মিয়ানমারের উত্তরে ইন্দোচি লেক পাখিদের স্বর্গ৷ লেকের মাঝখানে আবার এক নয়নাভিরাম প্যাগোডা৷ তবুও এখানে টুরিস্টদের ভিড় নেই৷ তবে যাতে হয়, তার চেষ্টা চলেছে৷
বিজ্ঞাপন
স্বর্গ, তবু ভিড় নেই সেখানে
05:14
ইন্দোচি হ্রদের ধারে যাদের বাস, তাদের অধিকাংশই জেলে, চিরকালই যেরকম ছিল৷ বিশ বছর বয়সের জোয়ে জ জ উইন কিন্তু অর্থনীতির স্নাতক৷ জোয়ে বলেন, ‘‘আমি টুরিস্ট গাইড হতে চাই৷ কাজটা খুব ভালো৷ টুরিস্টরা ইন্দোচি লেক এলাকায় প্রবৃদ্ধি আনতে পারেন, আমরা তা থেকে টাকা কামাতে পারি৷ টুরিস্টদের যাতে ভালো সময় কাটে, আমি তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি – আবার আমার নিজেরও রোজগার হয়৷ যাকে বলে কিনা দুপক্ষেরই সুবিধা৷''
মিয়ানমারের একেবারে উত্তরে এই প্রত্যন্ত এলাকায় আপাতত খুব বেশি টুরিস্ট আসেন না৷ রাজধানী থেকে এখানে পৌঁছাতে লেগে যায় একটা গোটা দিন৷ প্রাদেশিক বিমানবন্দর এখান থেকে পাঁচ ঘণ্টার রাস্তা৷
ইংরেজি শেখা থেকে পাখি চেনা
জোয়ে ও তাঁর মতো আরো দশজন তরুণ ইন্দোচি হ্রদ এলাকায় টুরিজম বাড়াতে চান৷ সেজন্য তারা সবাই ইংরেজি শিখছেন৷ বিদেশিদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়৷ ট্রেকিং বা কায়াকে চড়ে লেকের জলে বেড়ানো – এ সবের জন্য কী করে খদ্দের ধরা যায়৷ খুব গোলমেলে কাজ: পাঁচ বছর আগেও এখানকার বাসিন্দাদের টুরিস্টদের সঙ্গে কোনোরকম লেনদেন নিষেধ ছিল৷ জোয়ে জানালেন, ‘‘গোড়ায় আমার ভয় ছিল, আমি ঠিক ঠিক কথা বলতে পারব কিনা৷ আসলে তো সেই একই সব প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে: তোমার নাম কী? বাড়ি কোথায়? এই লেকের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু বলো৷ সবচেয়ে দরকারি হল, টুরিস্টরা যাতে আমাকে বুঝতে পারেন; আমি কী বলছি, তা বুঝতে পারেন৷''
পাখি আমার রঙিন পাখি
শুধু পুরুষ পাখিরাই নয়, পক্ষিজগতে স্ত্রী পাখিরাও কিছু কম যায় না৷ পুরুষ পাখিরা সাধারণত একটু বেশি রংচঙে হয়, স্ত্রী পাখিদের আকৃষ্ট করার জন্য৷ রংয়ের বাহারে কিন্তু স্ত্রী পাখিরাও কম যায় না, বলছেন গবেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Pleul
স্কারলেট ম্যাকাউ
দক্ষিণ অ্যামেরিকার ম্যাকাউ পাখিদের সঙ্গে রংয়ের বাহারে পাল্লা দিতে পারে, এমন টিয়া খুব কমই আছে৷ ওদের আবার স্ত্রী আর পুরুষের মধ্যে পালকের কোনো ফারাক নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Pleul
একই অঙ্গে দু’টি রূপ
সাধারণত পুরুষ পাখিরা বেশি রঙিন হয়, কেননা তাদের স্ত্রী পাখিদের মন ভোলাতে হয়৷ মধ্য অ্যামেরিকার এই ‘শাইনিং হানিক্রিপার’ পাখিগুলোকে দেখলে তা বোঝা যায়৷ বলুন তো পুরুষ পাখি কোনটি? ঠিক ধরেছেন, ডানদিকেরটা!
