‘পাসপোর্ট পাওয়ার অর্থ আইনের ঊর্ধ্বে উঠে যাওয়া নয়'
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ডয়চে ভেলে : সরকার যে পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের শর্তবাদ দিলো- এই সিদ্ধান্তকে আপনারা কিভাবে দেখছেন?
আলী হায়দার চৌধুরী : আমাদের কাছে এটার দুটো দিক আছে। একটা হলো, পাসপোর্ট হওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ায় আমাদের হয়ত কর্মী সিলেকশন হয়ে গেছে, কিন্তু সময়মতো তাকে পাঠাতে পারি না। পাসপোর্ট হলো অধিকার। কারো জন্ম সনদ থাকলে পাসপোর্ট পেতে তার বাধা থাকা উচিত না। পুলিশ ভেরিফিকেশন কেন হয়? সে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিনা- এইটা আরেকটা দিক। রাষ্ট্র যেটা বিবেচনা করছে, তার বিরুদ্ধে যদি কোনো ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিজ থাকে তার জন্য থানা আছে, পুলিশ আছে, আইন আছে। এর জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। আমার যেমন জন্ম সনদ পাওয়ার অধিকার আছে, তেমনি পাসপোর্ট পাওয়ারও অধিকার আছে। পাসপোর্ট পাওয়ার অর্থ এই নয় যে, আমি আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গেছি। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ না থাকে, তাহলে এই সিদ্ধান্তের ফলে আমার বাইরে যাওয়াটা আরো সুন্দর হবে। আমাদের দেশ থেকে কর্মী যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত সময় বেশি লাগে। এর মধ্যে পাসপোর্টও একটা কারণ। এই সিদ্ধান্তের ফলে নাগরিক অধিকার আরো প্রতিষ্ঠিত হবে।
জনসম্পদ রপ্তানিতে এটা কি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, নাকি সংকট আরো বাড়বে?
ইতিবাচক ভূমিকা তো অবশ্যই রাখবে। সংকট কেন বাড়বে? যে বাইরে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত, তার সিলেকশন হয়ে গেছে, তাকে তখন পাসপোর্টের জন্য দৌঁড়ঝাঁপ করতে হবে না। দালালের কাছেও যেতে হবে না, ডাবল ফি দিয়ে দ্রুত পাসপোর্ট পাওয়ার চেষ্টাও করতে হবে না। এতে তার হয়রানি অনেক কমে গেল। মূল কথা হলো, তার সময় অনেক বেঁচে গেল। আমার মনে হয়, জনশক্তি রপ্তানি খাতে এটা একটা ইতিবাচক দিক হবে।
অনেক দেশই তো পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া লোক চায় না। সেক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট হলে ওই দেশগুলোতে কোনো সংকট হতে পারে?
জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া লোক নেবে না- এমন কোনো দেশ এখন পর্যন্ত আমাদের বলেনি। শুধুমাত্র সৌদি আরবছাড়া। সৌদি আরবের ক্ষেত্রে পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন হলেও আলাদা করে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তাদের দিতে হতো। ফলে এই রিপোর্টের সঙ্গে পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন থাকা না থাকাতে কোনো কিছু যায় আসে না। অন্য কোনো দেশে এই ভেরিফিকেশনের গুরুত্ব নেই। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো পাসপোর্ট। পাসপোর্ট শুধু প্রমান করে আমি বাংলাদেশের নাগরিক। আমি অপরাধী কিনা সেটা তো পাসপোর্ট প্রমান করে না।
রোহিঙ্গারা নানা অবৈধ প্রক্রিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছে। এখন তারাও বিনা বাধায় পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। অথচ পুলিশ ভেরিফিকেশনে তাদের অনেকেই বাদ যেতেন। এছাড়া অনেক অপরাধীও হয়ত পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। তারা যদি বাইরে যান, তাহলে...?
ভালো, আপনি রোহিঙ্গা ইস্যুটাকে সামনে এনেছেন। তারা অবৈধ প্রক্রিয়ায় জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছে। এখন তারা যদি জন্মসনদ বা এনআইডি সংগ্রহ করতে পারে, তাহলে ওই একই প্রক্রিয়ায় তারা পাসপোর্টও সংগ্রহ করতে পারবে। আমাদের কর্তৃপক্ষ যদি এ ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করে, তাহলে তো তারা এনআইডি কার্ডও সংগ্রহ করতে পারবে না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি সতর্ক থাকেন, তাহলে তো তারা এগুলো পাবে না। এখানে কে কিভাবে সংগ্রহ করলো এটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো আমাদের যে শুরুতে জন্মসনদ দেওয়া হয়, সেখানে নজরদারিটা ভালোভাবে করতে হবে। এনআইডিতে তীক্ষ্ন নজক্ষ্রদারি থাকলে তো কোনো অসুবিধা নেই।
আমাদের প্রতিবেশীসহ বিশ্বের অনেক দেশেই তো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক। অনেকে বলছেন, বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এতে ক্ষুন্ন হতে পারে? আপনারা কী মনে করছেন?
এটা চিন্তা ও ভাবনার ব্যাপার। বর্তমান সরকার মনে করেছে, তার নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়া অধিকার। সরকার ইতিবাচকভাবে চিন্তা করছে। দেখেন, আমি আজকে পাসপোর্ট পাওয়ার পর কাল যে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ব না, সেটার তো কোন নিশ্চয়তা নেই। অপরাধ যে কোনো সময় যে কেউ করতে পারে। পাসপোর্ট কিন্তু কোনোভাবেই নিশ্চয়তা দিচ্ছে না যে, আমি অপরাধী না। অপরাধ করলে সেটার বিচার আইন অনুযায়ী হবে। এর সঙ্গে পাসপোর্টের তো কোনো সম্পর্ক নেই। পাসপোর্ট থাকার পরও সরকার চাইলে যে কারো বিদেশে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিতে পারে। ইমিগ্রেশন অথরিটিকে বললেই হলো। তার কাছে গ্রীন পাসপোর্ট থাকুক আর লাল পাসপোর্ট থাকুক, কোনো অপরাধ করলে তিনি তো বাইরে যেতে পারবেন না।
পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার ফলে বিদেশে যেতে আগ্রহীদের আর হয়রানির শিকার হতে হবে না?
এক ধাপ সহজ হলো। অনেকগুলো ধাপের মধ্যে এটা একটা ধাপ। বিদেশ যেতে আগ্রহীদের ক্ষেত্রে এক ধাপ সহজ হলো।