ফের রক্তাক্ত পাঞ্জাবের অমৃতসর৷ জঙ্গিরা নিরঙ্কারী সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় সমাবেশে গুলি ও গ্রেনেড ছুড়লে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় তিন জন৷ আহত ২৫ জন৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, পাঞ্জাব আবার রক্তাক্ত হতে পারে৷ গোয়েন্দাদের ধারণা, রবিবারের এ হামলার নেপথ্যে আছে কাশ্মীরি জঙ্গি এবং খালিস্তানী শিখ জঙ্গি গোষ্ঠী৷ নিরঙ্কারি সম্প্রদায় এবং শিখদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টিই এর আসল লক্ষ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান৷ সেখানে গিয়ে পাকিস্তানের দিকে সন্দেহের আঙ্গুল তুলে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে সন্ত্রাসীরা যে ধরনের গ্রেনেড ব্যবহার করেছে তা তৈরি হয় সাধারণত পাকিস্তানের অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিতে৷ কাজেই পাকিস্তানের মদতপুষ্ট কাশ্মিরী জঙ্গি এবং পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর হাত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ অন্তত এই মূহুর্তে যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে এটাই উঠে আসে৷ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে বলা হয়, বিস্তারিত তদন্তের দায়িত্ব জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএর হাতে তুলে দেবার জন্য রাজ্য সরকারকে বলা হয়েছে৷ এনআইএর একটি দল এবং অন্যান্য তদন্তকারী দল ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেছে৷
‘পাঞ্জাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করাই এর লক্ষ্য, সেটা একটা লজিক্যাল কনক্লুশন’
মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং মনে করেন, ১৯৭৮ সালে মূলস্রোতেরশিখ এবং নিরঙ্কারী সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় বিষয়েসংঘাতের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ এটা নিছকই সন্ত্রাসী হামলা৷ নিরঙ্কারী সম্প্রদায় মূলস্রোতের শিখ সম্প্রদায় নয়৷ এটি একটি সর্বধর্ম সমন্বয়কারী অ্যাধ্যাত্মিক সংগঠন৷ সব ধর্মের মানুষই এর সদস্য হতে পারেন৷ কংগ্রেস শাসিত পাঞ্জাবে এই শান্তিকামী সংগঠনের উপর হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা ফের হিংসা ও রক্তপাতের সঙ্কেত দিল৷ উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালে উগ্র শিখ নেতা ভিন্দ্রানওয়ালে এবং ফৌজা সিং-এর নেতৃত্বে শিখরা হামলা চালায় নিরঙ্কারীদের উপর৷ নিরঙ্কারী গুরু গুরবচন সিং-এর দেহরক্ষীর হাতে নিহত হন ফৌজা সিং৷ ভিন্দ্রানওয়ালা পালাতে সক্ষম হন৷ এই ঘটনা থেকে শুরু হয় খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এবং তার পরিণতি তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ‘অপারেশন ব্লু-স্টার', যার ফলে শেষ পর্যন্ত ১৯৮৪ সালে তাঁরই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে প্রাণ দিতে হয় ইন্দিরা গান্ধীকে৷ সেই ক্ষত আজও শুকায়নি৷ তাই পাঞ্জাবে এই গ্রেনেড হামলা হলো ইন্দিরার জন্মদিনের একদিন আগে৷
পাকিস্তানে শিখদের আয়োজনে ‘ইফতার ক্যাম্প’
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন এলাকায় বসবাসরত শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরা রমজান মাসে ‘ইফতার ক্যাম্প’ খোলেন৷ যাঁরা রোজা রাখেন, তাঁদের জন্যই এই ব্যবস্থা৷ ছবিঘরে দেখুন সেই ক্যাম্প৷
ছবি: DW/F. Khan
ইফতারের সময়
খাইবার পাখতুন খোয়াহ এলাকার রাজধানী পেশাওয়ার৷ সেখানে এ বছরও শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরা ইফতার ক্যাম্প খুলেছেন৷ সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় শহরের লেডি রিডিং হাসপাতাল ক্যাম্পে৷ এই হাসপাতালে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সবাই চিকিৎসা করাতে আসেন৷
ছবি: DW/F. Khan
সাহায্যের চেষ্টা
এই ইফতার ক্যাম্পের গুরপাল বলেন, ইফতারের জন্য রান্না মুসলমানের হাতেই হয়, যাতে সবাই নিশ্চিন্তে খেতে পারেন৷ এখানের সব কাজই সদিচ্ছা থেকে করা হয়৷ পর্যটক এবং অসহায় লোকদের সাহায্যের জন্যই এই আয়োজন৷
ছবি: DW/F. Khan
বন্ধু, হাত বাড়াও
শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরা এই হাসপাতালে আসা রোগীদের সঙ্গে তাঁদের আত্মীয়দেরও সেবা করছেন৷ ইফতার ছাড়াও এখানে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়৷ রোগী বা তাঁর আত্মীয় ছাড়াও ইফতারে হাজির হন হাসপাতালের কর্মী এবং বাজারের লোকজন৷
ছবি: DW/F. Khan
শিখ হয়েও রোজা রাখেন...