ছবি: Bill Holsten
পুরোপুরি আলাদা
কখনো-সখনো বিশ্বাস করা শক্ত হয় যে, পুরুষ আর স্ত্রী পাখি দু’টি একই প্রজাতির! ‘স্কারলেট-রাম্পড ট্যানেজার’ পাখিদের মধ্যে পুরুষ পাখিটা মূলত কালো, এক পিছনের দিকটা লাল হওয়া ছাড়া; সেই সঙ্গে রুপালি ঠোঁট আর ঘন লাল চোখের মণি৷ স্ত্রী পাখিগুলোর কিন্তু মাথাটা ধূসর, শরীরের ওপরের দিকটা জলপাই রংয়ের আর পাখাগুলো বাদামি৷
ছবি: Bill Holsten
নখের আমি, নখের তুমি
দুনিয়ার অর্ধেক পাখি আসলে পাসিফর্মেস গোত্রের, অর্থাৎ যাদের পায়ের তিনটে নখর থাকে সামনের দিকে আর একটি থাকে পিছনের দিকে – ফলে দাঁড়ে বসতে সুবিধা হয়৷ এই প্যাসেরাইন পাখিদের বহু প্রজাতির স্ত্রী পাখিরা খুবই সাদামাটা, আবার কোনো কোনো প্রজাতিতে নয়৷
ছবি: Bill Holsten
প্রতিযোগী
পাখি আকারে যতো বড়ো হবে, ততোই নাকি সেই প্রজাতির স্ত্রী পাখিদের রংচঙে হবার সম্ভাবনা বাড়বে, বলছেন গবেষকরা৷ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে স্ত্রী পাখিদের বাহার বেশি হয়, কেননা তাদের পুরুষ পাখিদের মন জয় করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়৷
ছবি: Bill Holsten
স্বর্গের পাখি
নামই হল বার্ডস অফ প্যারাডাইস৷ এদের ক্ষেত্রে পুরুষ পাখিরা হয় যেমন রংচঙে, তেমনই তাদের লেজে দু’টি লম্বা পালক থাকে৷ স্ত্রী পাখিদের মন জয় করার জন্য পুরুষ স্বর্গের পাখিদের নাচ একটা দেখার মতো জিনিস: লেজের পালক ঘোরানোটাও যেন অস্ট্রিচ ফেদার ঘোরানোর মতো৷ আবার গালগলা ফুলিয়ে গোল তুলোর বল হয়ে যাওয়াটাও তার মধ্যে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Schulze
শিখিপুচ্ছ
পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা – ময়ূরকে সে কথা বলে দিতে হবে না৷ বর্ষা এলে, মেঘ ঘনালে ময়ূরের পেখম তুলে নৃত্য উপমহাদেশের একটি সুপরিচিত ও সুপ্রাচীন দৃশ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U.Anspach
শকুন রাজা
দক্ষিণ অ্যামেরিকার ‘কিং ভালচার’-এর বাকি শরীরটা সাদা, ছাইরং আর কালো পালক দিয়ে ঢাকা৷ কিন্তু তাদের মাথাটা খুবই রংচঙে৷ নাম ‘শকুন রাজা’ হয়েছে সম্ভবত এই কিং ভালচার ছোটখাটো শকুনদের মড়ির কাছে ঘেঁষতে দেয় না বলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Lopez
চঞ্চু মানেও ঠোঁট
কথা হচ্ছে ধনেশ পাখিদের নিয়ে৷ এদের ঠোঁট হয় আশ্চর্য ধরনের: মোটা, পুরু, রংচঙে৷ সেই ঠোঁটের দরুন এদের শিকারও করা হয়েছে বহুদিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Jensen
চিংড়ি খেয়ে লাল
ফ্লেমিঙ্গো পাখিরা লাল হয় কী খেয়ে জানেন? বাঁকানো ঠোঁট দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জলের ওপর থেকে লাল চিংড়ি আর প্ল্যাঙ্কটন ছেঁকে নেয় ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’-এর গল্ফ খেলার এই পাখিগুলো৷ লাল চিংড়ি খায়, তাই তাদের পালকের রং হয়ে যায় লাল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Hiekel
স্টারলিং ইজ এ স্টার
জার্মানিতে স্টারলিং-রা কালো-বাদামি, খুব বিশেষত্ব নেই তাদের৷ কিন্তু বিশ্বের অন্যত্র তাদের রং খোলে, যেমন পূর্ব আফ্রিকার এই ‘সুপার্ব স্টারলিং’-দের৷ হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন, পাখিটার নামই সুপার্ব স্টারলিং৷ দেখতেও সুপার্ব!
