জাতিসংঘে পাকিস্তানকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করল ভারত। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের এই আক্রমণ।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘে ফের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ভারত এবং পাকিস্তানের। কয়েক দিন আগেই কাশ্মীর নিয়ে ভারতের তীব্র সমালোচনা করেছিল পাকিস্তান। এ বার প্রশ্ন করার অধিকার বলে সেই জাতিসংঘেই পাকিস্তানকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করল ভারত। জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধি বলেছেন, পাকিস্তান সংখ্যালঘুদের 'কিলিং ফিল্ডে' পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, 'পাক অধ্যুষিত কাশ্মীর এবং লাদাখে' মানবাধিকার কার্যত নেই বলেও অভিযোগ করেছে ভারত। বলা হয়েছে, ওই এলাকা পাকিস্তান ব্যবহার করে জঙ্গি প্রশিক্ষণের জন্য।
ভারতেই নিরাপদ পাকিস্তানের হিন্দুরা
দেশভাগের সময় পাকিস্তানে থেকে গিয়েছিলেন তারা৷ কিন্তু ৭৩ বছর পরও পাকিস্তানের হিন্দুরা ভারতেই বেশি নিরাপদ বোধ করছেন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
আইন পাশে সহজ হলো নাগরিকত্ব
২০১৬ সালে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভারতে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে৷ সহজ করে দিয়েছে ভারতের নাগরিক হওয়ার পথ৷ শিথিল করা হয়েছে অবৈধ অভিবাসীর সংজ্ঞাও৷ ফলে সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে ভারতে চলে যাওয়া পাকিস্তানের হিন্দুরা এখন ভারতেই নিরাপদ বোধ করছেন৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
শিশুর নামই ‘নাগরিকতা’
ইশ্বর লাল ও আরতি দেবীর সদ্যোজাত কন্যা সন্তানের নাম রাখা হয়েছে নাগরিকতা, অর্থাৎ নাগরিকত্ব৷ পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা হিন্দু বাবা-মায়ের দেওয়া নামই বুঝিয়ে দেয় তাদের কাছে নাগরিকত্বের গুরুত্ব কতখানি৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
শরণার্থী শিবির যেখানে
ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লীর অদূরেই পুরোনো দিল্লির একটি প্রাচীন পাড়া ‘মজনু কা তিল্লা’৷ সেখানেই এক অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে বাস করেন পাকিস্তান থেকে আসা প্রায় ৬০০ জন৷ তাদের অনেকেরই বক্তব্য, নিজের দেশ পাকিস্তানে জীবনযাপনের মান অনেক উন্নত হলেও নিরাপত্তার নিরিখে ভারতেই ভালো আছেন তারা৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
কেমন জীবন এই শিবিরে?
সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ বা পানি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা নেই মজনু কা তিল্লার এই শরণার্থী শিবিরে৷ নেই কোনো পাকা ঘর৷ মাথার ওপর ছাদ বলতে ইট বা কাঠের তৈরি অস্থায়ী ঘর৷ দু’ পা এগোলেই দূষিত পানিতে ভরা যমুনা নদী৷ এছাড়া রয়েছে পাকিস্তান থেকে সীমান্ত না পেরোতে পারা পরিজনদের জন্য দুশ্চিন্তা৷ কিন্তু এর মধ্যেই চলছে জীবন৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
ধর্মের স্বাধীনতা এবং নারীদের নিরাপত্তা
পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের জেরে হিন্দুরা ভারতে চলে যাচ্ছেন৷ ৩৫ বছর বয়সি নিরমা বাগরির মতে, ‘‘এখানে (ভারতে) অন্তত আমরা নিজেদের ধর্মীয় আচারগুলি নির্বিঘ্নে, নির্ভয়ে পালন করতে পারি৷ তাছাড়া, আমাদের মেয়েদেরও এখানে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় না৷’’
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
পাকিস্তানে হিন্দুদের সংখ্যা বাড়েনি, কমেওনি!
