পাকিস্তানের মর্টারের আঘাতে কাশ্মীরে ভারত-পাক সীমান্তে তিন ভারতীয় সেনা নিহত। আহত পাঁচ। যার জেরে সীমান্তে চরম উত্তেজনা।
বিজ্ঞাপন
ভারত-পাক সীমান্তে এলওসি বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে পাক সেনার আক্রমণে তিনজন ভারতীয় সেনা জওয়ান নিহত হয়েছেন। ভারতীয় সেনা সূত্রে এ খবর জানানো হয়েছে। পাকিস্তান সেনার কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত পাকিস্তানের তরফে কিছু জানানো হয়নি। ভারত বলেছে, এর উপযুক্ত জবাব পাবে পাকিস্তান।
দুইটি পৃথক সংঘর্ষে তিনজন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। আহত পাঁচজন। তাঁদের গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেনা সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরেই সীমান্তে প্রবল গুলি গোলা ছুড়ছে পাকিস্তান। ভারতীয় সেনার পোস্ট লক্ষ্য করে মর্টার ছোড়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। তারই আঘাতে কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার নওগাম সেক্টরে দুইজন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
দেশভাগের আগুন, যা এখনো জ্বলছে
১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল৷ হিন্দু অধ্যুষিত ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান৷ সেই থেকে দুই দেশের কিছু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং শত্রুতা বেড়েই চলেছে৷
ছবি: AP
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়৷ জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র৷ ভারত ও পাকিস্তান৷ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ প্রথমে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর উপর নিজেদের আধিপত্য দাবি করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান৷ জিন্নাহ’র বিশ্বাস ছিল হিন্দু আর মুসলিমরা ভবিষ্যতে একসাথে থাকতে পারবে না৷
ছবি: picture alliance/dpa/United Archives/WHA
রক্তাক্ত পথ
পার্টিশন বা দেশ বিভাগ নৃশংস এবং ভয়াবহ এক অধ্যায়ের নাম৷ ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে৷ ইতিহাসবিদরা বলেন, ঐ দাঙ্গায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Images
১৯৪৮ সালের যুদ্ধ
ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা পাওয়ার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারো বিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের দায়িত্বভার ন্যস্ত ছিল হিন্দু নেতার হাতে৷ কিন্তু জিন্নাহ চাইলেন এটা যাতে পাকিস্তানের অধীন হয়৷ ১৯৪৮ সালে দুই দেশের সেনাবাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে৷ কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারতীয় সেনারা৷ কিন্তু সেই সংঘর্ষের জের অব্যাহত আছে আজও৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো
উদারপন্থি ইতিহাসবিদরা বলেন, জিন্নাহ এবং মহাত্মা গান্ধী নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র দু’টির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন চেয়েছিলেন৷ জিন্নাহ’র আশা ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যানাডার মতো সম্পর্ক হবে ভারত-পাকিস্তানের৷ কিন্তু ১৯৪৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরিরা নতুন দিল্লির সঙ্গে বিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: AP
উপস্থাপনের ভিন্নতা
ভারত ও পাকিস্তান সরকার দেশভাগের ব্যাপারটিকে একেবারে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে৷ ভারত এটাকে ব্রিটিশদের শাসন থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করে, যেখানে মহাত্মা গান্ধীকে এর স্থপতি বলা হয়৷ অন্যদিকে, পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তকে ব্রিটিশ এবং হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করা হয় ১৪ আগস্টকে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP Photo/M. Desfor
সম্পর্কের টানা-পোড়েন
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত সাত দশক ধরেই তিক্ত সম্পর্ক বিরাজ করছে৷ আর গত কয়েক বছর ধরে ইসলামি জঙ্গিবাদের কারণে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে দু’দেশের মধ্যে৷ নয়া দিল্লি বরাবরই পাকিস্তানকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গিবাদে মদদদাতা হিসেবে দায়ী করে আসছে৷ আর ইসলামাবাদ বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে৷
ছবি: Picture alliance/AP Photo/D. Yasin
6 ছবি1 | 6
অন্য দিকে, কাশ্মীরের পুঞ্চ সেক্টরেও একই ধরনের হামলার ঘটনায় এক সেনা জওয়ান নিহত হন এ দিন সকালেই। সেখানেও একজন আহত হয়েছেন। সেনার মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই ঘটনার পরে ভারতও পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিয়েছে। তবে ভারতের হামলায় পাকিস্তানের কোনো সেনার নিহত বা আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
ভারতের অভিযোগ, গত এক বছরে তিন হাজার বার পাক সেনা সীমান্তে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। কিছু দিন আগেও পুঞ্চ সেক্টরে দুই দেশের সেনার সংঘাত হয়েছিল। দুই পক্ষই সীমান্তের অন্যপ্রান্তে বিপুল পরিমাণ গোলাগুলি চালিয়েছিল। তবে সেই ঘটনায় কারো মৃত্যু হয়নি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বৃহস্পতিবারের ঘটনা বড় হয়ে গেল। তিনজন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ায় ভারত পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করবে। সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানকে এর উত্তর দেবে ভারতীয় সেনা।
এক দিকে লাদাখে চীনের সঙ্গে ভারতীয় সেনার সংঘাত চলছে। গালওয়ানে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছিল। এ বার পাক সীমান্তে ফের সেনা জওয়ান নিহত হলেন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেনা বাহিনীর মনোবল খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাহিনীর কেউ নিহত হলে তার উপযুক্ত জবাব দিতে না পারলে বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। গালওয়ানের পর ভারতীয় সেনা চীনকে সে ভাবে উত্তর দিতে পারেনি। এ বার পাক সীমান্তে ক্ষয়ক্ষতির পরে সেনা আরও বেশি করে উত্তর দিতে চাইবে। ফলে সীমান্তে আপাতত উত্তেজনা প্রশমনের কোনও সম্ভাবনা তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন না।