1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাচারকারীদের টার্গেট রোহিঙ্গারা?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ মে ২০১৮

রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে নারী ও শিশু পাচারের খবর দিচ্ছে স্থানীয় ও বিদেশি সংবাদমাধ্যম৷ পাচারের পর তাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং ভারত ও নেপালে নেয়া হচ্ছে বলে এসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে৷

UN-Delegation besucht Rohingya-Flüchtlingscamp in Bangladesch
ছবি: Getty Images/AFP

চাকরির কথা বলে দালালরা তাদের পাচার করে যৌনকর্মে বাধ্য করছে বলেও প্রতিবেদনগুলোতে অভিযোগ করা হয়৷

গত মার্চে বিবিসি নিউজের একটি দল এবং ‘ফাউন্ডেশন সেন্টিনেল' নামের অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নারী ও শিশু পাচারকারীদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালায়৷ তারা একটি রিসোর্টে অবস্থান নিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দালালদের টেলিফোন নাম্বার যোগাড় করতে সক্ষম হয়৷ এরপর পুলিশকে জানিয়ে তারা ঐ দালালদের কাছে অল্পবয়সি রোহিঙ্গা নারীর জন্য ফোন করেন৷ রাতে দু'জন অল্পবয়সি রোহিঙ্গা মেয়েকে গাড়িতে করে ঐ রিসোর্টে পাঠিয়ে দেয় দালালরা৷ যে ড্রাইভার মেয়েদের নিয়ে এসেছিল, সে আরো মেয়ে দিতে পারবে বলে জানায়৷ পরে পুলিশ চালককে আটক এবং মেয়ে দু'টিকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যায়৷

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘অল্পবয়সি নারী ও শিশুরা পাচারকারী ও দালালদের মূল টার্গেট৷ বিপদগ্রস্ত এই নারী ও শিশুদের মূলত কাজের লোভ দেখিয়ে ক্যাম্প থেকে নিয়ে যাওয়া হয়৷''

বাংলাদেশের ভেতরে এবং ভারতে পাচার করা হয়’

This browser does not support the audio element.

রোহিঙ্গা মেয়েদের ঢাকা, নেপালের কাঠমান্ডু ও ভারতের কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানায় বিবিসি৷

ঢাকার দৈনিক ইত্তেফাকের গত নভেম্বরে প্রকাশিত একপ্রতিবেদনে  রোহিঙ্গা শিশুদের পাচারের কথা বলা হয়৷ রোজিনা ও রিফাত নামে দুই শিশুর নিখোঁজ ও পাচার হওয়ার কথাও জানানো হয়৷ সেই সময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা আইওএম এর মুখপাত্র হালা জাবের বলেছিলেন, ‘‘রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে শিশু-কিশোরদের নিখোঁজ হওয়ার হার বেড়ে গেছে বলে আমরা শুনেছি৷ কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগও পেয়েছি৷ এই ধরনের ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ যাচাই-বাছাইও হচ্ছে৷ এই বিষয়ে এখনই সবার দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন৷ পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার৷''

এদিকে ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ৪০টি পাচারের ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ যদিও তারা কোনো দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি৷ তারা ভারতে পাচার হয়ে যাওয়া দুই রোহিঙ্গা শিশু নুরী ও কলির সাক্ষাৎকারও প্রকাশ করেছে৷ দক্ষিণ কোলকাতার একটি সেফ হোমে তারা ওই দুই শিশুর সঙ্গে কথা বলেছে৷ প্রতিবেদনে নেপালেও রোহিঙ্গা নারী ও শিশু পাচারের কথা বলা হয়েছে৷

গত ২৮ এপ্রিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানান, ‘‘বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বিদেশে চলে গেছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন দেশে গেলে অনেকে বাংলাদেশি পরিচয়ে দেখা করতে আসে৷ কোথায় বাড়ি, জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, তারা রোহিঙ্গা৷''

‘আমাদের কাছেও পাচারের অভিযোগ এসেছে’

This browser does not support the audio element.

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো নিয়ে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের মুখপাত্র ইউনুস আরমানের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ তিনি বলেন, ‘‘গত বছর রোহিঙ্গা নারী ও শিশু পাচারের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল৷ কয়েকজনকে উদ্ধারও করা হয় তখন৷ দালাল চক্র কাজের ও ভালো থাকার প্রলোভন দেখিয়ে ক্যাম্প থেকে পাচার করে৷ তাদের বাংলাদেশের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় এবং ভারতে পাচার করা হয়৷ পরে তাদের যৌনকর্মে বাধ্য করা হয়৷ কিন্তু এই বছর আমরা এখনো ঐ ধরণের কোনো অভিযোগ পাইনি৷ ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা আগের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে৷ আর এখন সেনাবাহিনী ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকায় অপরাধী চক্র অনেকটাই নিস্ক্রিয় হয়ে গেছে৷''

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সাবেক নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের টিম কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছে৷ আমাদের কাছেও বেশ কয়েকটি নারী ও শিশু পাচারের অভিযোগ এসেছে৷ আমরা কয়েকজনকে উদ্ধারও করি৷ চার-পাঁচ জন হবে৷ প্রথমে তাদের আমরা আমাদের শেল্টার হোমে রাখি৷ পরে ডকুমেন্টশনের অসুবিধা হওয়ায় পুলিশের মাধ্যমে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই পাচারের সঙ্গে কিছু রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় চক্র জড়িত৷ এই পাচারের ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও হয়েছে৷ আমরা ভারত ও পাকিস্তান থেকে আগে পাচার হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা নারী ও শিশুকে উদ্ধার করেছি৷ ক্যাম্পে মনিটরিং আরো জোরদার করা দরকার৷''

‘আমাদের চোখে পড়ে নাই’

This browser does not support the audio element.

অবশ্য বাংলাদেশের শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম আজাদ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা নারী ও শিশু পাচারের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নাই৷''

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেনও রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মানবপাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘কোনো নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা আমাদের জানা নাই৷ আমাদের চোখে পড়ে নাই৷ আপনার কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে দিন৷ আমরা ব্যবস্থা নেব৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিবিসি গত মার্চে যে প্রতিবেদন করেছে তা ভুয়া৷ আমিই তাদের সহায়তা করেছিলাম৷ কিন্তু ওটা ছিল একটা সাজানো ঘটনা৷ তারা ঘটনা সাজিয়েছে৷''

কেন এবং কীভাবে ভুয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘তারা ঘটনাটি সাজিয়েছে৷''

পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও নজদারি করছি৷ জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে যারা আসেন তারা সবাই আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশংসা করেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