স্মার্টফোন আজ শিশু-কিশোরদেরও নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে৷ অপরিণত বয়সে ডিজিটাল মাধ্যম তাদের কি ক্ষতি করছে? নাকি ভবিষ্যতের জন্য তাদের আরও প্রস্তুত করতে তুলছে? লাভ-লোকসানের ভারসাম্য রক্ষা করতে কী করা উচিত?
বিজ্ঞাপন
ডিজিটাল মিডিয়ার লাভ-ক্ষতি
04:20
বার্লিনে গায়ার পরিবারে এটাই স্বাভাবিক দৃশ্য৷ শনিবার সকালে বাবা-মা সপরিবারে প্রাতরাশের তোড়জোড় করছেন৷ দুই ছেলে ও তাদের দূর-সম্পর্কের বোন যে যার স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত৷ ন'বছর বয়সেই তারা নিজস্ব ফোন হাতে পেয়েছে৷ মা সিমোনে পাপলার বলেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণ যেন কিছুটা কমে যায়, অবচেতন মনে বিবেক দংশন হতে থাকে৷ হাতে স্মার্টফোন দিয়ে মনে হয়, কাজটা ঠিক করলাম তো? খারাপ কিছু ঘটে যাবে না তো, যা আমি ভাবতে পারি নি?''
অস্কার, মাটিল্ডা ও গুস্তাভ-এর জন্য স্মার্টফোন সবচেয়ে জরুরি৷ বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপ-এর মতো মেসেজিং সার্ভিস সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে তারা৷ জার্মানির প্রায় ৭০ শতাংশ শিশু এভাবেই বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে৷ প্রায় ৫০ শতাংশ গেমস ও ইনস্টাগ্রাম-এর মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে৷ স্মার্টফোন না থাকলে আলোচনায় অংশ নেওয়াই অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ যেমন মাটিল্ডা বলে, ‘‘আমাদের ক্লাসের ছেলে-মেয়েদের আলাদা চ্যাট-রুম আছে৷ তাতে অনেক লেখা হয়৷ প্রায় সারারাত লেখালেখি চলে৷ বিরক্তও লাগে৷ তখন ফ্লাইট মোডে চলে যেতে হয়৷ তবে আমি এই চ্যাটই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি৷''
প্রযুক্তি ব্যবহারের মন্দ দিক
ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, আইফোন ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কত সুবিধাই না আমরা আজকাল ভোগ করছি৷ তবে অন্য সব কিছুর মতো এ সবেরও মন্দ দিক আছে বৈকি! গবেষকদের জানানো সেরকমই কিছু তথ্য পাবেন ছবিঘরে৷
ছবি: Cover/Getty Images
ইয়ারফোনে গান শোনা দুর্ঘটনার কারণ
প্রায়ই দেখা যায় আজকালকার তরুণরা কানে ইয়ারফোন লাগিয়েগান শুনতে শুনতে রাস্তায় চলাফেরা করছে৷ কানে ইয়ারফোন থাকায় অনেক সময় রাস্তার সতর্ক সংকেত বা গাড়ি, সাইকেলের শব্দ শুনতে পায় না তারা৷ ফলে ঘটে অ্যাক্সিডেন্ট৷ এ কথা জানান জার্মান হাসপাতালগুলোর জরুরি বা ‘এমারজেন্সি’ বিভাগের ‘ট্রমা সার্জারি’-র প্রফেসার রাইনহার্ড হফমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Ossinger
ছবি তোলাতেই যেন বেশি আনন্দ!
যে কোনো ধরনের স্মৃতিকেই মানুষ ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে চায়৷ বিশেষ করে, দেশ-বিদেশে ঘুরতে বা বেড়াতে গেলে তো কথাই নেই! কিন্তু ছবির প্রতি সমস্ত মনোযোগ দিতে গিয়ে পর্যটকরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর ছবি তোলার জায়গাগুলোর কথা আর সেভাবে মনে করতে পারেন না৷ সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স ম্যাগাজিন থেকে এই তথ্য জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডিসপ্লে থেকে জীবাণু যায় শরীরে
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা আইফোন ছাড়া যেন আজকাল কারুর চলেই না৷ যদিও এ সবে অসংখ্য জীবাণু, ছত্রাক আর ব্যাকটেরিয়া লুকিয়ে থাকে৷ এই জীবাণু থেকেো কিন্তু আপনি অসুস্থ হতে পারেন৷ বিশেষ করে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বেশি৷ তাই এগুলো নিয়মিত পরিস্কার রাখা জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
ইন্টারেনেটে বই পড়া
বই হাতে নিয়ে পড়াটা যেন আজকাল উঠেই যাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে৷ আসলে আজকাল যে ইন্টারনেটে মুহূর্তের মধ্যেই সব রকম তথ্য পাওয়া যায়৷ অবশ্য আরাম করে বই হাতে নিয়ে পড়ার থেকে ইন্টারনেটে পড়লে যে বেশি ক্লান্ত বোধ হয়, তা অনেকেই হয়ত স্বীকার করবেন৷ আর এ কথাটিই প্রমাণ করেছেন জার্মানির ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা৷
ছবি: AndreyPS - Fotolia.com
কফি মেশিনে জীবাণু!
