নিয়োগ দুর্নীতিতে জেলবন্দি সাবেক মন্ত্রী আঙুল তুললেন রাজ্য প্রশাসনের দিকে। অন্যদিকে চার শিক্ষক ধৃত।
বিজ্ঞাপন
এক বছরের বেশি সময় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের সাবেক মহাসচিব পার্থকে দল পদ থেকে সরিয়ে দিলেও তিনি বার বার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। নিজেকে নির্দোষও বলেও দাবি করেছেন। সেই পার্থের মুখে ভিন্ন সুর ধরা পড়েছে।
সোমবার পার্থ আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে নিজেই সওয়াল করেন। নিয়োগের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন তিনি। বলেন, দপ্তরের প্রধান সচিব বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে জানান। মুখ্যসচিবের কাছ থেকে বিষয়টি যায় মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে।
শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকাকে নির্দোষ দেখাতে এই সওয়াল করলেও পার্থ বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপারিশকর্তা নন, নিয়োগকর্তাও নন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আমার আনুগত্য ছিল, আছে ও থাকবে।''
যদিও বিরোধীদের ব্যাখ্যা, আদতে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরকেই কৌশলে দায়ী বলতে চেয়েছেন পার্থ। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ''আমরা অনেকবার বলেছি, মাথাদের ধরতে পারছে না কেন্দ্রীয় সংস্থা। সাবেক মন্ত্রী সেই মাথার দিকে আঙুল তুলেছেন।''
এসএসসি কেলেঙ্কারিতে মন্ত্রী গ্রেপ্তার, বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২২ কোটি
দীর্ঘ জেরার পর গ্রেপ্তার করা হলো পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এসএসএসি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে। পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বাড়ি থেকে ২২ কোটি উদ্ধার। তার দাবি, পার্থই টাকা রাখতে বলেছিলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শুক্রবার সকাল থেকে জেরা
শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র অফিসাররা পৌঁছে যান পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে। পার্থ তখন ঘুমাচ্ছিলেন। তাকে ঘুম থেকে তুলে শুরু হয় জেরা ও তল্লাশি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
২৭ ঘণ্টা ধরে জেরা
গ্রেপ্তার করার আগে ২৭ ঘণ্টা ধরে জেরা করে ইডির অফিসাররা। শুধু পার্থের বাড়ি নয়, মোট ২০টি জায়গা তল্লাশি চালান ইডি-র কর্মকর্তারা। প্রায় ৯০ জন ইডি কর্মী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাতে থাকেন। উপরের ছবিতে কলকাতার নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাড়ি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২২ কোটি উদ্ধার
তল্লাশির সময় অভিনেত্রী ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের ফ্ল্যাট থেকে ২২ কোটি টাকা উদ্ধার করে ইডি। টাকা অর্পিতার শোয়ার ঘরের আলমারিতে চটের বস্তায় রাখা ছিল। অর্পিতা ইডি-র অফিসারদের জানিয়েছেন, পার্থই তার কাছে টাকা রেখেছিলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাতভর টাকার হিসাব
ইডি-র অফিসাররা ব্যাংক থেকে দশটি টাকা গোনার মেশিন ও কর্মীদের নিয়ে আসেন। সারারাত ধরে টাকা গোনা হয়। দেখা যায়, ২২ কোটি টাকা আছে। তাছাড়া ৫০ লাখ টাকার সোনার গয়না ও প্রচুর ডলার পাওয়া যায়। বেশ কিছু নথিপত্রও নিয়ে গেছে ইডি। অর্পিতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। উপরের ছবিতে অর্পিতার দক্ষিণ কলকাতার আবাসনের ফ্ল্যাটের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কীসের টাকা
আদালতে ইডি জানিয়েছে, অর্পিতা এসএসসি-তে বেআইনি নিয়োগের সঙ্গে জড়িত। তিনি অন্যতম চক্রান্তকারী। তার বাড়িই ছিল নিয়োগের আখড়া। সেই নথিপত্র ইডি পেয়েছে। মন্ত্রীর নামের সরকারি খামও পাওয়া গেছে। অর্পিতা ইডিকে জানিয়েছে, টাকাটা পার্থ চট্টোপাধ্যায তাকে রাখতে দিয়েছিলেন। তিনি এনিয়ে কিছুই জানেন না। ইডি এখন অর্পিতার বাড়ি থেকে পাওয়া বিদেশি মুদ্রা নিয়েও আলাদা মামলা করতে পারে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কে এই অর্পিতা?
