বৃহস্পতিবার রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ শুক্রবার তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে একটি মাইক্রোবাসে গুলি করে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়৷
বিজ্ঞাপন
শক্তিমান চাকমা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ (এমএন লারমা) নামে একটি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ছিলেন৷ ২০১০ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ থেকে বেরিয়ে তিনি ঐ নতুন দলে যোগ দিয়েছিলেন৷
শুক্রবার নিহত হওয়া পাঁচজনের একজন তপনজ্যোতি চাকমা বর্মা ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ বা ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের প্রধান ছিলেন৷ ইউপিডিএফ নামে থাকা মূল দল থেকে বেরিয়ে তিনি ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) গড়ে তুলেছিলেন৷
চোখ জুড়ানো রাঙ্গামাটি
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জেলা রাঙ্গামাটি, যার প্রধান আকর্ষণ কাপ্তাই হ্রদ৷ কাপ্তাই হ্রদের মাঝেই যেন ভেসে থাকা ছোট্ট একটি শহর৷ জেলাজুড়ে রয়েছে বৈচিত্রময় নানান পর্যটন ভাণ্ডার৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
কাপ্তাই হ্রদ
এর আরেক নাম কর্ণফুলী হ্রদ৷ রাঙ্গামাটি জেলার বড় একটা অংশজুড়েই বিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদ৷ ১৯৫৬-৬২ সালে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বাঁধ নির্মাণের ফলে প্রায় ৫৪ হাজার একর কৃষিজমি প্লাবিত হয়ে কাপ্তাই হ্রদের জন্ম৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ
প্রায় ১৭২২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ পানি আর বাঁকে বাঁকে পাহাড়ের সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
কাপ্তাই হ্রদে নৌকা ভ্রমণ
রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি বাজার ও পর্যটন কমপ্লেক্স ঘাটে পাওয়া যায় কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণের নানা রকম নৌকা৷ এ সব নৌকা নিয়ে ঘুরে আসা যায় সুদূর শুভলংসহ আরো অনেক জায়গা৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শুভলং বাজার
কাপ্তাই হ্রদের পাশে ছোট একটি বাজার শুভলং৷ নৃগোষ্ঠীর মানুষের তৈরি নানান পন্য পাওয়া যায় এ বাজারে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
শুভলং ঝর্ণা
শুভলং বাজারের আগেই কাপ্তাই হ্রদের পাশে পাহাড়ী ঝর্ণা ‘শুভলং’৷ শুধু বর্ষাকালেই এ ঝর্ণা পানিতে পূর্ণ থাকে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
ভ্রমণ তরী
কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণের জন্য আছে আধুনিক মানের ভ্রমণ তরী৷ প্রতিদিন সকালে রাঙ্গামাটি শহর থেকে ছেড়ে হ্রদ ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যায় আবার ফিরে আসে শহরে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
টুকটুক ইকো ভিলেজ
কাপ্তাই হ্রদের ভেতরে ছোট্ট একটি দ্বীপজুড়ে আছে টুকটুক ইকো ভিলেজ৷ ইকো কটেজে থাকা আর পাহাড়ি নানান পদের খাবার টুকটুক ইকো ভিলেজের মূল আকর্ষণ৷
ছবি: DW/M.Rahman
রাজবন বিহার
শহরের পাশেই এ অঞ্চলের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থান রাজবন বিহার৷ একটি প্রার্থনালয়, একটি প্যাগোডা, বনভান্তের (বৌদ্ধ ভিক্ষু) আবাস স্থল ও বনভান্তের ভোজনালয় আছে এখানে৷ রাজ বন বিহারে দাঁড়িয়েও উপভোগ করা যায় কাপ্তাই হ্রদের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
উপজাতীয় জাদুঘর
রাঙ্গমাটি শহরের উপজাতীয় জাদুঘর৷ রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত নানান নৃগোষ্ঠীর ব্যবহৃত বিভিন্ন সময়ের সরঞ্জাম, পোশাক, জীবনাচরণ এবং বিভিন্ন ধরনের তথ্য আছে এ জাদুঘরে৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