শিখ সম্প্রদায়ের একটি সেবা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত জোহিন্দর সিং বলেন, ইফতার ক্যাম্পের আয়োজন পুরোপুরিভাবে একটা সামাজিক কাজের মধ্যে পড়ে৷ এর জন্য কারো কাছ থেকে কোনো চাঁদা বা অনুদান নেওয়া হয় না৷ আমাদের সংগঠনই এর সব খরচ বহন করে৷ তিনি জানালেন, তিনি নিজেও মুসলমানদের সঙ্গে রোজা রাখেন৷
ছবি: DW/F. Khan
সংহতির জন্য
ইফতারে প্রথমে শরবত, খেজুর, পাকোড়া, সিঙ্গাড়া আর ফল পরিবেশন করা হয়৷ এর পরেই খাবার পরিবেশিত হয়৷ এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত গুরপাল সিং জানালেন, মুসলমালদের সঙ্গে সংহতি দেখানোর জন্যই এই ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়৷
ছবি: DW/F. Khan
যুবকদের প্রতিনিধিত্ব
শিখ যুবকেরা এই ক্যাম্পে খুব তৎপর৷ তাঁরা ইফতারের সময় রোজাদারদের পানি এবং খাবার এনে দেন৷ পেশাওয়ার এলাকায় যে শিখরা ব্যাবসা করেন, তাঁরা জানিয়েছেন, রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম তাঁরা কম রাখার চেষ্টা করেন৷
ছবি: DW/F. Khan
পাকিস্তানে শিখ
শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের জন্ম পাকিস্তানের নানকানা সাহেব অঞ্চলে৷ শিখদের পবিত্র তীর্থগুলির মধ্যে এটি অন্যতম৷ প্রতি বছর ভারত থেকে বহু শিখ তীর্থযাত্রা করতে পাকিস্তানে যান৷ এখন অবশ্য পাকিস্তানে মাত্র ২০ হাজার শিখ আছে৷
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
বৈষম্য
একসময় পেশাওয়ারেই প্রায় ১০ হাজার শিখ থাকতেন৷ কিন্তু পাকিস্তানে শিখেরা প্রায়ই তাঁদের সঙ্গে ধর্মীয় কারণে হওয়া নানা বৈষম্যের কথা তোলেন৷ এর মধ্যেই বহু শিখ যুবক পাকিস্তানী সেনা এবং অন্যান্য সরকারি চাকরিতে যোগ দেন৷ তরনজিৎ সিং পাকিস্তানের প্রথম শিখ টিভি সঞ্চালক৷
ছবি: Faridullah Khan
8 ছবি1 | 8
আজও নিরঙ্কারীদের‘শিখ ধর্মের পথভ্রষ্ট' বলে মনে করেশিখ উগ্রবাদীরা৷ বিশ্লেষকদের মতে, ফের শিখ ও নিরঙ্কারী সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটাতেই অমৃতসরের নিরঙ্কারী ধর্মীয় সমাবেশে এই জঙ্গি হামলা৷ তাঁদের ধারণা, এর পেছনে কলকাঠি নাড়াচ্ছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই৷ পুলিশ জানায়, নিরঙ্কারী ভবনে প্রার্থনার জন্য সমবেত হয়েছিলেন এই সম্প্রদায়ের কয়েকশ' ভক্ত৷ বেলা ১২টা নাগাদ মোটরবাইকে এসে মুখ ঢাকা দুই ব্যক্তি গ্রেনেড ছোঁড়ে এবং গুলি চালায়৷ ঘটনা বুঝে ওঠার আগেই তারা ঝড়ের বেগে উধাও হয়ে যায়৷ এখনো পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি৷ তবে ধরার জন্য সব চেকপোস্ট, ফ্লাইওভার এবং আন্তঃজেলা সীমান্তের চেকপোস্টগুলিতে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ সিসিটিভি ফুটেজও চেক করা হচ্ছে৷ বিস্ফোরণের পরই অন্যান্য নিরঙ্কারী ভবনগুলির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ পাশাপাশি পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লির নিরঙ্কারী ও শিখ ধর্মস্থানগুলিতেও বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা৷
