পারলো না মরক্কো, কাতার বিশ্বকাপে তৃতীয় ক্রোয়েশিয়া
১৭ ডিসেম্বর ২০২২ফুটবলপ্রেমীদের অনেকে ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে মাথা নাড়লেও প্রতিপক্ষ যে মরক্কো! আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম দেশ এবং প্রথম আরব দেশ হিসেবে তারা কাতার বিশ্বকাপের ইতিহাস রচনা করেই সেমিফাইনালে উঠে আসে। উঠতি পথে তারা বাঘা বাঘা প্রতিপক্ষ স্পেন, পর্তুগালের মতো দলকে হারিয়ে জানান দিয়েছিল নিজেদের শক্তিশালী অস্তিত্বের।
আর তাই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটিতে অনেকেই নজর রাখছিলেন ক্যাসাব্লাংকার লালে আর কতো রঙিন হতে পারে কাতার বিশ্বকাপ।
তবে চোখ শুধু মরক্কোর দিকে ছিল এভাবে হয়তো বলা যাবে না। কারণ, এই ম্যাচটি খেলার আগে ক্রোয়েশিয়াকেও কম পাহাড় ডিঙোতে হয়নি। তাদের অপ্রতিরোধ্য গতি অনেককেই ভাবিয়ে তুলছিল- ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালের পুনরাবৃত্তি হবে কী? সেবছর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠে ক্রোয়েশিয়া। আর প্রতিপক্ষ ছিল ফ্রান্স।
কিন্তু ক্রোয়েশিয়া সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে ৩-০ গোলে পরাজিত হওয়ার পর সেই মোহ ভাঙে। তবে প্রথম বা দ্বিতীয় না হোক কাতারে অন্তত তৃতীয় স্থানটি দখলে মরিয়া ছিল লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়া।
জোসকো গারদিওলের গোলে ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। ডি বক্সের সামনে ফ্রি কিক বল পান ইভান পেরিসিচ। তিনি হেড করে ডি-বক্সের মধ্যে বল বাড়িয়ে দেন। উড়ন্ত সেই বলটিতে আবারো হেড নেন তার সতীর্থ জোসকো। বল জালে জড়ায়। এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া (১-০)।
মাত্র দুই মিনিটের মাথায় ম্যাচে ফিরে মরোক্কো। সপ্তম মিনিটে পিছিয়ে পড়ে নবম মিনিটেই সমতা ফেরায় তারা। এবারও ফ্রি কিক থেকে। ফ্রি কিক থেকে উড়ে আসা বল ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগের খেলোয়াড় ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বল তার মাথা ছুঁয়ে চলে আসে গোলপোস্টের সামনে। সেখানে আচরাফ দারি নীচু হয়ে হেড নিয়ে জালে পাঠান বল। সমতা (১-১) ফেরে খেলায়।
দারুণ ছন্দ নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে দু'দল। মাঝ মাঠের দখল ধরে রাখতে ব্যস্ত মরক্কো। কিন্তু ৪২ মিনিটে ওরসিচের অসাধারণ এক গোলে আবার এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। এসময় মার্কো লিভাজার বাড়িয়ে দেওয়া বল বামদিকে পেয়ে কোনাকুনি শট নেন। বল দূরের পোস্টে লেগে জালের ভেতরে যায়। আর ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে যায় ২-১ গোলে। তার গোলে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধের খেলা শেষ করে ক্রোয়াটরা।
দ্বিতীয়ার্ধ্বের শুরু থেকে অনেকটা রক্ষণাত্মক কৌশল নেয় ক্রোয়েশিয়া। ব্যবধান বাড়ানোর চেয়ে তারা বেশি মনোযোগী ছিল নিজেদের জাল ঠেকানোর। পাশাপাশি উপরে উঠে এসে গোলের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা ছিল তাদের।
আরেকদিকে মাঝ মাঠের সাথে সমন্বয় করে আক্রমণ শাণিত করার চেষ্টার অবশ্য কমতি ছিল না মরক্কানদের। একবার বল জালে পাঠাতে পারলেই সমতা ফিরবে ম্যাচে সেই প্রত্যয় নিয়ে চেষ্টাও করে গেছে বার বার। কিন্তু ভাঙতে পারেনি ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ দেয়াল।
তবে অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে নেওয়া মরক্কোর স্ট্রাইকার ইউসেফ এন-নেসিরির হেডটি ভাগ্য সহায় থাকলে হয়তো জালের দেখা পেত।
কাতার বিশ্বকাপে মরক্কান রূপকথা হয়তো এখানেই শেষ। কিন্তু তারা যে ইতিহাস রচনা করে গেছে তা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে আফ্রিকার দলগুলোর কাছে। ২০২২ বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান দখল করে রাখার এই অর্জন হয়তো ২০২৬ বিশ্বকাপে রঙিন করার প্রত্যয় যোগাবে ক্যাসাব্লাংকাকে।
আরআর/এপিবি