আজকাল নানা ধরনের কফি মেশিন পাওয়া যায় আর খুব সহজেই নানা স্বাদের কফি তৈরি করা যায়৷ একেক মেশিনের একেকটি বোতামে টিপ দিলে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কফি বেরিয়ে আসে৷ দেখলেই অবাক লাগে, তাই না? কিন্তু সেই মেশিনই নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে রয়েছে জীবাণুর ভয়৷ তাই সাবধান!
ছবি: Cover/Getty Images
5 ছবি1 | 5
৯ ও ১২ বছর বয়সিদের জন্য একটাই কড়া নিয়ম রয়েছে৷ খাবার সময় ধারেকাছে স্মার্টফোন রাখলে চলবে না৷ এছাড়া কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই৷ ছেলে-মেয়েরা কতক্ষণ ধরে ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করবে, তা নিয়ে প্রতিদিন নতুন করে দর কষাকষি চলে৷ পরিবারের কর্তা হিসেবে অলিভার গায়ার বলেন, ‘‘তাদের সামনে বিকল্প তুলে ধরাও জরুরি৷ বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কিছু একটা করা দরকার৷ অর্থাৎ সময় কাটানোর ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব আগ্রহ ও আইডিয়াও আছে৷ সারাদিন বাইরে কাটিয়ে অথবা ফুটবল ট্রেনিং-এর পর বাড়ি ফিরে হাতে মোবাইল নিয়ে জিরিয়ে নিলে আপত্তির কোনো কারণ দেখি না৷''
স্মার্টফোন নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত সময় কাটালে মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হতে পারে৷ এটি প্রায়ই বাবা-মার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ সারা লাঙে তাঁদের এই সংশয় বোঝেন৷ তিনি বাচ্চাদের মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে বাবা-মাদের পরামর্শ দেন৷ তাঁর মতে, স্মার্টফোনের ভালো দিকও রয়েছে৷ মিডিয়া বিশেষজ্ঞ সারা লাঙে বলেন, ‘‘শিশু ও কিশোরদের নিয়ে প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রায়ই বড় সাফল্য দেখা যায় – বিশেষ করে মনোযোগ নিয়ে সমস্যা সত্ত্বেও তারা যখন প্রকল্পের কোনো বিষয় নিয়ে মন দিয়ে কাজ করে৷''
গায়ার পরিবার তাদের কম্পিউটারে গেম খেলা অথবা ইন্টারনেট সার্ফিং-এর সময় ছোটদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ কোনো সফটওয়্যার কাজে লাগায় না৷ উদ্দেশ্য, শিশুরা নিজেরাই যাতে তাদের দায়িত্বজ্ঞান সম্পর্কে সচেতন হয়৷ তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পরে এ বিষয়ে আলোচনা করে নিজেদেরই সীমারেখা স্থির করতে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি৷ সারা লাঙে বলেন, ‘‘পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুসমম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি, যাতে সমস্যা, ভয়, দুশ্চিন্তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করে পরস্পরের সাহায্য চাওয়া যেতে পারে৷ তার জন্য শিশু ও কিশোরদের মন বুঝতে হবে৷ ডিজিটাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে তাদের আচরণও বুঝতে হবে৷''
তবে অনেক বাবা-মার কাছে এই কাজ মোটেই সহজ নয়৷ শিশু ও কিশোরদের কাছে অনলাইন ও বাস্তব জগতের সীমা মিলেমিশে যায়৷ যেমন ‘পোকেমোন গো' গেম খেলার সময়ে৷ চ্যাট ও অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তারা বাবা-মার থেকে এগিয়ে৷ তবে এর মধ্যে কিছু অ্যাপ গোটা পরিবারই ব্যবহার করে৷ স্মার্টফোনের দৌলতে আজ যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে উঠেছে৷ অলিভার গায়ার বলেন, ‘‘এটাই আজকের সংস্কৃতির অঙ্গ৷ বাবা-মা নিজেদের শিক্ষাগত অবস্থানের দোহাই দিয়ে সারাক্ষণ শুধু বই পড়তে বাধ্য করলে ছেলে-মেয়েদের আজকের প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকবে না৷ ফলে পরে চাকরি খোঁজার সময়ে তারা খুব অসুবিধায় পড়বে৷ অতএব বাধা দেওয়া মুর্খামির কাজ৷ তাদের সঙ্গ দিয়ে ভুল পথ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা উচিত৷''