হামলাকারীদের ধরার সূত্র দিতে পারলে ৫০ লখ টাকা পুরস্কার দেবার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে৷ নাম গোপন রাখা হবে৷ তারই জেরে পাঞ্জাব পুলিশ সাত জনকে আটক করেছে৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ গোয়েন্দা সূত্রে খবর ছিল, কিছু সন্ত্রাসী পাঞ্জাবে অনুপ্রবেশ করেছে৷
রাষ্ট্রবিজ্ঞানি, অধ্যাপক প্রবীর দে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালিস্তানী যোগসূত্র আছে যেমন বলা যাবে না, নেই তা-ও বলা যাবে না৷ সরকার সন্দেহ করছে, পাঞ্জাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করাই এর লক্ষ্য৷ সেটা একটা লজিক্যাল কনক্লুশন৷ দেখা গেছে, পাকিস্তানে সরকার বদলের আগে ও পরে এই ধারা চলে আসছে৷ এতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুবিধা হয়৷ যেমন, সম্প্রতি কাশ্মীরে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সেটা দেখা গেছে৷ ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করার একটা চেষ্টা সব সময়ই পাকিস্তানের থাকে৷''
কোন ধর্মে কী খাওয়া নিষেধ?
বিশ্ব জুড়ে সব ধর্মের মানুষের খাবারের উপর নানা বিধিনিষেধ আছে, কোনোটা খাওয়া সম্ভব আর কোনোটা খাওয়া বারণ, বিশেষ করে আমিষ, অর্থাৎ মাছ-মাংসের ক্ষেত্রে৷ বহু শতাব্দী ধরে এই সব বিধিনিষেধ চলে আসছে৷
ছবি: DW/S. Waheed
ইসলাম ধর্মে...
ইসলাম ধর্মে শূকরের মাংস ‘হারাম’৷ এছাড়া বেওয়ারিশ পশুপাখির মাংস হারাম এবং পশুপাখির রক্তও হারাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Venance
হিন্দুধর্মে গরু
হিন্দুধর্মে গরুকে পবিত্র বলে মনে করা হয়, তাই গো-মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ৷ ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস বা মাছ ছাড়া বস্তুত বাকি সব ধরণের মাংসই নিষিদ্ধ৷ হিন্দুদের একটি বড় অংশ নিরামিষ ভোজন করে থাকেন৷
ছবি: AP
ইহুদিরা যা খান ও যা খান না
ইহুদিদের জন্য যা খাওয়া অনুমোদিত, তাকে বলা হয় কোশার ও যা খাওয়া নিষিদ্ধ, তাকে বলা হয় ত্রেফা৷ কোশার হলো সেইসব প্রাণী, যাদের পায়ের খুর পুরোপুরি চেরা এবং যারা জাবর কাটে, যেমন গরু, ছাগল কিংবা ভেড়া৷ ঘোড়া কিংবা শূকর এই কারণে কোশার নয়৷ কোশার মাছের আবার আঁশ ও পাখনা থাকা চাই৷
ছবি: AP
বৌদ্ধধর্মে খাওয়া নিয়ে বিধিনিষেধ
বৌদ্ধধর্মে সব ধরণের মাংস, এমনকি মাছ ভক্ষণও নিষিদ্ধ, কেননা বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন যে, কোনো প্রাণিসত্তার মৃত্যুর জন্য তাদের দায়ী হওয়া উচিৎ নয়৷
ছবি: AP
শিখদের ‘নিষিদ্ধ’ খাবার...
শিখরা শূকরের মাংস খান না৷ সেই সঙ্গে হালাল বা কোশার মাংসও তাদের কাছে অভক্ষ্য, কেননা অন্য কোনো ধর্মের ধর্মাচারে অংশগ্রহণ করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ৷
ছবি: DW/S. Waheed
জৈন ধর্মাবলম্বীরা মূলত নিরামিষভোজী
জৈনধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো অহিংসা, যে কারণে অধিকাংশ জৈন নিরামিষ আহার করেন৷ তবে তারা দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যও গ্রহণ করে থাকেন৷