অর্পিতা মুখোপাধ্যায় অভিনেত্রী। তিনি বাংলা ও ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাছাড়া তিনি নেল আর্ট করতেন। পার্থর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ফোনে অর্পিতা সারাদিন কথা বলতেন বলে অভিযোগ। তিনি দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী দুর্গাপুজোর সঙ্গেও জড়িত। এই পুজোর সঙ্গে পার্থও য়ুক্ত।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী বলছেন অর্পিতার মা
মেয়ের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তার মা মিনতি বলেন, ‘‘বাবা-মা যা চাইবে ছেলেমেয়ে কি সেটাই করবে? সেরকম হলে তো মেয়ের বিয়ে দিতে পারতাম। ওর কথা খবরে শুনেছি। তবে অর্পিতা এই কাজ করেছে কি না, সেই সত্যাসত্যও বিচার করা হবে।’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পার্থ হাসপাতালে
গ্রেপ্তার করার পর পার্থকে নিজেদের হেফাজতে রাখে ইডি। তারপর আদালতে পার্থ জানান, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। তখন আদালত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলে। এসএসকেএম হাসাপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। ইডি অবশ্য আপত্তি জানিয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইডির দাবি মেনে
ইডি পরে কলকাতা হাইকোর্টে জানায়, পার্থকে কল্যাণীর এইমসের চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখুন। কিন্তু বিচারপতি বলেন, কল্যাণীর এইমসের উপর তার ভরসা নেই। পরে তিনি নির্দেশ দেন, ভুবনেশ্বরের এইমসে পার্থর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তিনিকেতনে পার্থর বাড়ি?
শান্তিনেকতনে ছয়টি বাড়ি পার্থর বলে অভিযোগ উঠেছে। তারমধ্যে একটি বাড়ির কেয়ারটেকার বলেছেন, একটি বাড়িতে পার্থর আসা-যাওয়া ছিল। একটি সাত বিঘের জমিও পার্থর বলে অভিযোগ। তবে সরকারি আধিকারিকরা বলেছেন, তারা খোঁজ না করে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পার্থর বিরুদ্ধে অভিযোগ
পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তখন এসএসসি কেলেঙ্কারি হয়। পরীক্ষা দিয়ে যারা উঁচু স্থান পেয়েছে, তাদের চাকরি না দিয়ে, পয়সা দিয়ে নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। এই নিয়োগের বিরুদ্ধে কলকাতায় দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই এই অভিযোগের তদন্ত করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া
পার্থ চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম বরিষ্ঠ মন্ত্রী। মমতার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সৈনিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হামেশাই অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে রাজ্যের নেতাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু পার্থকে গ্রেপ্তার করার পর তৃণমূলের বক্তব্য, অভিযোগ প্রমাণ হলে দল ও সরকার ব্যবস্থা নেবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সিপিএমের প্রতিক্রিয়া
সিপিএম সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে এসএসসি চাকুরিপ্রার্থীদের হয়ে মামলা লড়ছেন। বিকাশরঞ্জনের প্রতিক্রিয়া হলো, ''পার্থ হচ্ছেন দাবার ঘুঁটি, ইডির উচিত হরিশ চ্যাটার্জি রোডে তল্লাশি করা। সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে।'' তার দাবি, ''ইডি যেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে ধরবে, সেদিন পুরো দুর্নীতি সামনে আসবে।'' সিপিএম কর্মীরা এখন বিভিন্ন জেলায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছবি: Abp Photo/Sudipta Bhowmick
বিজেপি, কংগ্রেসের অভিযোগ
বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এসএসসি নিয়ে বিক্ষোভ-মঞ্চে যান। তিনি টুইট করে পার্থ ও অর্পিতা নিয়ে সোচ্চার হন। দিলীপ ঘোষও তাই। কংগ্রেসও এসএসসি কেলেঙ্কারি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
14 ছবি1 | 14
বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ''মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যৌথ দায়িত্বের কথা বলেছিলেন। এই দুর্নীতির ক্ষেত্রেও তাই। একসময়ের মন্ত্রী তার সর্বোচ্চ নেতৃত্বের দিকে দায় ঠেলে দিয়েছেন।''
