আকাশে ওড়ার স্বপ্ন কার না হয়! বিমানে চেপে নয়, একেবারে পাখির মতো ওড়ার অভিজ্ঞতার রোমাঞ্চই আলাদা৷ এমন অভিনব অভিজ্ঞতার কথা আক্সেল প্রিমাভেসি ডায়রির আকারে তুলে ধরেছেন৷
বিজ্ঞাপন
ভারহীন অবস্থায় উড়ে বেড়ানো, বাতাসের মধ্যে দিয়ে পাখির মতো উড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতার স্বাদই আলাদা৷ আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু অন্যরকম৷ কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো, এই ইলিউশন কাজ করবে তো!
সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের কাছে বার্ড লাইফ সেন্টার দেখতে এসেছি৷ স্টেফান হেলার এই পক্ষী সংরক্ষণ এলাকার প্রধান৷ পাখির ওড়ার অভিজ্ঞতার সিমুলেটার তৈরির আইডিয়া তাঁর মাথায় আসে৷ প্রশ্ন করলাম, পাখির ওড়া দেখে কেন রোমাঞ্চ আসে? হেলার বললেন, ‘‘আমরা এটা করতে পারি না৷ পাখির ওড়ার প্রক্রিয়া সত্যি বেশ জটিল৷ একেবারে নিখুঁতভাবে তারা যে কোনো জায়গায় নামতে পারে৷ প্লেন তা কখনো পারবে না৷ পাখিরা নিমেষের মধ্যে আকাশে উড়তে পারে, ডালপালার মধ্যে দিয়ে উড়ে যেতে পারে৷ মানুষ হিসেবে তাদের সেই দক্ষতা রপ্ত করার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই৷''
হুমকির মুখে যেসব প্রাণী
হুমকির মুখে থাকা কিছু প্রজাতির প্রাণী লাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে আফ্রিকার ওকাপিসহ আরো ২০০ পাখি রয়েছে৷ তবে অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷
ছবি: Reuters
ওকাপি’র সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে
জিরাফের মতো দেখতে এই ওকাপি’র বাস কঙ্গোতে৷ আফ্রিকার ঐ অঞ্চলে কত প্রাণীর বাস তার হিসাব রাখে ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন)৷ সংস্থাটি সম্প্রতি হুমকির তালিকায় থাকা প্রাণীদের নাম প্রকাশ করেছে৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে থাকা এই ওকাপির সংখ্যা নব্বইয়ের দশকে ছিল ৪,৪০০৷ দশ বছর পর এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৫০০ তে৷ কঙ্গোর সহিংসতা এবং খনি ব্যবসাকে এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Raul654
বিলুপ্তির পথে
আইইউসিএন জানিয়েছে, ওকাপি এখন হুমকির মুখে৷ তাদের তৈরি তালিকার একেবারে তলানিতে আছে ওকাপির নাম৷ অর্থাৎ এরাই সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে৷ এমন অনেক প্রাণী আছে, আজ থেকে ২০০ বছর আগেও যাদের অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যেমন বালি টাইগার৷ বাঘের প্রায় সব প্রজাতিই আজ হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুইশ প্রজাতির পাখি হুমকির মুখে
নতুন রেড লিস্টে দুইশ প্রজাতির পাখিও রয়েছে৷ এদের মধ্যে অনেক শকুন আছে, যাদের বাস ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়৷ আইইউসিএন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, চীন ও মালয়েশিয়ার অনেক শকুন এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে৷ ইথিওপিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা অনেক শকুন এখন হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এশিয়ার হাতি দ্রুত কমছে
বিশ্বে এখনও এশিয়ান এলিফেন্টের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার৷ কিন্তু এরাও হুমকির মুখে রয়েছে৷ গত তিন প্রজন্ম ধরে এই প্রজাতির হাতির সংখ্যা কমছে৷ আইইউসিএন বলছে, তিন প্রজন্মে হাতির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান হাতি দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/Horst Galuschka
পাচার ও দাঁত বিক্রির কারণে বিপদ
কেবল এশিয়া নয়, আফ্রিকার হাতিরাও হুমকির মুখে৷ বন উজাড় এবং দাঁতের জন্য শিকারীদের উৎপাতও হাতিদের সংখ্যা কমানোর জন্য দায়ী৷ সেইসাথে অবৈধভাবে শিকার এবং চুরি করে পাচার করাও দিন দিন বাড়ছে৷ হাতি পাচার রোধে এ মাসের ২ থেকে ৪ ডিসেম্বর বতসোয়ানায় ‘আফ্রিকান এলিফেন্ট সম্মেলন’-এর আয়োজন করে আইইউসিএন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিলুপ্তির পথে মাছ