ডিজিটাল মিডিয়া পরিবারগুলির উপর কর্তৃত্ব করছে, এমনকি পোষা কুকুরও রেহাই পাচ্ছে না৷
যে সাতটি খেলা মস্তিষ্কের জন্য ভালো
দাবা থেকে শুরু করে স্টারক্রাফট, এখানে থাকছে সাতটি কৌশলের খেলা যা ব্রেন বা মস্তিষ্কের জন্য ভালো৷ যারা ব্রেনের ব্যায়ামে আগ্রহী, তারা এগুলো খেলতে পারেন নিয়মিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
দাবা: খেলার রাজা
দাবা খেলার নামটা মূলত এসেছে ফার্সি শব্দ ‘শাহ’ থেকে, যার অর্থ রাজা৷ দাবার বোর্ড তৈরি হয়েছে ভারতে, তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে৷ দু’জন খেলায়াড় একে অপরের বিপরীতে এই খেলায় অংশ নিতে পারেন৷ খেলায় জিততে হলে প্রতিপক্ষের রাজাকে এমনভাবে ‘চেক’ দিতে হয়, যাতে তার পালানোর কোনো উপায় না থাকে৷ এই ‘চেক’ দেয়াকে বলা হয় ‘কিস্তি মাত’৷
ছবি: MEHR
গো: এশিয়ায় তৈরি
‘গো’ খেলাটি সৃষ্টি হয়েছে চীনে৷ তবে এর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে কোরিয়া এবং জাপান৷ কালো এবং সাদা পাথর দিয়ে একটি বোর্ডের উপর খেলাটি খেলতে হয় যেখানে ১৯টি অনুভূমিক এবং ১৯টি উল্লম্ব রেখা টানা থাকে৷ বোর্ডের অধিকাংশ অংশ যে দখলে রাখতে পারবে, সেই বিজয়ী৷
ছবি: Imago/Xinhua
শোগি: জাপানের দাবা
দাবার জাপানি সংস্করণ শোগিতে বোর্ডটি নয়টি মাঠে ভাগ করা থাকে৷ তবে ছোট বা বড় বোর্ডও পাওয়া যায়৷ দাবার সঙ্গে এটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হচ্ছে, গুটিগুলো খেলোয়াড়ের মধ্যে নির্দিষ্ট করে দেয়া নেই৷ অর্থাৎ উভয়েই সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন৷ তবে উদ্দেশ্য একই, রাজাকে ‘চেক’ দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Sasahara
চেকারস: লাফান এবং চুরি করুন
চেকারবোর্ড দেখতে দাবার বোর্ডের মতো৷ তবে খেলার নিয়ম পুরোপুরি ভিন্ন৷ এখানে একটি গুটি আড়াআড়িভাবে একঘর পর্যন্ত সরানো যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি প্রতিপক্ষের একটি গুটিকে ডিঙাতে পারে৷ আর ডিঙানো গুটিটি যে ডিঙিয়েছে তার হয়ে যাবে৷ এভাবে প্রতিপক্ষের সবগুটি নিতে পারলে জয় আসবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Bouys
টিক-টেক-টো: সার্কেল অথবা স্কয়ার?
খেলাটার বাংলা নাম ‘কাটা-কুটি’৷ দীর্ঘ ভ্রমণের পথে দ্বাদশ শতক থেকে চলে আসা এই খেলাই সম্ভবত সেরা৷ এর জন্য আপনার শুধু একটি পেন্সিল এবং এক টুকরো কাগজ দরকার৷ কাগজের উপরে আঁকা নয়টি ঘরের মধ্যে দু’জন খেলোয়াড় ক্রস বা সার্কেল আঁকেন৷ যে খেলোয়াড়টি আগে একইরকম সংকেত দিয়ে অনুভূমিক, উল্লম্ব কিংবা আড়াআড়িভাবে তিনটি ঘর ভরতে পারবে, সেই বিজয়ী৷
ছবি: imago/J. Tack
সিভিলাইজেশন: বোর্ড থেকে স্ক্রিনে
শুরুতে বোর্ড গেম হিসেবে চালু হওয়া ‘সিভিলাইজেশন’-এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালে৷ খেলার ধারণা জটিল ছিল: একটি সিভিলাইজেশনকে সেই লৌহযুগের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে টিকে থাকতে হবে৷ সাতজন খেলোয়াড় একসঙ্গে এটি খেলতে পারে৷ আর একেকটি গেমের দৈর্ঘ্য হতে পারে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত৷ ১৯৯১ সালে ‘সিভিলাইজেশন’ কম্পিউটার গেম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷
ছবি: 2007 Free Software Foundation, Inc.
স্টারক্রাফট: অবসরের খেলা
কারো কারো কাছে এটা হয়ত নিখাদ বিনোদন, তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘স্টারক্রাফট’ হচ্ছে অবসর সময়ের জন্য উপযোগী জাতীয় খেলা৷ ‘রিয়েল টাইম স্ট্র্যাটেজি’ খেলাটি চালু হয় ১৯৯৮ সালে৷ আর তখন থেকেই এটি অন্যতম জনপ্রিয় কম্পিউটার গেম হিসেবে বাজার দখল করে আছে৷