‘‘একবার আমি গিয়েছিলাম পাহাড়ি অঞ্চল/পাহাড়ি মেয়েটার কি চোখ দুটো ছলছল/ছল, নাকি জল?/ মেয়ে তুই বল, জল, কেন চোখে জল?''
বিজ্ঞাপন
কাপেং ফাউন্ডেশন চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত যে মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছিল, সেখানে দেখা গেছে, এই সময়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের ওপর ২৪টি নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২১টি ঘটেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে, তিনটি সমতলে। ছবি: Abu Sufian Jewel/ZUMA/picture alliance
কোক স্টুডিও বাংলার সাম্প্রতিক সময়ের জনপ্রিয় গান ‘বাজি'র এই কথাগুলো, কিংবা ওই গানে আদিবাসী বাদ্যযন্ত্রের মাধুর্য্য শুনতে শুনতে আপনি যদি জানেন, এক কিশোরিকে ধর্ষণের প্রতিবাদে অবরোধ চলাকালে খাগড়াছড়িতে গুলিতে তিনজন মারমা সম্প্রদায়ের মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, পরিবারগুলোতে চলছে আহাজারি, বাড়ি পুড়েছে অনেক মানুষের, কান্না থামছে না তাদেরও, তখন রূপক অর্থে হলেও বোধহয় বোঝা যায় কেন পাহাড়ের মানুষের চোখে জল! আচ্ছা, পার্বত্য শান্তিচুক্তি হলো তা-ও তো ২৮ বছর!
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি। সবাই আশা করেছিল এবার বুঝি সহিংসতা আর চোখের জল থামবে৷ কিন্তু জটিল রাজনীতি আর নানা মারপ্যাচে শান্তি তো আসেইনি, উল্টো গত ২৮ বছরে বারবার হামলা, পাল্টা হামলা, সহিংসতা হয়েছে। প্রাণ গেছে শত শত মানুষের। এই তো ২০১২ ও ২০২৪ সালের এই সেপ্টেম্বরেই পার্বত্য এলাকায় ভয়াবহ সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটলো। এই সংঘাত আর প্রাণহানির শেষ কোথায়?
ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান কাপেং ফাউন্ডেশন খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সংঘাতের পুরো ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়, ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনেরা। রাতেই তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পাহাড়ের আদিবাসী ও বাঙালিদের অনুভূতি ও প্রত্যাশা
খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুন্ম ছাত্র জনতা’র ব্যানারে আন্দোলন চলাকালে গুইমারা রামেসু বাজারে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চলে। গুলিতে নিহত হন তিনজন৷ পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর উপায় নিয়ে ডিডাব্লিউয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন স্থানীয়রা৷
ছবি: AFP
শান্তি ফেরানোর জন্য কী করা উচিত জানি না: আতুয়াই রাখাইন, স্বর্ণ দোকানি
আমি ১৩ বছর ধরে দোকান করছি। পেছনে আমার থাকার ঘর। কখনো এভাবে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, আগুন দেওয়া হবে বুঝতে পারিনি। আমার সব শেষ। আমাদের এখন থাকার জায়গা নেই। এই দোকান থেকে আমার মা-বাবা স্ত্রী চলতো। বোনের লেখাপড়ার খরচ আসে। এখন সব শেষ। শান্তি ফেরানোর জন্য কী করা উচিত সেটা আমি জানি না। তবে আমরা শান্তি চাই।
গুইমারায় এই ধরনের ঘটনা আমি আগে দেখিনি। পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের ঘটনা এড়াতে হলে সবাইকে সচেতন করতে হবে। উসকানিতে পা দেওয়া যাবে না। শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে হবে। আর গুজবে কান দেওয়া যাবে না।
ছবি: Pranab Baul/DW
আর কারো বুক খালি না হোক: নিহত গাড়িচালক থৈইচিং মারমার বাবা হলাচেই মারমা
আমি মামলা করতে চাই না। কোনো ঝামেলায় পড়তে চাই না। ছেলে হত্যার বিচার চাই। বিচার সরকার করবে। আমার মতো কোনো বাপ-মার বুক খালি হোক। আমার ছেলে তো রাজনীতি করে না। তবু কেন তাকে মরতে হলো!
