পাল্টাপাল্টি সমাবেশ, শঙ্কা-উদ্বেগ
২৭ জুলাই ২০২৩সংঘাতের আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে বেড়েছে উদ্বেগ। শুক্রবার দুপুরে দুই দলের সমাবেশ হওয়ার কথা। যদিও মানুষকে আশ্বস্ত করে পুলিশ কমিশনার বলেছেন, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। রাজনৈতিক দল দু'টির নেতারাও বলছেন, তারা কোন সংঘাত চান না। তাদের কর্মসূচী হবে শান্তিপূর্ণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমাদের প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকা বা ক্ষমতায় যাওয়া। তারা তো মানুষের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করে না। আমরা আগে কখনও এভাবে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেখিনি। এটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা। এখন যে পরিস্থিতি আমরা দেখছি, তাতে তো আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সবাই তো উদ্বেগের মধ্যে আছে। কখন যেন সংঘাত বেঁধে যায়। এই পরিস্থিতির উত্তরণ তখনই সম্ভব, যখন তারা আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবেন। এখন পর্যন্ত তো আমরা সেই অবস্থা দেখছি না। সবকিছুই তো হচ্ছে নির্বাচনের কারণে। ফলে সবাই যদি একটু ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলে সম্ভব।”
শুক্রবার দুপুরে বিএনপির মহাসমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে নয়াপল্টনে পার্টি অফিসের সামনে। একই সময় আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শান্তি সমাবেশের কথা বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিন গেটে। দুই দলের সমাবেশের স্থান দুই কিলোমিটারেরও কম দূরত্বের মধ্যে। উভয় দল সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় এনেছে। বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।
এদিকে সংঘাতের শঙ্কায় বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেও রাস্তায় তেমন গাড়ি দেখা যায়নি। অজানা আতঙ্কে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হননি। অথচ অন্য সময় শেষ কর্মদিবসে দিনভর শহর যানজটে থমকে থাকে।
ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। পরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে রিজভী বলেন, "শুক্রবারের সমাবেশে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এসেছেন। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। তাদের ৩০০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে পুলিশ এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে।”
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছাকাছি মিডওয়ে হোটেল থেকেই দলটির ৫০ জনের বেশি কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এর বাইরে কতজনকে আটক করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। পুলিশের সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশ ৪১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে বিএনপির ৩৬৬ কর্মী রয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার ৭৫ নেতা-কর্মীকে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে এই ধরপাকড়ের কথা অস্বীকার করেছেন পুলিশ কমিশনার খন্দকার ফারুক হোসেন। তিনি বলেছেন, "এই গ্রেফতার প্রক্রিয়া নিয়মিত কাজের অংশ। কোন সমাবেশ ঘিরে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।” পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? জানতে চাইলে কমিশনার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছে। এর আগেও আমরা দেখেছি, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বোমা হামলা হয়েছে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে। এবার যেন এই ধরনের কোন ঘটনা না ঘটতে পারে সেজন্য আমরা চেকপোস্টে তল্লাশির পাশাপাশি সব ধরনের কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।”
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, দুই দলকেই রাজধানীতে সমাবেশ করতে একই শর্ত বদেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রাজনৈতিক দলগুলোকে আপনারা কেন রাস্তায় সমাবেশ করার অনুমতি দেন? রাজনৈতিক দলগুলো আগে-পরে সমাবেশ করতে পারে, এতে মানুষের দুর্ভোগও কম হয়। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, "এটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এখানে আমার কিছু বলার নেই। এটা রাজনৈতিক নেতাদের জিজ্ঞাসা করুন, আমি তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ মুহূর্তে, আমার কাছে আইন শৃঙ্খলা নিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন।”
দুই দলের সমাবেশ ঘিরে মানুষ যে আতঙ্কিত সে ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করতে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা তো শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছি। কিন্তু আমাদের সমাবেশের সময় আওয়ামী লীগ যে কর্মসূচি দিচ্ছে তাতেই তো সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করছে। এতে যে মানুষের মধ্যে আতঙ্কময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটা সত্যি। কিন্তু এর জন্য কারা দায়ী? সাধারণ মানুষ তো সেটা দেখছে। আসলে তারা তো চায়, সংঘাত বাঁধাতে।”
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা তো শান্তির পক্ষে। যে কারণে আমরা তো শান্তি সমাবেশ করছি। যারা আগুন সন্ত্রাস করেছে, যারা দেশে গণতন্ত্র চায় না, তারা আতঙ্ক সৃষ্টি করে ফায়দা তুলতে চাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রের পক্ষে। সাংবিধানিক ধারা অব্যহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি সেটা ধ্বংস করতে চায়। তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হবে না।”