1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘পাট চাষ করে আর সংসার চলে না'

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশের সোনালি আঁশ পাট৷ এক সময় এই পাট চাষ করেই অনেক চাষির ঘরে ফিরেছে স্বচ্ছলতা৷ এখন কী অবস্থা পাটচাষিদের? কেমন আছেন তাঁরা? এসব জানতে মাদারীপুরের পাট চাষি আকবর সিকদারের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷

Der Landwirt Akbar Shikdar
ছবি: R. Hassan

 ডয়চে ভেলে : পাট চাষে আপনাদের খরচ হয় কেমন?

আকবর সিকদার : প্রতি শতাংশে ৭ থেকে ৮শ' টাকা খরচ হয়৷

একমন পাট উৎপাদন করতে কত শতাংশ জমি লাগে?

তিন শতাংশ জমি লাগে৷

একমন পাট কত টাকায় বিক্রি করেন?

বর্তমান বাজার দর ২ হাজার ২০০ টাকা৷ এক নম্বর পাট যেটা...

পাট উৎপাদনে আপনাদের যে খরচ হচ্ছে, বিক্রি করে সেটা তো উঠছে না...

 না৷

‘আশায় আশায় আমরা পাট বুনি’

This browser does not support the audio element.

তাহলে আপনারা যাঁরা পাট চাষ করেন, তাঁরা কিভাবে সংসার চালাচ্ছেন?

জমিতে তো আর এক ফসল হয় না৷ দুই বা তিন ফসল হয়৷ কোনো কোনো বছর আমরা আশায় থাকি এ বছর দাম ভালো পাওয়া যাবে৷ আশায় আশায় দিন যায় আমাদের৷

পাট চাষ করে যদি খরচের টাকাই না উঠে তাহলে আপনারা কেন চাষ করছেন?

আমরা করি, কারণ, সরকার বলে এ বছর ভালো রেট দেয়া হবে৷ আগামী বছর ভালো রেট দেয়া হবে৷ আশায় আশায় আমরা পাট বুনি৷ কোনো কোনো সময় ভালো রেট পেয়ে যাই, আবার কোনো কোনো সময় পাই না৷ আমরা নিজেরা শ্রম দেই৷ কাদা, পানি, বৃষ্টি, রোদ এভাবে কতক্ষন পারা যায়! সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা শ্রম দিতেই থাকি৷ পাটে অনেক শ্রম দিতে হয়৷

পাটের দাম আগের তুলনায় কমেছে না বেড়েছে?

পাটের দাম আগের বছরের তুলনায় এবার একটু ভালো৷

পাট বিক্রি করা কি সহজ হয়েছে, নাকিএখনো কঠিন?

যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের এলাকায় ভালো, এ কারণে বিক্রি করা সহজ হয়ে গেছে৷

কিভাবে বিক্রি করেন?

আমরা মন হিসেবে বিক্রি করি৷ বেশি পাট হলে পাইকাররা বাড়িতে আসে, আর কম হলে আমরা হাটে নিয়ে বিক্রি করি৷

এভাবে বিক্রি করে আপনারা কি সঠিক মূল্য পাচ্ছেন?

আমরাও কিন্তু যাচাই-বাছাই করি৷ অন্য হাটে এক নম্বর পাটটা কত রেট, আর দুই নম্বর পাটটা কত রেট৷ এগুলো খোঁজ-খবর নিয়েই আমরা পাট বিক্রি করি৷

মধ্যসত্তভোগী যাদের বলি, ফড়িয়া বা দালাল, তাদের এখানে কি কোনো প্রভাব আছে?

পাইকারি ব্যবসায়ী অনেক৷ সে কারণে আমরা দালাল বা ফড়িয়ার খপ্পড়ে পড়ি না৷

পাইকাররা জুট মিলে কত টাকায় বিক্রি করে  এ বিষয়ে কোনো ধারণা আছে?

না, আমাদের কোন ধারণা নেই৷ কোনো কোনো পাইকার আমাদের বলে, ভালো রেট পাইছি৷ প্রতি মনে ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা তাদের লাভ হচ্ছে৷ আবার অনেকে কিছুই বলে না৷ আসলে তারা কত টাকায় বিক্রি করে তা আমরা জানতে পারি না৷

সরকার পাটের একটা নূন্যতম দাম নির্ধারণ করে দেয়, তা কি আপনারা জানেন?

তৃণমূল পর্যায়ের কৃষক এটা জানতে পারে না৷ তবে অনেকে জানতে পারেন৷ যাঁরা টিভি দেখেন বা পত্রিকা পড়েন, তাঁরা কিছু কিছু জানেন৷ কিন্তু দেশের অধিকাংশ কৃষকই তো একেবারে ক্ষুদ্র কৃষক, তাঁরা এগুলো জানতে পারেন না৷ 

পাটের ফলন আগের চেয়ে কমেছে না বেড়েছে?

আগের চেয়ে বেড়েছে৷

কেন বেড়েছে?

কারণ এখন আধুনিক চাষ ব্যবস্থা, সেচ ব্যবস্থা ভালো৷ পানি দেয়ার জন্য ছোট ছোট মেশিন বের হয়েছে৷ পানি দেয়া সহজ হয়েছে৷ কীটনাশকও ঠিকমতো পাওয়া যায়৷

বৈজ্ঞানিক উপায়ে পাট চাষের জন্য কৃষিবিভাগ থেকে কি আপনারা কোনো সহযোগিতা পান?

