গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করার তিন বছর পরে ইয়র্গস পাপান্দ্রেউ-র আবার রাজনেতিক মঞ্চে ফিরছেন৷ তবে কাজটা সহজ হবে না – ডয়চে ভেলেকে এ কথাই বলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাইনৎস-ইয়ুর্গেন আক্স্ট৷
বিজ্ঞাপন
ডিডাব্লিউ: সংসদীয় নির্বাচনের মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি থাকতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়র্গস পাপান্দ্রেউ ‘গণতান্ত্রিক সমাজবাদী আন্দোলন' নাম দিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন৷ সেটা কি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে?
হাইনৎস-ইয়ুর্গেন আক্স্ট:পাপান্দ্রেউ-র সাবেক সরকারি দল আন্তঃ-গ্রিক সমাজতন্ত্রী আন্দোলন বা পাসক-এর বর্তমান হাল দেখলে বলতে হয়, পাসক-এর বিশেষ ভয় পাবার কারণ নেই, কেননা পাসক ইতিমধ্যেই ব্যাপকভাবে ভোটারদের আস্থা হারিয়েছে৷ আশির দশকে পাসক যে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেতো, তার মাত্র সাত শতাংশ আজ বাকি৷ পাপান্দ্রেউ ঐ সাত শতাংশ থেকে স্বল্পই নিতে পারবেন৷
কিন্তু পাপান্দ্রেউ তো পাসক-এর ভোট কাড়ার চেষ্টা করবেন না; তাঁর লক্ষ্য হবে আলেক্সিস সিপ্রাস-এর সিরিজা দল, জরিপ অনুযায়ী যারা এবার নির্বাচনে জয়লাভ করতে চলেছে৷
১৯৭৪ সালে সামরিক একনায়কতন্ত্র শেষ হওয়া যাবৎ গ্রিসের ইতিহাস দেখলে মনে হবে, সমাজতন্ত্রীরা সিরিজা-র উগ্র বামপন্থিদেরও মন কাড়ার ক্ষমতা রাখে৷ কিন্তু সেটা তাঁর পিতা (পাসক-এর প্রতিষ্ঠাতা) আন্দ্রেয়াস পাপান্দ্রেউ-র পক্ষে যতটা সহজ ছিল, ইয়র্গস পাপান্দ্রেউ-র পক্ষে তা ততটা সহজ হবে না৷... তিনিই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যখন ২০০৯ সালে গ্রিসের সরকারি ঋণ বিপর্যয় প্রকাশ পায়৷ ইইউ ট্রোইকা আজ যে নীতি নির্দেশ করে দিচ্ছেন, পাপান্দ্রেউ সে আমলে সেই নীতিই অনুসরণ করছিলেন৷ (অপরদিকে) অতীতে বেশ কিছু পাসক ভোটার সিরিজা-র দিকে ঝোঁকেন৷ পাপান্দ্রেউ কিছু রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত অনুগামীদের ফিরিয়ে আনতে পারবেন, কিন্তু বহু সিরিজা ভোটার আজ চলতি সংস্কারের নীতির প্রতি বুনিয়াদি প্রতিরোধের পক্ষে৷ ওদিকে পাপান্দ্রেউ সংস্কারের পথ থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন না, কেননা তিনি প্রকাশ্যভাবে গ্রিসের বর্তমান সমস্যার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত দায়িত্বের কথা স্বীকার করেছেন৷
গ্রিসে অভিবাসীদের চরম দুর্দশা
আর্থিক মন্দার কারণে সামগ্রিকভাবে গ্রিসের অবস্থা অত্যন্ত কাহিল৷ এই কাহিল দশার ভুক্তভোগী হচ্ছেন সেদেশে অবস্থানরত বৈধ, অবৈধ অভিবাসীরা৷ অনেকে বাধ্য হয়ে বেছে নিচ্ছেন ভিক্ষাবৃত্তি, জীবন কাটাচ্ছেন রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয় এবং ঘৃণা
‘ভয়ের সভ্যতায় স্বাগতম’ - অভিবাসীদের জন্য গ্রিস ক্রমশ ভয়ের রাজ্যে রূপ নিচ্ছে৷ তাদের নিত্যদিনের জীবন এখন সহিংসতা, বৈষম্য আর দারিদ্র্যের বিস্বাদে ভরা৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কিছুই বাকি নেই
কাগজপত্র ছাড়া দুই অভিবাসীকে একটু আগেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক এই দুই ব্যক্তি তাকিয়ে আছেন নিয়তির দিকে৷ গ্রিসে বসবাসকারী এরকম অসংখ্য অবৈধ ব্যক্তিকে প্রতিদিন গ্রেপ্তার করছে পুলিশ৷ গ্রেপ্তারের পর এদেরকে বাসে করে আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ প্রতিদিন অবৈধ অভিবাসী ভর্তি ১০-১৫টি বাস আটক কেন্দ্রে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বাক্সের মধ্যে জীবনযাপন
অর্থনৈতিক মন্দা গ্রিসের বাসিন্দাদের অত্যন্ত শক্তভাবে আঘাত করেছে৷ এর ফলে অনেকে হয়েছেন গৃহহীন, বাস করছেন রাস্তায়৷ ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে সেদেশের রাস্তায় বসবাসকারী গৃহহীনের সংখ্যা বেড়েছে ২৫ শতাংশ৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ভয়ের মধ্যে বসবাস
