জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে চলতি সপ্তাহে অভিযান শুরু করেছে পাকিস্তান৷ এবার কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও৷
ছবি: picture-alliance/AA/Pakistan Prime Ministry Office
বিজ্ঞাপন
কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে পাকিস্তানের মাটি থেকে বিদেশে হামলা চালানোর সুযোগ দেয়া হবে না, বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান৷ ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের সাঁড়াশি অভিযান শুরুর কয়েকদিন পরই তিনি এই হুঁশিয়ারি দিলেন৷
প্রতিবেশী ভারতে হামলা চালানো জঙ্গি সংগঠনগুলোর রাশ টেনে ধরতে পাকিস্তানের উপর অব্যাহত চাপ রয়েছে৷ সবশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তান ভিত্তিক সংগঠন জৈশ-ই-মোহাম্মদের হামলায় ভারতের ৪০ প্যারামিলিটারি পুলিশ সদস্য নিহত হন৷ এরপর অত্র অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল৷
ভারত-পাকিস্তান বন্ধুত্বের নিদর্শন যে ট্রেন
ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের গল্প কে না জানে৷ কিন্তু যুদ্ধ ছাড়াও যে এই দুটি দেশের মধ্যে রয়েছে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা, সে সম্পর্কে জানুন এই ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
সমঝোতা না বন্ধুত্ব?
শিমলা চুক্তির পর ১৯৭৬ সালে শান্তি ও বন্ধুত্বের প্রতীক হিসাবে অমৃতসর ও লাহোরের মধ্যে চালু হয় এই ট্রেন৷ ‘সমঝোতা এক্সপ্রেস’ নামের এই ট্রেনটি ২০০৬ সালে ‘থর এক্সপ্রেস’ চালু হবার আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংযোগকারী একমাত্র ট্রেন ছিল৷ ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ও পাকিস্তান রেলওয়ের যৌথ প্রকল্পের ফল এই ট্রেনটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
দিল্লি দূরে নয়
দুই দেশের মধ্যে মাত্র ৫২ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দেয় এই ট্রেনটি৷ লাহোর থেকে দিল্লি ছাড়া এই ট্রেনটি থামে পাকিস্তানের মুঘলপুরা ও জাল্লো’তে৷ ওয়াগাহ-আটারি সীমান্তে সম্পন্ন হয় কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কাজ৷ এরপর, ট্রেনটি ভারতে প্রবেশ করলে থামে খাসা, ছেহেরতা ও অমৃতসর স্টেশনে৷
ছবি: Imago/Xinhua
সময়সূচি
যখন প্রথম চালু হয় এই ট্রেন, তখন প্রতিদিন চলত এটি৷ কিন্তু বর্তমানে সপ্তাহে দুইবার, বুধবার ও রবিবারে দিল্লি ও লাহোর থেকে ছাড়ে এই ট্রেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
কত দীর্ঘ এই ‘সমঝোতা’?
সাধারণত, চার থেকে আট কামরার হয় গাঢ় সবুজ ও নীল রঙের এই ট্রেনটি৷ বিশেষ উৎসবের মরসুমের সময় কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেন, কত দীর্ঘ হবে ট্রেনটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Nanu
বন্ধুত্বে ব্যাঘাত
এখন পর্যন্ত, মোট তিনবার বন্ধ রাখা হয়েছে সমঝোতা এক্সপ্রেস৷ প্রথমবার ২০০১ সালে ভারতীয় সংসদভবনে হামলার পর বন্ধ করা হয় এই ট্রেন চলাচল৷ এরপর ২০০৭ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো নিহত হবার পর বন্ধ হয় সমঝোতা৷ এরপর ফেব্রুয়ারিতে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের ফলে বন্ধ করা হলেও এখন আবার চালু হয়েছে এই পরিষেবা৷
ছবি: Imago/ZUMA Press
সমঝোতায় সন্ত্রাসী হামলা
২০০৭ সালে পানিপতের কাছে এই ট্রেনে বোমা হামলার হয়৷ এতে ৭০ জন পাকিস্তানি নাগরিকসহ মারা যান কয়েকজন ভারতীয় সৈনিক৷ আহত হন শতাধিক মানুষ৷ ২০০৯ সালে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এই হামলার সাথে জড়িত বলে জানায় অ্যামেরিকা৷ কিন্তু ২০১০ সালের ভারতের জাতীয় সুরক্ষা এজেন্সির অনুসন্ধানকারী দল জানায় যে, এর মূল প্রণেতা হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য স্বামী অসীমানন্দ৷ এই দায় পরে স্বীকার করেন তিনি৷
ছবি: AP
বিপাকে সমঝোতা
২০১২ সালের ৮ অক্টোবর এই ট্রেন থেকে একশ কিলো হেরোইন ও পাঁচশ রাউন্ডেরও বেশি বুলেট উদ্ধার করে পাকিস্তানের পুলিশ৷ দিল্লিগামী এই ট্রেন থেকে পাওয়া হেরোইনের দাম ছিল প্রায় ৫০৫ কোটি ভারতীয় রুপি৷
ছবি: AP
টালবাহানার সমঝোতা
এখনও চলছে ২০০৭ সালে সমঝোতা এক্সপ্রেসে হামলার তদন্ত৷ আসলেই কে দোষী, তা স্পষ্ট নয়৷ অনেকেই ইঙ্গিত করেন, রাজনৈতিক সুবিধার জন্য বারবার ব্যবহার করা হয়েছে এই রেলসংযোগকে৷ তবুও, ভারত ও পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যে আসা-যাওয়া অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে এই বিশেষ ট্রেনটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Sharma
8 ছবি1 | 8
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন সহ বিভিন্ন দেশ ভারত বিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহবান জানিয়ে আসছে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের ভারত নিয়ন্ত্রিত অংশে সেদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষরত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে৷ যদিও তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে দেশটির সরকার৷
এমন পরিস্থিতিতেই গেল সোমবার জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় পাকিস্তান সরকার৷ যার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিষিদ্ধ বিভিন্ন ঘোষিত সংগঠন পরিচালিত ১৮২টি ধর্মীয় বিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২০ জনকে৷
কী বলছেন ইমরান খান
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে দেশের বাইরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর কোনো সুযোগ দেবে না বর্তমান সরকার৷'' দক্ষিণ পাকিস্তানে একটি শোভাযাত্রায় দেয়া বক্তৃতায় তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন৷ ‘‘আল্লাহর ইচ্ছায় আপনারা নতুন এক যুগের সূচনা দেখতে পাবেন৷'' শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পাকিস্তানের জন্য বড় ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে আমাদের দেশে আর তৎপরতা চালানোর সুযোগ দিব না৷''
অবশেষে খুলছে পাকিস্তানের আকাশপথ
01:09
This browser does not support the video element.
তবে ইমরান খানের আগেও পাকিস্তানের সরকারগুলো অতীতে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ ২০০২ সালের শুরুতে পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো ভারতের সংসদে হামলার চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ এরপর এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযানের তোড়জোড় শুরু হলেও কিছুদিন পরই তা আবার থেমে যায়৷ এমন প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের নতুন তৎপরতাকে লোক দেখানো হিসেবেই অভিহিত করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ৷ যদিও পাকিস্তান সরকারের দাবি ভারতের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণে নয়, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তাদের এই অভিযান দীর্ঘদিনের পরিকল্পনারই অংশ৷