তাঁরা পরামর্শ দেয়, কিন্তু জোরালোভাবে দেয় না৷ তাঁদের মাঠকর্মী আছে, ব্লক সুপারভাইজার আছে, তাঁদের সিজনে সিজনে একটু দেখি৷ এরপর তাঁদের আর দেখা যায় না৷

তাঁদের পরামর্শ নিয়ে পাট চাষ করলে কি আসলে পাটের উৎপাদন বাড়ে?

উনারা যে পরামর্শ দেন সেই পরামর্শ শুনে অনেকেই পাট চাষ করেছেন৷ কিন্তু তাঁদের উৎপাদন আশানুরূপ হয়নি৷ দেখা গেছে, ব্লক সুপারভাইজারের পরামর্শ ছাড়া যেসব কৃষক পাট চাষ করেছেন, তাঁদের ফসলই ভালো হয়েছে৷

আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে পাটের ফলন বাড়া বা কমার কি কোনো সম্পর্ক আছে?

এ ব্যাপারে তো বাংলাদেশ এক নম্বরে৷ আবহাওয়া যদি ভালো থাকে, তাহলে পাটের উৎপাদন ভালো হয়৷ আমাদের দেশে চৈত্র মাসে পাট চাষ শুরু হয়৷ চৈত্র মাসের ১২ তারিখ থেকে শুরু করে পুরো বৈশাখ পর্যন্ত দুই জাতের পাট চাষ করা হয়৷ চৈত্র মাসে যদি আমরা প্রকৃতির আশায় বসে থাকি, তাহলে অনেকে পানি পাই, অনেকে পাই না৷ আর মেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে যদি আমরা চাষ শুরু করি, তাহলে ফসল ভালো হয়৷ খর যদি বেশি থাকে, তাহলে মাটি ফেটে যায়৷ তখন পানির প্রয়োজন হয়৷ বৃষ্টির প্রয়োজন হয়৷ কোনো কোনো বছর দেখা গেছে দুই-তিন দিন খরা গেছে, এরপর বৃষ্টি পড়ে গেছে৷ তাহলে পাটের ফলনটা খুব ভালো হয়৷

পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে ,না কমছে?

যখন কৃষক পাটের রেটটা ভালো পায়, তখন তাঁদের আগ্রহ বেড়ে যায়৷

আর দাম কমে গেলে আগ্রহ কমে যায়?

হ্যাঁ, দাম কমে গেলে আগ্রহ কমে যায়৷

দাম কমে গেলে, চাষও কমে যায়৷ তখন তো দেখা যায় হুট করে দাম আবার বেড়ে যাচ্ছে?

বাংলাদেশে মোট পাট উৎপাদন যদি কম হয়, তাহলে দেখা যায় চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন রেটটা আবার বেড়ে যায়৷

পাটকে তো সোনালিআঁশ বলা হতো৷ এখন পাটের সেই দিন নেই কেন?

কৃষকরা পাট বাজারে নিয়ে ঠিকমতো দাম পায় না৷ কোনো কোনো সময় দেখা যায় নৌকায় করে বা ভ্যানে পাট বাজারে নিয়ে আবার ফেরত আনতে হয়েছে৷ ভালো দাম না পাওয়ার কারণে৷ এতে কিন্তু কৃষকের খরচ বেড়ে যাচ্ছে৷ এমন দাম বলে যা খরচের চেয়েও কম৷ তখন তো ফেরত আনতেই হয়৷ ভালো দাম না পেয়ে কৃষক হাটে গিয়ে পাটে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে এমন ইতিহাসও আনেক আছে৷ কয়েকটা বছর ধরে পাটের রেটও ভালো দিচ্ছে৷ এই কারণে পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ কিছুটা বাড়ছে৷ আর প্রতি বছরই সরকার কিছু প্রলোভন দেয় যে, আপনারা পাট চাষ করেন, আগামী বছর ভালো দাম দেয়া হবে৷ কিন্তু বাজারে যাওয়ার পর সেই দাম আর পাওয়া যায় না৷

পাটের ফলন বাড়াতে হলে আরো কি কি করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক ক্ষুদ্র চাষি, তাঁরা দরিদ্র৷ তাঁরা আসলে অর্থ সংকটেই বেশি ভোগে৷ তখন দেখা যাচ্ছে সময়মতো তাঁরা বীজ পাচ্ছে না, হাল (লাঙল বা ট্রাকটার) পাচ্ছে না, সার পাচ্ছে না, কীটনাকশক পাচ্ছে না, সেচ দিতে পারছে না৷ ফলে সময়মতো তাঁরা রোপনও করতে পারে না৷ ফলে তাঁদের আর আগ্রহ থাকে না৷

একজন পাট চাষি হিসেবে আপনি সরকারের কাছে কি চাইবেন?

আমি চাইব, পাট চাষের সময়ের আগেই যেন কৃষকের হাতে বীজ, সার, কীটনাশক পৌঁছে দেয়া হয়৷ তাঁর হাল আছে কিনা, চাষ করার মতো টাকা আছে কিনা, সেগুলো যেন সরকার খোঁজ নেয় এবং না থাকলে দেয়ার ব্যবস্থা করে সহযোগিতা করে৷ তাহলে একজন চাষি আগেভাগে উদ্যোগ নিতে পারে৷ এবং যখন বুঝবে, তাঁর চাষের সব ব্যবস্থাই হচ্ছে, তখন সে আরো বেশি উদ্যোগী হবে, আগ্রহী হবে৷ঃ

পাটচাষিদের দূরাবস্থা কেন? লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