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, ''দল ও সরকারের পক্ষ থেকে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে,, তাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে মনোভাব স্পষ্ট। তার মন্তব্য নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।''
হাজতে 'অযোগ্য' শিক্ষকরা
পার্থের মন্তব্যে যেদিন রাজনীতি সরগরম, সেদিন প্রথমবার চার শিক্ষক জেলে গেলেন এই দুর্নীতির মামলায়। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা টাইগার হোসেন, সিমার হোসেন, জাহিরুদ্দিন শেখ ও সৌগত মণ্ডলের নাম রয়েছে সিবিআই চার্জশিটে। তারা সোমবার আলিপুর বিশেষ সিবিআই আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানান। বিচারক তাদের আদালত থেকে সরাসরি ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠান।
বিচারক বলেন, "চাকরির বিনিময়ে তাপস মণ্ডলকে এরাই টাকা দেন। সেই চাকরি ভোগও করেছেন তারা। তাদের জন্য বর্তমানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা জেলবন্দি।”
পার্থ গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিক্ষোভকারীদের দাবি, চাকরি চাই
প্রায় পাঁচশ দিন ধরে তারা প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর খুশি হয়েও তাদের দাবি, এবার চাকরি দিতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami /DW
গান্ধী মূর্তির নীচে
রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে এই শামিয়ানার নীচে আন্দোলনরত কয়েকশ চাকরিপ্রার্থী নারী পুরুষ আজও একটাই আশায় এখানে প্রতিদিন অবস্থান করেন, “একদিন সুবিচার অবশ্যই পাওয়া যাবে। তারা চাকরি পাবেন।
ছবি: Subrata Goswami /DW
পার্থর বিরুদ্ধে
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের এই আন্দোলন, সেই দফতরেরই সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে গত শুক্রবার ইডির আধিকারিকরা ২৭ ঘণ্টা তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার করেন। এতে খুশি বিক্ষোভকারীরা। এসএসসি-কেলেঙ্কারি যখন হয়, তখন পার্থ শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তখন থেকেই পার্থর বিরুদ্ধে সোচ্চার বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু তারা এখন অবিলম্বে চাকরি চান।
ছবি: Subrata Goswami /DW
ববিতার দাবি
২০২১ সালে ব্যক্তিগত ভাবে মামলা করেন ববিতা সরকার। পরবর্তীকালে তিনি জয়ী হন এবং সরকার তাকে চাকরি দিতে বাধ্য হয়। ববিতার মামলার জেরেই ব্যাপারটা ইডি ও সিবিআই পর্যন্ত গড়ায়। পার্থর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমে ববিতা বলেছেন, ''এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আমরা কী কারণে বঞ্চিত হয়েছি। তবে এটা সফল্য কি না জানি না, এটুকু বলতে পারি, কেউই আইনের ঊর্ধে নয়।''
ছবি: Subrata Goswami /DW
ক্যানসার আক্রান্ত সোমার কথা
এসএসসি দুর্নীতির পাশাপাশি ক্যানসারের মত মারণরোগের বিরুদ্ধেও লড়াই চালাতে হয়েছে সোমাকে। সোমার অবশ্য চাকরি হয়েছে, তবু আন্দোলনের মঞ্চকে ভুলে যাননি সোমা। সোমা আজও সুযোগ পেলে অবস্থান মঞ্চে আসেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ''জানতাম দুর্নীতি হয়েছে, তবে তার শিকড় যে এত দূর বিস্তৃত তা জানতাম না। তবে যদি উনি দোষী সাব্যস্ত হন, কঠিন শাস্তি চাইব।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
চাকরি চান মইদুল
যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের প্রেসিডেণ্ট মইদুল ইসলাম। আন্দোলন চলাকালীন আট দিনের সন্তানের মৃত্যুও দেখতে হয়েছে তাকে। তিনি জানালেন, তারা এই গ্রেপ্তারিতে দুঃখিত নন আবার খুশিও নন। কারণ তারা যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই আছেন। তারা চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেলে খুশি হবেন।
ছবি: Subrata Goswami /DW
রাসমণির বক্তব্য
পূর্ব মেদিনীপুরের রাসমণি মাইতির গলায় কান্নার সুর। ''প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক কটাক্ষ সবকিছু উপেক্ষা করে দিনের পর দিন এই আন্দোলনে অবস্থান করছি। এমন একটা রাজ্যে বাস করি যে রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী দুর্নীতির দায়ে ইডির হেফাজতে, এর থেকে লজ্জার কী হতে পারে?''
