২৫ ওভারে ২ উইকেটে ১৪২৷ স্কোরবোর্ড আর গ্যালারি দেখে মনে হচ্ছিল উড়ছে বাংলাদেশ৷ যে কোনো বোলিং লাইনআপের জন্য জ্বর উঠে যাওয়ার মতো ব্যাপার৷ কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি৷ বাংলাদেশ দলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দৌঁড় থামলো সেমিফাইনালেই৷
বিজ্ঞাপন
প্রথম দিকে কিছুটা ধুঁকে স্বমহিমায় ফিরে আসা তামিম আর স্পিনারদের জন্য কঠিন ব্যাটসম্যান মুশফিক তখনো উইকেটে৷ দু'জনই পার করেছেন ফিফটি৷ ৩০০ যে পার হবে তাতে সন্দেহ করার সাহসই যেন পাচ্ছিলেন না কেউ৷ কিন্তু কি হয়ে গেল৷ এক কেদার যাদব টার্নবিহীন অফস্পিন নিয়ে একে একে ধ্বসিয়ে দিলেন দু'জনকেই৷ বাকিরাও এরপর তেমন ব্যাটিং দৃঢ়তা দেখাতে পারলেন না৷ ফলে বাকি ২৫ ওভারে ৩০০ তো দূরের কথা রান দ্বিগুনই করা গেল না৷ ৭ উইকেটে ২৬৪ রানে থামল বাংলাদেশের ইনিংস৷
প্রথমবারের মতো আইসিসির বড় কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে এসে বাংলাদেশের গত সাত বড় টুর্নামেন্টের ছয়টিতেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা ভারতের বিপক্ষে টস জেতাটা খুব দরকার ছিল৷ কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা৷ হাল্কা বৃষ্টির ঝাপটায় খেলা একটু দেরিতে শুরু হয়৷ এজবাস্টনের ব্যাটিং স্বর্গে টসে জিতে বোলিং নিয়ে হাল্কা মুভমেন্টও পাচ্ছিলেন ভারতের ভুবেনশ্বর কুমার ও বুমরাহ৷ সৌম্যর উইকেট নিয়ে শুরুটাও ভালো করে তারা৷ এরপর নেমেই আগ্রাসী হয়ে ওঠেন সাব্বির৷ ভারতের বোলিং পরিকল্পনায় ছন্দপতনও ঘটান ৪টি চারে ২১ রান তুলে৷ কিন্তু সেই ভুবেনেশ্বরের পরিণত বোলিংয়ের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন৷
তামিমকে শুরুতে ছন্দহীন মনে হলেও পান্ডিয়ার বলে ১২ রানে লাইফ পেয়েই যেন ঘুরে দাঁড়ান৷ ১২৩ রানের দুর্দান্ত পার্টনারশিপ গড়ে ম্যাচে টাইগারদের চালকের আসনে নিয়ে আসেন তামিম-মুশফিক৷ তামিম ৭০ আর মুশফিক ৬১ রানে সাজঘরে ফেরেন৷ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অত্যন্ত পরিণত ব্যাটিং করা সাকিব ও মাহমুদুল্লাহও বেশি সুবিধা করতে পারেননি৷ ৪০তম ওভারে ২০০ রান পার করা বাংলাদেশের সামনে তখনো সুড়ঙ্গের ওপারে আশার আলো৷ উইকেটে মাহমুদুল্লাহ ও মোসাদ্দেক৷ কিন্তু ভারতীয় বোলার বুমরাহ ফিরে কিপটে বোলিং তো করলেনই, এই দু'জনকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখালেন৷ শেষদিকে মাশরাফির ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংসটি আফসোস কমাতে পারেনি টাইগার সমর্থকদের৷
২৬৫ টার্গেটটিকে খুব একটা ভয়ংকর মনে হচ্ছিল না যখন ব্যাটিংয়ে এলেন ভারতের দুই ইনফর্ম ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান৷ চার পেসার নিয়ে মাঠে নামলেও মাশরাফি ছাড়া আর কাউকেই সমীহ দেখাচ্ছিল না তাদের ব্যাট৷ ৯৮ বলে ১০০ রান তুলতে ভারতকে খোয়াতে হলো শুধু ধাওয়ানের উইকেটটিই৷ মাশরাফি তাঁকে ফেরালেন অর্ধশত থেকে চার রান দূরে রেখে৷ এরপর অধিনায়ক বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মাদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি মুস্তাফিজ, রুবেল, তাসকিনরা৷ একরকম দাপুটে ব্যাটিং করেই রোহিত তুলে নিলেন তাঁর ক্যারিয়ারের ১১তম ওডিআই শতক৷ আর কোহলি তাঁর ১৭৫-তম ম্যাচে ৮,০০০ রানের ক্লাবে পৌঁছালেন, যা কিনা সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে এই মাইলফলক অর্জনের নতুন রেকর্ড৷ সবমিলিয়ে ৯ ওভার ৫ বল হাতে রেখেই ২২ গজের উইকেটে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল ভারত৷ রোহিত ১২৩ ও কোহলি ৯৬ রানে অপরাজিত রইলেন৷ হাইভোল্টেজ এই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেও বোলিংয়ে তার কিছুই দেখাতে পারেনি টাইগাররা৷ এমন দাপট দেখিয়ে চরম আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফাইনালে ভারত মুখোমুখি হবে পাকিস্তানের৷ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে এই প্রথম মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী৷ রোববার ওভালে অনুষ্ঠিত হবে এই ম্যাচ৷
একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা একাদশ
ডয়চে ভেলের অনুরোধে এপ্রিল, ২০১৬ সালে এই একাদশ নির্বাচন করেন আকরাম খান৷ তাঁর দেয়া ব্যাটিং অর্ডার অনুযায়ী নামগুলো থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: BDnews24/M. Rahman
তামিম ইকবাল
ডয়চে ভেলের অনুরোধে ২০১৬ সালের এপ্রিলে এই একাদশ নির্বাচন করেন আকরাম খান৷ তিনি সেরা একাদশ নির্বাচন করায় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের ভাতিজা তামিমকে নিয়েছেন বলে যাঁরা ভাবছেন তাঁরা একবার তামিমের পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিন৷ বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে ব্যক্তিগত মোট রানের সংখ্যা ৫,০০০ রান পেরিয়েছেন তিনি৷ এ জন্য তাঁকে ১৫৯টি ম্যাচ খেলতে হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ
টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম জয়টি আসে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে৷ সেই ম্যাচে ওয়াকার, ওয়াসিম, শোয়ের আখতারের মতো বোলারদের বিপক্ষে প্রথম ব্যাট করতে নেমে ৩৯ রান করেছিলেন বিদ্যুৎ৷ দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই রান টাইগারদের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল৷
ছবি: Mir Farid
সাকিব
অনেকে হয়ত তাঁকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড় বলবেন৷ বিশ্ব ব়্যাংকিংয়ে কয়েকবার শীর্ষে উঠে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা বিজ্ঞাপন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এই অলরাউন্ডার৷ ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত ১৬৩টি একদিনের ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৪,৫৬৬, উইকেট নিয়েছেন ২১৫টি, সেঞ্চুরি আছে ৬টি৷ সাকিবের চেয়ে উইকেট বেশি আছে শুধু মাশরাফির৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মুশফিকুর রহিম
এই উইকেট-রক্ষক কাম ব্যাটসম্যানের ওডিআই ডেব্যু হয়েছিল ২০০৬ সালে৷ সেই থেকে ১৬৪টি ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৪,০৭৬টি, আছে ৪ সেঞ্চুরি (২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ পর্যন্ত)৷ প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ডটিও তাঁর৷
ছবি: Getty Images/R. Pierse
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
বাংলাদেশের প্রথম একদিনের ম্যাচ খেলেছিলেন নান্নু৷ সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২০৷ সেটি ১৯৮৬ সালের কথা৷ এরপর মোট ২৭টি ওয়ানডে খেলেছেন৷ ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ে নান্নুর করা সাত ওভার (২৯ রান দিয়েছিলেন) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল৷
ছবি: Mir Farid
পাইলট
শুধু ভালো উইকেট-রক্ষকও ছিলেন না, শেষদিকে ব্যাট করতে নেমে দলকে জেতাতে না পারলেও বেশ কয়েকবারই একটা সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন৷ ১৯৯৫ সালে ওডিআই খেলা শুরু করার পর ১২৬ ম্যাচে ১,৮১৮ রান করেছিলেন৷
ছবি: Mir Farid
রফিকুল আলম
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার৷ ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের হয়ে দু’টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন৷ তবে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম খেলেন ১৯৮০ সালে৷ ১৯৮২ ও ১৯৮৬-র আইসিসি ট্রফিতেও খেলেছেন রফিকুল আলম৷
ছবি: Mir Farid
রফিক
প্রধান পরিচয় বাঁ-হাতি স্পিনার হলেও মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবেও পরিচিত ছিলেন৷ ১৯৯৫ সালে শারজায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে তাঁর ওডিআই অভিষেক হয়েছিল৷ প্রথম উইকেটটাই পেয়েছিলেন টেন্ডুলকারকে আউট করে৷ বোলিং ফিগার ছিল ৫-০-১৫-১৷ এরপর ১২৫টি একদিনের ম্যাচ খেলে সমান সংখ্যক উইকেট পেয়েছিলেন৷
ছবি: Mir Farid
মাশরাফি (অধিনায়ক)
সেরা একাদশের অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফিকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তটি আকরামের জন্য সহজই ছিল বলা যায়৷ দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বোলার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অন্যদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নিতে বেশ কয়েকবারই পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তিনি৷
ছবি: BDnews24/M. Rahman
মুস্তাফিজুর রহমান
আইসিসি ২০১৫ সালে ওয়ানডে একাদশের যে নাম ঘোষণা করেছিল তাতে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে স্থান পেয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান৷ ঐ বছর জুনে ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর অভিষেক ঘটে৷ প্রথম দুই ওয়ানডেতে তিনি ১১ উইকেট নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
রুবেল হোসেন
ডানহাতি এই ফাস্ট বোলারের ওয়ানডে অভিষেকটা স্মরণীয় হয়েছিল৷ ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঐ ম্যাচে ৩৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে টাইগারদের জয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/Dibyangshu Sarkar
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (দ্বাদশ খেলোয়াড়)
সাকিব-তামিম-মুশিফক-মাশরাফিদের ভিড়ে তাঁর নাম চাপা পড়ে গেলেও দলের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যেই তাঁকে ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হতে দেখা যায়৷ ২০১৫ বিশ্বকাপের পরপর দুই ম্যাচে তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন৷ তাঁর অফস্পিনও সময় সময় বেশ কাজে লাগে৷
ছবি: Getty Images/R. Pierse
অমায়িক আকরাম
সেরা একাদশে নিজের নাম না রাখা প্রসঙ্গে আকরাম খান বলেন, ‘‘তালিকা আমি করেছি, সেখানে তো আমার নাম রাখতে পারি না৷’’ তবে ইএসপিএনক্রিকইনফো ডটকম ওয়েবসাইটে আকরামকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘প্রথম আসল নায়ক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে৷