কর ফাঁকি দেয়া বড়লোক এবং নামকরা রাজনীতিবদদের নতুন এক তালিকা প্রকাশ হয়েছে৷ সাংবাদিকরা ১৩ দশমিক চার মিলিয়ন গোপন নথি ঘেঁটে বের করেছেন তাদের নাম৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির গণমাধ্যম রবিবার জানিয়েছে যে, বিশ্বের ৬৭টি দেশের চারশ'র মতো সাংবাদিক কয়েক মিলিয়ন গোপন নথি ঘেঁটে বেশ কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিবিদ এবং বড়লোকের নাম খুঁজে পেয়েছে৷ জার্মানির স্যুড ডয়েচে সাইটুং পত্রিকা এসব গোপন নথি সংগ্রহে সক্ষম হয়৷ মূলত অফসোর ল ফার্ম অ্যাপলবাই, যেটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বারমুডায়, থেকে এসব তথ্য ফাঁস হয়েছে৷ ফার্মটির বিভিন্ন জায়গায় অফিস রয়েছে৷
ফাঁস হওয়া এ সব নথির নাম দেয়া হয়েছে প্যারাডাইস পেপার্স৷ এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভা এবং রাশিয়ার বিভিন্ন ফার্মের মধ্যে সম্পর্কের কিছু প্রমাণও পাওয়া গেছে৷
দুর্নীতিগ্রস্ত সব বিশ্বনেতারা
দুর্নীতি, ঘুস ও ক্ষমতার অপব্যবহার৷ চলুন জেনে নেয়া যাক, গত কয়েক বছরে কোন কোন বিশ্বনেতার বিরুদ্ধে এ সব অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Peres
লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা, ব্রাজিল
লুলার বিরুদ্ধে অভিযোগ দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের৷ ঘুস গ্রহণের মামলায় আগেই সাড়ে নয় বছরের জেল হয়েছিল৷ তবে ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা লুলা আপিল করেছিলেন৷ শুক্রবার তাঁকে কুরিচিবা শহরের পুলিশ সদরদপ্তরে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন ব্রাজিলের ফেডারেল বিচারক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Peres
পার্ক জিউন-হাই, দক্ষিণ কোরিয়া
২০১৬ সালে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন পার্ক জিউন-হাই৷ চাঁদাবাজি, ঘুস ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা শুরু হয়েছিল তারপর৷ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ২৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত৷
ছবি: Getty Images/A.Young-Joon
ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ দে কির্সনের, আর্জেন্টিনা
প্রথমে ফার্স্ট লেডি এবং পরে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট (২০০৭ থেকে ২০১৫) হওয়া ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ কির্শনার ২০১৬ সালে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন৷ পছন্দের ঠিকাদার কোম্পানিকে সরকারি নির্মাণ কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে, যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন৷ তিনি রাজনীতিতে ফিরে আসতে চাইছেন৷ কেউ কেউ বলছেন, তিনি এলে এসব অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. La Valle
ইহুদ ওলমের, ইসরায়েল
২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ওলমের ২০১৪ সালে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন৷ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর জেল হয়৷ অবশ্য পরের বছরেরর জুলাই মাসে ছাড়াও পেয়ে যান৷ জেলে যাওয়া ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে তিনিই প্রথম৷ পরে তাঁকে অনুসরণ করেন বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু৷
ছবি: Reuters/O. Zwigenberg
আদ্রিয়ান নাসটাসে, রোমানিয়া
তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ২০১২ সালে এবং এরপর দু’বছরের জন্য জেলও খাটেন৷ রোমানিয়ান রেভোলিউশনের পরের ২৩ বছরে তিনিই প্রথম কোনো সরকার প্রধান, যাঁকে জেলের ভাত খেতে হয়েছে৷ আদ্রিয়ান নাসটাসে রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত৷
ছবি: Getty Images/AFP/
চার্লস জি. টেলর, লাইবেরিয়া
নব্বইয়ের দশকে সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধের সময় নৃশংস কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে ২০১২ সালে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত৷ ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের পর প্রথম আন্তর্জাতিক কোনো ট্রাইব্যুনালে বিচার হওয়া কোনো রাষ্ট্রপ্রধান টেলর৷ ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. van Weel
6 ছবি1 | 6
শুধু রাজনীতিবিদরা নন, নাইক, অ্যাপল, উবার এবং ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানও করের হার কমাতে বিভিন্ন ‘শেল কোম্পানি' ব্যবহার করছে৷ স্যুড ডয়চে সাইটুং পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রক স্টার বোনো, ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ টু'সহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তিও ব্যক্তিগত সম্পদ লুকাতে ‘অফশোর ফান্ড' ব্যবহার করেছেন৷ এখন অবধি ৪৭টি দেশের ১২০ জনের বেশি রাজনীতিবিদের নাম নতুন তালিকায় রয়েছে৷
অর্থনীতিবিদ গার্বিয়েল স্যুখমান জার্মান পত্রিকাটিকে বলেন যে, ‘‘বিশ্বের অভিজাত ব্যক্তিরা ৭ দশমিক নয় ট্রিলিয়ন ইউরো ‘অফসোর ট্যাক্স হ্যাভেনে' জমা করে রেখেছেন৷''
এতে দেখা গেছে, মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রী উইলবার রসের সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের যোগাযোগ রয়েছে৷ স্যুড ডয়েচে সাইটুং পত্রিকায় লেখা হয়েছে, ‘‘বিলিয়নিয়ার রস রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করে অর্থ আয় করেছেন৷ আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় বসার পরও তাতে কোনো পরিবর্তন এসেছে মনে হয় না৷''
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রস ওসেন ফ্রেইট কোম্পানি নেভিগেটরের অন্যতম শেয়ার হোল্ডার যেটি ২০১৪ সাল থেকে রাশিয়ার এনার্জি গ্রুপ সিবুর সঙ্গে ৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য করেছে৷ রস ছাড়াও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এক ডজনের বেশি মানুষের নাম প্রকাশিত তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে৷