ইটালির একটি ন্যাচারাল পার্ক থেকে পালানোর পর খাবারের খোঁজে বুনো ভালুকটি কয়েকবার কৃষকদের খামারে হানা দিলে সেটিকে ‘গুলি করে হত্যার’ নির্দেশ জারি হয়েছিল৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর ইটালির ত্রেন্তো প্রদেশের একটি ন্যাচারাল পার্ক থেকে গতবছর জুলাই মাসে এম৪৯ নামে ওই বুনো ভালুকটি জঙ্গলে পালিয়ে যায়৷ পালাতে গিয়ে ১৬৭ কেজি ওজনের ভালুকটি পার্কের চারটি বেড়া বেয়ে পার হয়৷ বেড়াগুলোর একটিতে উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎ সংযোজিত৷
গত মঙ্গলবার রাতে সেটিকে একটি পাইপের ভেতর থেকে পাকড়াও করা হয়৷ পাইপের ভেতর সেটি আটকা পড়ে গিয়েছিল৷ এক বিবৃতিতে ত্রেন্তো কর্তৃপক্ষ জানান, ভালুকটিকে সেটির আগের পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ সেটি শারীরিকভাবে সুস্থ আছে৷
ইউরোপের দারুণ কিছু চিড়িয়াখানা
দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যবস্থাপনার গুণে সব কিছুই ভিন্ন মাত্রা পায়৷ ইউরোপের কিছু চিড়িয়াখানা দেখলেও সে-কথা মনে হয়৷ ছবিঘরে থাকছে এমন কিছু চিড়িয়াখানার কথা, যেগুলো বারবার দেখতে ইচ্ছে করে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/A. Lander
টিয়ারপার্ক হাগেনবেক
জার্মানির হামবুর্গের এই চিড়িয়াখানাটির প্রতিষ্ঠাতা কার্ল হাগেনবেক৷ তাই এর নামও টিয়ারপার্ক হাগেনবেক৷ জার্মান ভাষায় টিয়ার মানে প্রাণী৷ এক সময় বিশ্বের সব চিড়িয়াখানাতেই খাঁচায় পুরে রাখা হতো প্রাণীদের৷ ১৯০৭ সালে হাগেনবেকই প্রথম বেষ্টনীতে ঘেরা পরিখায় প্রাণীদের রাখা শুরু করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Bockwoldt
জুম এরলেবনিসভেল্ট
জার্মানির আরেক শহর গেলজেনকির্শেনের এই চিড়িয়াখানাটিতে রয়েছে একদিনে আলাস্কা, আফ্রিকা বা এশিয়ার আদলে গড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে অনেক প্রাণী দেখার সুযোগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
বার্লিনের জুয়োলজিক্যাল গার্ডেন
জার্মানির এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে এক হাজার তিনশ প্রজাতির ২০ হাজারেরও বেশি প্রাণী৷ ওপরের ছবির মেরু ভালুকের ছানাটি এই চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ৷ ওর নাম হ্যার্থা৷ বার্লিনের ফুটবল ক্লাব হ্যার্থা বার্লিন থেকেই ওর নাম রাখা হয়েছে হ্যার্থা৷ ওর স্পন্সরও হ্যার্থা বার্লিন৷ ভালুক ছানা হ্যার্থাও এখন ফুটবল খেলে৷ চিড়িয়াখানায় গেলেই দেখবেন ও ফুটবলে লাথি মেরে মেরে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
ছবি: Imago/A. Hilse
আলভেটার জু
জার্মান ভাষায় আলভেটার মানে সব আবহাওয়া৷ মিউনিখের এই চিড়িয়াখানা শীত-গ্রীষ্ম সব মৌসুমেই ঘুরে দেখার সুব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Thissen
হাইমাট-টিয়ারপার্ক ওল্ডারডিসেন
এই চিড়িয়াখানাটিও জার্মানিতে৷ বিলেফেল্ডের এই চিড়িয়াখানা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এবং এর ভেতরে যেতে কোনো টিকিট কাটতে হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
টিয়ারগার্টেন শ্যোনব্রুন