ছবি: Subrata Goswami /DW
রুকসানার কাছে আশার আলো
পার্থ চট্টোপধ্যায়ের গ্রেপ্তারিতে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন মালদার রুকসানা খাতুন। বললেন, ''সব দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসুক তবে এর সঙ্গে আমাদের নিয়োগটাও প্রয়োজন।''
ছবি: Subrata Goswami /DW
কেলেঙ্কারির অংশ, বলছেন মনোজ
মনোজ ঘোষ বললেন, ''সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এই গ্রেপ্তারিটাও কেলেঙ্কারির একটা অংশ, এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।''
ছবি: Subrata Goswami /DW
যারা ঘুষ দিয়েছেন তাদের শাস্তি চান সুদীপ
যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের স্টেট কো-অর্ডিনেটর সুদীপ মণ্ডল বললেন, ''যারা ঘুষ খেয়েছে তারা যেমন অপরাধী, যারা দিয়েছেন তারাও দোষী। তাদের বিচারও আদালতের মাধ্যমেই হোক।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
এবার চাকরি চান তনয়া
নদিয়ার তনয়া বিশ্বাস বললেন, ''দুর্নীতির আর কত প্রমাণ প্রয়োজন? যেখানে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং স্বীকার করে নিয়েছেন যে দুর্নীতি হয়েছে। ২০১৯ সালে উনি নিজে এসে আমাদের বলে গিয়েছিলেন যে প্রয়োজন হলে আইন বদল করেও আমাদের নিয়োগ করা হবে, কোথায় গেল সেই সব কথা? কাজেই এই গ্রেপ্তারি নিয়ে আমাদের আলাদা কোনও উচ্ছ্বাস নেই। যতক্ষণ না আমাদের চাকরি হচ্ছে আমাদের মুখে হাসি ফিরবে না।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিয়োগপত্র চান সুদীপ
মুর্শিদাবাদের সুদীপ সাহার বক্তব্য তার হাতের পোস্টারেই লেখা রয়েছে। জানালেন, ''গ্রেপ্তার, বিচার, জিজ্ঞাসাবাদ সব চলুক, কিন্তু আগে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগপত্রটা দিক''
ছবি: Subrata Goswami/DW
11 ছবি1 | 11
সিবিআই সূত্রের খবর, বেসরকারি কলেজ সংগঠনের মাথা তাপস মণ্ডলকে এই শিক্ষকেরা ২৩ লক্ষ টাকা দেন নিয়োগের জন্য। জেলবন্দি সাবেক তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষের মাধ্যমে এই টাকা তাপসের কাছে পৌঁছয়।
সিবিআই আগামীকাল বাঁকুড়ার সাত জন প্রাথমিক শিক্ষককে তলব করেছে। নিয়োগ সংক্রান্ত নথি নিয়ে তাদের হাজিরা দিতে হবে কলকাতার নিজাম প্যালেসে।
শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি
দুর্নীতি মামলায় নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কের গ্রেপ্তার হয়েছেন। জেলে রয়েছেন নিয়োগকারী সংস্থার সাবেক উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। এই প্রথমবার ‘অযোগ্য' শিক্ষকদের গ্রেপ্তার করা হল।
ওএমআর শিটে কারচুপি থেকে সাদা খাতা জমা দেয়া, নানা অভিযোগ উঠে এসেছে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে। সন্দেহের ঘেরাটোপে রয়েছেন অনেক কর্মরত শিক্ষক। এবার তাদের গ্রেপ্তারি গোটা শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''এরা শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক। তবে এদের দিয়ে সব শিক্ষককে বিচার করা যাবে না। নিচুতলায় একদল সুযোগসন্ধানী থাকবে। তাদের দুর্নীতির সুযোগ করে দিচ্ছে কারা?''
