1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাঠ্যসূচিতে থাকবেন না কবিগুরু?

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৩০ জুলাই ২০১৭

মির্জা গালিব না-‌পসন্দ সংঘের৷ পাঞ্জাবের বিপ্লবী কবি পাসের কবিতাও অপছন্দ৷ এবার আপত্তি রবীন্দ্রনাথের চিন্তাদর্শেও! পাঠ্যপুস্তকে কাঁচি চালানোর জন্য লম্বা ফর্দ দাখিল করেছে আরএসএস-এর ছত্রছায়ায় থাকা এক সংগঠন৷

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ছবি: DW/M. Mamun

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ প্রভাবিত সংগঠন ‘শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস'-এর বক্তব্য, দশম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে রবীন্দ্রচিন্তার উল্লেখ করে জাতীয়তাবাদ এবং মানবতাবাদের মধ্যে বিভেদ দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং বা ‌‌এনসিইআরটি-র কাছে পাঁচ পাতার প্রস্তাব দিয়েছেন ন্যাসের প্রধান দীনানাথ বাত্রা৷ এনসিইআরটি-র বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যপুস্তক থেকে কী কী বাদ দিতে হবে, দেওয়া হয়েছে তার তালিকা৷ তার মধ্যে আছে রবীন্দ্রনাথও৷ আপত্তি রবীন্দ্রনাথের চিন্তাদর্শ নিয়ে৷ এমন উদ্ভট প্রস্তাব শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে আপামর বাঙালি-‌সহ বেশিরভাগ ভারতবাসী৷

‘দীনানাথ বাত্রার মতো অপদার্থকে দিয়ে এইসব কুকীর্তি করানো হচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতেই তুমুল হইচই বেধেছে ভারতের সংসদেও৷ রাজ্যসভায় বিরোধী দলের সাংসদদের অভিযোগ, ‘‌‘‌আজ পাঠ্যবই থেকে রবীন্দ্রনাথকে ছাঁটার চেষ্টা চলছে, কাল জাতীয় সংগীত ছেঁটে দেবে সরকার৷''

বাত্রার প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা করেছে সিপিএম৷ সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে একটি চিঠি লিখেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঋতব্রত জানান, ‘‌‘‌আসলে দীনানাথ বাত্রার মতো অপদার্থকে দিয়ে এইসব কুকীর্তি করানো হচ্ছে৷ স্কুল পাঠ্য থেকে শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নয়, মির্জা গালিব, কবি পাশের কবিতা বাদ দিতে হবে – এইসব সুপারিশ আগেও করেছেন দীননাথ, যা সমস্ত বাঙালি-‌সহ সমগ্র ভারতবাসীকে অপমানিত করেছে৷ রবীন্দ্রনাথকে অপমানের চেষ্টা বাঙালি কখনওই মেনে নেবে না৷''

প্রস্তাবে অনেক কিছু ছেঁটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন:

●‌ ১৯৮৪ সালের দিল্লি-দাঙ্গা নিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ২০০৫ সালে জাতির তরফে সংসদে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন বলে যে উল্লেখ রয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বইয়ে, তা বাদ দিতে হবে৷

●‌ বিজেপিকে হিন্দুত্ববাদী দল বলা হয়েছে যে অনুচ্ছেদে এবং সাভারকর ‘‌হিন্দুত্ববাদী'‌‌ শব্দটি চয়ন করেছিলেন বলে যে উল্লেখ রয়েছে, ছাঁটতে হবে তা৷

●‌ রামের জন্মস্থানে বাবরি মসজিদ তৈরি হয়েছিল বলে হিন্দুদের কারও কারও বিশ্বাস – এই উল্লেখ বাদ দিতে হবে৷

●‌ গোধরার ঘটনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ট্রেনে আগুন লেগেছিল, মুসলিমরা তা লাগিয়েছিল বলে সন্দেহ৷ দাবি, ‘‌লেগেছিল' বলার বদলে ‘‌লাগানো হয়েছিল'‌ লিখতে হবে, ‘‌সন্দেহ'‌ কথাটি বাদ দিতে হবে৷

