
ইমরান খান পাকিস্তানের জাতীয় ক্রিকেট দলের একসময়ের অধিনায়ক আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁর সম্পর্কে কিছু জানা-অজানা তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Rousseau
পুরো নাম
ইমরান খান নামেই সবার কাছে পরিচিত তিনি৷ কিন্তু তাঁর পুরো নাম কি জানেন? আহমেদ খান নিয়াজী ইমরান হচ্ছে তাঁর পারিবারিক নাম৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
খেলা শুরু
১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন ইমরান খান৷ ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট ছিলেন ইমরান৷ ১৯৬৮ সালে ষোল বছর বয়সে লাহোরের হয়ে সারগোরার বিরুদ্ধে প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo Library
জাতীয় দলে ডাক
ক্রিকেটের প্রতি ইমরান খানের আগ্রহ এবং লেগে থাকাই তাঁকে দ্রুত স্থান করে দেয় পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলে৷ ১৯৭০ সালে যখন দলে ডাক পান, তখনও তাঁর পড়াশোনাই শেষ হয়নি৷
ছবি: Getty Images
পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয়
বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারদের একজন বলা হয় তাঁকে৷ তাঁর অধিনায়কত্বে পাকিস্তান ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয় করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Holland
রাজনীতি
১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন ইমরান৷ গঠন করেন তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি৷ গত নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও এবার অন্যদের পেছনে ফেলে তাঁর দল উঠে এসেছে শীর্ষে৷
ছবি: Aamir QureshiAFP/Getty Images
ব্যক্তিগত জীবন
শুধু খেলা বা রাজনীতি নয়, ব্যক্তি জীবনের নানা খবর দিয়েও বরাবরই সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ইমরান খান৷ ৬৫ বছর বয়সে তৃতীয়বার বিয়ে করেন ইমরান৷ ভবিষ্যতবক্তা বুসরা মানেকার আগে ব্রিটিশ সেলিব্রেটি জেমিমা গোল্ডস্মিথ এবং পাকিস্তানি টিভি অ্যাংকর রেহাম খান ইমরানের স্ত্রী ছিলেন৷
ছবি: PIT
অভিযোগের পাহাড়
নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ইমরানের দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খান তাঁর আত্মজীবনীতে ইমরানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ আনেন৷ রেহামের অভিযোগ, ইমরানের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ালেই কেবল নারীরা দলে বড় পদ পেতে পারেন৷
ছবি: Facebook/Imran Khan Official
পাকিস্তানের ট্রাম্প!
ইমরান খানকে অনেকেই পপুলিস্ট বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন৷ জঙ্গিবাদের প্রতি তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গীরও সমালোচনা করেন অনেকে৷ ধারণা করা হয় তালেবানের মতো বেশকিছু উগ্রপন্থি দলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেন ইমরান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B.K. Bangash
অ্যামেরিকার সমালোচক
সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অ্যামেরিকার ভূমিকা এবং তাতে পাকিস্তানের অংশগ্রহণের বড় সমালোচক ইমরান৷ পাকিস্তানের অনেক সমস্যার পেছনে দেশটির অ্যামেরিকাপ্রীতিই বড় কারণ বলে একাধিক বক্তব্যে বলেছেন তিনি৷
ছবি: YouTube/PTI Scotland
দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরই সরব ইমরান খান৷ বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ছিলেন তাঁর আক্রমণের মূল লক্ষ্য৷ লন্ডনে বাড়ি ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার সাজায় নওয়াজ শরীফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ এখন পাকিস্তানের কারাগারে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Mughal
তরুণদের মন জয়
পাকিস্তানের তরুণদের মন দ্রুতই জয় করে নিয়েছেন ইমরান খান৷ তাঁর ‘নতুন পাকিস্তান’ স্লোগান তরুণ প্রজন্মের মুখে মুখে৷ ২০১২ সালে এশিয়া সোসাইটির জরিপে ‘এশিয়া’স পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন ইমরান৷
ছবি: AP
11 ছবি1 | 11
সুপ্রিম কোর্টের রায়
সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিয়েছে মতৈক্যের ভিত্তিতে। পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে রায় নিয়ে কোনো মতবিরোধ ছিল না। সংক্ষিপ্ত রায়ে বিচারপতিরা বলেছেন, ডেপুটি স্পিকারের রুলিং সংবিধান ও আইনসম্মত নয়। এর কোনো আইনি বৈধতা নেই। রায়ে বলা হয়েছে, ওই অবস্থায় ইমরান খান সংবিধান অনুসারে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করতেই পারেন না। তার সুপারিশের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তও তাই অসাংবিধানিক। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী, সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, পরামর্শদাতারা তাদের পদ ফিরে পাবেন বলে রায়ে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে বিচারপতিরা এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই রায়ের সঙ্গে দলত্যাগবিরোধী আইনের কোনো সংযোগ নেই। দলত্যাগ বিরোধী আইন তার মতো করে লাগু হবে।
বিরোধীদের দাবি
বিরোধীরা দাবি করছেন, তাদের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বিরোধী নেতা শাহবাজ শরিফ সাংবাদিকদের বলেছেন, আদালত মানুষের প্রত্যাশা পূর্ণ করতে পেরেছে। পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টোর মতে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে গণতন্ত্র ও সংবিধান জয়ী হলো।
বালিওয়াল বলেছেন, অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এবার ভোটাভুটি হবে। তারপর বিরোধীরা ক্ষমতায় আসবে। নির্বাচনী সংস্কার হবে। এরপর স্বচ্ছতার সঙ্গে ভোটে যাওয়া হবে।