পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র হাতে তুলে নেবে বলে হুমকি দিলেন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তীব্র প্রতিবাদ পানামার।
বিজ্ঞাপন
রোববার ট্রাম্প অ্যারিজোনায় সমর্থকদের কাছে বলেছেন, ''পানামা এই খালে যাতায়াতের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলির কাছ থেকে অত্যাধিক অর্থ নিচ্ছে।''
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এই খালকে 'ভুল হাতে' যেতে দেবেন না। তিনি চীনের কাছ থেকে সম্ভাব্য বিপদের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।
অ্যারিজোনার ইভেন্টের পর তিনি তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্য়ালে অ্যামেরিকা পতাকার একটা ছবি-সহ মন্তব্য পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ''যুক্তরাষ্ট্রের খালে আপনাকে স্বাগত।''
অ্যামেরিকা ফেস্ট-এ ট্রাম্প বলেছেন, ''কেউ কি পানামা খালের কথা শুনেছেন? আমরা এই খালকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছি।"
ট্রাম্প বলেছেন, ''পানামা খাল একসময় অ্যামেরিকার হাতে ছিল। কয়েক দশক আগে তা পানামা ও ওই দেশের মানুষের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে বেশ কিছু শর্ত ছিল।''
ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প যে সিদ্ধান্ত নিতে চান
প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হওয়ার পর প্রথম টিভি সাক্ষাৎকারে ডনাল্ড ট্রাম্প জানালেন, তিনি এখন কী কী সিদ্ধান্ত নিতে চান।
ছবি: Nbc News/ZUMA Press Wire/picture alliance
একগুচ্ছ পরিবর্তন
আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে তিনি জানিয়েছেন তিনি দেশের ভিতরে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একগুচ্ছ পরিবর্তন আনবেন। তার একাধিক সিদ্ধান্তের ফল সুদূরপ্রাসারী হতে পারে।
ছবি: Nbc News/ZUMA Press Wire/picture alliance
অ্যামেরিকায় জন্মালেই নাগরিকত্ব নয়
এনবিসি টেলিভিশনে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবেন। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মালেই কেউ নাগরিক হওয়ার অধিকার পাবেন না। মার্কিন সংবিধান এই অধিকার দিয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের মতে, এটা একটা অর্থহীন ব্যবস্থা। তিনি প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়ে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করবেন।
ছবি: Thibault Camus/AP Photo/picture alliance
অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো
ট্রাম্প বলেছেন, এটা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু এটা করা দরকার। বেআইনিভাবে অভিবাসন-প্রত্যাশীরা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতেও প্রস্তুত।
ছবি: Heather Khalifa/AP Photo/picture alliance
বাণিজ্যিক মাসুল নিয়ে
ট্রাম্প জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে যে সব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকছে, সেগুলির উপর চড়া হারে মাসুল বসানোর বিষয়টি নিয়ে তিনি এখনই কিছু বলবেন না। ট্রাম্পের বক্তব্য, ''আমি কোনো গ্যারান্টি দিতে পারছি না। আগামিকালও কোনো গ্যারান্টি দিতে পারব না।''
ছবি: Brandon Bell/Pool via REUTERS
ক্যাপিটল নিয়ে
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ২০২১ সালে ক্যাপিটলে যারা ঢুকে পড়েছিল এবং শাস্তি পয়েছে, ক্ষমতায় আসার পরেই তাদের দ্রুত ক্ষমার প্রক্রিয়া শুরু করে দেবেন। ট্রাম্পের কয়েকশ সমর্থক এখন বন্দি আছেন। তাদেরই ক্ষমা করার কথা বলেছেন ট্রাম্প।
ছবি: Stephanie Keith/Getty Images
গর্ভধারণ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ
গর্ভধারণ ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি গর্ভপাতের ওষুধের উপর নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টা করবেন না।
ছবি: FREDERIC J. BROWN/AFP
ইউক্রেনকে সাহায্য়ের পরিমাণ কমবে
গত শনিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। রোববার তিনি বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটা চুক্তি করতে চাইছে। ট্রাম্প পুটিনকে অনুরোধ করেছেন, তিনি যেন যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্য়োগাী হন। আরেকটি প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, খুব সম্ভবত তিনি ইউক্রেনকে দেয়া সাহায্য়ের পরিমাণ কম করবেন।
ছবি: Ludovic Marin/AFP via Getty Images
ন্য়াটোয় থাকা নিয়ে
ট্রাম্প এর আগে একাধিকবার ন্যাটোর সমালোচনা করেছেন। এখন তিনি বলেছেন, ন্যাটোর সব সদস্য দেশ যদি তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ খরচ করে, সবাইকে পরিবারের অংশ মনে করে, অ্যামেরিকার সঙ্গে ন্যায্য ব্যবহার করে, তা হলে ঠিক আছে, না হলে তিনি ন্যাটো থেকে বেরিয়ে আসার কথা ভাববেন।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Arriens
8 ছবি1 | 8
ট্রাম্পের হুমকি, ''যদি নৈতিক ও আইনগত দিক থেকে এই সিদ্ধান্তের মর্যাদা রাখা না হয়, তাহলে আমরা দাবি করব, পানামা খাল দ্রুত, এবং কোনো প্রশ্ন না তুলে আমাদের দিয়ে দেয়া হোক।''
পানামার প্রতিক্রিয়া
পানামার প্রেসিডেন্ট জোস রাউল মুলিনো একটি রেকর্ড করা বার্তায় বলেছেন, ''পানামার স্বাধীনতা নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না। আর এই খালের নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনের ক্ষেত্রে চীনের কোনো প্রভাব নেই।''
তিনি জানিয়েছেন, ''পানামা খালে জাহাজ চলাচলের রেট যে বাড়ানো হয়েছে, তা মর্জিমাফিক নয়। তবে হংকং ভিত্তিক হ্যাচিসন হোল্ডিং বহুদিন ধরে ক্যারিবিয়ান ও প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে পানামা খালে ঢোকার মুখে দুইটি বন্দর ম্যানেজ করে।''
মার্কিন নিয়ন্ত্রণে ছিল
অ্যামেরিকা এই খাল কেটেছিল এবং বহু দশক ধরে তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও পানামা একটি চুক্তিতে সই করে। তার ফলে খাল পানামার নিয়ন্ত্রণে যায়। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তা দুই দেশের যৌথ নিয়ন্ত্রণে ছিল। তারপর তা পুরোপুরি পানামার নিয়ন্ত্রণে আসে।
মুলিনো এক্স-এ লিখেছেন, ''পানামা খাল ও তার আশপাশের এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি জমি পানামার।''
ট্রাম্প তার জবাবে বলেছেন, ''সেটা এবার আমরা দেখব।''
এই জলপথ ব্যবহার করে বছরে ১৪ হাজার জাহাজ যাতায়াত করে। মার্কিন গাড়ি ও অন্য বাণিজ্যিক জিনিস আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে এই খালের গুরুত্ব বিশাল।
এটা এখনো স্পষ্ট নয়, ট্রাম্প কী করে এই খালের নিয়ন্ত্রণ নিতে চান। তিনি যদি এই চেষ্টা করেন,তাহলে তা আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী হবে।