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন চিড়িয়াখানা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের এই টিয়ারগার্টেন শ্যোনব্রুন৷ ১৭৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ চিড়িয়াখানা প্রথম দর্শনার্থীদের মাঝে সাড়া ফেলেছিল ১৮২৮ সালে৷ সে বছরই প্রথম নিয়ে আসা হয় জিরাফ৷ শীতের দেশ বলে কোনো প্রাণীকে সারা বছর খোলা জায়গায় রাখা যায় না৷ তাই জিরাফের উপযুক্ত উচ্চতার আবাস গড়তে নিতে হয়েছিল বিশেষ উদ্যোগ৷ জিরাফ দেখতে রীতিমতো দর্শনার্থীর ঢল নেমেছিল তখন৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/G. Flegar
এডিনবার্গ জু
এডিনবার্গের এই চিড়িয়াখানার বড় আকর্ষণ নানা ধরনের পেঙ্গুইন৷এই চিড়িয়াখানাই প্রথম পেঙ্গুইন রাখা শুরু করে৷ এখনো সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে তারা৷পেঙ্গুইনদের প্যারেড দেখতে প্রতি বছর প্রচুর দর্শক ভিড় করে সেখানে৷
ছবি: picture-alliance/empics/J. Barlow
লোরো প্রাক টেনেরিফ
স্পেনের টেনেরিফ দ্বীপের এই চিড়িয়াখানার প্রতিষ্ঠাতা জার্মানির ভল্ফগাং কিসলিং৷ শুরুতে সেখানে শুধু তোতা পাখি রাখা হতো৷ বিভিন্ন প্রজাতির তোতা পাখি এখনো এই চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ৷
ছবি: picture-alliance/ZB/A. Lander
8 ছবি1 | 8
পালিয়ে যাওয়ার পর গত ১০ মাসে ভালুকটিকে বহুবার জঙ্গলে বা মানুষের বসবাড়ির কাছে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে৷ সেটি কৃষকের খামারে হানা দিয়ে অনেক প্রাণী হত্যা করেছে৷ ভালুকটি ধরা পড়ার খবরে তাই ওই এলাকার কৃষকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন৷
তবে দেশটির ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফেডারেশন থেকে দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, ‘‘এটা আমাদের দেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ব্যবস্থার জন্য ভয়ঙ্কর ও দুঃখজনক খবর৷’’
মানুষের বসতিতে ঘোরাঘুরি ও খামারে হামলার পর ত্রেন্তো প্রদেশের প্রেসিডেন্ট মাউরিজিও ফুগাত্তি সেটিকে ‘দেখা মাত্র গুলি করে হত্যার’ নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে কর্তৃপক্ষ পরে বলে, তারা আগে ভালুকটিকে জীবিত ধরার চেষ্টা করবে৷ সবে চেষ্টা ব্যর্থ হলেই কেবল সেটিকে গুলি করার সিদ্ধান্ত নেবেন তারা৷
ইটালি এখন বুনো ভালুকটিকে ইউরোপের অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে দিতে চাইছে বলে জানান দেশটির পরিবেশমন্ত্রী সার্সিও কোস্তা৷ তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপের কোন পার্কে বা কোন দেশে এ জাতের ভালুক ঝুঁকি মুক্ত হয়ে বেঁচে থাকতে পারবে আমরা সেটার খোঁজ করছি৷ আমরা কূটনৈতিকভাবেও চেষ্টা করছি৷
‘‘আমরা প্রাণীটিকে তার সবচেয়ে উপযুক্ত ঘর দিতে চাই৷’’
এসএনএল/কেএম
পশু-পাখি যখন কাঁদে
সন্তান মারা গেছে, এই সত্য মানতেই পারছিল না গোরিলা মা৷ মৃত সন্তানকে পিঠে নিয়ে কয়েকদিন ঘুরেছে সে৷ সন্তান বা অন্য কোনো প্রিয়জনের মৃত্যুতে ডলফিন, হাতি, বেবুন, কাক, ভালুক বা মাছের শোক পালনও হৃদয়বিদারক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
গোরিলার সন্তানশোক
