চীনাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে কয়েক হাজার উইগুর পালিয়ে এসেছেন তুরস্কে৷ সেখানেও ভালো নেই তারা৷ ডয়চে ভেলের কাছে তাদের অনেকে তুলে ধরেছেন জীবনের অমানবিক দুঃখ কষ্টের কথা৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি চীন থেকে তুরস্কে পালিয়ে আসা প্রায় ৫০ হাজার উইগুরদের একজন আবদুস স্যুক্যুর৷ ইস্তাম্বুলের জেটিনবার্নু এলাকায় তার বাস, যেখানে চীন থেকে পালিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ উইঘুর অভিবাসীরা থাকেন৷ একটি সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল ফোনের দোকানে কাজ করে আবদুস স্যুক্যুর কোনোরকম দিনাতিপাত করছেন৷ ৩২ বছর বয়সী আবদুস স্যুক্যুর ছলছল চোখে ডয়চে ভেলেকে জানান, আমার পরিবারের সাথে পাঁচ বছর আগেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে৷ এক বছর পর আমি নিজের বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি৷
চীন সরকার উইঘুর ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন করেছে৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছে ক্যাম্পে আটকে রেখে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে, বিনা নোটিসে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হচ্ছে শিশুসহ অন্যদের৷ উইঘুরেরা তুর্কিভাষী সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, যার বেশিরভাগই মুসলমান৷ সংস্কৃতির দিক থেকে তুর্কিদের সাথে অনেকটা মিল থাকার কারণেই চীন থেকে তুরস্কে পালিয়ে গেছেন তারা৷
আবদুস স্যুক্যুর ডয়চে ভেলেকে বলেন, তুরস্কে আসার পর তার মায়ের সাথে মাত্র একবার কথা বলার সুযোগ হয়েছে৷ কত মানুষ যে শিবিরে আটক তার কোনও দাপ্তরিক হিসেব নেই৷ তিনি নিয়মিত চীনের উইঘুরদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলগুলিতে যোগ দেন এবং সচেতনতা বাড়াতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন৷ সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য তাকে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারও করেছে৷
তুরস্কে পালিয়ে যাওয়া আরেক অভিবাসী ওমর ফারুক৷ ৩১ বছর বয়সি ফারুকের তুর্কি নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও কঠিন সংগ্রাম করতে হচ্ছে৷ তুরস্কে আসার সময় স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের দুইজনকে চীনে রেখে আসতে হয়েছে৷ পরে স্ত্রী তুরস্কে এলেও কন্যারা এখনো চীনেই রয়ে গেছে৷ কন্যাদের তুরস্কে আসতে সাহায্যে করায় ফারুকের স্ত্রীর ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ শাশুড়িকে আটকে রাখা হয়েছে ক্যাম্পে৷ ফারুক বলেন, ‘‘আমার মেয়েরা এখন কোথায় আছে, কেমন আছে বা বেচে আছে কিনা কিছুই জানি না৷ জীবনে আর কখনো দেখা হবে কিনা সেটাও অনিশ্চিত৷’’
টুনকা ও্যরগ্রেটেন/এনএস
২০১৯ সালের নভেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে মুসলমানদের ‘পুনরায় শিক্ষিত’ করতে অনেকগুলো ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণ ‘ঐচ্ছিক’ বলে দাবি করে সরকার৷ কিন্তু প্রকাশিত নথি বলছে অন্য কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য করা হয়
চীন সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়৷ এরপর অন্য জায়গায় তাঁদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Shuai
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের৷ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাঁদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল-লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
বন্ধুত্ব করা নিষেধ
বন্দিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাম্পের কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কর্মীরা মোবাইল ফোন কিংবা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকতে পারেন না৷
ছবি: Reuters/T. Peter
ক্যাম্পের বাসিন্দা যাঁরা
মূলত উইগুর মুসলমান৷ এছাড়া কাজাখসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও এসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ ছবিতে একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ২০০৯ সালে শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকিতে বিক্ষোভে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৪ সালে উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় ২৯ জন নিহত হন৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প চালু করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্বীকার
প্রকাশিত নথির তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করায় গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি৷