●‌ হিন্দি পাঠ্যবই থেকে ভাইস-চ্যান্সেলর, ওয়ার্কার, পোশাক, ইলাকা, তাকত, ইমান, বদমাশ ইত্যাদি শব্দ বাদ দিতে হবে৷

●‌ বাদ দিতে হবে গালিবের পদ্য: ‘‌হামকো মালুম হ্যায় জন্নত কি হকিকত লেকিন/‌দিল কো খুশ রাখনে কো গালিব ইয়ে খেয়াল আচ্ছা হ্যায়৷'

●‌ বৈদিক-উত্তর যুগে মহিলাদের সাধারণত শূদ্রের তুল্য বলে দেখা হতো৷ তাই ছাঁটতে হবে এই উল্লেখ ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে৷

●‌ বর্ণাশ্রম ব্যবস্থায় জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণরা তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করত.‌.‌.‌.মহাভারতের মতো অনেক গ্রন্থ এই ধারণা মজবুত করেছে৷ দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে এটি বাদ দিতে বলা হয়েছে৷

●‌ মোগল শাসকদের উদার, প্রজা দরদি হিসেবে দেখানো নিয়েও আপত্তি তোলা হয়েছে৷

রাজধানী দিল্লিতে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চায় অগ্রনী ভূমিকা নেন বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তপন সেনগুপ্ত৷ তাঁর কথায়, ‘‌‘‌বিশ্বজুড়ে ভারতীয় সাহিত্য-‌সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ৷ কবিগুরুই দেশে প্রথম নোবেল এনেছেন৷ তাছাড়া জাতীয় সংগীত রচয়িতাকে অসম্মান করে গোটা দেশকে অপমান করা হচ্ছে৷ এমন অপচেষ্টার আঁচ পেলেই আমরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ব৷''

‘জাতীয় সংগীত রচয়িতাকে অসম্মান করে গোটা দেশকে অপমান করা হচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

‘‌শিক্ষা সংস্কৃতি উত্থান ন্যাস'‌-‌এর মাথায় আছেন সংঘের তাত্ত্বিক নেতা দীননাথ বাত্রা৷ আরএসএস-এর শাখা বিদ্যাভারতীর শীর্ষে ছিলেন আগে৷ শিক্ষা সংস্কারে বাত্রার তৎপরতা নিয়ে আগেও বিতর্ক হয়েছে৷ ন্যাসের সচিব অতুল কোঠারির কথায়, ‘‌‘শিশুদের দাঙ্গার কথা শিখিয়ে কী লাভ? বরং রাণা প্রতাপ, ছত্রপতি শিবাজির মতো মহান দেশনায়কদের জীবন বৃত্তান্তের কথা শেখানো উচিত৷''‌

‌গুজরাট-দাঙ্গায় প্রায় দু'হাজার মুসলিম ধর্মাবলম্বীর মৃত্যু হয়েছিল, এহেন তথ্যেও ঘোর আপত্তি সংগঠনের৷ তারা তা বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে৷ রাম মন্দির নির্মাণের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির যোগ আছে, এ রকম কোনো কথা থাকাও আপত্তিজনক৷

অভিযোগ, নিজেদের ইচ্ছে ও মতাদর্শ অনুযায়ী স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানের পাঠ দিতে চাইছে সংঘ৷ হাত দিতে চাইছে সাহিত্য-রুচিতেও৷ তবে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাওড়েকর বলেছেন,‌ ‘‌‘‌রবীন্দ্রনাথকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়া হবে, এমন কোনো চিন্তা সরকারের নেই৷ কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান অটুট আছে সরকারের৷ তাছাড়া অশান্তি হতে পারে এমন কিছুতে সরকারের সায় নেই৷'‌'‌ মন্ত্রীর এই বক্তব্য শোনার পর তাঁকে কবিগুরুর লেখা তিনটি বই উপহার দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'‌ব্রায়েন৷

বন্ধু, ভারত কি ক্রমশই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে? জানান নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