আনা টাসাভি একজন সিরীয় শরণার্থী৷ কোন কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে এথেন্সে বাস করেন তিনি৷ তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধুর বাড়িতে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকেন৷ তার মধ্যে সবসময় আতঙ্ক কাজ করে, এই বুঝি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবেন কিংবা ডানপন্থী গুণ্ডাদের আক্রমণের শিকার হবেন৷ নিজের দেশে ফেরাটাও তার জন্য অনেক বিপজ্জনক৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বহিরাগত
একজন অভিবাসী নারী এবং তার শিশু এথেন্সের আটক কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন৷ অবৈধ হিসেবে আটক হওয়ায় কয়েকমাস কারাভোগ করতে হয়েছে তাদের৷
ছবি: DW/ A. Stahl
বৈশ্বিক অর্থনীতি
গ্রিসে আর্থিক মন্দার কারণে সেদেশের সরকার এবং বিশ্বায়নে তাদের ভূমিকার উপর গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
ব্যাপক ভিড়
এথেন্সের পররাষ্ট্র দপ্তরের সামনে প্রতিদিন ভিড় করেন অসংখ্য অভিবাসী৷ উদ্দেশ্য গ্রিসে বসবাসের একটি বৈধ কাগজ বের করার চেষ্টা করা৷ খুব ভোর থেকে গভীর রাত অবধি অপেক্ষা করেন তারা, কিন্তু এদের মধ্য থেকে খুব কম লোকই সেদেশে ছয়মাস বৈধভাবে বসবাসের কাগজ পান৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কোন ভবিষ্যত নেই?
‘এমনিতেই এথেন্সে বসবাস অত্যন্ত কঠিন, আর একজন অভিবাসী হিসেবে অসম্ভব৷ আমি এখানে এসেছিলাম একটু ভালো ভবিষ্যতের আশায়, কিন্তু এখানে কোন ভবিষ্যতই নেই’, ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন এক অভিবাসী৷ নিজের নাম প্রকাশে আগ্রহী নন তিনি৷
ছবি: DW/ A. Stahl
কঠিন বাস্তবতা
ইউরোপে আগমনের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রিসে আসেন আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ৷ কিন্তু এরপর তারা এক জটিলতা থেকে অন্য জটিলতার মুখোমুখি হন৷ গ্রিসের বাস্তবতা এখন বড় কঠিন৷
ছবি: DW/ A. Stahl
গ্রিক ট্রাজেডি
এথেন্সের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে এরকম গ্রাফিটির সংখ্যা অনেক৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব গ্রাফিটি গ্রিসের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে স্থানীয়দের মনোভাব ফুটিয়ে তোলে৷
ছবি: DW/ A. Stahl
যাওয়ার কোন জায়গা নেই
গ্রিসে বসবাসরত অভিবাসীরা ক্রমশ কঠিন থেকে কঠিনতর বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন৷ তাদের জন্য কোন চাকুরি নেই, ভবিষ্যত অন্ধকার৷ অনেক অভিবাসী শেষমেষ বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি আর জীবন কাটান রাস্তায়৷
ছবি: DW/ A. Stahl
11 ছবি1 | 11
এই সংকটের সময়ে গ্রিসের রাজনৈতিক দলগুলির কি আদৌ কোনো ভূমিকা আছে?
গ্রিকরা প্রধানত তাদের ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নেতাদের কথাই শোনে, নির্বাচন সংক্রান্ত গবেষণা থেকে তা দেখা গেছে৷ মিৎসোতাকিস, কারামানলিস এবং পাপান্দ্রেউ, এই তিনটি বড় পরিবার যে চিরকাল গ্রিসে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে, তা-তে আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷ দলের ম্যানিফেস্টো নয়, বরং তার ক্যারিসম্যাটিক নেতাই ভোট টেনে থাকেন৷....ইয়র্গস পাপান্দ্রেউ যে ক্যারিসম্যাটিক নেতা হবেন, এ প্রত্যাশা কোনোদিনই ছিল না৷....অবশ্যই তিনি সিরিজা দলের আলেক্সিস সিপ্রাস-এর মতো নন৷ সিপ্রাস একজন তরুণ, উজ্জ্বল, দায়িত্বমুক্ত হিরো৷ কিন্তু এমন একটি হিরোর গায়েও এখন আঁচড় পড়েছে: সর্বাধুনিক জরিপে দেখা গেছে, সিরিজা কিছু সমর্থন হারিয়েছে৷
প্রফেসর হাইনৎস-ইয়ুর্গেন আক্স্ট দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ সমিতির উপ-সভাপতি৷ ডুইসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বিশেষ বিষয়গুলির মধ্যে পড়ে গ্রিস এবং ইউরোপীয় সংহতি৷