1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘পারিবারিক কলহ ও অর্থনৈতিক সংকটে কিশোর অপরাধ বাড়ে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২০ অক্টোবর ২০২৩

সংশোধন কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে কি শিশু-কিশোররা সংশোধন হচ্ছে? শিশু-কিশোর অপরাধ বেড়েই বা যাচ্ছে কেন?

বাংলাদেশ শিশু
শিশু কিশোররা কেন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে?ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/picture alliance

করোনা পরবর্তী সময়ে কিশোর অপরাধ অনেক বেড়েছে৷ দেশে বর্তমানে তিনটি শিশু (কিশোর/কিশোরী) উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে৷ এর একটা মেয়েদের জন্য এবং দুইটা ছেলেদের জন্য৷ এগুলোতে ধারণক্ষমতার প্রায় তিনগুণ বন্দি আছে৷ সংশোধন কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে কি শিশু-কিশোররা সংশোধন হচ্ছে? শিশু-কিশোর অপরাধ বেড়েই বা যাচ্ছে কেন? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন সমাজকল্যান প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু৷

ডয়চে ভেলে : দেশে এখন কতগুলো শিশু (কিশোর/কিশোরী) উন্নয়ন কেন্দ্র আছে? শিশু-কিশোররা যে সংখ্যায় অপরাধে জড়াচ্ছে তাতে এই উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো কি যথেষ্ট?

বিচার তো দু'এক বছরে শেষ হচ্ছে না: খসরু

This browser does not support the audio element.

আশরাফ আলী খান খসরু : আমাদের এখন তিনটা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র আছে৷ এগুলোতে স্থান সংকুলান হয় না৷ আমি দুই দিন আগে যশোরে উন্নয়ন কেন্দ্রে গিয়েছিলাম৷ সেখানে ধারণক্ষমতা ১২০ জনের, আছে প্রায় ৩০০ জন৷ বাকি দুইটার একটা নারী ও আরেকটা পুরুষদের জন্য৷ একটা টঙ্গিতে আরেকটা মিরপুরে৷ সেখানেও ধারণক্ষমতার চেয়ে সংখ্যা অনেক বেশি মানুষ৷ এগুলো আরও বড় করার পরিকল্পনা আমাদের আছে৷ ভবিষ্যতে আমরা আরও দুই একটা নির্মাণ করব৷ আগে জায়গা খুঁজে বের করতে হবে, তারপর সেটা করতে হবে৷ শিশু অপরাধী তো বাড়ছে৷ ১৮ বছরের নিচে কেউ অপরাধী হলে আদালত তাদের আমাদের এখানে পাঠায়৷ এখানে আরেকটা বড় সমস্যা হল, ১৮ বছরের উপরেও অনেকে থেকে যায়৷ যেমন ধরেন, একটা কিশোর ১৭ বছর বয়সে অপরাধ করেছে৷ তার বিচার তো দু'এক বছরে শেষ হচ্ছে না৷ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে এখানেই থাকছে৷ তখন কিন্তু তার বয়স ১৮ বছরের অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে৷ এই কিশোরদের রাখাটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় অসুবিধা৷

টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে গত আগস্টে এক কিশোরের মৃত্যুর পর কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নের কথা আপনারা বলেছিলেন৷ সেটা কতদূর এগিয়েছে?

কেন্দ্রগুলো কিন্তু উন্নত৷ আপনারাও যদি সেখানে যান দেখবেন ভেতরের অবস্থাসহ সবকিছুই ভালো৷ এরা তো শিশু অপরাধী৷ ফলে অনেক সময় তাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না৷ ফলে একটা কাজ করে ফেলে৷ এর কারণটাই হল ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত অবস্থান৷  

আমরা নিয়মিত দেখছি, কিশোররা নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে৷ এমনকি গ্যাং কালচার তৈরি হয়েছে৷ কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার এই প্রবণতা কি আগের চেয়ে বেড়েছে?

আপনারাও তো নিয়মিত পত্রপত্রিকায় দেখছেন কিশোর গ্যাং তৈরি হয়েছে৷ এই প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে৷ এটার ব্যাপারে আমাদের প্রশাসনও সজাগ আছে৷ তারাও ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং অপরাধীদের ধরছে৷ এটা আস্তে আস্তে কমে যাবে৷ করোনার কারণে এটা আসলে বেড়েছে৷

রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, পারিবারিক ও সমাজিক অস্থিরতার কারণেই কি কিশোররা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে?