ছবি: DW
চুক্তির ধারা সংস্কার করে বাস্তবায়ন করা হোক: মো. তাজুল ইসলাম, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালি ছাত্র পরিষদ, রাঙামাটি জেলা
সংঘাতের জন্য মূল দায়ী পাহাড়ের ৭টি সশস্ত্র সংগঠন। খাগড়াছড়ি়র ঘটনা পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র এনে ইউপিডিএফ ঘটিয়েছে। ধর্ষণের বিচার সবাই চাই। কিন্তু প্রতিবাদ করতে গিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করবেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাংশকে বিতাড়িত করবেন, সেটা হয় না। ৯৭ সালে হওয়া চুক্তির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এটা একপাক্ষিক চুক্তি। ওই পক্ষকে ৮০ শতাংশ সুবিধা দেওয়া হয়। এখন সেই চুক্তির ধারা ফের সংস্কার প্রয়োজন।
ছবি: Pranab Baul/DW
‘আইন’ যদি স্বজনপ্রীতি না করে তাহলে শান্তি সম্ভব: সাহ্লাপ্রু মারমা, উন্নয়নকর্মী, গুইমারা খাগড়াছড়ি
রামেসু বাজার বা পাড়ায় আমাদের এখানে কোনো রাজনীতি নেই। কিন্তু এই পাড়াকে কেন টার্গেট করা হলো জানি না। পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর দায়িত্বটা নীতি নির্ধারকদের। আমরা শান্তি চাই। সম্প্রীতি চাই। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতো না। ‘আইন’ যদি স্বজনপ্রীতি না করে তাহলে শান্তি সম্ভব। একজন ধর্ষককে বাঙালি বা পাহাড়ি হিসেবে না দেখে অপরাধী হিসেবে দেখে আইনের আওতায় আনতে হবে।
ছবি: Pranab Baul/DW
শান্তির পথ জানি না: আপ্রুসি মারমা, রামেসু বাজার
আমি ২৩ বছর দোকান করছি রামেসু বাজারে। আমার দোকান ও বাড়ি-ঘর সব ভাঙচুর করা হয়েছে। আমি এই ধরনের ঘটনা দেখিনি। আমরা সাধারণ মানুষ। শান্তিতে থাকতে চাই। রাজনীতি করি না। তারপরও কেন আমাদের সম্পদ ধ্বংস করা হলো? আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা দিতে পারেনি। কীভাবে শান্তি ফেরানো যায় তা আমাদের জানা নেই।
ছবি: Pranab Baul/DW
অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে: ঝুন্টু পাল, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী
আমার ১৫ বছরের প্রতিষ্ঠান। মিল, গুদাম সবকিছু পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতি পাঁচ কোটি টাকার বেশি। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র রয়েছে। অস্ত্রধারীদের হাত থেকে তা উদ্ধার করতে হবে। অনেক ভারি ভারি অস্ত্র রয়েছে। এ জন্য নানা সমস্যা হচ্ছে।
ছবি: Pranab Baul/DW
চুক্তির আলোকে যদি নতুন করে নীতি নির্ধারণ করা হয়, তাহলে শান্তি ফেরানো সম্ভব: আনন্দ জ্যোতি চাকমা, সহকারি অধ্যাপক, রাঙামাটি বিএম ইনস্টিটিউট
এটা দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা। ১৯৭৫-এর পর এখানে যখন বিভিন্ন নদী ভাঙন এলাকার লোক এনে জড়ো করা হয়, তখন থেকে পাহাড়িরা সংখ্যালঘু হয়েছে। ফলে পাহাড়িদের অধিকার খর্ব হচ্ছে। এ জন্য চুক্তি হয়। কিন্তু ২৮ বছরেও চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। সরকার আন্তরিক হলে সমাধান সম্ভব। পাহাড়িদের শাসন করার জন্য পলিসি করলে হবে না। চুক্তির আলোকে যদি নতুন করে নীতি নির্ধারণ করা হয়, তাহলে শান্তি ফেরানো সম্ভব।
ছবি: Pranab Baul/DW
চুক্তি বাস্তবায়ন হলেও সমস্যা মিটবে না: সুস্মিতা চাকমা, মানবাধিকার কর্মী, ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল লাদেশ (টিআইবি)-র সদস্য
শান্তি আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া খুব কঠিন বিষয় না। তবে কোনো পক্ষ যদি না চায় তাহলে তো সম্ভব না। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে রাজনৈতিক মেরুকরণ, এখানে শান্তি আসুক একটা বা একাধিক পক্ষ সেটা চায় না। সমস্যা জিইয়ে রাখতে চায় তারা। যখন পার্বত্য চুক্তি করা হয়েছিল, তখন পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যা থাকতো না। এখন বাস্তবায়ন হলেও সমস্যা মিটে যাবে, তা নয়। কারণ, অনেক স্বার্থন্বেষী মহল এখন জড়িত।
ছবি: Pranab Baul/DW
সেনাবাহিনী থাকুক, তবে সেনা শাসন নয়: রাজীব চাকমা, রাঙামাটি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক
এক কথায় যদি বলি, এখানে যে অপারেশন উত্তরণ বলবৎ আছে, সেটা বন্ধ করা গেলে সমস্যা অনেকটা মিটে যাবে। সেনাবাহিনী পাহাড়ে থাকুক, তবে তাদের শাসন নয়। পাহাড়ে যে সমস্যা বা সংঘাতগুলো হচ্ছে, সেগুলোতে কোনো না কোনোভাবে বিভিন্নপক্ষের ইন্ধন রয়েছে। গত বছর আঞ্চলিক পরিষদ যেখানে পোড়ানো হলো, তার সামনেই সেনা রিজিওন। তারপরও ঘটনা থামানো যায়নি।
ছবি: Pranab Baul/DW
10 ছবি1 | 10
ওই ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করলেও স্থানীয়রা ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরো তিনজনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা' ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেয়। সেই দাবি পুরণ না হওয়ায় খাগড়াছড়িতে তারা অবরোধ ডাকে। পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ এই অবস্থায় ২৭ সেপ্টেম্বর মহাজনপাড়ায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হলে কয়েকজন আহত হয়। পরিস্থিতির অরো অবনতি হয় ২৮ সেপ্টেম্বর।