স্বাধীনতার পর প্রথম আদমশুমারি হয় পাকিস্তানে ১৯৫১ সালে৷ সেই সময় পশ্চিম পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৬ শতাংশ (দেশভাগের আগে ছিল ১৪ শতাংশ) ও পূর্ব পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ (দেশভাগের আগে ২৮ শতাংশ) ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷ সবশেষ ২০১২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পাকিস্তানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৬ শতাংশ, অর্থাৎ সেই ১৯৫১ সালের মতোই রয়ে গেছে৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
স্বপ্নের নাগরিকত্ব
ভারত আসলে কেমন, তা পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুরা আগে জেনেছেন দেশভাগ-পূর্ববর্তী প্রজন্মের গল্পে, বলিউডের সিনেমায়, ইন্টারনেটের দৌলতে৷ কিন্তু দিল্লিতে প্রকৃত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হচ্ছে তাদের৷ অনেকেই এখনও নাগরিকত্ব পাননি, কিন্তু আশা করেন, নাগরিকত্ব পাবার সাথে সাথেই কিছু জমি ও পাকা ঘর পাবেন এবং জীবন স্বাভাবিক হবে৷
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
7 ছবি1 | 7
গত কয়েক দিন ধরেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে। গত বছর অগাস্ট মাসে কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাতিল করার পর থেকেই লাগাতার ভারতের সমালোচনা করে চলেছে পাকিস্তান। জাতিসংঘে চীনও সমর্থন করেছে পাকিস্তানকে। অন্য দিকে পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্র তুরস্কও সম্প্রতি কাশ্মীর প্রসঙ্গে ভারতের সমালোচনা করেছে। অন্য দিকে, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিতর্কিত মানচিত্র প্রকাশ করেছেন। যেখানে ভারতের বিভিন্ন এলাকা পাকিস্তানের বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ভারতও আন্তর্জাতিক মঞ্চে লাগাতার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। বিতর্কিত মানচিত্র থাকায় আন্তর্জাতিক বৈঠক থেকে উঠে এসেছে ভারত। তবে জাতিসংঘে সম্প্রতি ভারত যে ভাবে পাকিস্তানকে আক্রমণ করেছে, তা নজিরবিহীন। ভারত বলেছে, পাকিস্তানে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের গুম করে দেওয়া হয়। মেরে ফেলা হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকেও ৪০ বছর বা তারও বেশি সময়ের জন্য জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত বাবা জানের কথা বলা হয়েছে।
এশিয়ার মানচিত্রের যত রাজনীতি
এক দেশ থেকে আরেক দেশে বদলে যায় একই ভূখণ্ডের মানচিত্র৷ এশিয়ায় কেমন এই মানচিত্রের রাজনীতি, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/F. J. Brown
সরকারের যত কড়াকড়ি
ভারতের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, উত্তর ভারতের অভিন্ন অঙ্গ জম্মু ও কাশ্মীর৷ তাই সেদেশের মানচিত্রে পাকিস্তান ও চীন নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকেও ভারতের অংশ হিসাবে দেখানো হয়৷ শুধু তাই নয়, ভারতে সরকার অনুমোদিত নকশা ছাড়া কাশ্মীরের অন্য সব মানচিত্র অবৈধ৷
পাকিস্তান যা বলছে
পাকিস্তানেও কাশ্মীরের মানচিত্র বেশ স্পর্শকাতর একটি বিষয়৷ কিন্তু ভারতের মতো সেখানে গোটা কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসাবে দেখানো হয়না৷ এর বদলে মানচিত্রে কাশ্মীরের কিছু অংশের গায়ে ‘বিতর্কিত অংশ’ বা ‘অনির্দিষ্ট সীমান্ত’ লেখা থাকে৷
সরকারি মানচিত্র কতটা সঠিক?