অবশ্যই৷ পারিবারিক কলহ বেড়েছে৷ একান্নবর্তী পরিবারগুলো এখন আর নেই৷ এই কারণে অনেক অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে৷ অনেক সময় অর্থনৈতিক অবস্থা থেকেও হয় এগুলো৷ একটা শিশু যখন স্কুলে যায় তার মা-বাবা যদি ঠিকমতো খেয়াল না রাখে তখন শিশুটা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে৷

উন্নয়ন কেন্দ্র গিয়ে কি শিশু-কিশোররা আসলে সংশোধন হচ্ছে? নাকি তারা অপরাধীই থেকে যাচ্ছে?

কিছু তো সংশোধন হয়ই৷ যারা অনেকদিন থাকে তারা কিছুটা সংশোধন হয়৷ অনেক সময় তারাও বুঝতে পারে যে, তারা অন্যায় করেছে৷ সবকিছুরই তো ভালো-মন্দ আছে৷ সবাইকে যে আমরা ভালো করে ফেলতে পারি বিষয়টা এমনও না৷

উন্নয়ন কেন্দ্র গুলোতে শিশু-কিশোরদের শিক্ষামূলক-বিনোদনমূলক ব্যবস্থা কি আছে?

বিনোদনমূলক ব্যবস্থা তো আছে৷ খেলার মাঠ আছে৷ সেখানে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷ এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে৷ সেখানেও বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং দেওয়া হয়৷

আগের মতো খেলার মাঠ বা পর্যাপ্ত খেলাধূলার ব্যবস্থা না থাকার কারণে কি কিশোররা বেশি অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে?

আমাদের তো আসলে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই৷ এটা যেমন দায়ী, তেমনি পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও অর্থনৈতিক অবস্থাও দায়ী৷ করোনার পর এটা বেড়েছে৷

ইন্টারনেটের প্রসার, সামাজিক মাধ্যম ও ইন্টারনেট গেমিং কি কিশোরদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ করছে?

এটা তো আপনি নিজেও বোঝেন৷ ইন্টারনেটের ভালো-মন্দ দু'টোই আছে৷ ইন্টারনেটে জুয়া খেলায় যদি কেউ ঢুকে যায় তখন তাকে ফেরানোটা কঠিন হয়ে যায়৷ ইন্টারনেট তো মাদকের চেয়েও বেশি নেশা৷ এজন্য আমরা পরিবারের প্রধানকে সবসময় বলি, সন্তানকে যখন একটা ফোন কিনে দেবেন তখন তাকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ এটা দিয়ে সে কী করছে সেটা খেয়াল রাখতে হবে৷

কিশোর অপরাধ সংক্রান্ত আইনের সংস্কার কতদূর?

এটা প্রক্রিয়াধীন আছে৷ কাজ চলছে৷

কিশোর অপরাধ যেভাবে বাড়ছে, তাতে আর কি ধরনের পদক্ষেপ নিলে এটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আপনি মনে করেন?

আমার প্রথম কথা, পরিবার থেকে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে৷ পরিবারকেই লক্ষ্য রাখতে হবে তার ছেলেটা কী করে, কোথায় যায়? তার ছেলের বন্ধু বান্ধব কারা? দ্বিতীয় হল স্কুল৷ স্কুলের দায়িত্ব হল কোন ছেলে যদি স্কুলে না আসে তাহলে তার পরিবারকে চিঠি দিয়ে জানানো৷ এই পদক্ষেপগুলো নিতে হবে৷ তাহলে এই সংশোধনগুলো হবে৷ আমাদের একটা প্রবণতা হয়ে গেছে, আমরা যখন রাস্তা দিয়ে যাই, কাউকে অপরাধ করতে দেখলেও কিছু বলি না বা প্রতিবাদ করি না৷ এতে ছেলেগুলো আশকারা পেয়ে যায়৷ আপনি কিছু না বলেন, ৯৯৯-এ ফোন করে তো জানাতে পারেন? তাও করে না৷ কিন্তু আজকে যেটা আপনি দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলেন, কাল দেখবেন আপনার সন্তানই এই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে৷ শুধু সরকার আর প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না৷ সবাই এগিয়ে না এলে একটা সমাজ তার কলুষতা থেকে বের হয়ে আসতে পারে না৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