ওইদিন বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র পরিণত হয় খাগড়াছড়ির গুইমারার রামেসু বাজার। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিতে তিনজনের মৃত্যু হয়। তিনজনই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর। এরা হলেন, উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের দেবলছড়ি চেয়ারম্যান পাড়ার আথুই মারমা (২১), হাফছড়ি ইউনিয়নের সাং চেং গুলিপাড়ার আথ্রাউ মারমা (২২) ও রামেসু বাজার বটতলার তৈইচিং মারমা (২০)। এছাড়া সংঘর্ষে সেনাবাহিনীর মেজরসহ আহত হন অন্তত ২০ জন। এ সময় গুইমারার রামেসু বাজার এলাকায় প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি ও ৪০টির মতো দোকান আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার কয়েকদিন পর গণমাধ্যমে যেসব খবর ও ছবি এসেছে, তাতে জানা যাচ্ছে, তিনজনের প্রাণহানির পাশাপাশি আগুনে অনেকের বসতবাড়িপুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বিশেষত, গুইমারার রামেসু বাজার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। খাগড়াছড়ি শহরসহ আশপাশের উপজেলার লোকজন কাপড় কিনতে এখানে ছুটে আসেন। এবারের আগুনে কাপড়ের দোকানগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর যাদের বসতবাড়ি গেছে, তাদের আহাজারির শেষ নেই।
২৮ অক্টোবর রোববার বিক্ষোভ ও সহিংসতার সময় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় মিবু মারমার বাড়ি ও খাবারের দোকান। গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে মিবু মারমা চোখে জল নিয়ে আফসোস করে বলছিলেন, ‘‘আমার ঘর-বাড়ি না পুড়ে, আমাকেও আগুনের মধ্যে দিয়ে দিতো। তাহলে আর এত দুঃখ–কষ্ট সহ্য করতে হতো না।'' বসতবাড়ি ও দোকান পুড়ে যাওয়ায় সামনের দিন নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন মিবু মারমা। তার বেদনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আগুন থেকে মেয়ের আদুরে বিড়ালকে রক্ষা করতে না পারার কষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘কিছুই নাই, সব ছাই। ছাইয়ের ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। ঢুকেও গিয়েছিলাম। কিন্তু স্বজনেরা আটকিয়েছিলেন। আমার ঘর-বাড়ি না পুড়ে, আমাকেও আগুনের মধ্যে দিয়ে দিতো, তাহলে আর এত দুঃখ–কষ্ট সহ্য করতে হতো না।''
পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি ফেরা বিষয়ে নাগরিক ভাবনা
পাহাড়ে শান্তি আনতে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি হয়েছিল৷ কিন্তু এখনও মাঝেমধ্যে পাহাড় অশান্ত হয়ে ওঠে৷
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS
‘আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে’
মানবাধিকার কর্মী ইলিরা দেওয়ান বলেন, পাহাড়ে শান্তি না ফেরার অন্যতম কারণ পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া৷ চুক্তি সইয়ের সময় উভয় পক্ষের মধ্যে কিছু অলিখিত চুক্তিও হয়েছিল, যেগুলির কোনোটিই আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৫ বছরে বাস্তবায়ন না করে পাহাড়ি জনগণের সাথে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে৷ পাহাড়ে বৈষম্য হ্রাসে এখনও কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলেও মনে করেন তিনি৷
ছবি: DW
মনমানসিকতার পরিবর্তন আনা উচিত’
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: নবীর উদদীন বলেন, শান্তি চুক্তির সব গুলো ধারা বাস্তবায়ন না করার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে৷ তাছাড়া আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা যেমন বাংলাদেশি তেমনি পাহাড়িরাও বাংলাদেশের নাগরিক৷ তারাও পাহাড়ে বসবাস করতে পারবেন৷ আমাদের সকলের মনমানসিকতার পরিবর্তন আনা উচিত৷ তাহলেই পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে৷
ছবি: DW
‘ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি আইন হয়েছে, বিধিমালা হয়নি’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘‘চুক্তির পর আমরা চেয়েছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি করতে সরকার উদ্যোগ নেবে৷ চুক্তি হলো, আইন হলো৷ ভূমি কমিশনও করা হলো৷ কমিশনের কাজ ছিল ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি করা৷ ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন করা হলো৷ এর বয়স ২৭ বছর৷ কিন্তু এ আইনটি কার্যকর করতে এখনো বিধিমালা করা হয়নি৷’’
ছবি: DW
‘পারস্পরিক বন্ধুত্বের বিশ্বাস তৈরি করা দরকার’
কবি হাসান রোবায়েত বলেন, ‘‘পাহাড় কেবল আমাদের কাছে রোমান্টিসিজমে ভরা একটি বিষয়৷ কিন্তু পাহাড়িদের স্ট্রাগল সম্ভবত আমরা কম মানুষই রিয়েলাইজ করি৷ আমি মনে করি পাহাড়ের আদিবাসীরা বাংলাদেশের অর্নামেন্ট৷ তাদের স্বতন্ত্র জীবনযাপনের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত৷ পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্বের বিশ্বাস তৈরি করা দরকার৷
ছবি: DW