ডলফিনের মত দেখতে এই পরপয়েসদের সচরাচর দেখা যায় ক্যালিফোর্নিয়ায়৷ মাছ ধরার জালে আটকে প্রায়ই মারা যায় এরা৷ কখনো কখনো জেলেরা এদের ধরে নিয়ে যায়৷ ফলে হুমকির মুখে রয়েছে এই প্রজাতিটি৷ বিশ্বে এখন মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ পরপয়েস রয়েছে৷
ছবি: WDC
কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে আশার আলো
কিছু কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে অবশ্য উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেমন লেদারব্যাক কচ্ছপ৷ অথচ এক দশক আগে এই প্রজাতির কচ্ছপটি ছিল রেড লিস্টে, অর্থাৎ হুমকির মুখে৷ দুই মিটার লম্বা এবং আধা টন ওজনের এই কচ্ছপগুলো আকারে সবচেয়ে বড় হয়৷ এদের হুমকির মুখে পড়ার কারণ সাগরের দূষণ৷
ছবি: gemeinfrei
প্রাণী কল্যাণ সংস্থার অবস্থা
এছাড়া ব্ল্যাকব্রোও অ্যালবাট্রসের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে৷ নতুন লাল তালিকায় এই প্রজাতির পাখির আশানুরূপ উন্নতি হয়েছে৷ আইইউসিএন এর পরিচালক ইয়ান স্মার্ট জানান, অনেক প্রজাতির উন্নতি হলেও এখনও ২১,০০০ প্রাণী হুমকির মুখে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শেষবার দেখার সুযোগ: পান্ডা, গন্ডার, লিঙ্কস
হুমকির মুখে থাকা প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম জায়ান্ট পান্ডা৷ বিশ্বে এদের সংখ্যা মাত্র ১০০০ থেকে ২০০০৷ আর আছে সুমাত্রার গন্ডার, যাদের মোট সংখ্যা মাত্র ২২০৷ এছাড়া লাইবেরিয়ার লিঙ্কসও আছে এই তালিকায়৷ এদের সংখ্যা মাত্র ৮০ থেকে ১৫০টি৷ ১৯৬৩ সাল থেকে এই রেড লিস্ট প্রকাশ করে আসছে আইইউসিএন৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
এখানে গাঙচিলদের বাসা৷ ছোট্ট এই বাড়িতে বসে পাখিদের বিরক্ত না করে তাদের পর্যবেক্ষণ করা যায়৷ প্রতি বছর প্রায় ১২,০০০ মানুষ এখানে আসেন৷ স্টেফান হেলার পর্যবেক্ষণ প্ল্যাটফর্ম ও প্রদর্শনী ছাড়াও তাদের জন্য নতুন কিছু আকর্ষণ তৈরি করতে চেয়েছিলেন৷ তাই তিনি এক সিমুলেটর তৈরি করেন৷
মাক্স রাইনার ওড়ার এই অভিজ্ঞতা সম্ভব করে তুলেছেন৷ জুরিখ শহরের কলা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দুই সহকর্মীর সঙ্গে ‘বার্ডলি' তৈরি করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই প্ল্যাটফর্ম নড়াচড়া করে৷ মনে হবে, সত্যি আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি৷''
প্রায় ৬ মাস ধরে এই টিম ‘বার্ডলি' নিয়ে কাজ করেছে৷ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যান্ত্রিক কাঠামো ও কম্পিউটার সফটওয়্যারের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানো৷ মাক্স রাইনার বলেন, ‘‘সব কিছু ঠিকমতো চললে সামগ্রিকভাবে এই অভিজ্ঞতা সত্যি অনবদ্য৷ সব ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে তোমাকে যদি ওড়ার অনুভূতি দেয়, তখন মনে হবে সত্যি উড়ছি৷ শুধু টেলিভিশনের পর্দায় দেখে এই অনুভূতি বোঝা যাবে না৷ তুমি এখানে হাত ঢুকিয়ে দিতে পারো৷ তখন এগুলি তোমার ডানা হয়ে যাবে৷ এবার তোমাকে একটা থ্রিডি চশমা দিচ্ছি৷ এটা দিয়ে তুমি প্রকৃতির মধ্যে প্রায় ডুবে যাচ্ছ৷ তারপর হেডফোন কানে লাগিয়ে তুমি আশেপাশের শব্দও শুনতে পারছো৷''
আমি সানফ্রানসিস্কো হয়ে অ্যামেরিকার পশ্চিম উপকূলে উড়ে চলেছি৷ উপর থেকে বিভিন্ন শহর দেখে চিনতে পারছি৷ প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময়ে উঁচু বিল্ডিং থেকে নীচে তাকিয়ে দেখেছে৷ ফলে ব্যাপ্তি সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছি, যেমনটা প্রকৃতির মধ্যে সম্ভব নয়৷ এভাবে ভারচুয়াল অভিজ্ঞতা আরও বাস্তবসম্মত হয়ে উঠছে৷ তাই এই টিম প্রকৃতির বদলে শহর বেছে নিয়েছে৷ ডানা মেলে আরও উপরে উঠে যাচ্ছি৷ ডানা নাড়ানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুত রপ্ত হয়ে যাচ্ছে৷ কিছুক্ষণ পর বাস্তব জগতের কথা পুরোপুরি ভুলে গেছি৷ একটা বিশাল ফ্যান আবার বাতাসও সৃষ্টি করছে৷ ফলে যন্ত্রের সঙ্গে ভার্চুয়াল জগতের মেলবন্ধন এক অভিনব ইলিউশন সৃষ্টি করছে৷
আমাকে বলা হচ্ছে আরও উপরে উড়তে৷ না হলে ধাক্কা লাগবে৷ যাঃ, পড়ে গেলাম৷ সত্যি মনে হচ্ছে উড়ছি৷ সামনে কোনো বাড়ি এলে এড়িয়ে যাবার ইচ্ছা হবে৷ ওড়ার নেশা পেয়ে বসবে৷ বার বার ওড়ার ইচ্ছা হবে৷ সত্যি নেশার ঝুঁকি কম নয়৷ আমার সমস্যা হলো, দ্বিতীয়বার ওড়ার সময় কেমন যেন বমি পাচ্ছিল৷ তবে আনন্দও যে কম নয়!