পাচার টাকার সন্ধানে অডিট ফার্ম নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
২৮ জানুয়ারি ২০২৫
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের কাছে হারানো ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সন্ধানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চারটি অডিট ফার্মের তিনটিকে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে পাচার হওয়া প্রায় ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সন্ধান চায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারছবি: Mortuza Rashed/DW
বিজ্ঞাপন
ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে এই তথ্য৷
অডিট ফার্ম তিনটি হচ্ছে ইওয়াই, কেপিএমজি ও ডেলয়েট৷ এদের মধ্যে ইওয়াই এবং ডেলয়েটের সঙ্গে অফিসের সময়ের বাইরে যোগাযোগ করায় এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ অন্যদিকে, কেপিএমজির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা সফল হয়নি৷
শেখ হাসিনা গত আগস্টে ভারতে চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নিয়োগ দেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর ফিনান্সিয়াল টাইমসকে জানান, এ সংক্রান্ত তদন্তে দেশটির শীর্ষস্থানীয় দশটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে৷
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক অর্থনীতিবিদ মনসুরকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা আনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ শেখ হাসিনা এবং তার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার ১৫ বছরে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা দুই ট্রিলিয়ন বাংলাদেশি টাকা উদ্ধারের উদ্যোগ শুরু করেছেন তিনি৷
বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের দুর্দশার চিত্র
গত দেড় দশকে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে একের পর এক অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে৷ দুর্দশায় পড়েছে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো৷ গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি সম্প্রতি ব্যাংক খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেছে৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
৯২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ
২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ২৪টি বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে৷ এই টাকা বাংলাদেশের গত অর্থবছরের বাজেটের ১২ শতাংশ বা জিডিপির দুই শতাংশের সমান৷
ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/IMAGO
একটি সরকারি ব্যাংকের চিত্র
রাষ্ট্র মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক এননট্যাক্স গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা ব্যাংকটির ভিত্তি মূলধনের চেয়েও ২৫ শতাংশ বেশি৷ এক্ষেত্রে একক গ্রাহকের জন্য যে ঋণসীমা নীতি থাকে, তা লঙ্ঘন করেছে জনতা ব্যাংক৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
একটি বেসরকারি ব্যাংকের চিত্র
বাংলাদেশে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনার সুনাম থাকলেও গত কয়েক বছরে তার কয়েকটির পরিস্থিতিও খারাপ হয়েছে৷ যেমন, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে এবি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ২৩৬ কোটি টাকার পাচারের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: Muhammed Semih Ugurlu/AA/picture alliance
করের টাকা ব্যাংকে
২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ভুয়া কোম্পানি ও সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংক থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়৷ এভাবে অর্থ ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকগুলোকে বছরের পর বছর জনগণের করের টাকা দিয়ে টিকিয়ে রাখে সরকার৷ ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এমন পুনঃঅর্থায়নে সরকারের ব্যয় ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ক্ষমতাধররা ব্যাংক মালিক
২০১৩ সালের সরকার নয়টি নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুমোদন দেয়৷ এই ব্যাংকগুলোর মালিক তখনকার রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা৷ এরমধ্যে একজন সাবেক মেয়রও ছিলেন৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
এক শিল্পগ্রুপের ৭ ব্যাংক
২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ একাই সাতটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়৷ এর মধ্যে ২০২২ সালে তারা ইসলামী ব্যাংক থেকে একাই ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়৷ তাদের দখলের পর একসময়কার শক্তিশালী ব্যাংকটি দুর্বল হতে শুরু করে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
হ্যাকিংয়ের তদন্ত
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত ৬৭৯ কোটি টাকার বেশি তুলে নেয় হ্যাকাররা৷ বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই ঘটনার তদন্ত করছে৷ ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ৭৯ বার তারিখ নিয়েও তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি তারা৷
ছবি: Marko Lukunic/Pixsell/picture alliance
খেলাপি ঋণের পরিমাণ
২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা৷ ২০০৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা৷ খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঋণ পুনঃতফসিল
খেলাপি ঋণ সময়মতো আদায় না হওয়ায় তা পরিশোধের মেয়াদ বাড়ায় ব্যাংকগুলো৷ ২০১১ থেকে ২০১৪ সালে প্রথমবার পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ৩৩ শতাংশ উদ্ধার হয়েছে৷ আর তৃতীয়বার পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ক্ষেত্রে উদ্ধারের হার ৩০ শতাংশ মাত্র৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
পাচার
ব্যাংক খাত থেকে খেলাপি হওয়া ঋণ পাচার হয়ে গেছে বলে মনে করেন অনেক অর্থনীতিবিদ৷ ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ চার হাজার ৭০০ কোটি ডলার থেকে ছয় হাজার ৭০০ কোটি ডলার৷ এই তথ্য ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির৷