‘মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব আছে’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রিয়াসী চাকমা বলেন, আদিবাসীদের শুধু সাংবিধানিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে তা নয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর আদিবাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে তাতে মনস্তাত্ত্বিকভাবেও বিচ্ছিন্ন করে দেখার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে৷ ৷ তারা শিক্ষিত হওয়ার পরও উত্তেজনা সৃষ্টির মতো কাজে কন্ট্রিবিউট করে যাচ্ছেন, সাথে কিছু মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব তো আছেই৷
ছবি: DW
‘নৈতিক শিক্ষায় জোর দিতে হবে’
আলোকচিত্রী সুমন পাল বলেন, ‘‘আমার মনে হয় বৈষম্য দূর করার জন্য সমাজের মানুষের মানসিকতা ও মূল্যবোধের পরিবর্তন এবং নৈতিক শিক্ষায় জোর দিতে হবে৷ আজকে পাহাড়ে যে আন্দোলন হচ্ছে তাতো আজকের নতুন ঘটনা না, সেতো চলমান এবং আন্দোলনের যৌক্তিকতা চিন্তা করে সবার সাথে বসে শান্তির পথে আসাটাও জরুরি৷’’
ছবি: DW
‘রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাব’
শিক্ষার্থী ও অ্যাক্টিভিস্ট পদ্মিনী চাকমা মনে করেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাব এবং দীর্ঘমেয়াদী অবহেলা এই প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিয়েছে৷ জাতীয় রাজনীতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার কথা বেশিরভাগ সময় কেন্দ্রীয় আলোচনার বাইরে থাকে৷ বাংলাদেশ রাষ্ট্র আদিবাসী মানুষদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার স্বীকার করতে চায় না৷
ছবি: DW
‘সংবেদনশীল মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করেনি’
বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতা দনওয়াই ম্রো বলেন, পাহাড়ে শান্তি না ফেরার কারণ রাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্তিমূলক যৌক্তিক দাবি-দাওয়াগুলোকে কোনোবারই সংবেদনশীল মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করেনি৷ উন্নয়ন, সন্ত্রাস দমনের নাম করে শক্তি প্রয়োগের পথ পরিহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনীতির সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঠিক করার আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: DW
পক্ষপাতমূলক আচরণ সংঘাত বাড়ায় তোলে’
নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সফটওয়্যার ডেভেলপার জয় ধন চাকমা বলেন, পাহাড়িদের মধ্যে একটি ধারণা আছে যে, সংঘাতের পেছনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মদদ রয়েছে৷ পাহাড়িদের অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতিতে অপরাধের সাথে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও অনেক নিরীহ পাহাড়ি জনগণকে আটক করে, অথচ বাঙালি পক্ষ থেকে কাউকে ধরার ঘটনা খুবই কম৷ পক্ষপাতমূলক আচরণ সংঘাত বাড়িয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
এমনআহাজারি অসংখ্য মানুষের, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সেগুলো ছড়িয়েছে। এর মধ্যেই জানা গেল, খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষার পর ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে প্রতিবেদন জেলা সিভিল সার্জনের কাছে জমা দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। সেখানে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত মেলেনি বলে জানানো হয়েছে। ফেসবুকেও মেয়েটির নামসহ এই রিপোর্ট ছড়িয়ে পড়েছে।
জুম্ম ছাত্র-জনতার মুখপাত্র কৃপায়ন ত্রিপুরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘এটি সরকারের একটি পরিকল্পিত মনগড়া প্রতিবেদন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের পরীক্ষার প্রতিবেদন এত দ্রুত কখনো দেওয়া হয়েছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। আর বিভিন্নজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাভাবে ভুক্তভোগী কিশোরীর ছবি দিচ্ছেন, এটিও একটি অপরাধ। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।''
ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের নিপীড়নের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। কাপেং ফাউন্ডেশন চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত যে মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছিল, সেখানে দেখা গেছে, এই সময়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের ওপর ২৪টি নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২১টি ঘটেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে, তিনটি সমতলে। ছয়জন নারী ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। দুজন নিহত হয়েছেন।
এবার খাগড়াছড়ির গুইমারা যখন পুড়ছিল তখন খাগড়াছড়ি শহরেই বৈঠকে বসেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম–বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। বৈঠকে ছিলেন জেলা প্রশাসক, পুলিশপ্রধানসহ জেলার শীর্ষ কর্তারা। তবে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। অতীতের সরকারগুলোর মতোই এই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, একটি মহল খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটছে। অথচ এমন একটা ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মানবিক দিক বিবেচনা করে কথা বলতে পারতেন!
