পানির স্রোত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে মৌলিক গবেষণা যে বাস্তব জগতের জন্যও কতটা জরুরি, সাম্প্রতিক গবেষণা তা দেখিয়ে দিচ্ছে৷ রাসায়নিক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে অন্য অনেক জরুরি পরিস্থিতিতে তা কাজে লাগতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
ড্রেসডেন শহরের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানীরা একটি বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন৷ টেবিল টেনিস বল ব্যবহার করে তাঁরা জানতে চান, পানির স্রোত কোনো বাধা অতিক্রম করতে চাইলে ঠিক কী হয়৷ ফ্লো প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রো. ইয়খেন ফ্র্যোলিশ বলেন, ‘‘আমাদের আগ্রহ এমন সব জটিল বিষয় নিয়ে, যা উত্তাল স্রোতের মধ্যে দেখা যায়৷ সেই স্রোতের সঙ্গে অন্য কোনো বস্তুর ইন্টার-অ্যাকশনের ফলে যা ঘটে, তার কিছু নমুনা আমরা দেখেছি৷''
তথাকথিত ‘বাবল কলাম' বা বুদবুদের স্তম্ভ শিল্পক্ষেত্রেও প্রায়ই কাজে লাগানো হয়৷ কারণ পানির বুদবুদ রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে নতুন পদার্থ তৈরি করতে সাহায্য করে৷ প্রো. ফ্র্যোলিশ বলেন, ‘‘বুদবুদ যখন উপরে ওঠে, তখন আমরা তার গতিপথ লক্ষ্য করে দেখতে পারি, যে সেটি আঁকাবাঁকা পথে এগিয়ে যায়৷ তার উপর বসে উপরে উঠতে থাকলে মনে হবে, আমি যেন এয়ারস্ট্রিম দেখতে পাচ্ছি৷ একটু অন্যরকম হলেও পানির স্রোতের ক্ষেত্রেও প্রায় একই পরিস্থিতি দেখা যায়৷ একটি চেবিল টেনিস বল স্রোতের সঙ্গে উপরে উঠে আসে৷ স্রোত ও বলের গতিশীল চরিত্রের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আমরা আরও তথ্য সংগ্রহের আশা করছি৷''
বুড়িগঙ্গায় দূষণ: শত্রু কারা কারা?
২২শে মার্চ ছিল বিশ্ব পানি দিবস৷ সবার কাছে সুপেয় পানি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই দিনটি উদযাপিত হয়৷ অথচ বিশ্বে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি কমছে পানির সরবরাহ৷ তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পরিবেশ দূষণ৷ ঠিক যেমনটা ঘটছে বুড়িগঙ্গা নদীতে...
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা নদী
একসময় মহানগরীর প্রাণ হিসেবে গণ্য হতো বুড়িগঙ্গা নদী৷ কিন্তু এই শহরের শিল্প আর মানব বর্জ্য সরাসরি এ নদীতে নির্গমনের ফলে নদীটি পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে৷ এই ছবিটি শহরের বাবুবাজার সেতু থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
নোংরা গন্ধযুক্ত পানি
ব্যবহারের অনুপোযোগী হলেও মানুষের হাত-পা বাঁধা৷ তাই বুড়িগঙ্গা নদীর নোংরা, গন্ধযুক্ত পানির ওপর দিয়েই খেয়াপার হচ্ছেন কর্মজীবী মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
গরিব মানুষের বাস
ঢাকার এই এলাকায় বাড়ি ভাড়া কম হওয়ায় নদীর ওপারের কেরানীগঞ্জ এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি৷ ছবিটি সদরঘাট এলাকা থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
পানিতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণ
বুড়িগঙ্গা আজ যেন সত্যিই বুড়ি হয়ে গেছে৷ নদীতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে বুড়িগঙ্গার পানির রং এখন কুচকুচে কালো, আর দুর্গন্ধযুক্ত৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূষণের কারণে বেড়েছে ঘনত্ব
বুড়িগঙ্গার দূষিত পানির উপর দিয়ে জাহাজ চলার পরের দৃশ্য এটি৷ কি ভয়াবহ! আসলে দূষণের কারণে পানির ঘনত্ব বেড়ে গেছে বুড়িগঙ্গার৷
ছবি: DW/M. Mamun
নদীতে লঞ্চ চলাচল
দূষণের এই ভয়াবহ মাত্রার পরও বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে চলছে লঞ্চ৷ জিনিস-পত্র পারাপার তো বটেই, নদী পথে যে এখনও পার হচ্ছে মানুষ৷ ছবিটি কামরাঙ্গীরচর থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
রাসায়নিকের বস্তা পরিষ্কার
বুড়িগঙ্গার পানিতে রাসায়নিকের বস্তা পরিষ্কার করছেন শ্রমিকরা৷ তাঁদের কি আর কোনো উপায় নেই? তাঁরা কি আদৌ জানেন এর পরিবেশগত প্রভাব? সরকারই বা নিরব কেন?