জাতিসংঘের বৈশ্বিক জিওস্প্যাশিয়াল তথ্যবিষয়ক কমিটির প্রধান টিম ট্রেনর বলেন, ‘‘মানচিত্রের ক্ষমতা অনেক৷ একটি মানচিত্র দেখলেই আমরা ভেবে নিই যে তা আসলে সঠিক তথ্য দিচ্ছে৷’’ তাঁর মতে, মানচিত্র বিশ্বের মানুষের চিন্তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে৷ তিনি আরো বলেন যে, এশিয়ার অনেক দেশের সরকারি মানচিত্রের সাথে সত্যের খুব কমই মিল আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. J. Brown
দক্ষিণ চীন সাগরের উদাহরণ
২০১৯ সালের ‘এবোমিনেবল’ ছবিতে একটি বিশেষ মানচিত্র দেখানোর ফলে দক্ষিণ চীন সাগরের দখল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ সেই মানচিত্রে তাইওয়ান ও গোটা দক্ষিণ চীন সাগরকে চীনের অংশ হিসাবে দেখানো হয়৷ যদিও আন্তর্জাতিক মহলে এই অঞ্চলের ওপর মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন্স, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ান প্রভৃতি দেশের দাবি রয়েছে৷
মানচিত্র বিশেষজ্ঞ টিম ট্রেনর বলেন, যে কোনো মানচিত্রকে সঠিক ধরে নেবার আগে প্রশ্ন করতে হবে যে সেই মানচিত্রের কাজটা ঠিক কী, আর কারাই বা তৈরি করেছে সেই মানচিত্র৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো মানচিত্রের একটি মাত্র নির্দিষ্ট নকশা থাকতে পারেনা৷’’ তাঁর মতে, ভালো মানচিত্র সেটাই যেখানে তথ্যের সূত্র ও তথ্যপ্রাপ্তির তারিখ দেওয়া থাকে৷ পাশাপাশি, বিতর্কিত সীমান্তের উল্লেখও থাকা উচিত৷
ছবি: Public Domain
অবস্থান অনুযায়ী বদলায় মানচিত্র
বিশ্বের বেশিরভাগ গবেষক ও সাধারণ নাগরিক মানচিত্র বিষয়ে ধারণা পেতে গুগল ম্যাপস বা গুগল আর্থ-এর মতো অ্যাপের ওপর নির্ভর করেন৷ কিন্তু ডয়চে ভেলেকে গুগল জানিয়েছে, অ্যাপ ব্যবহারকারী কোন মানচিত্র দেখতে পাবেন তা তার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে৷ যেমন ভারতের বাসিন্দারা ভারত সরকার অনুমোদিত মানচিত্রই দেখতে পান৷ কিন্তু কেন অন্যান্য মানচিত্রের তথ্য দেয়না গুগল, সেবিষয়ে তাঁরা কিছু বলেনি৷
ছবি: Knight-Mozilla-MIT “The Open Internet” Hack Day/opennews.kzhu.io
6 ছবি1 | 6
একই সঙ্গে ভারতেরঅভিযোগ, পাকিস্তান কাশ্মীর এবং লাদাখের যে এলাকাগুলি 'দখল' করে রেখেছে, সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়নি। মানুষ প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটান। এবং সেই সুযোগ ব্যবহার করে সেখানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির তৈরি হয়। পাক প্রশাসন তাতে মদত দেয়। ভারতের দাবি, পাকিস্তান চার হাজার সন্ত্রাসবাদীকে জঙ্গি বলতে রাজি নয়। আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের যাতে জঙ্গি বলা না হয়, তার চেষ্টা চালায়। এ থেকেই বোঝা যায়, পাকিস্তান কী ভাবে সন্ত্রাসবাদকে মদত দেয়।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ভারত পাকিস্তানের আহমেদিদের অবস্থার কথাও উল্লেখ করেছে। বলা হয়েছে ক্রিস্টানদের অবস্থার কথাও। ভারতের বক্তব্য, পাকিস্তান ভারতের সীমান্ত অশান্ত রাখার জন্যই জঙ্গিবাদকে মদত দিচ্ছে।
১৯৪৭ সাল থেকেই কাশ্মীর নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত কাশ্মীর এবং লাদাখের কিছু অংশকে ভারত পাক অকুপাইড কাশ্মীর বলে চিহ্নিত করে। পাকিস্তানও একই ভাবে ভারতের ভূখণ্ডে কাশ্মীরকে চিহ্নিত করে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দীর্ঘদিন ধরেই এ বিষয়ে দুই দেশের বিতর্ক হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কালের বিতর্ক এক অন্য মাত্রা পেয়েছে।