সহিংসতার এই ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে, যদিও এমন কমিটি নতুন কিছু নয়। বরং অতীতে এমন ঘটনা বারবার ঘটেছে। প্রতিবার তদন্ত কমিটি হয়, উত্তেজনা থিতিয়ে আসলে প্রতিবেদনও দেওয়া হয়, কিন্তু সেগুলো আর কেউ দেখেন না।
রাঙামাটিতে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের সংঘাতের শুরুটা হয়েছিল রাঙামাটি সরকারি কলেজে শ্রেণিকক্ষে বসা নিয়ে, পাহাড়ি ও বাঙালি শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়েছে এমন গুজবকে কেন্দ্র করে। পাহাড়িরা বাঙালি শিক্ষার্থীকে মেরেছে- এমন কথা শহরময় রটে যায়। কিন্তু কখন কীভাবে ঘটনার শুরুটা হয়েছিল, কে কাকে মেরেছিল, তা আর পরে জানা যায়নি। তবে গুজব শুনেই পাহাড়িদের ওপর হামলা শুরু হয়। একাধিক বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। শহরের সুপরিচিত চিকিৎসক সুশোভন দেওয়ান হামলায় আহত হন। সজ্জন এই চিকিৎসক চিরতরে একটি চোখ হারান। আহত হন অনেক পাহাড়ি। ঘটনার পর এর কারণ কিংবা দায়ী কারা, তা নিয়ে আর কেউ উচ্চবাচ্য করেনি।
এর ঠিক এক যুগ পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মো. মামুন নামের এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি-বাঙালিদের সহিংসতার গণপিটুনিতে ধনঞ্জয় চাকমা নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। রাতে আবার এ ঘটনায় জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তাতে নিহত হন দুই পাহাড়ি যুবক।
পাহাড়ে শান্তি ফেরানোর উপায় : পাহাড়ের মানুষেরা যা ভাবছেন
পাহাড়ে এতদিনেও শান্তি ফিরছে না কেন? কী কী করলে শান্তি ফিরতে পারে সেখানে? এ বিষয়ে নিজেদের মত জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষ এবং জনপ্রতিনিধিরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
কি কি উ মারমা, ছাত্র
আমার মনে হয়, রাজনৈতিক ইস্যুর কারণে সৃষ্টি হয়েছে এসব খুন, গুম, অপহরণ৷ তাই অচিরেই এর রাজনৈতিক সমাধান দরকার৷ সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে সশস্ত্র দলগুলো যে সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে, এতে বলি হচ্ছেন আদিবাসীরাই৷ সেটি অচিরেই বন্ধ না হলে আর কত প্রাণ যাবে জানি না! তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি একটা সমাধানের পথ বের করার জন্য সরকারের কাছে আকুল মিনতি করছি৷
ছবি: DW
হ্লা য়ই চিং মারমা, শিক্ষক
আমি মনে করি, স্বাধীনতার পর পাহাড়ে যে অশান্তির দাবানল ছড়ায় সেটি ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল৷ বেশ সুন্দর পরিবেশে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ ছিল বান্দরবানের ১১টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ও বাঙালি৷ কিন্তু ইদানীং এই জনপদ অশান্ত হয়ে উঠেছে৷ বিপথগামী কিছু সংগঠনের নেতাদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনা যায় কিনা তা বিবেচনার আহবান জানাচ্ছি৷
ছবি: DW
বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, সাংবাদিক
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সশস্ত্র দলের উপদল সৃষ্টি হওয়ার ফলে হত্যা,পাল্টা হত্যা, গুম,অপহরণ চাঁদাবাজিসহ নানা ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে৷ এগুলো আমার মনে হয় আসল সমস্যা না৷ মূল সমস্যাটা হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যা৷ রাজনৈতিক সমস্যাকে যদি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা না হয়, এই উপসর্গগুলো দূর হবে না৷ রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে দূর করতে হলে অচিরেই পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে৷
ছবি: DW
খামলাই ম্রো, সাকেব উপজেলা চেয়ারম্যান