ছবি: DW/M. Mamun
ধোপাদেরও প্রয়োজন নদী
বুড়িগঙ্গার দূষিত জলেই কাপড় ধোয়ায় ব্যস্ত ধোপারা৷ এ সব কাপড়ের বেশিরভাগই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহৃত বিছানার চাদর, ডাক্তারদের অ্যাপ্রন, অপারেশন থিয়েটার বা ওটি-তে পড়ার ড্রেস ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ধোয়া কাপড়
বুড়িগঙ্গা নদীর দূষিত জলে ধোয়া কাপড় এবার মেলে দেওয়া হয়েছে৷ নদীর পাড়েই শুকানো হচ্ছে এগুলি৷ ছবিটি কামরাঙ্গীরচর থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্জ্য মিশছে সরাসরি
ঢাকা শহরের সুয়ারেজের লাইন থেকে সরাসরি বর্জ্য মিশছে বুড়িগঙ্গা নদীর জলে৷ এমন দশা চলতে থাকলে অচিরেই যে অন্ধকার নেমে আসবে – তা বলাই বাহুল্য৷ শহরের বাবুবাজার সেতুর নীচ থেকে তোলা এ ছবিটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূষণের অন্যতম কারণ ট্যানারি
বুড়িগঙ্গার পানি দূষণের অন্যতম কারণ ট্যানারি শিল্পর বর্জ্য৷ ঢাকার হাজারীবাগে বেশ কিছু ট্যানারি শিল্প থাকলেও কারুরই নেই বর্জ্য শোধনাগার৷ তাই এ সব ট্যানারির রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্য সরাসরি গিয়ে মিলে বুড়িগঙ্গায়৷ গত এক যুগ ধরে ঢাকার বাইরে ট্যানারি শিল্পের জন্য আলাদা জায়গা দেওয়া হলেও, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ট্যানারি মালিরা কারখানাগুলো স্থানান্তর করছেন না৷
ছবি: DW/M. Mamun
শুধু দূষণই নয়...
শুধু দূষণেই থেমে নেই বুড়িগঙ্গা৷ আছে দখলও৷ দূষণ আর দখলে থেমে যেতে বসেছে বুড়িগঙ্গার গতিপথ৷ কামরাঙ্গীরচরে বুড়িগঙ্গা যেন এখন মরা খাল!