ঝুলন্ত সেতু
রাঙ্গামাটি শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে পর্যটন কমপ্লেক্সের ভেতরে সুন্দর ঝুলন্ত সেতু৷ রাঙ্গামাটির ল্যান্ডমার্কও এই ঝুলন্ত সেতু৷ সেতু পেড়িয়ে সামনের পাহাড়ে উঠলে কাপ্তাই লেকের বড় অংশ দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান
রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান৷ চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে এ বনের অবস্থান৷ ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনের আওতায় ১৯৯৯ সালে জাতীয় এ উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ তবে এর বহু আগে ১৮৭৩, ১৮৭৮ এবং ১৮৭৯ সালে এখানে বনায়নের ফলেই গড়ে উঠেছিল ক্রান্তীয় এ বনাঞ্চলের৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
নানান বন্যপ্রাণী
কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে একটি মুখপোড়া হনুমান৷ এছাড়াও নানান বন্যপ্রাণীতে সমৃদ্ধে এ উদ্যান৷ এ বনের প্রাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বন্যহাতি, হরিণ, হনুমান, উল্লুক, শুকর, বনবিড়াল, গুইশাপ, অজগর ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
12 ছবি1 | 12
নিহত বাকি চারজনের মধ্যে তিনজন শক্তিমান চাকমার দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ নিহত অন্যজন হলেন মাইক্রোবাসের চালক৷
শক্তিমান চাকমার দলের খাগড়াছড়ি জেলার রাজনৈতিক সম্পাদক বিভূরঞ্জন চাকমা জানান, শক্তিমানের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে সংগঠনের মোট ১২ জন নেতাকর্মী খাগড়াছড়ি থেকে মাইক্রোবাসে করে রাঙামাটির নানিয়ারচরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন৷ পথে বেতছড়ি এলাকায় তাদের গাড়িতে ‘ব্রাশফায়ার’ করা হয়৷ আর শক্তিমান নিহত হয়েছিলেন বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার পথে৷ তাঁকে হত্যার জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে তাঁর দল৷ তবে ইউপিডিএফ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
শুক্রবারের হত্যাকাণ্ডের জন্যও ইউপিডিএফকে দায়ী করা হচ্ছে৷ নিহতরা যে দলের কর্মী ছিলেন সেই ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্বে থাকা লিটন চাকমা বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘শক্তিমান চাকমাকে হত্যার পর তপনজ্যোতি চাকমা বর্মাকে হত্যার মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে একক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য তারা (ইউপিডিএফ) একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে৷’’
অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলা৷ সর্পিল নদী, পাহাড়, পাহাড়ি ঝরনা, আদিবাসীদের গ্রাম – সে এক মনোরম পরিবেশ৷ এছাড়া পর্যটকদের জন্য আছে আরও কিছু আকর্ষণ৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: DW/M. Mamun
শহরে ঢোকার দরজা
খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশমুখে ‘খাগড়াছড়ি গেইট’৷
ছবি: DW/M. Mamun
পাখির চোখে
কুয়াশায় ঢাকা খাগড়াছড়ি শহরের ‘বার্ডস আই ভিউ’৷ পুরো খাগড়াছড়ি জেলা জুড়ে পাহাড় আর পাহাড় থাকলেও, এর জেলা শহরটি কিন্তু একেবারেই সমতলে অবস্থিত৷
ছবি: DW/M. Mamun
শীতে শান্ত, বর্ষায় ভয়ংকর
খাগড়াছড়ি শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা সর্পিল আঁকা বাঁকা পাহাড়ি নদী ‘চেঙ্গী’৷ শীতে পাহাড়ি এ নদী শুকিয়ে গেলেও বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নদীর বাণিজ্যিক ব্যবহার
খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীতে বাঁশের ভেলা৷ খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পাহাড় থেকে বাঁশ কেটে এ নদী দিয়ে ভাসিয়ে নেয়া হয় দেশের নানান প্রান্তে৷
ছবি: DW/M. Mamun
দুর্গম পথ
পুরো খাগড়াছড়ি জেলাজুড়েই আছে এমন দুর্গম পাহাড়ি পথ৷ আঁকা বাঁকা এ সব পথে চলতে চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর জীবন দেখা
খাগড়াছড়ি শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার নুনছড়ি এলাকায় ‘দেবতার পাহাড়’৷ দুর্গম এ পাহাড়ে দেখা মিলবে এ সব এলাকায় বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠী, তাঁদের সংগ্রামী জীবনধারা৷
ছবি: DW/M. Mamun
দেবতার পুকুর
নুনছড়ি এলাকার দেবতার পাহাড়ের চূড়ায় দেবতার পুকুর৷ এর আরেক নাম ‘মাতাই পুখিরি’৷ ত্রিপুরা ভাষায় ‘মাতাই’ শব্দের অর্থ দেবতা আর ‘পুখিরি’ শব্দের অর্থ পুকুর৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, দেবতার আশীর্বাদে পাহাড় চূড়ার এ পুকুরের পানি কখনো কমে না৷ দেবতার পুকুরের পাড়েই আছে একটি শিব মন্দির৷ এই মন্দিরকে ঘিরেই প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে সেখানে বসে তীর্থ মেলা৷
ছবি: DW/M. Mamun
রিসাং ঝরনা
খাগড়াছড়ি শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে মনোরম প্রাকৃতিক ঝরনা রিসাং৷ বিশাল পাথুরে জায়গার এক প্রান্ত থেকে অঝোরে বইছে এই জলপ্রপাত৷ রিসাংয়ের চারপাশে পাহাড়ের নিস্তব্ধতা ভেঙে অবিরাম বয়ে চলছে রিসাংয়ের জলধারা৷ শীতের শুরু থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত ঝরনায় পানির প্রবাহ কম থাকে, বর্ষায়ে বেড়ে যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
আলুটিলা পাহাড়
খাগড়াছড়ির আলুটিলা পাহাড়ে সূর্যাস্ত৷ শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরের এ পাহাড় থেকে খাগড়াছড়ি শহর আর চেঙ্গী নদীকে পাখির চোখে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রাচীন গুহা
আলুটিলা পাহাড়ের নীচে প্রাচীন গুহা৷ পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি ধাপের একটি সিঁড়ি নেমে গেছে গুহাপথের মুখে৷ গুহার ভেতর দিয়ে বয়ে চলছে শীতল জলধারা৷
ছবি: DW/M. Mamun
গুহায় অ্যাডভেঞ্চার
আলুটিলা গুহাপথে পর্যটক৷ এ গুহার একপ্রান্ত থেকে ঢুকে অন্য প্রান্তে পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ১৫ মিনিট৷ ঘুটঘুটে অন্ধকার এ গুহায় প্রবেশ করতে হয় মশাল নিয়ে৷ প্রবেশ পথেই কিনতে পাওয়া যায় এ মশাল৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঝুলন্ত সেতু
খাগড়াছড়ি শহরের পাশেই জেলা পরিষদের হর্টিকালচার পার্ক৷ লেক ঘেরা এ জায়গাটির মূল আকর্ষণ দোদুল্যমান ঝুলন্ত সেতু৷
ছবি: DW/M. Mamun
নৃ-গোষ্ঠীর বাস
খাগড়াছড়ি জেলায় চাকমা, ত্রিপুরা, মারমাসহ নানান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা বাস করেন৷ জেলার সর্বত্রই পর্যটকদের জন্য এ সব নৃ-গোষ্ঠীর জীবনধারা দেখার সুযোগ আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
জুম চাষ
খাগড়াছড়ির পাহাড়ে জুম চাষের জন্য পাহাড় প্রস্তুত করছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা মানুষেরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
সবুজ পাহাড়
জুমের ফসলে ছেয়ে গেছে পাহাড়৷ জেলার সর্বত্রই দেখা যায় জুমের ফসলে ভরপুর সবুজ এরকম পাহাড়৷
ছবি: DW/M. Mamun
তামাক চাষ
খাগড়াছড়ির দীঘি-নালায় মাইনি নদীর তীরে তামাক চাষ৷ স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আগাম ঋণপ্রাপ্তি ও ক্ষেত থেকেই বিক্রির সুযোগ থাকায় ব্যাপকহারে তামাক চাষে ঝুঁকছেন খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষকরা৷