শিল্পকলা কি শুধু হাতে গোনা কিছু বুদ্ধিজীবীর জন্য সীমিত থাকা উচিত? ফ্রান্সের এক গোষ্ঠী বিনামূল্যে পানির উপর চোখ ধাঁধানো শো মঞ্চায়ন করে শিল্পকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সের নাট্যদল ইলোটোপি প্যারিস শহরের কাছে ‘মার্ন’ নদীর উপর ‘আকোয়া ফর্ট’ নামের শো পরিবেশন করছে৷ উদ্ভট স্বপ্নময় জগৎকে মঞ্চে উপস্থাপন করতে যে পানির প্রয়োজন হয়, তা এখানেই আছে৷
দর্শকদের মধ্যে কেউ বলেন, কখনো এমন অসাধারণ অভিজ্ঞতা হয়নি৷ রংয়ের বর্ণচ্ছটা পরস্পরের সঙ্গে মিশে গেলেও এক অসাধারণ সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরছে৷ শিশুরাও আলো ও আগুনের খেলা দেখে মুগ্ধ৷ শো-র পরিবেশ স্বপ্নের মতো৷
‘আকোয়া ফর্ট’ শো আসলে এক ব্যক্তির কাহিনি, একদিন সকালে যাঁর দৈনন্দিন জীবন ওলটপালট হয়ে গেছে৷ তিনি যা-ই ভাবছেন বা পড়ছেন, আচমকা তা বাস্তবে পরিণত হচ্ছে৷ ইলোটোপি গোষ্ঠীর নাট্য পরিচালক দোমিনিক নোয়েল বলেন, ‘‘আমাদের শো-তে সমাজের এমন এক দৃষ্টিকোণ তুলে ধরা হয়, যা একই সঙ্গে কাব্যময় ও সমালোচনামূলক৷’’
৩০ সদস্যের এই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রযুক্তিবিদ, সংগীতশিল্পী, অভিনেতা ও অ্যাক্রোব্যাট শিল্পী রয়েছেন৷ ২০০৪ সাল থেকে এই গোষ্ঠী পানির উপর শো করে আসছে৷ দোমিনিক বলেন, ‘‘পানির উপর শো তার নিজস্ব গুণেই বেশ জমকালো হয়ে ওঠে৷ পানির সঙ্গে সবারই কোনো যোগাযোগ রয়েছে৷ দর্শকদের থিয়েটার হলের তুলনায় পানির কাছে আনাও তুলনামূলকভাবে সহজ৷ পানির ব্যাপ্তি ও গভীরতার কারণে এমন এক মাত্রা পাওয়া যায়, থিয়েটার হলে যা সম্ভব নয়৷’’
ভিন্নভাবে নাটকের উপস্থাপন
04:30
তবে পানির উপর মঞ্চায়ন বিশাল চ্যালেঞ্জও বটে৷ এই অংশে নদীর স্রোত রয়েছে৷ অভিনেতারা ভাসমান দ্বীপের উপর দাঁড়িয়ে অভিনয় করেন৷ গোটা প্রক্রিয়া তাই আগেই পরীক্ষা করে দেখতে হয়৷ কিছু দ্বীপে নৌকার ইঞ্জিন বসানো রয়েছে, অন্যগুলি ব্যাটারিতে চলে৷ পা দিয়ে দ্বীপগুলি চালনা করা হয়৷
ফরাসি অভিনেতা ভ্যাঁসঁ স্যাঁ লুব্যার এই শো-তে তিন-তিনটি ভূমিকায় অভিনয় করেন৷ তাঁকে দেখলে মনে হয়, তিনি যেন পানির উপর সাইকেল চালাচ্ছেন৷ ভ্যাঁসঁ বলেন, ‘‘আলোকসজ্জা এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করি৷ সঙ্গে আরো কস্টিউম থাকে, নাটকের সময় পানির উপরই জামাকাপড় বদলাতে হয়৷ সামনে ও পেছন দিকে যেতে স্টিয়ারিংয়ের সঙ্গে অ্যাক্সিলারেটরও রয়েছে৷ তবে একই সঙ্গে শো-র বাকি অভিনেতাদের গতিবিধির উপরেও নজর রাখতে হয়৷’’
ইলোটোপি গোষ্ঠী শুধু পানির উপর নয়, সাধারণ নাটকের মঞ্চেও সক্রিয় রয়েছে৷ তাছাড়া রাজপথ ও নানা উন্মুক্ত জায়গায়ও তারা নাটক পরিবেশন করে৷ ইলোটোপির প্রতিষ্ঠাতা ও শো-র পরিচালক ব্রুনো শ্নেবেল্যাঁর কাছে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি বলেন, ‘‘শিল্পকলা সবার নাগালে নিয়ে আসাই ছিল মূল আইডিয়া৷ পুরানের গল্প উন্মুক্ত জায়গায় পরিবেশন করতে চেয়েছিলাম৷ সবার কাছে শিল্প পৌঁছে দেওয়া সম্ভব, কারণ তা বিনামূল্যে করা হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে আমরা শুধু বুদ্ধিজীবী নয়, সবার কাছে পৌঁছতে পারছি৷ এমনকি যারা থিয়েটার দেখতে যান না, তাঁদেরও কাছে পাচ্ছি৷’’
‘আকোয়া ফর্ট’ শুধু হালকা মেজাজের রঙিন শিল্পসৃষ্টি নয়৷ সমুদ্রের উপর শরণার্থীদের পরিস্থিতির মতো সমসাময়িক বিষয়গুলিও তাতে উঠে আসে৷
কিয়র্স্টিন শুমান/এসবি
ঢাকার জনপ্রিয় মঞ্চ নাটক
বাংলাদেশে মঞ্চ নাটকের রয়েছে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য, অসংখ্য গুণী টেলিভিশন-চলচ্চিত্র অভিনয় শিল্পী এসেছেন এখান থেকে৷ ঢাকায় বিভিন্ন সময়ে মঞ্চস্থ হওয়া জনপ্রিয় কিছু নাটকের কথা থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M. Rahman
রক্তকরবী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ নাটক ঢাকার মঞ্চে এনেছিল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন আতাউর রহমান। নাটকটি এখনো জনপ্রিয়, নিয়মিত মঞ্চস্থ হচ্ছে ঢাকার মঞ্চে।
ছবি: DW/M. Rahman
নূরলদীনের সারাজীবন