ছবি: DW/M. Mamun
আর এক শত্রু প্লাস্টিক
শিল্প আর মানব বর্জ্য ছাড়াও বুড়িগঙ্গা দূষণের আরেক অংশীদার প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্য৷ প্রতিদিন প্রচুর প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য মিশছে বুড়িঙ্গার জলে৷ এ ছবিটি বাদামতলী থেকে তোলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
13 ছবি1 | 13
বিজ্ঞানীরা বালুর মতো কঠিন পদার্থ নিয়ে অত্যন্ত জটিল মডেল তৈরি করছেন৷ তাঁদের গবেষণার লক্ষ্য হলো নদী ও হ্রদের পানির নীচে যে সব ‘সেডিমেন্ট' বা তলানি চলাচল করে, সে বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা৷ এমনকি পানির নীচে অ্যালজি চলাচল ও তাদের প্রতিক্রিয়ারও পূর্বাভাষ দেওয়া সম্ভব৷ প্রো. ফ্র্যোলিশ বলেন, ‘‘এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তেই খুঁটিনাটি বিষয়গুলি বাদ দেওয়া হয়েছে৷ ভেবে দেখুন, পানির মধ্যে যে অ্যালজি তার পাতা ও কাণ্ড আছে, তার একটা আকার আছে, বেশ জটিল জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য আছে৷ সেই সব বিষয় বাদ দিয়ে আমরা শুধু মৌলিক বিষয়টি পরীক্ষা করছি৷''
সাগরে শিক্ষা ট্যুর
এটা একটি বিশেষ ধরনের বিদেশ ভ্রমণ৷ সারা জার্মানি থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা অ্যাটলান্টিকের বুকে কাটায় দীর্ঘ ছয় মাস৷ সেখানে তারা বিদেশি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে৷ জাহাজেই চলে এই ক্লাস৷ এমনকি জাহাজটিও চালায় তারা নিজেরাই৷
ছবি: KUS-Projekt
‘টোর হায়ারডাল’
গত প্রায় ২৫ বছর যবত তিন-তিনটি মাস্তুল বিশিষ্ট ‘টোর হায়ারডাল’ নামের এই জাহাজ যুব শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের সাগরের ওপর দিয়ে নিয়ে গেছে বিশ্বের নানা দেশে৷ ২০০৮ সাল থেকে এই জাহাজটি অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ‘সাগরে ক্লাসরুম’ নামের এই প্রজেক্টটির জন্য ‘রিজার্ভ’ করা থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য প্যাকিং
মোট ১৯০ দিন সাগরে বসবাস, কাজেই সবকিছু সাথে নিতে হয়৷ বলা বাহুল্য তার মধ্যে খাবার-দাবার অন্যতম৷ ভ্রমণের চারদিন আগে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নতুন ‘বাড়ি’, মানে এই জাহাজে সব জিনিস-পত্র তোলার ব্যাপারে একে-অন্যকে সাহায্য করে থাকে৷
ছবি: KUS-Projekt
আনন্দদায়ক এক জাহাজ
জার্মানির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ৩৪ জন ছাত্র-ছাত্রী ইটালির বিশিষ্ট নাবিক ক্রিস্টোফার কলোম্বাস এবং বিশ্বখ্যাত আবিষ্কারক আলেক্সান্ডার ফন হুমবোল্ড-এর পথ অনুসরণ করছে৷ ছবিতে দেখুন, কেমন করে তারা জার্মানির কিল শহর থেকে বিভিন্ন চ্যানেলের ভেতর দিয়ে ঢুকে পড়ছে নতুন জগতে৷
ছবি: KUS-Projekt
প্রথম দিন
সুন্দর আবহাওয়া, সাগরের জল শান্ত – ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি এমন একটি দিনে শিক্ষার্থীরা সমুদ্র পথে যাত্রা শুরু করে৷ তারা উত্তর সাগরের একটি চ্যানেলের মধ্যে দিয়ে থেকে ইংলিশ চ্যানেল এবং স্পেনের বিস্কায়া হয়ে টেনেরিফা পর্যন্ত পাড়ি দেয়৷
ছবি: KUS-Projekt
পাহাড়ের ছায়ায় ক্লাস
টেনেরিফার সেন্ট ক্রুজে জাহাজটি প্রথম এসে নাঙর ফেলে৷ সেখানে অতিথি বা ‘হোস্ট’ পরিবারে রাত কাটানোর পর শিক্ষার্থীরা স্পেনের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় ‘পিকো ডেল টেইডে’-র চূড়ায় ওঠতে থাকে৷ পথেই ওদের জীববিদ্যার ক্লাস হয়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাগরের অনুভূতি
অ্যাটলান্টিক মহাসাগর বা অতলান্ত সাহর পার হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের নিজেদের অনেকটা নাবিকদের মতোই লাগে৷ জাহাজ ক্রু’র নির্দেশনায় জাহাজের সমস্ত কাজ ছাত্র-ছাত্রীরাই করে৷ এমন কি রান্না এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজও৷