আমরা চার-পাঁচ বছর আগে দেখেছি খাগড়াছড়িতে,রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, এখন সেটা বান্দরবানেই বেশি হচ্ছে৷ গত দুই বছর থেকে কেন এভাবে বান্দরবানে শুরু হলো এটা একটু ভাবা উচিত৷ কোনো এক পক্ষ যদি শুধু দায়িত্ব নেয়, তাহলে সমাধান করা সম্ভব না৷ সাধারণ জনগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারকে সততা ও সদিচ্ছার সাথে এক হয়ে কাজ করতে হবে, না হলে সমাধান আসবে না৷
ছবি: DW
ক্যশৈপ্রম্ন খোকা, অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ও চার্চের যাজক
হিংসা, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধ নেয়ার নীতি পবিত্র বাইবেলে যীশু খ্রিষ্টের দেয়া শিক্ষা অনুমোদন ও সমর্থন দেয় না৷ বরং যীশু বলে গেছেন, সবার সাথে সহাবস্থান করতে এবং শত্রুকেও ভালবাসা দিয়ে ক্ষমা করে দিতে৷ ঘাত-প্রতিঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি রাজনৈতিক বিশেষ স্বার্থ উদ্ধারের পন্থা মাত্র৷ ক্ষমাশীল মনোভাব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এলেই আমরা আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের শতভাগ শান্তি, সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে পারবো৷
ছবি: DW
লেলুং খুমি, উন্নয়নকর্মী
জেএসএস ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য যে আন্দোলন করছে, তা নস্যাৎ করতে অন্যান্য দলগুলো সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংঘাত, মারামারি, খুন, গুম বন্ধ করা দরকার৷ সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে অসম্ভব কিছু নেই৷ পাহাড়ি—বাঙালি, কিংবা পাহাড়ি-পাহাড়িদের সংঘাতদূর করা কোনো বিষয় না৷ আরেকটা বিষয়- এখানে যে সিভিল ও মিলিটারি প্রশাসন আছে, তাদের নিরপেক্ষতার অভাব আছে।
ছবি: DW
কাজী মুজিবর রহমান, নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান
এই স্বাধীন দেশে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাই৷ পাহাড়ি-বাঙালি মিলেমিশে থাকতে চাই৷ এই দেশ স্বাধীন করার সময় বহু পাহাড়ি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে৷ তারাও আমাদের ভাই৷ আজ ভ্রাতৃত্বে ফাটল ধরেছে৷ সন্ত্রাসীদের কোনো দল থাকে না, কোনো জাত থাকে না৷ সুতরাং এ বিষয়ে সমাধান হওয়া দরকার, এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার৷
ছবি: DW
লক্ষীপদ দাস, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক
চুক্তির পর পার্বত্য নগরীতে শান্তির সুবাতাস বইছে। পার্বত্য অঞ্চলের আনাচে-কানাচে উন্নয়ন হয়েছে৷ এক সময় দুর্গম অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কিছু ছিল না৷ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রসহ সব জায়গায় আমূল পরির্বতন এসেছে৷ নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণে একদল পাহাড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে৷ সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে কেএনএফ-এর কথা৷ আমার মনে হয়, এই সংগঠনটির পিছনে বাইরের কোনো অপশক্তি কাজ করছে।
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
ঘটনার প্রতিবাদে ২০ সেপ্টেম্বর ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের' ব্যানারে রাঙামাটিতে প্রতিবাদ মিছিল হয়। মিছিলটি রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজারে পৌঁছালে বাঙালিদের সঙ্গে সংঘাত বাধে। দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করে। পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের মিছিলটি পিছু হটে গেলেও সশস্ত্র একটি দল অনিক চাকমা নামের এক কিশোরকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। শহরের মূল সড়কের পাশের পাহাড়িদের বসত ও দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সংঘাত চলাকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আবারো সেই আহাজারি!