ছবি: picture-alliance/dpa/G.Graudins
11 ছবি1 | 11
ইন্দোচি লেক পাখিদের স্বর্গ৷ ঠিক সেটাই হল জোয়ে আর তার সতীর্থদের মূলধন: ইন্দোচি লেক পরিবেশবান্ধব পর্যটনের একটা লক্ষ্য হয়ে উঠবে বলে তাদের আশা৷ আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা এ-কাজে তাদের সাহায্য করছেন৷ নতুন গাইড-দের শিখতে হবে, পাখি দেখার সবচেয়ে ভালো জায়গাগুলো কোথায়৷ জোয়ে এক অস্ট্রেলীয় অতিথিকে তার পছন্দের পাখি দেখিয়ে বলেন, ‘‘সারসপাখিরা একটা বিপন্ন প্রজাতি৷ ওরা এই লেকে থাকে৷ অন্যত্র ওদের খুব কম দেখতে পাওয়া যায়৷''
বিপন্ন বলে গণ্য দশটি প্রজাতির পাখি এই ইন্দোচি লেক এলাকায় থাকে৷ প্রায় ২০ হাজার পাখি এখানে শীত কাটায় – তখন লেকের জল পাখিতে ভরে যায়৷ মিয়ানমার যে এখন টুরিস্টদের জন্য খোলা, ফ্রাংক মমব্যার্গ-এর কাছে তা একটা বিশেষ সুযোগ৷ আগে প্রকৃতি সংরক্ষণের দায়িত্ব ছিল সামরিক সরকারের উপর – যাতে প্রকৃতির খুব একটা উপকার হয়নি৷
ফনা অ্যান্ড ফ্লোরা ইন্টারন্যাশনাল-এর ফ্রাংক মমব্যার্গ বলেন, ‘‘পরিবেশবান্ধব পর্যটন থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের যদি কোনো সুবিধা হয়, তবেই তারা প্রকৃতি সংরক্ষণে আগ্রহী হবে৷ কাজেই এটা খুব ভালো যে, ওরা পক্ষিবিশারদদের পাখি দেখিয়ে অর্থোপার্জন করতে পারছে, পাখি ধরে পেট চালাতে হচ্ছে না৷''
বহুগামী পাখিদের কথা
পাখিদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই একগামী হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ বাকি দশ শতাংশের স্বভাব একটু ভিন্ন৷ ছবিঘরে জেনে নিন এমন কয়েকটি পাখির কথা৷
ছবি: Imago
সঙ্গী যখন ঘুমে, উনি তখন খোঁজে
দেখতে সুন্দর এই ব্লুটিট পাখির স্বভাব একটু উড়ু-উড়ু৷ সকালবেলায় পুরুষ সঙ্গীটি যখন ঘুমে বিভোর তখন তিনি আশেপাশে বেরিয়ে পড়েন৷ তখন যদি অন্য কোনো পুরুষ পাখিকে গান গাইতে দেখেন তাহলে কিছুক্ষণের জন্য তার সঙ্গে একটু, মানে একটুখানি আনন্দ করে নেন!
ছবি: picture alliance/Arco Images GmbH
রাজহাঁসের কথা
ছবিই বলে দিচ্ছে রাজহাঁস এমনিতে দীর্ঘদিনের জন্য সম্পর্কে জড়াতে আগ্রহী৷ কিন্তু মাঝেমধ্যে যে ‘বিবাহবহির্ভূত’ সম্পর্কে জড়ানোর অভ্যাস কারও কারও নেই সেটা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না!