ছবি: KUS-Projekt
যথেষ্ট হয়েছে রোদ আর পামগাছ দেখা
ক্যারিবিকে পৌঁছানোর পর আনন্দ যেন আর ধরে না তাদের! দীর্ঘ ২৪ দিন সাগরে কাটানোর পর এই সবুজ দ্বীপে নাঙর ফেলে এবং এত সুন্দর একটা সমুদ্রসৈকত দেখে শিক্ষার্থীদের মন ভরে যায়৷ এমনটাই তো আশা করেছিল তারা! স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে আলহামরা-খ্যাত গ্রানাডা শহরেও হোস্ট পরিবার বাড়িতে ওরা রাত কাটায়৷
ছবি: KUS-Projekt
ইন্ডিয়ানাদের সাথে বাস
শিক্ষার্থীরা পানামাতে কয়েকদিন হোস্ট পরিবারে থাকা এবং কফি বাগানে কাজ করার সুবাদে কুনা-ইন্ডিয়ানাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা ও দেখার সুযোগ পেয়ে যায়৷
ছবি: KUS-Projekt
সাইকেলে কিউবা ঘুরে বেড়ানো
সাইকেল চালিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই কিউবার বিখ্যাত তামাক উৎপাদনকারী এলাকায় চলে যায়৷ সেখানে তারা কিউবার শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করে, গল্প করে, আর আড্ডা মারতে মারতে ঘুরে দেখে রাজধানী হাভানা৷
ছবি: KUS-Projekt
দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ঘরে ফেরা
সব শেষে বারমুডা এবং আৎসোরেন দ্বীপে ছোট্ট একটা বিরতির পর শিক্ষার্থীরা ফিরে আসে নিজ দেশে৷ সাগরে দীর্ঘদিনের এই শিক্ষা ভ্রমণ ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় তো কাজে লাগবেই, একজন সম্পূর্ণ মানুষ হতেও হয়ত সাহায্য করবে অনেকটাই৷
ছবি: KUS-Projekt
10 ছবি1 | 10
ছাত্রছাত্রীরা ফ্লো চ্যানেল ও উইন্ড টানেলের মধ্যে অ্যালজি পরীক্ষার মডেল তৈরি করেছেন৷ সেখানে অ্যালজির নাড়াচাড়ার ফলে পানির মধ্যে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া নকল করা হয়েছে৷ এ বিষয়ে তাদের উৎসাহের ঘাটতি নেই৷ চূড়ান্ত গবেষণা না হওয়ার ফলে এমন প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহ দেখা যায়৷ অ্যালজি নিয়ে পরীক্ষা সম্পর্কেও বিপুল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে৷ প্রো. ফ্র্যোলিশ বলেন, ‘‘এই ইন্টারঅ্যাকশন পুষ্টি ও ক্ষতিকারক পদার্থের ক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ যেমন রাসায়নিক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে পানির মধ্যে ক্ষতিকারক পদার্থ কীভাবে মিশে যাচ্ছে এবং উদ্ভিদ জগতের কতটা ক্ষতি হচ্ছে, বিপদের সীমা অতিক্রম করা হচ্ছে কিনা সেটা জানা জরুরি৷''
ড্রেসডেন শহরের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আজ এ ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে৷ অন্যান্য ক্ষেত্রেও এমন মৌলিক গবেষণা অত্যন্ত মূল্যবান৷ যেমন প্রাণীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা৷ ফ্লো চ্যানেলের মধ্যে চার পায়ের সব জীবজন্তু নিয়েও পরীক্ষা চলছে৷ কুকুর, ঘোড়া – এমনকি উটও আরামদায়ক উষ্ণ পানিতে তাদের পা চালাতে পারে৷ বিপরীত স্রোত শুধু মানুষের জন্যই উপকার বয়ে আনে না৷
বাংলাদেশে সার্ফিং ও তার সম্ভাবনা
নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পর্যটন শহর কক্সবাজার সার্ফিংয়ের জন্যও বেশ উপযুক্ত৷ সেখানে আজকাল প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বেশ কয়েকজন সার্ফার৷ তাদের মধ্যে মেয়েরাও রয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব কথা৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
প্রথম জাতীয় প্রতিযোগিতা
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দু’দিনব্যাপী জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে ১০ জন মেয়ে সহ ৭০ জন সার্ফার অংশ নেয়৷
ছবি: Bangladesh Surfing Association
আগের কথা