গত বছরের ওই সংঘাতের ঘটনাতেও তদন্ত কমিটি হয়েছিল। ওই কমিটি ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে ১৪টি সুপারিশ করেছিল। এর মধ্যে প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়নে পাহাড়ি–বাঙালিদের সমন্বয়ে একটি কমিটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ রয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কোনোটাই বাস্তবায়িত হয়নি যেমনটা হয়নি অতীতেও।
চাকমা সার্কেলের প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় গতবছরের সেপ্টেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, অতীতের ঘটনাগুলোতে কারা আক্রান্ত হয়েছেন, কত ক্ষতি হয়েছে, ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আদৌ শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা— এগুলো না জানলে ও না বুঝলে ভবিষ্যতের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবো? তিনি বলেন, ‘‘এখানকার নিরাপত্তা বাহিনীসহ যত ধরনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, সবখানে নিরঙ্কুশ বাঙালি প্রাধান্য। তাহলে ক্ষমতার ভারসাম্য কোথায় থাকলো? এসব বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে কি পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতে নিরপেক্ষতা অবলম্বন সম্ভব? ইতিহাস তো তা বলে না! ফলে, এখানে একটি মিশ্র বাহিনী গড়ে তোলার দাবি দীর্ঘদিনের এবং ১৯৮৯ থেকে এ বিষয়ে আইনি বিধানও রয়েছে। যেখানে পাহাড়ের প্রতিটি জাতিসত্তার মানুষের সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা হলো না।''
পাহাড়ের অধিকাংশ নেতা মনে করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রকৃত রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ক্ষেত্রে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই, বরং এই চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যেই পার্বত্য সমস্যার সমাধানের সূত্র নিহিত রয়েছে। কিন্তু ১৯৯৭ সালের পর বিভিন্ন সরকার এসেছে এবং গেছে, কিন্তু কোনো সরকারই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেনি। এমনকি যেই আওয়ামী লীগ সরকার এটি স্বাক্ষর করেছিল, তারাও সর্বশেষ ২০০৯ থেকে ২০২৪, টানা প্রায় দেড় দশক ক্ষমতায় থাকলেও মূলধারাগুলোকে অবহেলায় ফেলে রেখেছিল।
ফলে, চুক্তিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বেদখল হওয়া ভূমি পুনরুদ্ধার, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হিসেবে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোয় ভিন্ন ভিন্ন ক্ষমতা ও দায়িত্ব হস্তান্তর, অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প ও সেনাশাসন প্রত্যাহার, শুধু স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সেই তালিকার মাধ্যমে জেলা পরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা—ইত্যাদির অঙ্গীকার থাকলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। ২৮ বছর পরেও ভূমি বিরোধ অমীমাংসিত, ভূমি কমিশন কার্যত কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। জমি ফেরত পাওয়ার জন্য পাহাড়ি পরিবারগুলোর দাখিল করা ২৬ হাজার মামলার কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। বরং, নানা সংঘাত-সহিংসতা চলেছে।
অন্তর্বর্তী এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে গতবছরের ২৪ নভেম্বর চিঠি দিয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন। তাতে সাত দফা দাবি জানানো হয়, যার মধ্যে প্রথমটি হলো চুক্তি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট সময়সীমাভিত্তিক একটি সুস্পষ্ট ও কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
এছাড়া চুক্তির বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাহাড়ের শাসনকাঠামো বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ, আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের ক্ষমতায়ন, ভূমি অধিকার এবং ভারত থেকে আগত পাহাড়ি শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও উন্নয়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য প্রতিনিধিত্বশীল শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। তবে গত এক বছরে খুব বেশি অগ্রগতি দেখা যায়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে একটি জাতীয় পর্যায়ে পরিবীক্ষণ কমিটি আছে। অন্তর্বর্তী সরকার এটি পুনর্গঠন করেছে। পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আহ্বায়ক, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা ও শরণার্থীবিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমাকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিটি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি চুক্তি বাস্তবায়নসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং প্রয়োজনে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। তবে গত ১৯ জুলাই এ কমিটির প্রথম ও একমাত্র বৈঠক হয়। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ বলতে এই একটি বৈঠক।
গত বছরের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচ পাতাসহ একটি গাছের গ্রাফিতি পরিচিত হয়ে ওঠে। সেই পাঁচ পাতার নাম ছিল, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-আদিবাসী।' এতে লেখা ছিল ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ'।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে এই গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদ জানিয়ে তা সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি' নামে বাঙালিদের (মূলত পাহাড়ের অভিবাসিত) একটি সংগঠন। এক পর্যায়ে সেটি সরিয়েও নেয় এনসিটিবি। এর প্রতিবাদে ঢাকায় থাকা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে ১৫ জানুয়ারি মতিঝিলের এনসিটিবি ভবনের দিকে মিছিল নিয়ে গেলে স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন।