ছবি: Otto Durst/Fotolia
ঝাঁক পছন্দ তাদের
তোতাপাখিরা সবসময় এক ঝাঁক হয়ে থাকতে পছন্দ করে৷ ঝাঁকের মধ্যেই এই পাখিরা একজন আরেকজনকে বেছে নিয়ে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলে৷ উদ্দেশ্য থাকে অনেকদিন একসঙ্গে থাকার৷ কিন্তু তারপরও রাজহাঁসের মতোই তাদেরও কারও কারও এক-আধটু মনে স্বাদ জাগে অন্যকিছু করার!
ছবি: Fotolia/H.Lange
ধারণা ছিল ভুল
একসময় বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল সারস পাখিরা বোধ হয় একগামী হয়ে থাকে৷ কিন্তু পরে জানা গেছে, সেটি সত্যি নয়৷ মাইগ্রেশনের সময় তারা নাকি অন্য কোনো সঙ্গীকে সঙ্গে নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Rössler
সব পেঙ্গুইন এক নয়
ছবিতে গালাপাগোস পেঙ্গুইনদের দেখতে পাচ্ছেন৷ মনে হচ্ছে যেন তারা একে অপরের জন্যই জন্মেছে৷ কিন্তু আসলেই কি তাই? উত্তর – হয়ত কিংবা হয়ত নয়৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, রকহপার পেঙ্গুইন একগামী হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ এই জাতের পেঙ্গুইন জোড়াদের একজন আরেকজনের চেয়ে কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকলেও একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO
5 ছবি1 | 5
মিলিটারি, বিদ্রোহী, পারদ
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য দান৷ এখানকার মানুষ মুক্তহস্তেই দান করেন, যদিও তারা নিজেরা খুব দরিদ্র৷ কাজেই টুরিজম থেকে তাদের প্রত্যাশা অনেক৷ মাসখানেক হল, সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে৷ সামরিক বাহিনীর পুরনো গেস্টহাউস এখন ভাড়া পাওয়া যায়৷ তবে গোলযোগও আছে৷ লেকের উত্তর দিকেই শুরু হচ্ছে কাচিন মুক্তিফৌজের এলাকা৷ কাচিনরা সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ তারা এখানে বেআইনি সোনার খনি চালায় – লেকের চারপাশে প্রায় একশো'টি এ ধরনের খনি আছে৷ পরিবেশ সংরক্ষণকারীদের দৃষ্টিতে যা একটা বিপর্যয়৷ সোনা বার করার জন্য পারদ ব্যবহার করা হয়৷ খনির বালির সঙ্গে সেই পারদ হ্রদের পানিতে গিয়ে পড়ে৷ মমব্যার্গ জানালেন, ‘‘সেই পারদ মাছের শরীরে গিয়ে জমা হয়৷ জেলেরা আর তাদের পরিবার সেই মাছ খায়৷ কাছের শহরগুলোতেও সেই মাছ বিক্রি হয়৷ কাজেই মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে এই মাছ খাওয়া থেকে একটা বিপদ ঘনাবে বৈকি৷ আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরের মধ্যে তা বন্ধ না করলে, সমস্যা ক্রমেই আরো সঙ্গীন হয়ে দাঁড়াবে৷''
অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা অতিথি জোয়ে জ জ উইন-এর সঙ্গে একটি কায়াক অভিযানেও যেতে চান৷ এভাবে জোয়ে-র রোজগার হয় দিনে প্রায় সাত ডলার, যা কিনা একজন চাষির রোজগারের প্রায় দ্বিগুণ৷ দূরে দেখা যাচ্ছে শোয়ে মিয়িৎসু প্যাগোডা৷ লেকের মাঝখানে এই বৌদ্ধমন্দির, পর্যটকদের কাছে একটি বিশেষ আকর্ষণ৷ প্রতি সপ্তাহে জোয়ে আসেন এখানে৷ তাঁর বুদ্ধ হলেন মঙ্গলবারের বুদ্ধ, কেননা জোয়ের জন্ম হয়েছিল এক মঙ্গলবারে৷ এখনও এখানে টুরিস্টদের কোনো ভিড় নেই৷