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থা ‘সার্ফিং দ্য নেশনস’-এর কর্মীরা ২০০৩ সালে প্রথম বাংলাদেশে যান৷ এর দুই বছর পর তাদের উদ্যোগে কক্সবাজারে সার্ফিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপর বিভিন্নভাবে তারা স্থানীয় সার্ফারদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দিয়ে এসেছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় এপ্রিলে প্রথম জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
ইতিবাচক ধারা
সার্ফিংকে এগিয়ে নিতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক সার্ফিং সংস্থার সদস্যপদও পেয়েছে তারা৷ সার্ফিং প্রতিযোগিতা আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও ব্র্যাকের একটি সহযোগী সংস্থা৷ ছবিতে সার্ফার জাফর আলমকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Farjana KHAN GODHULY/AFP/Getty Images
পর্যটনকে এগিয়ে নেয়া
সার্ফিং ভক্ত গায়ক ও অভিনেতা তাহসান মনে করেন, সার্ফিংয়ের মাধ্যমে কক্সবাজারকে বিশ্ব দরবারে আরও ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা সম্ভব৷ প্রথম জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সার্ফিং এমন একটা বিষয় যেটা খুবই আকর্ষণীয় ও রোমাঞ্চকর৷ তাই অনেক মানুষ এই খেলা দেখতে আসে৷ তাই এটার মাধ্যমে আমরা কক্সবাজারকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারি৷’’
ছবি: Bangladesh Surfing Association
মেয়েদের মধ্যে প্রথম
জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছে ১২ বছরের রিপা৷ বছর দুয়েক আগে সমুদ্রসৈকতের ধারে পানির বোতল, চিপস আর ঝিনুকের মালা বিক্রি করত সে৷ এখন সার্ফিং করে পরিবারকেও সহায়তা করছে রিপা৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
রানার আপ
মেয়েদের মধ্যে রানার আপ হয়েছে ১৩ বছরের শবে মেহেরাজ৷ উত্তাল সমুদ্রে ভেসে বেড়াতে সে-ও খুব ভালোবাসে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
প্রশিক্ষকের কথা
ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে রিপা ‘কক্সবাজার লাইফ সেভিং সার্ফিং ক্লাব’-এর দুই প্রশিক্ষক শিফাত ও রাশেদের (ছবিতে ডানপাশে) কথা জানান৷ রাশেদ আলম ঐ ক্লাবের সভাপতি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেয়েরা সমুদ্রসৈকতে কাজ করত৷ তারা পানি, চিপস এবং ডিম বিক্রি করত৷ তাদেরই আমরা সার্ফিংয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করলাম৷’’
ছবি: Getty Images/A. Joyce
ছিল বাধা
প্রশিক্ষক শিফাত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেয়েদের সার্ফিংয়ে আনা সহজ ছিল না৷ এখনও ধরে রাখা কঠিন৷ অ্যামেরিকার এলিয়ান্ট নামে এক নারীর অনুদানে এখনো আমরা কয়েকটি মেয়েকে ধরে রাখতে পেরেছি৷ উনি আমাদের অনুদান পাঠান৷ আর সেই টাকা থেকেই আমরা প্রতিটি মেয়েকে মাসে আড়াই হাজার টাকা করে দেই৷ পাশাপাশি পোশাক ও বোটগুলো দেয়া হচ্ছে সেই অনুদানের টাকাতেই৷’’
ছবি: Getty Images/A. Joyce
অনুদান বন্ধ হয়ে গেলে?
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিফাত৷ তিনি বলেন, ‘‘গরিব পরিবারের এই মেয়েদের বয়স একটু বাড়লেই পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়৷ ফলে নতুন নতুন কিশোরীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এখানে আনতে হচ্ছে৷ আগাগোড়া মেয়েদের ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ৷’’
ছবি: Getty Images/A. Joyce
স্বাধীন হয়ে উঠবে মেয়েরা
রাশেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেয়েরা স্কেটিং করছে, সার্ফিং করছে, শিখছে৷ তারা নিজেদের জীবন নিজেরাই রক্ষা করছে৷ আমার বিশ্বাস, তাদের এই প্রচেষ্টা তাদের পরিবারের স্বপ্নেও একদিন পরিবর্তন ঘটাবে৷ অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের নিয়ে কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখবেন৷ আর মেয়েরা পরিবারে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে৷’’