জার্মানির ম্যুনস্টার চিড়িয়াখানায় এক গোরিলার বাচ্চা মারা যাওয়ার পর হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল৷ মা গোরিলাটিকে সবাই ডাকতো গানা আর তার সন্তানকে ডাকতো ক্লাউডিও নামে৷ ক্লাউডিও মারা গেল৷ সন্তানের মৃত্যু মা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না৷ আগের মতো সন্তানকে পিঠে নিয়েই চলাফেরা করছিল সে৷ চিড়িয়াখানার কর্মীদের কেউ কাছাকাছি গেলেই গানা তেড়ে আসত৷ সন্তানহারা গরিলা মায়ের মন শক্ত হতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
সন্তানকে সমুদ্রেই সমাধিস্থ করে মা ডলফিন
সন্তান মারা গেলে ডলফিনরাও দিশেহারা হয়ে পড়ে৷ এমনও দেখা গেছে, সদ্য মারা যাওয়া সন্তানকে মুখে নিয়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে মা ডলফিন৷ মুখ থেকে পড়ে সন্তানের দেহ যখন তলিয়ে যাচ্ছে, ডুব দিয়ে দিয়ে তাকে অনুসরণ করছে মা৷ বড় কেউ মারা গেলেও ডলফিনরা তাকে ছেড়ে যেতে চায় না৷ মৃতদেহকে অনেকক্ষণ ঘিরে থাকে তারা৷
ছবি: Public Domain
হাতির ‘শোকসভা’
হাতিদের শোকও হৃদয় ছুঁয়ে যায়৷ কোনো হাতি মারা গেলে সঙ্গীরা তার পাশে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে৷ দূর থেকে অন্য হাতিরাও এসে যোগ দেয় সেই শোকে৷ প্রিয়জন হারানোর দুঃখ হাতি ভুলতেই পারে না৷ তাই অনেকদিন পরও স্বজনের কঙ্কাল বা দেহাবশেষ ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেন তাদের স্মরণ করে তারা৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE/M. Harvey
সেবায় মন দেয় শোকসন্তপ্ত বেবুন
এক বেবুন মারা গেলে অন্য বেবুনরা দুঃখে এতটাই কাতর হয় যে তাদের স্ট্রেস হরমোনের ঘনত্ব বেড়ে যায়৷ এবং বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শোকে যখন দিশেহারা অবস্থা, বেবুনরা তখন একে অন্যের গায়ের লোম পরিষ্কার করায় মন দেয়৷ শোক ভোলার কী অদ্ভুত কৌশল!
ছবি: picture alliance/chromorange
পাখিদের মৃত্যুশোক
কোনো কাক মারা গেলে তার মৃতদেহ ঘিরে অন্য কাকদের শোক অনেকেই হয়ত দেখেছেন৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রিয়জনের শোকে কাক নাকি অনেক সময় খাওয়া-দাওয়াই বন্ধ করে দেয়৷ পাখিদের মধ্যে যারা এক সঙ্গী নিয়েই জীবন পার করে দেয়, তারা নাকি সঙ্গীর মৃত্যুর পর না খেয়ে খেয়ে মারাও যায়৷ রাজহাঁস আর কিছু গায়ক পাখি নাকি প্রায়ই প্রিয়জনের মৃত্যুর পর এভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নেয়৷
বার্লিনের চিড়িয়াখানার এই বিড়াল আর ভালুকটি যেন ছিল ‘হরিহরাত্মা’৷ একজনের কাছ থেকে আরেকজনকে আলাদাই করা যেত না৷ ভালুকটি মারা যাওয়ার পর তাই আজব এক সমস্যা দেখা দিল৷ দেখা গেল, বিড়ালটি আর ভালুকের খাঁচাটি ছেড়ে যাচ্ছে না৷ কয়েকদিন অবিরাম ‘মিঁউ’ ‘মিঁউ’ করে ডেকে ডেকে বন্ধুর প্রতি শোক জানিয়েছিল সে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rüsche
মনিবের কবর পাহারা দেয় কুকুর
কুকুরের প্রভুভক্তির অনেক গল্প আছে৷ কুকুর তার মনিবকে এতটাই ভালোবাসে যে মনিব মারা গেলে তার কবরে গিয়ে সে বিলাপ শুরু করে৷ জার্মানির একটি কুকুর তো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও বড় খবর হয়েছিল৷ কুকুরটির নাম কাপিটান৷ তার মনিব আর্জেন্টিনায় মারা যান৷ জার্মান শেফার্ডটি আর্জেন্টিনার ভিলা কার্লোসে মনিবের ওই সমাধিস্থল বহু বছর পাহারা দিয়েছে৷