পাকিস্তানকে হাই কমিশনের কর্মীসংখ্যা অর্ধেক করতে বলল ভারত৷ ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীসংখ্যাও অর্ধেকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি৷
বিজ্ঞাপন
চীন ও নেপালের পর এবার পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে ভারতের৷ বিদেশ মন্ত্রক থেকে এদিন একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাত দিনের মধ্যে পাকিস্তানকে হাই কমিশনের কর্মীসংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে৷ ভারতও একই কাজ করবে এবং ইসলামাবাদে দূতাবাসের কর্মীসংখ্যা অর্ধেক করে দেবে৷
বিদেশ মন্ত্রকের অভিযোগ, ভারত বারবার পাক হাই কমিশনের কর্মীদের আচরণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে৷ অভিযোগ হল, অনেক কর্মীই চরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত এবং তারা জঙ্গিদের মদত দেয়৷ গত ৩১ মে হাই কমিশনের দুই কর্মীকে চরবৃত্তি করার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলা হয়েছিল৷
ওই দুই পাক হাই কমিশন কর্মী দিল্লি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন৷ তারা ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে নথিপত্র নিচ্ছিলেন৷ এরপর তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়৷
বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, পাকিস্তানে ভারতীয় কর্মীরা প্রকৃত কূটনৈতিক কাজ করতে গিয়ে বাধা পান৷ সম্প্রতি দুইজন দূতাবাস কর্মীকে বন্দুক দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের আচরণ ভিয়েনা কনভেনশন বিরোধী৷ সেইসঙ্গে দূতাবাসকর্মীদের সঙ্গে ব্যবহার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি রয়েছে তাও তারা ভঙ্গ করছে৷ উল্টো তারা সীমান্ত অঞ্চলে সন্ত্রাসকে মদত দিচ্ছে ও সন্ত্রাসবাদীদের সাহায্য করছে৷ তাই পাক হাইকমিশনের কর্মীসংখ্যা অর্ধেক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত৷
পাকিস্তানের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ডেকে বিদেশ মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ পাকিস্তানের এখন হাই কমিশনে কর্মী সংখ্যা ১১০ জন৷ ফলে সেই কর্মী সংখ্যা সাতদিনের মধ্যে ৫৫ করতে হবে৷
ভারতের এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ কারণ, প্রথমে এক বা একাধিক কর্মীর কাজ পছন্দ না হলে তাদের ফেরত পাঠাতে বলা হয়৷ তারপর হাই কমিশনকে ডেকে পাঠানো হয়৷ এই দুইটি ধাপই এরিমেধ্যে দুই দেশ সম্পন্ন করেছে৷ এরপর কর্মীসংখ্যা কমাতে বলা হয়। সেই সিদ্ধান্তও নিয়ে নিল ভারত। ফলে চীন, নেপালের পর, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরার লক্ষণ প্রকাশ্যে এল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
জিএইচ/এফএস
এশিয়ার মানচিত্রের যত রাজনীতি
এক দেশ থেকে আরেক দেশে বদলে যায় একই ভূখণ্ডের মানচিত্র৷ এশিয়ায় কেমন এই মানচিত্রের রাজনীতি, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/F. J. Brown
সরকারের যত কড়াকড়ি
ভারতের সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, উত্তর ভারতের অভিন্ন অঙ্গ জম্মু ও কাশ্মীর৷ তাই সেদেশের মানচিত্রে পাকিস্তান ও চীন নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকেও ভারতের অংশ হিসাবে দেখানো হয়৷ শুধু তাই নয়, ভারতে সরকার অনুমোদিত নকশা ছাড়া কাশ্মীরের অন্য সব মানচিত্র অবৈধ৷
পাকিস্তান যা বলছে
পাকিস্তানেও কাশ্মীরের মানচিত্র বেশ স্পর্শকাতর একটি বিষয়৷ কিন্তু ভারতের মতো সেখানে গোটা কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসাবে দেখানো হয়না৷ এর বদলে মানচিত্রে কাশ্মীরের কিছু অংশের গায়ে ‘বিতর্কিত অংশ’ বা ‘অনির্দিষ্ট সীমান্ত’ লেখা থাকে৷
সরকারি মানচিত্র কতটা সঠিক?
জাতিসংঘের বৈশ্বিক জিওস্প্যাশিয়াল তথ্যবিষয়ক কমিটির প্রধান টিম ট্রেনর বলেন, ‘‘মানচিত্রের ক্ষমতা অনেক৷ একটি মানচিত্র দেখলেই আমরা ভেবে নিই যে তা আসলে সঠিক তথ্য দিচ্ছে৷’’ তাঁর মতে, মানচিত্র বিশ্বের মানুষের চিন্তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে৷ তিনি আরো বলেন যে, এশিয়ার অনেক দেশের সরকারি মানচিত্রের সাথে সত্যের খুব কমই মিল আছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. J. Brown
দক্ষিণ চীন সাগরের উদাহরণ
২০১৯ সালের ‘এবোমিনেবল’ ছবিতে একটি বিশেষ মানচিত্র দেখানোর ফলে দক্ষিণ চীন সাগরের দখল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ সেই মানচিত্রে তাইওয়ান ও গোটা দক্ষিণ চীন সাগরকে চীনের অংশ হিসাবে দেখানো হয়৷ যদিও আন্তর্জাতিক মহলে এই অঞ্চলের ওপর মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন্স, ব্রুনেই, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ান প্রভৃতি দেশের দাবি রয়েছে৷
মানচিত্র বিশেষজ্ঞ টিম ট্রেনর বলেন, যে কোনো মানচিত্রকে সঠিক ধরে নেবার আগে প্রশ্ন করতে হবে যে সেই মানচিত্রের কাজটা ঠিক কী, আর কারাই বা তৈরি করেছে সেই মানচিত্র৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনো মানচিত্রের একটি মাত্র নির্দিষ্ট নকশা থাকতে পারেনা৷’’ তাঁর মতে, ভালো মানচিত্র সেটাই যেখানে তথ্যের সূত্র ও তথ্যপ্রাপ্তির তারিখ দেওয়া থাকে৷ পাশাপাশি, বিতর্কিত সীমান্তের উল্লেখও থাকা উচিত৷
ছবি: Public Domain
অবস্থান অনুযায়ী বদলায় মানচিত্র
বিশ্বের বেশিরভাগ গবেষক ও সাধারণ নাগরিক মানচিত্র বিষয়ে ধারণা পেতে গুগল ম্যাপস বা গুগল আর্থ-এর মতো অ্যাপের ওপর নির্ভর করেন৷ কিন্তু ডয়চে ভেলেকে গুগল জানিয়েছে, অ্যাপ ব্যবহারকারী কোন মানচিত্র দেখতে পাবেন তা তার অবস্থানের ওপর নির্ভর করে৷ যেমন ভারতের বাসিন্দারা ভারত সরকার অনুমোদিত মানচিত্রই দেখতে পান৷ কিন্তু কেন অন্যান্য মানচিত্রের তথ্য দেয়না গুগল, সেবিষয়ে তাঁরা কিছু বলেনি৷
ছবি: Knight-Mozilla-MIT “The Open Internet” Hack Day/opennews.kzhu.io