বয়স মাত্র চল্লিশের মাঝামাঝি হওয়া সত্ত্বেও টিম সাইডেলের  পার্কিনসন রোগ ধরা পড়েছে৷ কড়া ডোজের ওষুধ সত্ত্বেও কাঁপুনি দূর হচ্ছে না৷ মস্তিষ্কের গভীরে স্টিমুলেশন এখন তাঁর একমাত্র আশা৷ সেই অপারেশনের সময়ে তাঁকে সজাগ ও সক্রিয় থাকতে হবে, এমনকি কথাও বলতে হবে৷ মস্তিষ্কের গভীরে ইলেকট্রোড ঢোকানো হবে৷

এক দিন আগেই তিনি হাঁটতে বেরিয়েছিলেন৷ অপারেশন নিয়ে মনে কোনো ভয় নেই৷ শুধু এই দশা থেকে মুক্তির আশা রয়েছে৷ টিম সাইডেল নিজের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, ‘‘আমার কাঁপুনি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ শীতের কারণে নয়, এটা শরীরের কম্পন৷ হাতের লেখা খারাপ হচ্ছে, অবসর সময়ে কিছুই করতে পারছি না, স্ত্রীর সঙ্গে বাইরে খেতে যাওয়াও কঠিন৷ প্রথম আলাপের পর অনেক মানুষ ভাবেন, আমি হয়তো তিন পর্যন্তও গুনতে পারি না৷ তাঁরা আমাকে সহজ বিষয়ও বোঝানোর চেষ্টা করেন৷''

পার্কিনসনের কারণে তাঁকে নিজের কাজও কমাতে হয়েছে৷ কাজের সূত্রে ভ্রমণ বন্ধ হয়ে গেছে৷ ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না৷ রোগের কারণে ডোপামিনের অভাব মেটাতে যে ওষুধ খেতে হচ্ছে, সেগুলির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও তাঁকে কাবু করে রাখছে৷

ট্যুবিঙেন শহরের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা বহু বছর ধরে মস্তিষ্কের গভীরে স্টিমুলেশন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন৷ ব্রেন পেসমেকারের ভালো দিক হলো, সেটির মৃদু বৈদ্যুতিক স্পন্দন বার বার নতুন করে বদলানো যায়৷ রোগ আরো গুরুতর হলে বা লক্ষণ বদলে গেলে সেটা করা যায়৷

সেই পরিবর্তন দ্রুত শনাক্ত করতে সম্প্রতি স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে কম্পন, সঞ্চালন, ঘুম ইত্যাদি পরিমাপ করা হচ্ছে৷ ট্যুবিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ আলিরেজা গারাবাগি বলেন, ‘‘এখন হাত দেখতে পাচ্ছেন, যেটি নড়াচড়া করছে৷ হাতের ঠিক এই ছোট সঞ্চালনই রেকর্ড করে ধারণ করা হচ্ছে৷ এটা অনেকটা দীর্ঘমেয়াদী মনিটরিংয়ের মতো৷''

গোটা বিশ্বে হাজার হাজার পার্কিনসন রোগীর মস্তিষ্কে এই অপারেশন করা হয়েছে৷ প্রায় কোনো রক্তপাত ছাড়াই সেটা সম্ভব৷ শুধু ইলেকট্রোড ঢোকানোর সময়ে মাথার খুলিতে ছোট ছিদ্র করতে হয়৷

কম্পিউটার টোমোগ্রাফি ছবির ভিত্তিতে পরিকল্পনা করে বাকি কাজ নিপূণ হাতে করতে হয়৷ ইলেকট্রোড নির্দিষ্ট জায়গায় বসানো হয়েছে কিনা, অপারেশন থিয়েটারে পরিমাপ চালিয়ে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হয়৷ আলিরেজা গারাবাগি বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাগায্যে ক্রমাগত তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে৷ দিনের বিভিন্ন সময়ের তারতম্য সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি৷ সকালে বা বিকালে অবস্থা ভালো না খারাপ হয়, সে বিষয়ে ধারণা পাচ্ছি৷ কোনো রোগী মাঝারি বা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে কোনো নতুন সেটিং থেকে উপকার পাচ্ছেন কিনা, তাও জানতে পারি৷''

থেরাপিতে টিম সাইডেলের উপকার হচ্ছে৷ প্রয়োজন অনুযায়ী রদবদলের জন্য তাঁকে আরো আট সপ্তাহ হাসপাতালে আসতে হবে৷ নিউরোলজিস্ট হিসেবে ডানিয়েল ভাইস প্রথমেই তাঁর ব্রেন পেসমেকার বন্ধ করে রোগের লক্ষণ বিষদভাবে পর্যবেক্ষণ করেন৷ বোতাম টিপলেই কম্পন বন্ধ হয়ে যায়৷

টিম সাইডেল নিজের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘‘কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটা ঘটে৷ চালু বা বন্ধ করার পরেই প্রভাব বোঝা যায়৷ ট্যাবলেটের মতো অনেক ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হয় না৷ আমার খুব ভালো লাগছে৷ এই চিকিৎসায় কাজ হয়েছে৷''

সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো, ভবিষ্যতে তাঁকে আর ঘনঘন হাসপাতালে যেতে হবে না৷ কারণ বাসা থেকেই রিমোট পদ্ধতিতে তাঁর ব্রেন পেসমেকারের সেটিং বদলানো সম্ভব হবে৷

গত কয়েক দিনে কম ওষুধ খেতে হয়েছে৷ কম্পনও অনেক কমে গেছে৷ হাসপাতাল থেকেই তাঁর ইমপ্লান্ট করা পেসমেকার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে৷ অবশ্যই কড়া তথ্য সুরক্ষা আইন মেনেই সেই ব্যবস্থা হয়েছে৷ নিউরোলজিস্ট ডানিয়েল ভাইস বলেন, ‘‘তাহলে এবার এমন করা যায়৷ আজ আমরা স্টিমুলেটার আবার হালকাভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছি৷ এই রিমোট কানেকশন দিয়েই আমি সেটা করতে পারি৷ দেখা যাক কী হয়৷''

টেলিফোনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক ইমপাল্স পাঠানো কয়েক বছর আগে পর্যন্ত কল্পবিজ্ঞান হিসেবে বিবেচিত হতো৷ এই প্রযুক্তির দৌলতে টিম সাইডেল তাঁর পুরানো জীবন আপাতত ফিরে পেয়েছেন৷

পেট্রা অটো/এসবি