মণিপুরে গভীর হচ্ছে বিভাজন
মণিপুরে মে মাসে শুরু হয়েছিল সহিংসতা৷ তিনমাস পর দৃশ্যত সহিংসতা কমলেও পরিস্থিতি এখনো থমথমে৷ এখনো জারি আছে সান্ধ্য আইন৷ ছবিঘরে বিস্তারিত৷
ছবি: DW
সংঘাতের শুরু
মে মাসে মণিপুর হাইকোর্টের রায় মেইতেই গোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসাবে মান্যতা দেয়৷ রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় কুকি গোষ্ঠী৷ দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়, যার রেশ এখনও মণিপুরে বর্তমান৷ মেইতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বিষ্ণুপুর ও কুকি সংখ্যাগরিষ্ঠ চূড়াচান্দপুরের মধ্যে বিভক্ত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্য৷ দুই গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যেই পারস্পরিক অবিশ্বাস এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে৷
ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS
আরো যে যে কারণে দ্বন্দ্ব
মণিপুরের জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ কুকি৷ অন্যদিকে, এই রাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি বাসিন্দা মেইতেই গোষ্ঠীর৷ কুকিরা বহু দিন ধরেই পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়ে আসছেন৷ এই দাবি ‘খারিজ’ করে এসেছে মেইতেইরা৷ অন্যদিকে কুকিরা মনে করেন, রাজ্যে সরকারি চাকরি বা জমির মালিকানা পাওয়ার ক্ষেত্রে মেইতেইদের আধিপত্য রয়েছে৷ কুকি নেতারা এই অবস্থারও পরিবর্তন চান৷
ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS
মৃত্যু ও উচ্ছেদ
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসে শুরু হওয়া সহিংসতায় অন্তত ১২০জনের মৃত্যু হয়েছে৷ তবে স্থানীয়দের মতে, মৃতের সংখ্যা আরো বেশি৷ সহিংসতার কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ৷ মণিপুরের মৈরাঙে চালু হয়েছে একটি ক্যাম্প, সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন মেইতেইরা৷
ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS
অস্ত্রের বাজার মণিপুর
মে মাসে সংঘর্ষ শুরুর পর সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, উন্মত্ত জনতা পুলিশ স্টেশন লুট করে প্রায় তিন হাজার অস্ত্র ও ছয় লাখ গুলি নিয়ে যায়৷ মেইতেই ও কুকি দুই গোষ্ঠীর হাতেই অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে বলে জানাচ্ছে এএফপি৷
ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
রাজ্য পুলিশ ব্যর্থ হওয়ার পর সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিলেও মণিপুরে এখনো স্বাভাবিকতা ফেরেনি৷ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘নিরপেক্ষ তদন্তের’ আশ্বাস দিয়েছেন৷ তবে স্থানীয়দের মধ্যে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷
ছবি: ADNAN ABIDI/REUTERS
প্রতিবাদের ঢেউ
সম্প্রতি মণিপুরের দুই নারীকে যৌন হয়রানি করার পর নগ্ন করে হাঁটানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়৷ মণিপুরসহ সারা ভারতে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়৷ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বসবাসরত কুকি ও মেইতেইরাও৷
ছবি: Rafiq Maqbool/AP Photo/picture alliance
রাজনীতিতে মণিপুর
ভারতের সংসদেও বিরোধীরা ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে ‘নো কনফিডেন্স’ ভোট দেন৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মণিপুরে সংঘর্ষ শুরু দুই মাস পর তা নিয়ে মন্তব্য করলে, সেটাও সমালোচিত হয়৷ মণিপুরের মুখ্যুমন্ত্রী বীরেন সিংহের বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ- তিনি কুকিবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছেন৷ তার পদত্যাগের দাবিও উঠছে৷ কিন্তু বীরেন সিংহ জানান, তদন্ত চলছে ও প্রকৃত আসামীদের বিচারব্যবস্থার আওতায় আনা হবে৷
ছবি: Biju Boroi/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
আহতদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। পরে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়কও হন। রুপাইয়া তখন বলেছিলেন, ‘‘রাজধানীর বুকে এমন হামলা হবে তা কোনোদিন ভাবিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আশা ছিল, আমাদের ওপর সহিংসতা কমবে; কিন্তু আচরণে হতাশ হয়েছি।''
নয়মাস পর খাগড়াছড়ির ঘটনায় একইরকম হতাশা শোনা গেল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) অলীক মৃর কথাতেও। খাগড়াছড়িতে তিনজনের মৃত্যুর পর এনসিপি থেকে তিনি পদত্যাগ করে ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘খাগড়াছড়িতে আদিবাসী কিশোরী ধর্ষণ, আদিবাসীদের ওপর হামলা, আদিবাসীদের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও তিনজন আদিবাসীকে হত্যার ঘটনা নিয়ে এনসিপির নীরবতা এবং ধর্ষণ নিয়ে এনসিপির নেতা হান্নান মাসউদের মিথ্যাচারের প্রতিবাদে পদত্যাগ করছি।''
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, খাগড়াছড়ির গুইমারায় সংঘটিত ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের আশ্বাস ও উদ্যোগের প্রতি আস্থা রেখে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসবকে সম্মান জানিয়ে মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করা হয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা বহাল আছে। তবে অবরোধ প্রত্যাহার করায় দূরপাল্লার যান চলাচল শুরু হয়েছে। খুলেছে দোকানপাট। জীবনের নিয়মে হয়তো আগামী কয়েকদিনেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
তবে নিহত আথুই মারমা, আথ্রাউ মারমা আর তৈইচিং মারমার পরিবারে যে আর্তনাদ সেটি খুব সহজে থামছে না! বছরে বছরে এভাবে সংখ্যাটা শুধু বাড়ে! পাহাড়ের কান্না আর থামে না। তবে পার্বত্য শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করলে, রাষ্ট্র এবং সবাই মিলে চাইলে হয়তো সেই চোখের জল থামতো! প্রশ্ন হলো আর কত চোখের জলে সেই বোধোদয় হবে?