এই 'মাথাদের' কেন ধরা হচ্ছে না, প্রশ্ন উঠছে। অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক চন্দন মাইতি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''হাজার হাজার শিক্ষককে এভাবে গ্রেপ্তার করবে? জমি-জায়গা বেচে টাকা যাদের দেয়া হল, সেই টাকা যারা লোপাট করল, তাদের উঁচুতলার মাথাদের ইডি-সিবিআই সেভাবে ট্র্যাক করেনি। কেউ কেউ জামিনে ছাড়া পেতে শুরু করেছেন।''
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''শিক্ষকদে মান-মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করার জন্য সরকার পরিকল্পনা করে নেমেছে। শিক্ষক সমাজ সেই ফাঁদে পা দিয়েছে। এর প্রতিকারে আন্দোলনে নামা ছাড়া উপায় নেই।''
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''যে শিক্ষকরা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাদের শাস্তি প্রাপ্য। কিন্তু যারা তাদের কাছ থেকে টাকা নিল, সেই টাকা উদ্ধার করে ওই শিক্ষক বা চাকরিপ্রার্থীদের ফেরাতে হবে। সেটা কেউ হজম করে ফেলবে, তা যেন না হয়।''
প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন
শিক্ষকরা যখন অবৈধ ভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হচ্ছেন, তখন প্রশ্ন উঠছে প্রাথমিকের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিয়ে। প্রশিক্ষণ না থাকলে ক্লাস নেয়া কি নিয়মবিরুদ্ধ নয়? এই সওয়াল করছেন চাকরি বঞ্চিতেরা।
২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরা ২০২০ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরি পেয়েছেন। তাঁরা এখন কর্মরত। নিয়োগের পর চাকরিপ্রার্থীদের ব্রিজ কোর্স করার কথা থাকলেও তা সম্পন্ন করেননি প্রায় ছ'হাজার চাকরিপ্রার্থী। এজন্য তারা 'বি' ক্যাটাগরির বেতন পেয়ে থাকেন। এদের নিয়োগ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। অপ্রশিক্ষিতরা কীভাবে চাকরি করছেন? এই প্রশ্ন তুলে শিক্ষকদের নিয়োগ বাতিলের দাবি করা হয়েছে মামলায়।
মামলাকারীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিক পর্ষদের রিপোর্ট তলব করেছেন। ১৮ অগাস্ট এই সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেবে বোর্ড। পরবর্তী শুনানি ২১ আগস্ট। সোমবার রাজ্যের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি, বক্তব্য পেশ করবে সেই দিন।
জামিনে প্রশ্ন ইডিকে
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রথম জামিন পেলেন তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপা। একাধিকবার তলবের পর গত বছরের ১১ অক্টোবর ইডি'র হাতে গ্রেপ্তার হন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মানিক। তারপর স্ত্রী ও ছেলে সৌভিককেও গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন শতরূপাকে। একইসঙ্গে ইডি'র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিচারপতি বলেন, ''শতরূপা ভট্টাচার্য কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এমন প্রমাণ ইডি'র কাছে নেই। তিনি পালিয়ে যেতে পারেন এবং নথি বিকৃত করতে পারেন এই মর্মে আশঙ্কাও প্রকাশ করেনি ইডি।''
হাইকোর্টের নির্দেশে ৫০ হাজার টাকার দুটি বন্ডে জামিন পান শতরূপা। পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে তাকে। করতে হবে তদন্তে সহযোগিতাও। রাজ্যের বাইরে যাওয়ার আগে বিশেষ আদালতকে জানাতে হবে।