সৈয়দ শামসুল হক রচিত নাটকটি সর্বপ্রথম মঞ্চে আসে ১৯৮২ সালে৷ আলী যাকেরের নির্দেশনায় নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ করে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়। ইতিহাসের কৃষক বিদ্রোহের নেতা নূরলদীনের জীবন চেতনা নিয়ে নির্মিত এ নাটকের কাহিনী।
ছবি: Nagorik Natya Sampraday
বিচ্ছু
ফরাসি নাট্যকার মলিয়রের এই নাটক ১৯৯১ সালে মঞ্চে আনে নাট্যকেন্দ্র৷ নাটকটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন তারিক আনাম খান। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ঢাকায় নিয়মিত মঞ্চস্থ হয়েছে নাটকটি। পরে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু প্রদর্শনী হয়েছে।
ছবি: Natya Kendra
কঞ্জুস
লোক নাট্যদলের দর্শকনন্দিত নাটক ‘কঞ্জুস’। ফরাসি নাট্যকার মলিয়ের ‘দ্য মাইজার’-এর অনুবাদ করে নাট্যরূপ দিয়েছেন তারিক আনাম খান৷ নাটকের নির্দেশনায় ছিলেন লিয়াকত আলী লাকী৷ গত ৩০ বছর ধরে নাটকটি নিয়মিতভাবে মঞ্চস্থ হয়ে আসছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ৭০০তম প্রদর্শনী হয়েছে এই নাটকের৷
ছবি: Lok Natya Dol
যৈবতী কন্যার মন
নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ‘যৈবতী কন্যার মন’ নাটকটি মঞ্চে এনেছিল ঢাকা থিয়েটার। এর নির্দেশনা দিয়েছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। ২০০২ সাল পর্যন্ত নাটকটির নিয়মিত মঞ্চায়ন হয় ঢাকায়।
ছবি: Dhaka Theater
বিনোদিনী
ঢাকার ‘মঞ্চকমল’ হিসেবে পরিচিত শিমুল ইউসুফের অনবদ্য অভিনয়ে বাংলাদেশে দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে নাটক ‘বিনোদিনী’৷ ঢাকা থিয়েটারের ৩১তম প্রযোজনা এটি৷ ‘বিনোদিনী দাসী’র আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার কথা’ ও ‘আমার অভিনয় জীবন’-এর আলোকে এ নাটকের নাট্যরূপ দিয়েছেন সাইমন জাকারিয়া। নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু।
ছবি: Dhaka Theater
দেওয়ান গাজীর কিসসা
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের এ নাটক সর্বপ্রথম মঞ্চে আসে ১৯৭৭ সালে। বের্টল্ড ব্রেশটের মূল নাটকটির রূপান্তর ও নির্দেশনায় ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। নাটকের কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র দেওয়ান গাজী ও মাখন চরিত্রে অভিনয় করেন আলী যাকের ও আবুল হায়াত৷
ছবি: Nagorik Natya Sampraday
বেহুলার ভাসান
বেহুলা লখিন্দর উপাখ্যান অবলম্বনে নাটক-চলচ্চিত্র হয়েছে ঢের৷ তবে ‘বেহুলার ভাসান’ নামে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ৷ তাঁর নির্দেশনায় ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডলে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়।
ছবি: DW/M. Rahman
ম্যাকবেথ
উইলিয়াম শেকসপিয়ারের এই ট্রাজেডি মঞ্চে এনেছে পদাতিক নাট্য সংসদসহ একাধিক নাট্যদল৷ বহুল আলোচিত এই নাটকও মঞ্চায়ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ৷ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইস্রাফিল শাহিনের নির্দেশনায় ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমণ্ডলে তাদের প্রথম মঞ্চায়ন হয়৷ শিক্ষার্থীদের পরিবেশনারই ছবি এটি৷
ছবি: DW/M. Rahman
কথা ৭১
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে লেখা ‘কথা ৭১’ নাটকটি মঞ্চে এনেছিল ঢাকা পদাতিক৷ কুমার প্রীতিশ বলের লেখা এই নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ।
ছবি: DW/M. Rahman
সময়ের প্রয়োজনে
শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের ছোট গল্প অবলম্বনে ‘সময়ের প্রয়োজনে’ নাটকটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ বারী। নাটকটি প্রথম মঞ্চে আসে ২০০৫ সালে। এ নাটকটিও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক।
এ নাটকটি মঞ্চে এনেছে ঢাকা পদাতিক। দেশের মৎস্যজীবীদের কঠিন জীবনসংগ্রামের গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে নাটকের কাহিনি। নাটকটি রচনা করেছেন হারুন অর রশীদ এবং নির্দেশনা দিয়েছেন নাদের চৌধুরী।