পোকামাকড়, বীজদানা পাখিদের খাবার৷ অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করা হলে পাখিরা না খেয়ে মরবে – বলছেন পক্ষিবিজ্ঞানীরা৷
বিজ্ঞাপন
ডেভ গুলসন তাঁর পরীক্ষাগারে ভোমরাদের একটা নিউট্রিয়েন্ট সলিউশান বা দ্রবীভূত পুষ্টিকর পদার্থ খেতে দিলেন, যাতে নিওনিক্স মেশানো রয়েছে – ঠিক সেই অনুপাতে, পোকামাকড়রা মুক্ত প্রকৃতিতে যেভাবে এই বিশেষ কীটনাশকটির সংস্পর্শে আসে৷ দেখা গেল, ভোমরারা তাদের দিকনির্ণয়ের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে, সাধারণভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে ও তাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমছে৷ মৌমাছিদের ক্ষেত্রেও একই প্রতিক্রিয়া৷ নিওনিক্স প্রস্তুতকারকরা কিন্তু বলছেন যে, পরীক্ষাগারের পরিস্থিতির সঙ্গে মুক্ত প্রকৃতির অনেক ফারাক; কাজেই এই সব ফলাফল বা পর্যবেক্ষণের কোনো দাম নেই৷
অপরদিকে গবেষকদের ধারণা যে, যে সব মাঠে এই ধরনের কীটনাশক স্প্রে করা হয়, সেখান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত সেই বিষ ছড়িয়ে পড়ে৷ যে কারণে গুলসনের এক সহযোগী নিওনিক্স স্প্রে করা মাঠের চারপাশ থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা করে দেখছেন৷ দেখা যাচ্ছে, বুনো গুল্ম-লতাপাতাতেও নিওনিক্সের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে৷ আর সেটা শুধু ভোমরাদের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বললেন ডেভ গুলসন৷
প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি: হামিংবার্ড
মাত্র তিন থেকে পাঁচ ইঞ্চি লম্বা এই পাখিগুলির চেহারা, খাবার-দাবার, আচার-আচরণ, সবই অসাধারণ৷ ফুলের মধু খায় মৌমাছিদের মতো; পিছন দিকে উড়তে পারে পোকামাকড়ের মতো; আবার হাজার হাজার মাইল পরিভ্রমণ করে...
ট্রকিলিডে পরিবারের ক্ষুদ্রতম সদস্য এই ‘বি হামিংবার্ড’ বা মৌমাছি হামিংবার্ড, ঠোঁট সুদ্ধু মাত্র দুই ইঞ্চি লম্বা, ওজনে আড়াই গ্রাম বা দু’টি ডাক টিকিটের সমান৷ হামিংবার্ডরা সাধারণত তিন থেকে পাঁচ ইঞ্চি লম্বা হয়৷ এদের বাস প্রধানত দক্ষিণ ও উত্তর অ্যামেরিকায়৷ পক্ষীবিজ্ঞানীরা ৩০০ থেকে ৩৫০ ধরনের হামিংবার্ড শনাক্ত করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT/T. Hauser
তলোয়ারঠুঁটো
হামিংবার্ডরা প্রধানত ফুলের মধু খেয়ে বেঁচে থাকে৷ ফুলের মধ্যে ঠোঁট ঢুকিয়ে খায় বলে নানা ফুলের আকার অনুযায়ী হামিংবার্ডদের ঠোঁটের আকারেরও বিবর্তন ঘটেছে৷ ছবিতে যে তলোয়ারঠুঁটো হামিংবার্ডকে দেখা যাচ্ছে, শরীর (এবং লেজের) তুলনায় তার ঠোঁটের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর অন্য যে কোনো পাখির চেয়ে বেশি৷
ছবি: picture-alliance/WILDLIFE/P.Oxford
পাখা ঝাপটায় বিদ্যুৎগতিতে
হামিংবার্ড নামটা এসেছে ‘হামিং’ বা অতি দ্রুত পাখা ঝাপটানোর একটানা শব্দ থেকে, যেন ভোমরার গুঞ্জন৷ সাধারণভাবে হামিংবার্ডরা সেকেন্ডে ৫০ বার পাখা ঝাপটায় – ওরা আবার পাখা ঝাপটায় ইংরেজি আটের মতো করে, সামনে ও পিছনে, ফলে ওরাই একমাত্র পাখি, যারা সামনের দিকে আবার পিছনের দিকেও উড়তে পারে৷ আর হেলিকপ্টারের মতো বাতাসে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পাখা নাড়া তো আছেই, যাকে ইংরেজিতে বলে ‘হোভারিং’, যেমন ‘হোভারক্রাফ্ট’৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images
উচ্চগতিতে বেঁচে থাকা
হামিংবার্ডদের হৃৎস্পন্দন মিনিটে ১,২৬০ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, যেখানে মানুষের হৃৎস্পন্দন থাকে মিনিটে ৬০ থেকে ৮০-র মধ্যে৷ হামিংবার্ডরা মিনিটে ২৫০ বার অবধি নিঃশ্বাস নিতে পারে৷ হামিংবার্ডদের শরীরের সাধারণ তাপমাত্রা ৪০ কি ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাতে তা কমে দাঁড়ায় ১৮ ডিগ্রিতে, হৃৎস্পন্দন কমে হয় মিনিটে ৫০ থেকে ১৮০৷ হামিংবার্ডরা এই সময় যে অর্ধচেতন অবস্থায় থাকে, তাকে ইংরেজিতে বলে ‘টর্পর’৷
ছবি: picture alliance/chromorange/G. Fischer
মেটাবলিজম
পরিভাষায় যাকে বলে বিপাক, অথবা সহজ কথায়, শরীর যেভাবে খাদ্যকে শক্তিতে পরিণত করে ও সেই শক্তি ব্যয় করে৷ হামিংবার্ডদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি জীবজগতে দ্রুততম৷ তাই বেচারাদের প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর মধু আহরণ করতে হয় – চিনির হিসেবে তারা প্রতিদিন নিজের ওজনের অর্ধেক পরিমাণ চিনি খায়৷ ফুলের মধু শরীরে গিয়ে শক্তিতে পরিণত হতে ৪৫ মিনিটের বেশি লাগে না৷
ছবি: AP
দূরের পথ
ছবিতে যে রুবি-থ্রোটেড হামিংবার্ড পাখিটিকে দেখা যাচ্ছে, তারা মেক্সিকো উপসাগরের উপর দিয়ে ৮০০ কিলোমিটার উড়ে গিয়ে অপর পাড়ে পৌঁছায় – একবারও না থেমে৷ অপরদিকে মাত্র তিন ইঞ্চি লম্বা রুফাস হামিংবার্ড গ্রীষ্মের শেষে অ্যালাস্কা থেকে মেক্সিকোয় যায় ৩,৯০০ মাইল পার হয়ে – যা কিনা তার আকারের হিসেবে পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে দীর্ঘতম যাত্রা৷
বহু প্রজাতির হামিংবার্ড মাকড়শার জাল আর শ্যাওলা দিয়ে তাদের ছোট্ট বাসাগুলোকে বেঁধে রাখে৷ এর ফলে বাসার কাঠামোটা ভালো হয়, আবার মাকড়শার জাল টানলে বাড়ে বলে, বাচ্চা হামিংবার্ডরা যত বড় হতে থাকে, বাসাটাও তত বড় হতে থাকে৷ হামিংবার্ডরা দু’টি ছোট সাদা ডিম পাড়ে – স্বভাবতই সেগুলো পক্ষিজগতের সবচেয়ে ছোট ডিম৷ তবে তা থেকে দুই কি তিন সপ্তাহ পরে বের হয় দু’টি কচি হামিংবার্ড...
ছবি: picture-alliance/All Canada Photos
7 ছবি1 | 7
‘‘বহু পাখি শুধু পোকামাকড় খেয়েই বেঁচে থাকে৷ কাজেই আমরা যদি খোলা মাঠে এমন সব কীটনাশক ব্যবহার করি, যেগুলো খুবই বিষাক্ত আর সহজে বিনষ্ট হয় না, আর যা পোকামাকড় মারার পক্ষে খুবই কার্যকরি, তাহলে আমরা অনিবার্যভাবে পাখিদের সংখ্যা কমিয়ে ফেলব, কেননা পাখিরা পোকামাকড় খেয়েই বেঁচে থাকে৷''
ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই যা পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ লেক কনস্টানৎস-এর রাডল্ফসেল পক্ষিবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক পেটার ব্যার্টল্ড-ও লক্ষ্য করেছেন, কীটপতঙ্গের সংখ্যা কীভাবে কমে আসছে৷ তিনি শোনালেন, ‘‘আগে দিনে কিংবা রাতে, বিশেষ সময় গরমের সময় রাত্রে গাড়ি চালালে এতো বেশি পোকামাকড় এসে সামনের কাচে ধাক্কা খেতো যে, একাধিকবার কোনো পেট্রোল পাম্পে থেমে গাড়ির কাচ পরিষ্কার করতে হত৷ শুধু ডাঁশ নয়, বড় বড় গুবরে পোকা যেন বন্দুকের গুলির মতো এসে আছড়ে পড়তো৷''
যেখানে পোকা ওড়ে না, সেখানে পাখিদেরও খাবার কিছু থাকে না৷ একদিকে পোকামাকড় জুটছে না; অন্যদিকে গাছপালার বীজ বা দানা, যা পাখিদের খাবার, তাও কমে আসছে৷ ব্যার্টল্ড জানালেন, ‘‘যে সব বিষ স্প্রে করা হয়, তার ফলে পাখিরা পপি কিংবা কর্নফ্লাওয়ারের মতো যে সব ফুলগাছের বীজ খায়, তেমন প্রায় ২০০টি প্রজাতির ফুলগাছ বিনষ্ট হয়৷ আগে চাষের খেতে বা তার পাশে এই সব ফুল ফুটে থাকত৷ পঞ্চাশের দশকে এই ধরনের বুনোফুল থেকে বছরে দশ লক্ষ টন বীজ সৃষ্টি হত, ভাবুন, দশ লাখ টন বীজদানা৷''